পানিশূন্যতা
অতিরিক্ত গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়
বর্তমানে গরমের তীব্রতা অসহনীয় করে তুলেছে মানুষের জীবন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রতিকুল অবস্থা আশঙ্কাজনক। অত্যধিক ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে নানা ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়। আর এই ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে এই কম বয়সী শিক্ষার্থীরাই। তাই উষ্ণ আবহাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপের। উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। তাই চলুন, গরমের তীব্রতা থেকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
তীব্র গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের সুস্থ রাখার ১০টি উপায়
দিনের তীব্র গরমের সময় সূর্যালোক এড়িয়ে চলা
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অতিবেগুনি রশ্মি সবচেয়ে বেশি তীব্র থাকে। আর দিনের এই সময়টাতেই শিক্ষার্থীরা সাধারণত ক্লাস এবং স্কুল-পরবর্তী খেলাধুলার জন্য ঘরের বাইরে থাকে। তাই এই সময়টাতে শিক্ষার্থীদের বিচরণের জায়গাগুলোতে সর্বাত্মকভাবে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ-গাছালি ঘেরা প্রাকৃতিক ছায়া শোভিত স্থান সর্বোত্তম। তবে এর পাশাপাশি ছাউনির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। খেলাধুলার সময় ছাত্রছাত্রীরা যেন উন্মুক্ত জায়গায় চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সূর্যালোকের সংস্পর্শ এড়ানোর জন্য আরেকটি উত্তম উপায় হলো ছাত্রছাত্রীদের ইনডোর গেমের প্রতি আকৃষ্ট করা। এতে করে তাদের বিনোদনও হবে, একই সঙ্গে তাদের শরীরও ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচবে। এটি ছুটির দিনে ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
গরমের জন্য আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা
শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়াসহ বিভিন্ন উপলক্ষে ঘরের বাইরে থাকার সময়ে হাল্কা বুনন, হাল্কা ও এক রঙের কাপড় পড়তে হবে।
হাতাকাটা শার্ট বা গেঞ্জি এবং হাফ প্যান্ট বা শর্টস এক্ষেত্রে উপযুক্ত মনে হতে পারে। কিন্তু কাপড়ের উপাদান এবং শিক্ষার্থীদের শরীরের কতটা অংশ উন্মুক্ত থাকছে সেদিকে কড়া নজর দেওয়া আবশ্যক।
এছাড়া হাতাকাটা বা শর্টসের ক্ষেত্রে কাপড় যদি অনেক মোটা বা ভারী হয়, তাহলে তা আরও গরম করে তুলতে পারে। উপরন্তু, রোদের সংস্পর্শে উন্মুক্ত হাত-পায়ের চামড়া পুড়ে যেতে পারে। তাই শরীর যতটা ঢেকে রাখা যায় ততই ভালো। অর্থাৎ লম্বা হাতা এবং লম্বা প্যান্ট বেছে নেওয়া উত্তম। আর কাপড় ঢিলেঢালা ফিটিং ও হাল্কা রঙের হলে তা বাতাস চলাচলের জন্য উপযোগী হয়।
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
সানস্ক্রিন ব্যবহার করা
সকালে স্কুলে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে বাচ্চাদের শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন লাগিয়ে দিতে হবে। কিশোর বয়সীদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানকে সানস্ক্রিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ছোট থেকে অভ্যাস করানো হলে কিশোর বয়সীরা নিজেরাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে শিখে যাবে। এই অভ্যাস কার্যকর করার জন্য প্রতিবার ঘর্মাক্ত হওয়ার দুই ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া স্কুলের খেলাধুলার পর বাচ্চাদের সানস্ক্রিন প্রয়োগ করতে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
একটি গল্ফ বলের মাপের সমান বা প্রায় ২৮ গ্রাম সানস্ক্রিন পুরো শরীরে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে শরীরের যে অংশগুলো সাধারণত এড়িয়ে যায় সেগুলোতে বেশি নজর দেওয়া উচিত। যেমন- কানের পিছনে, ঘাড়ে, হাত ও পায়ের উল্টো পিঠের অংশগুলো।
