সেলিনা হায়াৎ আইভি
সবার নজর নারায়ণগঞ্জে
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের (নাসিক) আর মাত্র একদিন বাকি থাকায়, সবার আগ্রহ এখন বাংলাদেশের ড্যান্ডি– নারায়ণগঞ্জের দিকে।
আগামী রবিবার (১৬ জানুয়ারি) তৃতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকে কোনো নির্বাচনী প্রচারণার অনুমতি দেয়া হবে না।
প্রথম নাসিক নির্বাচনে ২০১১ সালে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমানকে এক লাখেরও বেশি ভোটে পরাজিত করেন। এটাই ছিল নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই দলের মধ্যে চিরস্থায়ী দ্বন্দ্বের সূচনা।
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আইভী আবার জয়ী হন। এর আগে ২০১৪ সালে শামীম ওসমান সংসদ সদস্য হন। তিনি আইভীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কমান্ড তার নারায়ণগঞ্জ ইউনিটের সুপারিশকে পাশ কাটিয়ে আবারও আইভীকে মনোনয়ন দেয়।
এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে রাজনীতিবিদ ও তাদের সমর্থকরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনে জয়ের জন্য জোর প্রচারণা চালাতে দেখা যায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের।
এবারের নাসিক নির্বাচনের মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে নেমেছেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। তৈমুর একজন প্রবীণ বিএনপি নেতা, যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, কারণ বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন বর্জন করছে।
দুই প্রার্থীর সমর্থকরাই নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
এছাড়া মেয়র পদে ব্যালটে সাতজনের নাম থাকলেও, শামীম ওসমান কী করেন বা কোন দিকে ঝুঁকেছেন, এই প্রশ্নকে ঘিরেও আলোচনার জন্ম হয়েছে। সব মিলিয়ে তাকেও নির্বাচনের হিসেব-নিকেশের বাইরে রাখা যাচ্ছে না।
চলতি সপ্তাহে আইভী অভিযোগ আনেন,তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী তৈমুর আসলে শামীম ওসমানের ভাই এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম ওসমানের প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
তার এই অভিযোগের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে আইভীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।
সোমবার শামীম বলেন, খেলা হবে এবং আমরা ১৬ জানুয়ারি জিতব।
তবে আইভী ওই দিনই বলেন, তৈমুরের কর্মকাণ্ড থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, যে তিনি শামীম ওসমানের মনোনীত প্রার্থী।
এই একই দাবি আইভী এর আগেও করেছিলেন, যার ফলে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে শামীম ওসমানকে নির্বাচনের আগে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে বলা হয়।
বৃহস্পতিবার শামীম ওসমানের সমর্থন প্রসঙ্গে আইভী বলেন, আমি বলিনি তার সমর্থন লাগবে না। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে এবং দলের নেতা-কর্মী ও ভোটাররা আমাকে ভোট দেবেন। দু-একজন ভোট না দিলেও কোনো কিছু হবে না।
অন্যদিকে তৈমুর বলেন, নির্দিষ্ট কিছু লোক আমাকে সমর্থন করছে বলে আমার প্রতিপক্ষ সন্দেহ করছে এবং তারা আমার সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া আমার সমর্থক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
তৈমুরের সমন্বয়ক ও প্রচারণা ইনচার্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে তার হিরাঝিলের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন
ব্যালটে অন্য ছয় প্রার্থীর উপস্থিতি সত্ত্বেও, আইভী যে নাসিক মেয়র হিসাবে ফেভারিট তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি যেখানেই যাচ্ছেন তার সমর্থকদের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন।
দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা যখন সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন জনগণের কষ্টার্জিত ভোটে জনপ্রিয়তা ও নীতি উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একজন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন আইভী।
২ বছর আগে