রবীন্দ্রসঙ্গীত
বৃষ্টির মধ্যেও স্বস্তি দিল ‘কোক স্টুডিও কনসার্ট’
কোক স্টুডিও আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনেকদিন পর কনসার্টের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছিল রাজধানীর সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে। এরসঙ্গে চমক হিসেবে যোগ হয় ফিফা ট্রফি। তাই ঘোষণার শুরু থেকেই ছিল বেশ আলোচনা। নির্ধারিত হয়েছিল বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে কোক স্টুডিওর কনসার্ট।কিন্তু সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় শুরুতে বিপর্যস্ত হয় পুরো আয়োজন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করতে থাকেন। সবারই ধারণা ছিল কাঙ্খিত কনসার্টটি হয়তো আর দেখা হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারো আনন্দে ভাটা পড়েনি। রাত ৯টায় জ্বলে উঠে লাল-নীল মঞ্চ।আয়োজনের শুরুতে দল নিয়ে মঞ্চে উঠেন অর্ণব। আর সঙ্গে ছিলেন সুনিধি নায়েক। রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ’ দিয়ে শুরু হয় তাদের পারফরমেন্স। স্বস্তি আসে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে। তাদের চিৎকারে ভরে উঠে কনসার্ট প্রাঙ্গণ। বৃষ্টিস্নাত রাতে সুরের মূর্ছনায় মেতে উঠে সবাই।
আর ও পড়ুন: অভিনেত্রী শাওনের বাসায় এসি বিস্ফোরণ থেকে আগুনঅর্ণবের পর মঞ্চে দেখা দেন পান্থ কানাই ও অনিমেষ রায়। তাদের ‘নাসেক নাসেক’ ও ‘দোল দোল দুলুনি’ গান দুটির ফিউশনে ততক্ষণে মাঠ জমিয়ে তোলেন। কনসার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক ছিল, সেই রেশ ততক্ষণে কেটে গেছে।এরপর নজরুলসঙ্গীত ‘বুলবুলি’ দিয়ে মঞ্চ মাতান ঋতুরাজ ও নন্দিতা। এরপর আবারও মঞ্চে উঠেন অর্ণব। এবার তার সঙ্গে ছিলেন বগা তালেব। তারা পরিবেশন করেন ‘চিলতে রোদে’ এবং ‘ও কি একবার আসিয়া’ গানের ফিউশন।কনসার্টে দর্শকদের মাতামাতি যখন তুঙ্গে তখন মঞ্চে উঠেন মিজান ও মমতাজ। শুরুতে মমতাজের অনুরোধে সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর মিজানের সঙ্গে মমতাজের ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’ ও ‘বাবা মাওলানা’র ফিউশন দিয়ে আবারও মেতে উঠেন দর্শক।
আর ও পড়ুন: গায়ক হায়দার হোসেনের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্নকোক স্টুডিও কনসার্টের আরও চমক হিসেবে ছিল ব্যান্ড লালন, নেমেসিস, তাহসান, ওয়ারফেজ, ইন্ট্রোয়েট,জালালি সেট এবং নগরবাউল জেমস।একে একে সবার পারফরমেন্স শেষে মঞ্চ উঠেন জেমস। ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো’ দিয়ে শুরু করেন তিনি। কনসার্ট প্রাঙ্গণ তখন সবচেয়ে উত্তাল। জেমসের কণ্ঠে আরও শোনা যায় ‘দুষ্ট ছেলের দল’ ও ‘পাগলা হাওয়া’ গান দুটি। আর শেষ করেন হিন্দি গান ‘ভিগি ভিগি’ দিয়ে।কোকাকোলাকে সঙ্গে নিয়ে পুরো আয়োজনটি করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কনসার্টের মঞ্চে বিকালে ফিফা ট্রফি নিয়ে মঞ্চে উঠেছিলেন ফরাসি বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার ক্রিস্তিয়ান কারেম্বুক। তিনি জানান, বৃষ্টির মধ্যেও পুরো আয়োজনের ব্যাপারে তিনি সন্তষ্ট এবং সম্মানিতবোধ করছেন।
আর ও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মুক্তির দিন ঢাকা প্রেক্ষাগৃহে ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড: ডমিনিয়ন’
২ বছর আগে
বাংলা গানের স্বর্ণযুগের শেষ তারকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
আধুনিক বাংলা গানের জীবন্ত দলিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। এছাড়াও নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, শাস্ত্রীয়সঙ্গীত, লঘু শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও হিন্দি চলচ্চিত্রেও ছিল তার বিস্তৃতি। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম এই গায়িকার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। এই প্রয়াত কিংবদন্তির জন্ম ৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে।
১২ বছর বয়সে প্রথম গান
কলকাতা আকাশবাণীর ‘গল্পদাদুর আসর’-এ ১২ বছর বয়সে প্রথম গেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেখান তার প্রথম পারিশ্রমিক ছিল পাঁচ টাকা। এক বছর পর তার প্রথম বেসিক রেকর্ড প্রকাশ হয় এইএমভির ব্যানার থেকে। গানের কথা ও সুর করেছিলেন গিরিন চক্রবর্তী। এক দিকে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়ে যারে’, উল্টো পিঠে ‘তোমারো আকাশে ঝিলমিল করে চাঁদের আলো।’ এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। দুই বছরের মধ্যে বাংলা সিনেমায় গানের সুযোগ পান তিনি। প্রথম ‘অঞ্জননগড়’ এর সংগীত পরিচালক ছিলেন রাইচাঁদ চট্টোপাধ্যায়।
পরিবার ছিল সন্ধ্যার সংগীতের হাতেখড়ি
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও মা হেমপ্রভা দেবী। ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ। সন্ধ্যার বাবা ছিলেন কৃষ্ণভক্ত। বাবার কাছেই প্রথম গান শেখা। সন্ধ্যার মা-ও গান গাইতেন। নিধুবাবুর টপ্পা ছিল প্রিয়। মায়ের গানে মুগ্ধ হতেন সন্ধ্যা। ভাবতেন, না শিখে একজনের গলায় এত সূক্ষ্ম কাজ আসে কী করে!
