ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
আদানি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের
ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনও নিয়ন্ত্রক ব্যর্থতা তদন্ত করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
মার্কিন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনে আদানি কোম্পানিগুলোকে বাজারের কারসাজি এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক অনুশীলনে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে যা তদন্তের জন্য প্ররোচিত করেছে।
হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে গ্রুপের প্রধান প্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ এবং অন্যান্য অনুমোদিত কোম্পানির শেয়ারগুলোর বাজার মূল্যে কয়েক বিলিয়ন ডলার পতন হয়েছে।
আরও পড়ুন: মার্চে আদানির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই: নসরুল
আদানি গ্রুপ যে কোনো অন্যায় কাজ অস্বীকার করেছে এবং অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণে ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি খণ্ডন দলিল প্রস্তত করেছে।
বৃহস্পতিবার একটি টুইট বার্তায়, আদালতের আদেশকে স্বাগত জানিয়েছে আদানি গ্রুপ।
এতে কোম্পানিটি বলছে, ‘এটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি চূড়ান্ত ফল আনবে। বিশ্বাস জয়ী হবে।’
বিশেষজ্ঞ কমিটি দুই মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে তাদের ফলাফল জমা দেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি পি.এস. নরসিংহ ও জেবি পারদিওয়ালা।
শীর্ষ আদালত আদানি গ্রুপের নিয়ম লঙ্ঘন বা স্টক মূল্যের হেরফের হয়েছে কিনা তা তদন্তে সরকার-চালিত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকেও নির্দেশ দিয়েছে।
কিছু কর্মী ও আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।
আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত ছাড়াও, বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সুরক্ষা উন্নত করার ব্যবস্থার পরামর্শ দিচ্ছে।
হিন্ডেনবার্গ তার প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি এন্টারপ্রাইজেস গত মাসে দুই দশমিক ৫ বিলিয়ন বাড়াতে একটি শেয়ার অফার বাতিল করেছে এবং এর শেয়ারের মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
কয়লা ব্যবসায়ী পুঁজিপতি গৌতম আদানির ব্যবসায়িক লেনদেনের তদন্তের দাবিতে বিরোধী আইনপ্রণেতারা গত মাসে সংসদীয় কার্যক্রম অবরুদ্ধ করেছিলেন। কথিত আছে আদানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
আরও পড়ুন: আদানি গ্রুপের সঙ্গে ঢাকার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নজিরবিহীন বৈষম্যমূলক: টিআইবি
কেন আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুত নেয়া হচ্ছে, প্রশ্ন এমপি চুন্নুর
১ বছর আগে
ফেলানী হত্যার ১১ বছর: ন্যায় বিচারের প্রতীক্ষায় পরিবার
কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১১ বছরেও ন্যায় বিচার পায়নি তার পরিবার। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবা নুর ইসলামের সাথে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরছিলেন ফেলানী। এসময় মই বেয়ে কাঁটাতার পেরোনোর সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী। বাবা নুর ইসলাম প্রাণে বেঁচে গেলেও মেয়ে ফেলানীর মরদেহ দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকে কাঁটাতারে।
পরে এ নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতে ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেয় নিজ বাহিনীর আদালত।
ফেলানীর বাবা-মা রায় প্রত্যাখ্যান করলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু করে ভারত। পরের বছর ২ জুলাই অভিযুক্তকে আবারও নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেয়া হয়।
এরপর ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচারের আশায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যৌথভাবে রিট আবেদন করেন ফেলানীর বাবা ও মানবাধিকার সংগঠন সুরক্ষা মঞ্চ। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পূর্ণাঙ্গ ব্রেঞ্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করলেও একাধিকবার শুনানির তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় এখনও ন্যায় বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকের কাছে আমারা গিয়েছি, কিন্তু ১১ বছরেও ন্যায় বিচার পেলাম না।
আরও পড়ুন: সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে ফেলানীর বাড়িতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
বাবা নুর ইসলাম বলেন, দুই দুই বার কুচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের নৃশংসতার বর্ননা দিয়েছি। তারপরও ন্যায্য বিচার পাইনি। তবে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা ছাড়িনি।
ফেলানী হত্যাকাণ্ডে পিতা নুর ইসরামের আইন সহায়তাকারী কুড়িগ্রাম পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, একাধিকবার তারিখ বদলের পর ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভারতরে সুপ্রিম র্কোটের বিচারপতি এন ভি রামানা ও বিচারপতি মোহন এম সান্তনা গৌদ্ধারকে নিয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য আইটেম নম্বর-৩ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অথচ সুপ্রিম র্কোট থেকে বিবাদীকে শোকজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা শোকজের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু পরর্বতীতে আর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে কার্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে আছে রিটটি। করোনার কারণে রিটটির সর্বশেষ অবস্থা জানেন না তিনি।
অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন ন্যায্য বিচারের আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘জেনারেল সিকিউিরিটি ফোর্স কোর্টে বাদী ছিল বিএসএফ, আসামি ছিল বিএসএফ এবং বিচারকও ছিল বিএসএফ। ফলে ন্যায্য বিচার পাওয়া যায়নি। সুপ্রিম কোর্টে ন্যায্য বিচার পাওয়া যাবে। আর এই রিট নিস্পত্তি করতে সুপ্রিম কোর্ট যে পর্যবেক্ষণ দেবেন তাতে দু-দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
প্রসঙ্গত, ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম পরিবার নিয়ে ভারতে থাকতেন এবং সেখানে ইট ভাটায় কাজ করতেন। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর রামখানার কলোনীটারী গ্রামে মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয়েঠিল। তাই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে ২০১১ সালরে ৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে রওনা হন বাংলাদেশে। ৭ জানুয়ারি এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
আরও পড়ুন: শিবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহতের অভিযোগ
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী: হিলি সীমান্তে বিএসএফকে বিজিবি’র মিষ্টি উপহার
২ বছর আগে