পারিবারিক আদালত
বাবার মামলা খারিজ, দুই সন্তান থাকবে জাপানি মায়ের কাছে
সেই দুই শিশু তাদের বাংলাদেশি বাবার কাছে নয়, জাপানি মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার বিকালে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান বাবা ইমরান শরীফের করা মামলা খারিজ করে এ আদেশ দেন।
এদিকে, রায় শুনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো। এছাড়া, বড় মেয়ে নাকানো জেসমিন মালিকাও এ রায়ে খুশি।
আরও পড়ুন: দুই সন্তান জাপানি মায়ের কাছে থাকবে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
২২ জানুয়ারি দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে একই আদালত রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন।
জাপানি মা নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বাংলাদেশি বাবা প্রকৌশলী ইমরান শরীফ দুই সন্তান নিজ হেফাজতে রাখার যে মামলা করেছেন তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
ফলে দুই শিশু মায়ের কাছেই থাকছে।
আদালত মনে করছেন, মায়ের জিম্মায় থাকলে শিশুদের মঙ্গল হবে। তাই দুই শিশুকে জিম্মায় নিতে বাবা যে আবেদন করেছিলেন তা খারিজ করে দেন আদালত।
রায়ে আদালত আরও জানান, মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা। এছাড়া দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ যে মামলা করেছিলেন তাও খারিজ করে দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, নাবালক বা নাবালিকা-তাদের হেফাজত নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি মঙ্গল যেটি তা গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক তথা সব কিছু বিবেচনায় রেখে মামলা নিষ্পত্তিতে গুরুত্ব দেয়া হয়।
এছাড়া বাবার কাছে থাকলে মেয়ে দুটির মঙ্গল হবে কিনা তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বাবা।
আরও পড়ুন: দুই শিশুকে বিদেশে নিতে জাপানি মায়ের আবেদন খারিজ
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, নাবালিকা দুই শিশুর বসবাসের স্থান জাপান। তাদের মা জাপানের চিকিৎসক। তাই মায়ের হেফাজতে তাদের শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তা থাকবে বলে মনে করেন আদালত।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
এদিকে ইমরান শরীফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী বলেন, এই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো।
মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই সন্তানের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে।
দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো।
এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসেন এ জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। তবে ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা সেটা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন।
পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেয়ার আদেশ দেন।
এরপর গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ।
এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।
এদিকে, গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো।
আরও পড়ুন: জাপানি মায়ের কাছে থাকবে দুই শিশু, পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তির নির্দেশ
আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর বাবা ইমরান শরিফ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে মামলা করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
১ বছর আগে
জাপানি মায়ের কাছে থাকবে দুই শিশু, পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তির নির্দেশ
বাংলাদেশি বাবার সাথে জাপান থেকে আসা দুই শিশু কন্যার জিম্মার বিষয়টি তিন মাসের মধ্যে পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এই সময়ে শিশুরা তাদের জাপানি মায়ের কাছে বাংলাদেশে থাকবেন।
দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে রবিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
সর্বোচ্চ আদালত এই দুই শিশুর জিম্মার নিয়ে বিরোধের বিষয়টি আগামি তিন মাসের মধ্যে ঢাকার ২য় অতিরিক্ত পারিবারিক আদালতকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময় পর্যন্ত শিশুরা মায়ের কাছেই থাকবে। তবে বাবা সুবিধাজনক সময়ে শিশুদের সাথে দেখা করতে পারবে। এই সময়ে শিশুদের নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না।
আদালতে মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, আহসানুল করিম ও শিশির মনির। আর বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অনির আর হক।
দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে ঢাকায় এসে গত বছরের ১৯ আগস্ট জাপানি মা নাকানো এরিকোর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট কয়েক দফায় নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সর্বশেষ গত বছরের ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে করা রিটটি (কন্টিনিউয়াস ম্যান্ডামাস) বিচারিক বিবেচনায় চলমান থাকবে উল্লেখ করে অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: দুই সন্তান জাপানি মায়ের কাছে থাকবে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
হাইকোর্ট তার আদেশে বলেন, দুই মেয়ে তাদের বাবার কাছে থাকবে। মা জাপানি নাগরিক, সেখানে তার বসবাস ও কর্মস্থল সে কারণে তিনি তার সুবিধামত সময়ে বাংলাদেশে এসে শিশুদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। এক্ষেত্রে বছরে তিন বার বাংলাদেশে তার যাওয়া আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ শিশু দুটির বাবাকে বহন করত হবে। তবে এর চেয়ে অতিরিক্ত যাওয়া-আসা বা বাংলাদেশে অবস্থানের ক্ষেত্রে খরচ মা নিজে বহন করবেন। এছাড়া বাবা মাসে কমপক্ষে দুই বার শিশু সন্তানদেরকে ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবেন।
সেই আদেশে আরও বলা হয়, গত কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত বাবদ মাকে ১০ লাখ টাকা সাত দিনের মধ্যে দিতে শিশুদের বাবার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে এই শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখতে এবং প্রতি তিন মাস পর পর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রতিবেদন দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। আর জাপানে থাকা আরেক মেয়েকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে ইমরান শরীফের করা রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে মা নাকানো এরিকো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি আপিল বিভাগ দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন। তবে বাবা ইমরান শরীফকে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯ টার মধ্যে শিশুদের সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জাপানি মায়ের করা আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
পড়ুন: দুই শিশুকে আগামী ২ দিন জাপানি মায়ের জিম্মায় দিতে নির্দেশ
২ বছর আগে