আরও পড়ুন: কিংবদন্তি গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর নেই
শচীন দেববর্মনের হাত ধরে বোম্বে যাত্রা
৪০’র দশকের শেষের কথা। এক সিনেমার গান রেকর্ডিং করে বাড়ি ফিরেছেন সন্ধ্যা। শচীন দেববর্মনের পরিচিত এক ব্যক্তি সন্ধ্যার বাড়িতে এসে জানান শচীন দেব তাকে বম্বে নিতে চান। এমনি তার স্ত্রী মীরা দেব সন্ধ্যার গান শুনতে চেয়েছিলেন। আর শুনেই ভালো লাগে তার। শচীনদেব নিয়ে গেলেও মুম্বাইয়ে প্রথম ‘তারান’ সিনেমায় প্লেব্যাকের সুযোগ হল অনিল বিশ্বাসের সুরে।
সন্ধ্যার সঙ্গে প্রায় দেখা করতেন লতা মঙ্গেশকর
অনিলের সুরে ‘তারানা’ সিনেমায় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে সন্ধ্যার পরিচয়। ‘বোল পাপিহে বোল রে, তু বোল পাপিহে বোল’ গানটিতে অভিনেত্রী মধুবালার লিপে লতার কণ্ঠ। সন্ধ্যার কণ্ঠ ছিল শ্যামার লিপে। পরিচয়ের কিছু দিনের মধ্যেই লতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়ে যায় সন্ধ্যার। লতা প্রায়ই আসতেন এভারগ্রিন হোটেলে সন্ধ্যার কাছে। সাধারণ বেশভূষা, আন্তরিক ব্যবহার। লতাকে ভালো লেগেছিল সন্ধ্যার। লতার সঙ্গে গান নিয়ে নানা আলোচনা হতো। পরবর্তীতে সন্ধ্যার ঢাকুরিয়ার বাড়িতেও এসেছেন লতা।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গেয়েছেন সন্ধ্যা
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলার মাটিতে। এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গাইলেন ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে’। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি গানটি প্রথম প্রচারিত হয় আকাশ বাণীতে।
আরও পড়ুন: সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী আর নেই
সফলতার ঝুলিতে অনেক পুরস্কার
'আমাদের ছুটি ছুটি' এবং 'ওরে সকল সোনা মলিন' হল গান দুটির জন্য ১৯৭১ সালে সেরা নারী প্লে ব্যাক সিঙ্গার ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। তাছাড়া ১৯৬৫ ও ১৯৭২ সালে দু’বার পেয়েছেন বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৯ সালে তাঁর ঝুলিতে এসেছে ভারত নির্মাণ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। ২০১১ সালে তাকে বঙ্গ বিভূষণ সম্মান দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
ফিরিয়ে দিয়েছেন ‘পদ্মশ্রী’
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ফোন দিয়ে বলা হয় ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে তাকে সম্মানিত করা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়াত এই কিংবদন্তি জানিয়ে দিয়েছিলেন এই সম্মান গ্রহণ করবেন না তিনি। পদ্মশ্রী প্রত্যাখান করার কারণ হিসেবে এক প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘এভাবে কেউ পদ্মশ্রী দেয়? এরা জানে না আমি কে? ৯০ বছরে আমায় শেষে পদ্মশ্রী নিতে হবে? আর এই ফোন করে বললেই চলে যাব আমি?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি, আমার পদ্মশ্রীর কোনো দরকার নেই। শ্রোতারাই আমার সব। ‘আমার শরীরটা বেশ খারাপ। আমাকে পদ্মশ্রী নেয়ার কথা বলা হয়েছিল, দিল্লি থেকে ফোন করা হয়েছে। আমি বলেছি, না আমি পারব না এই সম্মান নিতে যেতে। তারা কারণ জানতে চায়, আমি বলেছি, আমার মন চাইছে না।’
আরও পড়ুন: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০ পাচ্ছেন যারা
২ বছর আগে