ছাতা ব্যবহার করা
স্কুলে যাওয়া ও আসা নিয়ে প্রতিদিনই বাচ্চাদের একটি উল্লেখযোগ্য সময় রোদের আলোয় কাটাতে হয়। এই সময়টিতে শুধুমাত্র সানস্ক্রিনের উপর নির্ভর করাটা যথেষ্ট নয়। সূর্যালোক প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান ছাড়াও এ সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ছাতা ব্যবহার করা। খুব নান্দনিক এবং রঙচঙা নয়, এ ক্ষেত্রে খেয়াল দিতে হবে ছাতাটি রোদ থেকে কতটা ছায়া দিতে পারছে তার উপর। মুষলধারে বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে যেভাবে ছাতা ব্যবহার করা হয়, এক্ষেত্রেও একই কাজ করা উচিত। আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের এই অভ্যাস তৈরিতে আদর্শ হতে পারে পিতামাতা ও পরিবারের অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্করা।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
ঘরকে ঠান্ডা রাখা
গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হলে সেই ঘরকেও রাখতে হবে তাপমুক্ত। কেননা বাইরে থেকে রোদের আলো ঘরে ঢুকে অথবা ঘরের দেয়াল রোদ শুষে নিয়ে ঘরকে উত্তপ্ত করে তোলে। এ অবস্থা থেকে শতভাগ মুক্তি না মিললেও সম্ভাব্য কার্যকর উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে।
যেমন হলুদ এবং হ্যালোজেন বাল্বগুলো প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। তাই এগুলোর বদলে ব্যবহার করতে হবে এলইডি লাইট, যা ঘর ঠান্ডাও রাখে আবার বৈদ্যুতিক খরচের দিক থেকেও বেশ সাশ্রয়ী।
দিনের উত্তপ্ত সময়গুলোতে জানালার পর্দা টেনে দিতে হবে। জানালা বন্ধ রাখা হলে সূর্যালোকের ঘরের ভেতর ঢুকতে আরও একধাপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। ঠিক সন্ধ্যার দিকে পর্দা সরিয়ে জানালা খুলে দিলে বাইরের ঠান্ডা বাতাস ভেতরে প্রবেশ করবে। এতে করে দিনের বেলা বাইরের গরম বাতাস ভেতরে আসবে না। রাতভর ঘরের ভেতর জমা হওয়া ঠান্ডা বাতাস দিনের বেলা বাইরে যেতে পারবে না।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
৬ মাস আগে
তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে মাত্রাতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর আশঙ্কাজনক হারে পানি হারাতে শুরু করে। পরিণতিতে দেখা দেয় পানিশূন্যতা, যার দীর্ঘস্থায়ীত্ব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। মানবদেহের এই ভারসাম্যহীনতা মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও শুষ্ক মুখমণ্ডলের মতো উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই অসহনীয় খরতাপের সময়টাকে মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে উচ্চ পানীয় উপাদান সমৃদ্ধ শাকসবজি। এই খাবারগুলো শরীরের হারানো পানি পুনরায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দেহের রোগমুক্তিতেও সাহায্য করে। চলুন, তীব্র গরমে পানিশূন্যতা দূর করতে সেই শাকসবজিগুলোর ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
যে সবজিগুলো তীব্র গরমে শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে সক্ষম
শসা
প্রায় ৯৫ শতাংশ পানিতে পরিপূর্ণ শসা গরমের জন্য উপযোগী সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে সহায়তা করে। শসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বিটা ক্যারোটিন। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফ্রি র্যাডিকেল হলো জোড়াহীন ইলেকট্রন, যা কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ হতে পারে।
রোদের তীব্র রশ্মির কারণে ত্বকে রোদে পোড়া ব্যথা, ফোলাভাব এবং ত্বকের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অবস্থা থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় সাহায্য করতে পারে শসা। চোখের নিচে এক বা দুই টুকরো শসা রাখলে চোখের কালো দাগ ও ফোলাভাব কমে আসে।
