মায়ের লাশ
বাড়িতে মায়ের লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিলো সুমাইয়া!
মরণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মায়ের মৃত্যুর সংবাদে অজ্ঞান হয়ে পড়ে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার।
পরিবারের লোকজন উপায় না পেয়ে তাকে পানছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেবা শুশ্রূষা ও জ্ঞান ফেরাতে চলে চিকিৎসা।
আরও পড়ুন: বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
কারণ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার সকাল ১১ টায় তার এসএসসি’র বাংলা ২য় পত্রের পরীক্ষা।
অসুস্থ ছাত্রীকে দেখতে গিয়ে পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনচারুল করিম জানতে পারেন মেয়েটির বাবা রফিকুল ইসলাম মৃত। স্ত্রী ফাতেমা বেগমের দাফন কাফনের আয়োজন করছেন।
তাই সুমাইয়া আক্তারকে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় নিজের গাড়িতে করে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট পর কেন্দ্রে নিয়ে পরীক্ষার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এর এমন মহানুভতায় পানছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিজ বেলী চাকমা জানান, সুমাইয়া আক্তার বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হলেও আমার বিদ্যালয়ে তার পরীক্ষা কেন্দ্র। এছাড়া মো. আনচারুল যা করেছেন তা প্রশংসনীয়। এমন উদ্যোগ সকলেই নিয়ে কাজ করতে পারে না।
তাঁর এই মহতি কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনচারুল করিম বলেন, একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মা মারা যাওয়ায় পরীক্ষা দিচ্ছে না এমন খবরে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিই। অশ্রæসিক্ত চোখে কেন্দ্রে ঢুকে বারবার কেঁদেছে সুমাইয়া।
প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে একহাতে চোখ মুছে ও অন্য হাতে খাতায় লিখেছে। মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে কেঁদেও উঠেছে।
তবু তার পাশে থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন করিয়েছি।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ছাত্রাবাস থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড: আরও ২ লাশ শনাক্ত
২ বছর আগে
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: যমজ মেয়ের পর এবার ভেসে এলো মায়ের লাশ!
বরগুনার তালতলী উপজেলার আগাপাড়া এলাকার দুই যমজ মেয়ের লাশের পর এবার নদীতে ভেসে এলো তাদের মা শিমু আক্তারের লাশ। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর বুধবার দুপুরে সুগন্ধা নদীতে তার লাশ ভেসে উঠে। খবর পেয়ে শিমুর ভাই হান্নান গিয়ে তার বোনের লাশ শনাক্ত করেন।
বুধবার সন্ধ্যায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
এদিকে, শিমুর লাশ তার দুই যমজ কন্যার কবরের পাশেই দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দাফনের কাজ সম্পন্ন করে।
আরও পড়ুন: লঞ্চে আগুন: বাবা-মেয়ে দগ্ধ, বাঁচতে পারেনি মা
জানা গেছে, বরগুনার তালতলী উপজেলার আগাপাড়া এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে শিমু তার দুই যমজ মেয়ে লামিয়া-সামিয়া ও মা দুলু বেগমকে নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনা আসার জন্য এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে রওয়ানা দেন। লঞ্চে ওঠার পরে শিমু তার বৃদ্ধ বাবা আব্দুল আজিজ হাওলাদারের কাছে ফোন করে বাড়ি আসার খবর জানায়। সকালে বৃদ্ধ বাবার কাছে খবর আসে ওই লঞ্চেই আগুন লেগেছে।
লঞ্চে আগুনের ঘটনায় আব্দুল আজিজের দুই নাতনি পুড়ে মারা গেছেন। তাদের লাশ পেয়ে যথারীতি দাফন করেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে তার মেয়ে শিমু নিঁখোজ ছিলেন। স্ত্রী দুলু বেগম (৫৫) হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ দিকে শিমুর স্বামী রবিউল দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে হারিয়ে এখন দিশেহারা।
সাংবাদিকদের দেখে আব্দুল আজিজ হু-হু করে কেঁদে উঠে বলেন, ‘মোর নাতীর (নাতনী) পোড়া লাশের পাশে মাইয়াডার লাশ। এ করুণ অবস্থা চোহের সামনে কেমনে সই। এ কেমন বিচার করল আল্লাহ্। মুই কি ভুল হরছি আল্লাহ’র ধারে, যে হেই ভুলের জন্য আল্লাহ বড় শাস্তি দিল মোরে। এ কষ্ট মুই কেম্মে সমু।’ এ কথা বলে চিৎকার করতে করতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
আরও পড়ুন: চলন্ত লঞ্চে আগুন: বরগুনায় গণকবরে অজ্ঞাত ২৩ লাশ দাফন
শিমুর ভাই হান্নান বলেন, ‘প্রতিদিনই বোনের লাশের খোঁজখবর নিতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর ঘটনাস্থলে যেতাম। বুধবার জানতে পারি দুই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এমন সংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখি আমার বোনের লাশ মাটিতে পড়ে আছে। জেলা প্রশাসনের কাছে বোনের সকল তথ্য দিলে, প্রশাসন আমার কাছে বোনের লাশ বুঝিয়ে দিলে আমি বাড়িতে নিয়ে আসি।’
তালতলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেন জানান, নিহতদের পরিবারকে দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
২ বছর আগে