সুরসম্রাজ্ঞী
সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর: ভারতীয় সংগীতের জগতে অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল নক্ষত্র
“ফুরালো প্রাণের মেলা, শেষ হয়ে এলো বেলা” যেন গানটির এই কথার পথ ধরেই ফিরে গেলেন আপন নীড়ে গানটির শিল্পী কোকিলকোন্ঠী লতা মঙ্গেশকর। দীর্ঘ ২৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন এই সুরসম্রাজ্ঞী। শত পার্থিব পুরস্কারের ম্লান তেপান্তরে তাঁর সব থেকে অমূল্য বিষয়টি হচ্ছে, এখনো কোটি সঙ্গীতপ্রেমিদের কানে গুনগুন করে বাজে তাঁর কন্ঠটি। ভারতের নাইটিঙ্গেল খ্যাত এই বৈচিত্রপূর্ণ গানের পাখির বর্ণাঢ্য সঙ্গীত জীবনকে উদ্দেশ্য করেই আজকের ফিচার।
ব্যক্তি জীবনে একজন লতা মঙ্গেশকর
মারাঠি সঙ্গীত পরিবারে মেয়ে লতা মঙ্গেশকরের জন্ম ১৯২৯ এর ২৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ-অধীন ভারতের ইন্দো প্রদেশে, যেটি বর্তমানে মধ্য প্রদেশ হিসেবে পরিচিত। বাবা দীনানাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি এবং কোঙ্কনি সঙ্গীতের ধ্রুপদী গায়ক এবং থিয়েটার অভিনেতা। মা শেবন্তী ছিলেন একজন গুজরাটি মেয়ে।
জন্মের সময় লতার নাম রাখা হয়েছিল ‘হেমা’। তার বাবা-মা পরে তাঁর বাবার একটি নাটকের নারী চরিত্র লতিকার নামানুসারে তাঁর নাম পরিবর্তন করে লতা রাখেন।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে লতা সবার বড় এবং তাঁর ভাইবোন মীনা, আশা, ঊষা এবং হৃদয়নাথ, প্রত্যেকেই দক্ষ গায়ক এবং সঙ্গীতজ্ঞ।
লতা তাঁর প্রথম সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন বাবার কাছ থেকে। পাঁচ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবার সঙ্গীত নাটকে অভিনেত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
আরও পড়ুন: চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর
লতা মঙ্গেশকর-এর সঙ্গীত শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প
১৯৪২ সালে লতার বয়স যখন মাত্র ১৩, তখন তার বাবা হৃদরোগে মারা যান। নবযুগ চিত্রপট সিনেমা কোম্পানির মালিক এবং মঙ্গেশকর পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাস্টার বিনায়ক দামোদর কর্ণাটকি তাদের দেখাশোনা করতেন। মুলত তাঁর হাত ধরেই লতার প্রথমে অভিনয় এবং পরবর্তীতে সঙ্গীত জগতে পদার্পন ঘটে।
১৯৪৮ সালে বিনায়কের মৃত্যুর পর, তৎকালীন প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক গোলাম হায়দার তাকে শিল্পী হওয়ার জন্য দিক-নির্দেশনা দিতেন। তিনি লতাকে প্রযোজক শশধর মুখার্জির কাছে নিয়ে আসেন। মুখার্জি তখন শহীদ (১৯৪৮) চলচ্চিত্রের জন্য শিল্পী খুঁজছিলেন। তিনি লতার কণ্ঠকে "খুব চিকন" বলে উড়িয়ে দেন। এতে হায়দার বিরক্ত হয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে আগামী দিনে প্রযোজক এবং পরিচালকরা "লতার পায়ে পড়ে তাদের চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার জন্য ভিক্ষা করবেন"।
হায়দার লতাকে মজবুর (১৯৪৮) চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন, যেখানে তাঁর "দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহিন কা না ছোরা" গানটি ছিলো তাঁর জীবনের প্রথম সফল চলচ্চিত্রের গান।
পড়ুন: লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো: প্রধানমন্ত্রী
লতা মঙ্গেশকর-এর সঙ্গীত জীবন: সঙ্গীতের সোনালী অধ্যায়
বাংলা গানে লতার আত্মপ্রকাশ হয়েছিল ১৯৫৬ সালে "আকাশ প্রদীপ জ্বলে" হিট গানের মাধ্যমে। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে প্রকাশিত হয় "যারে উড়ে যারে পাখি", "না যেওনা" এবং "ওগো আর কিছু তো নয়"-এর মতো তাঁর কয়েকটি হিট গান।
১৯৫৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মধুমতি সিনেমার গান "আজা রে পরদেশী" এর জন্য শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন লতা মঙ্গেশকর।
১৯৬০-এর দশকে তাঁর সেরা বাংলা গানগুলো ছিল "একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি", "সাত ভাই চম্পা", "কে প্রথম দেখেছি", "নিঝুম সন্ধ্যা", "চঞ্চল মন আনমোনা," "আষাঢ় শ্রাবণ," "বলছি তোমার কানে কানে", এবং "আজ মন চেয়েছে"।
১৯৬০-এর ছবি মুঘল-ই-আজম-এ লতার গাওয়া "পিয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া" গানটি এখনও বিখ্যাত।
১৯৬২ সালে "কাহিন দীপ জালে কাহিন দিল" গানের জন্য তিনি তাঁর দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন।
২ বছর আগে
চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর
কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর আর নেই। ৯২ বছর বয়সী এই সুরসম্রাজ্ঞী রবিবার সকালে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মারা যান।
বিবিসি জানায়, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর জানুয়ারির শুরুর দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল খ্যাতিমান এই শিল্পীকে।
রবিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
লতা মঙ্গেশকর এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন। এছাড়া ভারতের ৩৫টি আঞ্চলিক ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই।
এই শিল্পী ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইন্দোর রাজ্যের রাজধানী ইন্দোরে (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ) জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করেন। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়। এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীর পর এই পদক পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সঙ্গীতশিল্পী।
১৯৭৪ সালে লতা মঙ্গেশকর প্রথম ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত লতা মঙ্গেশকর আইসিইউতে
বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ৩৯ কোটি ২৯ লাখ ছাড়িয়েছে
ভারতে বেকারত্বের হার কমে ৬.৫৭ শতাংশ
২ বছর আগে