আরও পড়ুন: চিনির কিছু স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
টমেটো
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পটাশিয়ামের আধার টমেটোতে পানির পরিমাণ প্রায় ৯৫ শতাংশ। লাইকোপিন নামক পদার্থ টমেটোর উজ্জ্বল লাল রঙের কারণ। শুধু তাই নয়, এই উপাদানের মধ্যে রয়েছে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্য। তাই এই ফলের রয়েছে মানবদেহের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা।
এই একই কারণে টমেটো ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। লাইকোপিনের পাশাপাশি অন্যান্য উদ্ভিদ যৌগ রোদে পোড়া থেকে রক্ষার কাজে অংশ নেয়।
স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারের মতো ডিজিটাল ডিভাইস থেকে এক ধরনের নীল আলো নির্গত হয়, যা চোখের জন্য ক্ষতিকর। টমেটোতে থাকা লুটেইন এবং জিক্সানথিন নামক পদার্থ এই নীল আলোর বিরুদ্ধে চোখের সুরক্ষায় কাজে লাগে।
উপরন্তু, এগুলো চোখের ক্লান্তি এবং চোখের উপর চাপ জনিত কারণে মাথাব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন: গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
পালং শাক
তাজা, হিমায়িত, বাষ্প বা দ্রুত সিদ্ধ যে কোনো অবস্থায়ই পালং শাক বেশ পুষ্টিকর একটি খাবার। কাঁচা পালং শাকে রয়েছে ৯১ শতাংশ পানি, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন ও ফোলেট। এই শাকে থাকা লুটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্যজনিত কারণে চোখের রোগ ও ছানি পড়া থেকে রক্ষা করে।
এছাড়া লুটেইন চোখের লেন্সের উপর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
শরীরের ত্বকসহ নানা ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের টিস্যু বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ অপরিহার্য, যা পালং শাকের অন্যতম উপাদান। শুধু তাই নয়, ভিটামিন এ ত্বকের পানিশূন্যতা দূর করতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এর ফলে মুখে সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা কমে যায়।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
মূলা
মাঝারি পরিমাণ ভিটামিন সি সম্পন্ন কাঁচা মূলায় পানির অংশ ৯৫ শতাংশ। তবে এর পাতায় থাকে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। শিকড়ের চেয়ে পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাটিচিন, পাইরোগালল, ভ্যানিলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য ফেনোলিক যৌগ। এগুলো সম্মিলিতভাবে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে শরীরকে রীতিমতো একটি প্রতিরক্ষা দূর্গে পরিণত করে।
এছাড়াও মূলায় রয়েছে কিডনি বিশোধনের ক্ষমতা। এটি পাকস্থলির বিভিন্ন এনজাইমকে সক্রিয়করণে সাহায্য করে। এই এনজাইমগুলো নানা ধরনের বিষক্রিয়া থেকে কিডনিসহ আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে মুক্ত রাখে।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাস সতর্কতা: কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ঝুঁকি
৬ মাস আগে
দৌড়ের সময় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি: কারণ এবং ঝুঁকি কমাতে করণীয়
শারীরিক অনুশীলনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটি দেখা যায় সেটি হচ্ছে দৌড়। একদম ছোট থেকে শুরু করে বৃদ্ধ; নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই ব্যায়াম বলতে দৌড়ানোকেই বুঝে থাকেন। প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় উদ্যানগুলোতে তাই তাদেরক ব্যস্ত-সমস্ত দেখা যায় এই অনুশীলনটিতে। বিশেষজ্ঞরাও এ ব্যাপারে ইতিবাচক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই দৌড়ের সময় দেহের ভেতর যে কার্যকলাপ ঘটে তার উপকারিতার পাশাপাশি রয়েছে ভয়ানক কিছু অপকারীতাও। বিশেষত দৌড়ের সময় তরুণ, মধ্য বয়স্ক ও বার্ধক্য-পীড়িত লোকদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। আজকের ফিচারটিতে তার কারণের পাশাপাশি জানা যাবে এই ঝুঁকি কমাতে করণীয়গুলো সম্পর্কে।
