খেজুর রস
চুয়াডাঙ্গায় রস সংগ্রহে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত গাছিরা
পঞ্জিকা অনুযায়ী আরও এক মাস পর শীত শুরু। তবে পঞ্জিকার অপেক্ষায় তর সইছে না প্রকৃতির। গ্রাম-বাংলার মাঠে-ঘাটে শীতের আবহ শুরু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার গ্রামে গ্রামে গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার গ্রামে গ্রামে খেজুরগাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। আর কিছু দিন পর গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব শুরু হবে।
জমির আলী নামে একজন গাছি বলেন, খেজুর গাছ কাটা সহজ কাজ নয়। অনেক সময় গাছের ওপর থাকা অবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করাটাই কঠিন হয়ে যায়। তবে শীতের শুরুতে রস সংগ্রহ করে পরিবারের জন্য কিছু সঞ্চয় করতে পারলে সেই কষ্টটা সার্থক হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দীননাথপুর গ্রামের গাছি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গাছের ডালপালা পরিষ্কার ও চাঁছা-ছিঁলার কাজ হয়ে গেছে। বাপের পেশা এখনও ধরে রেখেছি। এবার ৮০টি খেজুর গাছ চাঁছা-ছিঁলার কাজ হয়েছে। তারপর গাছে গাছে ঘাট কেটে রাখা হবে। শীতের শিশির যত বাড়বে ঘাট দিয়ে রস গড়িয়ে পড়তে শুরু করবে।’
তিনি আরও জানান, তার জমির আইলে নিজস্ব গাছ রয়েছে ৪০টি। আরও ৪০টি গাছ তিনি বর্গা নিয়েছেন। এ মৌসুমে দাম ভালো থাকলে এসব গাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো গুড় বিক্রি করতে পারবেন।
চুয়াডাঙ্গার মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের গাছি খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা পেশাগত কারণে প্রায় প্রতি বছরই খেজুরগাছ মালিকদের কাছ থেকে চার মাসের জন্য বর্গা নিয়ে থাকি। গাছ ভেদে ২ কেজি করে খেজুরের গুড় এবং ২৫০ টাকা দিতে হয় মালিকদের। এবারও প্রায় ১০০টি খেজুর গাছের জন্য মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে না দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য এই পেশা ধরে রেখেছি। খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন: খরায় কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা; বাজারেও সংকট
১ মাস আগে
নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
নিপা ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস। এটি বাঁদুড় থেকে বিভিন্ন মাধ্যম (বিভিন্ন পশু বা খাবার) হয়ে অথবা সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। বাংলাদেশে খেজুরের রস খেকো বাঁদুড় হচ্ছে নিপা ভাইরাসের প্রধান উৎস।
বাঁদুড় খেজুরের রস খাওয়ার সময় তাদের মুখ থেকে নিঃসৃত লালা খেজুরের কাঁচা রসের সঙ্গে মিশে রসকে দূষিত করে। এর ফলে সংক্রামিত ব্যক্তি শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা ও মস্তিষ্কের প্রদাহ জনিত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
আরও পড়ুন: ওজন কমাতে ১০ কার্যকরী পানীয়
চলুন জেনে নিই কীভাবে নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাবেন?
নিপা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে আরোগ্য লাভের কোন টিকা নেই, তাই এই ভাইরাস এড়ানোর একমাত্র উপায় প্রতিরোধ। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো হলো-
খেজুর রস সংগ্রহের স্থানটি বাঁদুড়ের উৎপাতমুক্ত রাখা
প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানকার খেজুর গাছগুলোর খেজুর রসের স্বাদ বাড়তে থাকে। এ সময় গাছগুলোতে রাতের বেলা শুরু হয় বাঁদুড়ের উৎপাত। তাই সংক্রমণ রোধ করার প্রচেষ্টায় প্রথমে খেজুর রস সংগ্রহের জায়গা অর্থাৎ এই গাছগুলো বাঁদুড়ের সংস্পর্শে আসা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক আবরণ যেমন- বাঁশ, ধোইঞ্চা, পাট কাঠি ও পলিথিনের স্যাপ স্কার্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো খেজুর রস সংগ্রহের স্থান থেকে বাঁদুড়কে দূরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই সময়ে যারা নিয়মিত খেজুর রস সংগ্রহ করেন বিশেষ করে গাছিদের এই পদ্ধতি অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।
খেজুর রস সংগ্রহের সরঞ্জামাদি পরিষ্কার রাখা
গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য মাটির হাড়ি ব্যবহার করা হয়। শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছগুলোতে একটি করে মাটির হাঁড়ি ঝুঁলে থাকতে দেখা যায়। বাঁদুড় খেজুর রস খাওয়ার সময় মল-মূত্র ত্যাগ করে এগুলো দূষিত করে ফেলে। এই ময়লাগুলোর মাধ্যমেও নিপা ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। তাই প্রতিবার রস সংগ্রহের সময় হাঁড়ির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্য উপরোল্লিখিত স্যাপ স্কার্টগুলো ব্যবহার করা হলে বাঁদুড় বা অন্যান্য পাখির ময়লা লাগার সম্ভাবনা থাকে না।
সংগৃহীত খেজুর রস অন্যান্য পশুর সংস্পর্শে না রাখা
প্রতিরক্ষামূলক বেষ্টনী থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করলেই কাজ শেষ নয়। সংগৃহীত রস বাড়ির যে জায়গাটিতে রাখা হচ্ছে সে জায়গাটিতে গরু বা ছাগলের আনাগোনা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা বাঁদুড় থেকে প্রায় সময় গরু-বাছুর ও ছাগলেও নিপা ভাইরাস ছড়ায়। অতঃপর এগুলো খেজুর রস রাখার জায়গাগুলোকে দূষিত করে ফেলতে পারে। এই বিষয়টি বিশেষ করে যারা খেজুর রস সংগ্রহ করে বাজারজাত করে থাকেন বা গাছিদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
এই সংক্রমিত গবাদি পশু খেজুর রস দূষিত করা ছাড়াও সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে এসে মানুষের মধ্যে নিপা ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই গৃহপালিত পশু পরিচালনার সময় গ্লাভস ও অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে থাকা নিরাপদ। তাছাড়া বাড়ির যে স্থানটিতে খেজুর রস রাখা হয়েছে সেখানে বাঁদুড়ই এসে দূষিত করে দিয়ে যেতে পারে। তাই বাড়িতে বাঁদুড় বা অন্যান্য পশুর ধরা ছোয়ার বাইরে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে নতুন খামার করার সময়েই বাদুড়মুক্ত স্থান নির্বাচন করা উচিত। আর প্রাদুর্ভাবের এলাকাগুলো সপরিবারেই ত্যাগ করা উচিত।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ডালিমের খোসার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার
২ বছর আগে