তথ্য ভুল
স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
নিত্য নৈমিত্তিক জীবনধারায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপে প্রয়োজনীয় একটি নথি হলো স্মার্ট আইডি কার্ড। বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হচ্ছে ২০০৮ সালের ২২ জুলাই থেকে। ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর থেকে চালু হয় ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত স্মার্ট আইডি কার্ড। ২০২০ থেকে শুরু হয়ে গেছে এর অনলাইন সেবাও। অনলাইন থেকেই আবেদন সহ স্মার্ট আইডি কার্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যগুলো অসাবধানতা বশত ভুল হয়ে যায়। তাই চলুন, স্মার্ট কার্ডের ভুল সংশোধন নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
এক নজরে স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন পদ্ধতি
স্মার্ট আইডি কার্ডের অনলাইন সেবাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সেবা হলো জাতীয় পরিচয়পত্র বা এর তথ্য-উপাত্ত সংশোধন। বাংলাদেশ এনআইডি পোর্টাল থেকে খুব সহজেই এই সেবাটি পাওয়া যেতে পারে। এর জন্য নিচের ক্রমধারাটি অনুসরণ করতে হবে-
১। এনআইডি নাম্বার দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা
২। স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা প্রদান
৩। প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র আপলোডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোর সম্পাদন
এই পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনের নির্ধারিত কার্যদিবস পর মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ফি পরিশোধের সময় যে মোবাইল নাম্বার দেয়া হয়েছিল তাতে সংশোধন অনুমোদনের বার্তা আসবে। সেই সাথে সংশোধিত এনআইডি কার্ডটিও ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হবে। অতঃপর সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করার পর লেমিনেটিং করে ব্যবহার যোগ্য করা যাবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ইলেক্ট্রনিক চিপযুক্ত সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়ার জন্য প্রার্থীকে তার ভোটার অঞ্চল থেকে সরাসরি গিয়েই সংগ্রহ করতে হবে।
এছাড়া এনআইডি কার্ড সংক্রান্ত আরও কোন তথ্য পেতে হলে সরকারি কর্ম দিবসগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে যেকোন সময় যোগাযোগ করা যাবে ১০৫ নাম্বারে।
আরও পড়ুন: সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র জাল, তবুও তিনি শিক্ষক!
স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন ফি ও কার্যদিবস
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি মূলত দুটি ক্ষেত্রে ধার্য হয়ে থাকে।
১। স্মার্ট কার্ড-এর সামনের ও পেছনের পৃষ্ঠে কিছু তথ্য প্রদর্শন করা থাকে যেগুলো নিবন্ধনের সময় নাগরিকরা ফরম-২-এর মাধ্যমে প্রদান করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে সামনের পৃষ্ঠে বাংলা ও ইংরেজিতে জাতীয় পরিচয়পত্রধারীর নাম, বাংলায় পিতা ও মাতার নাম, ইংরেজিতে জন্ম তারিখ ও এনআইডি নাম্বার, স্বাক্ষর এবং পেছনে বাংলায় ঠিকানা, ইংরেজিতে রক্তের গ্রুপ ও জন্মস্থান অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর মধ্যে যেকোনো তথ্য পরিবর্তন করতে হলে প্রথমবার আবেদনের সময় ২৩০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩৪৫ টাকা এবং তারপর থেকে প্রতিবার আবেদনের জন্য ৫৭৫ টাকা জমা দিতে হবে।
২। নিবন্ধনের সময় নাগরিকরা সেই ফরম-২-এর মাধ্যমে কিছু তথ্য প্রদান করেন, যেগুলো এনআইডি কার্ডে প্রদর্শন করা থাকে না। যেমন- প্রার্থীর পেশা, পাসপোর্ট ও মোবাইল নাম্বার, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি। এগুলোর সংশোধন ফি ১১৫ টাকা।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি বিকাশ, রকেট, ওকে ওয়ালেট ও টি ক্যাশ-এর মাধ্যমে ঘরে বসেই পরিশোধ করা যায়।
নির্ধারিত ফি পরিশোধের ৩০ মিনিট পর থেকে তথ্য সম্পাদন শুরু করা যাবে। আর সংশোধিত স্মার্ট আইডি কার্ড হাতে পেতে সর্বোচ্চ দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ফি পরিশোধের পরপরই আসবে তথ্য সম্পাদনের স্ক্রিন। এ অংশে তথ্য জমা দেয়ার পাশাপাশি তথ্যের সাথে প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র আপলোড করতে হয়।
→ প্রার্থীর নাম অথবা জন্ম তারিখ সংশোধন করতে হলে প্রার্থীর যে কাগজগুলো সংযুক্ত করতে হয় সেগুলো হলো-
১। জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র
২। কমপক্ষে মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষার সনদপত্র
*শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক বা সমমানের নিচে হলে এবং প্রার্থী সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত অথবা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থায় কর্মরত হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চাকরির বই বা মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট বা ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।
৩। বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী বা স্বামীর এনআইডি কার্ড এবং কাবিননামার সত্যায়িত কপি লাগবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
*বিবাহ সংক্রান্ত কোন কারণে নারীদের নামের পরিবর্তন করতে হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কাবিননামা বা তালাকনামা বা স্বামীর মৃত্যু সনদ, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কর্তৃক হলফনামা বা বিবাহ বিচ্ছেদ ফরমানের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
৪। ধর্ম পরিবর্তন অথবা অন্য কোন কারণে পুরো নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট কর্তৃক হলোফনামা, জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি, ওয়ারিশ সনদপত্র, ইউনিয়ন বা পৌর বা সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রার্থীর নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র বা চাকরির বই বা এমপিও বা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হবে।
→ পিতা বা মাতার নাম সংশোধনের সময়, যদি পিতা বা মাতার নাম উল্লেখ থাকে তবে প্রার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের সনদপত্র, প্রার্থীর পিতা, মাতা, ভাই ও বোনের এনআইডির সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
*পিতা বা মাতার নামের পূর্বে ‘মৃত’ সংযোজন করতে হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পিতা বা মাতার মৃত্যু সনদের সত্যায়িত কপি, জীবিত থাকলে সেই সূত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ)-এর চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়র বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র, পিতা বা মাতার এনআইডি কার্ডের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
→ ঠিকানা সংশোধনের জন্য বাড়ির দলিল বা টেলিফোন, গ্যাস বা পানির বিল, বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র বা বাড়িভাড়ার রশিদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
→ রক্তের গ্রুপ সংশোধনের জন্য প্রয়োজন হবে ডাক্তারী সনদপত্র।
→ প্রার্থীর সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে শিক্ষাগত যোগ্যতা সংশোধন করার জন্য।
এ কাগজগুলো যারা সত্যায়িত করতে পারবেন তারা হলেন সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান।
আরও পড়ুন: হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ও খরচ
শেষাংশ
স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষত কার্ডে প্রদর্শিত তথ্যসমূহের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন এ তথ্যগুলো প্রদানের সময় বারবার ভুল না হয়। এই ভুলগুলো এড়ানোর জন্য নিবন্ধনের সময়েই প্রতিটি তথ্য হুবহু জন্ম নিবন্ধন ও মাধ্যমিক পরিক্ষার সনদের তথ্যের সাথে মিল রাখা উচিত।
২ বছর আগে