দৌড়ের সময় দেহের অভ্যন্তরে ঘটিত কার্যকলাপ
দৌড়ের সময় মস্তিষ্ক ও দেহের পেশীগুলোতে অক্সিজেন পাঠানোর উদ্দেশ্যে শরীরের মাধ্যমে রক্ত দ্রুত পাম্প করার সাথে সাথে হৃদস্পন্দনের গতি বাড়তে থাকে।
গতির সর্বোচ্চ অবস্থায় শরীর এন্ডোরফিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে। এন্ডোরফিন দৌড়ের সময় পেশীগুলোতে ব্যথা হতে দেয় না এবং মেজাজ উন্নত রাখে।
দৌড়ানোর সময় শুধু পা নয়; কাজ করে গোটা শরীর। প্রথম পদক্ষেপ ফেলার মুহূর্তে দেহের কোয়াড্রিসেপ অর্থাৎ উরুর সামনের বড় পেশীগুলো সবচেয়ে বেশি কাজ করে। শরীর এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কোয়াড্রিসেপ থেকে গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস পেশীতে স্থানান্তরিত হয়। পায়ের গোড়ালি থেকে উপরের দিকে এবং হাটুর পেছন থেকে একটু নীচের অংশ যাকে পায়ের গুল বলা হয়। এই গুলের চামড়ার নীচেই থাকে গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস পেশী।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক: করণীয় এবং প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে
দৌড়ের সময় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির কারণ
দৌড়বাজদের প্রায় ২৫ শতাংশের কার্ডিওমায়োপ্যাথির ঝুঁকিতে থাকতে পারে, যা মূলত হৃৎপিণ্ডের পেশীর একটি রোগ। এর ফলে হৃদপিণ্ডের জন্য শরীরের বাকি অংশে রক্ত পাঠানো কঠিন হয়ে যায় এবং যার চূড়ান্ত ফল হার্টফেল।
এ ধরনের দৌড়বাজদের ক্ষেত্রে ডান অলিন্দ এবং ডান ভেন্ট্রিকল প্রসারিত হয়। হৃদপিণ্ডের ট্রোপোনিন পেশীর সক্রিয়তা এবং হৃদপিণ্ড নিঃসৃত বি-টাইপ নেট্রিউরেটিক পেপটাইড পদার্থের বৃদ্ধি সেই প্রসারিত কুঠুরিতে একটি অস্থায়ী আঘাতের কারণ হয়। টানা ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা দৌড়ে সেই পেপটাইডের পরিমাণ পাতলা কুঠুরির তুলনায় অতিরিক্ত হয়ে যায়। সময়ের সাথে এই ক্ষতির পুনরাবৃত্তি ঘটলে হৃদপিণ্ডের পেশীতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, যা আকস্মিক মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এছাড়া রেসিংয়ের উত্তেজনা এবং চাপ হৃদযন্ত্রে সঞ্চালিত হয়। দৌড়বাজ যখন তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা অতিক্রম করেন এবং ভারসাম্যপূর্ণ হার্ট-রেট ছাড়িয়ে যান, তক্ষুণি চাপ পড়ে হৃদযন্ত্রে। সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় হৃদস্পন্দন, যা ক্রমাগত কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের দিকে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: স্বামী হার্টের রোগী, সাইকেলে ফেরি করে সংসারের হাল ধরেছেন স্ত্রী
দৌড়ের সময় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে করণীয়
রেসের আগে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেয়া
পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া দৌড়ানো সবচেয়ে বড় ভুল। প্রথমেই চিকিৎসকের কাছ থেকে দৌড়ের জন্য শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষা করে নিতে হবে। ছাড়পত্র পেলে তবেই একজন যোগ্য প্রশিক্ষকের সাথে দৌড়বাজদের দলে যোগ দেয়া যেতে পারে। শুরুটা হতে হবে অবশ্যই ধীরে ধীরে। দৌড়ের সময় বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হলে সেখানেই সেদিনের জন্য প্রশিক্ষণ থামিয়ে দিতে হবে। প্রশিক্ষণের শুরু থেকেই প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতা করা যাবে না। প্রশিক্ষণে সহনশীলতা এবং অধ্যাবসায় দীর্ঘমেয়াদে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সামগ্রিক ঝুঁকির মাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।
রেসে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ওয়ার্ম-আপ ও কিছু টেস্ট
চূড়ান্ত রেসে যাওয়ার আগে, ট্রেডমিলে বা অন্য জায়গায় হাল্কা ওয়ার্ম-আপ করে নেয়া উচিত। স্ট্রেস, কার্ডিওলজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি এবং আল্ট্রাসাউন্ড টেস্টগুলো করে নিতে হবে। এগুলো বিশদ স্বাস্থ্য মূল্যায়ন যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা, রক্তচাপ, কার্ডিয়াক চেক-আপ, লিপিড নাম্বার প্রভৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেয়া যাবে। রেসের জন্য আরামদায়ক পোশাক পরা আবশ্যক।
আরও পড়ুন: শিক্ষা সনদপত্র হারিয়ে গেলে করণীয়
ছোট শারীরিক সমস্যাকেও গুরুত্ব সহকারে নেয়া
দৌড়ানোর সময় বুকে অস্বস্তি, মাথা ঘোরা, ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে সাথে সাথে দৌড় বন্ধ করে দিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রাথমিক সতর্কতা যে কোন খারাপ দিকে মোড় নেয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। অপরদিকে এই ধরনের উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও রেসে যোগ দেয়াটা জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে।
শরীরকে পানিশূন্যতা থেকে দূরে রাখা
দৌড়বিদকে অতিরিক্ত গরম বা হাইপারথার্মিয়া এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। মাঝে মাঝে মাথা ও সারা শরীরে পানি ঢালা উত্তম। ডিহাইড্রেশন এবং লবণের ক্ষতি এড়াতে দৌড়ানোর সময় উপযুক্ত তরল এবং লবণ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর কিছু না কিছু খাওয়া উচিত। দৌড়ের আগে অবশ্যই চর্বি ও কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত। গলা যেন শুকিয়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শীতকালে পানিশূন্যতার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
দৌড়ের আদর্শ মান
প্রতি সপ্তাহে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকে দৌড়ের জন্য আদর্শ দূরত্ব হচ্ছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মাইল। আর ধৈর্য্য ধরে পুরোটা পথ এক টানা দৌড়ানোর চেয়ে গতি পরিবর্তন করে করে দৌড়ানো হৃদপিণ্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর।
পড়ুন: রাজু ভাস্কর্যের সামনে নৃত্যরত ইরা: সপ্রতিভ উত্থানে এক বাংলাদেশি ব্যালেরিনা
দৌড় পরবর্তী প্রয়োজনীয় চেক-আপ
কার্ডিওমায়োপ্যাথির সাথে দৌড়বাজের বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক অবস্থা বা দৌড়ের গতির সাথে সম্পর্কিত নয়। তাই ঝুঁকির মাত্রার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার একমাত্র উপায় কার্ডিয়াক এমআরআই করা এবং দৌড়ের শেষে রক্ত পরীক্ষা করা।
শেষাংশ
ভারসাম্যপূর্ণভাবে পরিমিত পরিমাণে দৌড়ের অনুশীলন দৌড়ের সময় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। মূলত এটি প্রতিটি ব্যয়ামের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পরিমিত পরিমাণে সঠিক সুষম খাদ্য গ্রহণ যেমন দেহের জন্য উপকারী ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ও অনিয়মিত দৌড়াদৌড়িতে হীতে বিপরীত হতে পারে। দিন দিন পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে খাদ্যে ভেজাল বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্যের প্রতি আলাদাভাবে সতর্ক হতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, তা করতে যেয়ে যেন স্বাস্থ্যের উপর অতিরিক্ত বোধা চাপিয়ে দেয়া না হয়।
পড়ুন: মুকেশ আম্বানিকে হারিয়ে এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি
২ বছর আগে