ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই
হাই হিল কিভাবে পুরুষের পা থেকে নারীর পায়ে এলো?
বেশ চমকে যাওয়ার মতো হলেও ব্যাপারটি আসলেই সত্যি! বর্তমানে নারীদের ফ্যাশনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও প্রথম দিকে হাই হিল জুতা তৈরি করা হতো পুরুষদের পরার জন্য। নানান সুবিধা-অসুবিধার ঊর্ধ্বে প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভব ঘটিয়েছিলো হাই হিল ফ্যাশনের। সময়ের বিবর্তনে পা বদলের পাশাপাশি বদলেছে হাই হিল ব্যবহারের জায়গা ও উপাদান। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই একটি দরকারি টুল্স হিসেবে নারী-পুরুষ উভয়েরই পায়ের পরিধেয়ের স্বতন্ত্র সংযোজন ছিলো হাই হিল। চলুন, পুরুষের পা থেকে নারীর পায়ে হাই হিলের এই স্থানান্তরের ঘটনাটি জেনে নেয়া যাক।
হাই হিল ফ্যাশনের গোড়াপত্তন
ইতিহাসের সর্বপ্রথম দশ শতকের প্রাচীন ইরান বা পারস্যের অশ্বারোহী সৈন্যরা হাই হিল জুতা পরতো। ঘোড়াতে চড়ার সময় ভূমি থেকে পা কে উঁচু রাখার জন্য তারা এ ধরনের বিশেষ জুতাটি ব্যবহার করতো। এছাড়া এটি তাদেরকে ছুটন্ত ঘোড়ায় চড়া অবস্থায় তীর-ধনুক ও গুলি চালানোর সময় জুতার ভেতর তাদের পা কে ধরে রাখতো। ফলশ্রুতিতে সে সময়কার পারস্যের সাধারণ অশ্বারোহীরাও এক ইঞ্চি হাই হিল জুতা পরা শুরু করে।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকে ট্রান্স মডেল হিসেবে বাংলাদেশের তাসনুভা আনান শিশির
ইতিহাস জুড়ে পুরুষের হাই হিল চর্চা
শিল্প যুগের আগের সময়ে একটি ঘোড়ার মালিক হওয়া ঐশ্বর্য্যের পরিচয় ধারণ করতো, কারণ ঘোড়ার দেখাশোনা বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এর ফলে হাই হিল পরিধানকারীর ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতো।
১১ শতকের গোড়ার দিকে হাই হিল পরার জন্য স্বনামধন্য ছিলেন গ্রেট স্কিজমের পোপগণ, যারা লাল রঙের হাই হিল জুতা পরতেন।
পারস্য সৈন্য ও অভিবাসীরা হাই হিল জুতার চর্চাকে ইউরোপে নিয়ে আসে, যা পরবর্তীতে হাই হিল ফ্যাশনের জন্ম দিয়েছিলো। ইউরোপীয় অভিজাত ব্যক্তিরা নিজেদের লম্বা দেখানোর জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক কৌশল হিসেবে এই নতুন ধারাটিকে ব্যবহার করতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পুরুষদের পোশাকের সেরা ব্র্যান্ডসমূহ
ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই হাই হিলের রাজা হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর শাসনামলে মনে করা হতো- যে হিল যত উঁচু ও লাল হবে, পরিধানকারী তত বেশি শক্তিশালী হবে। তিনি ১৬৭০ সালে একটি আইন পাস করেন যে, শুধুমাত্র উচ্চবিত্তরা হাই হিল জুতা পরতে পারবে। রাজা নিজে লাল রঙের হিল বা সোলের জুতা পরার পাশাপাশি তাঁর দরবারের লোকদেরও লাল হিল পরার অনুমতি দিতেন। তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুপ্রাণিত হয়েই ৯০ দশকে জুতার ডিজাইনার ক্রিশ্চিয়ান লুবউটিন বিশ্ব জোড়া খ্যাতি পেয়েছেন।
১৭ শতকে ম্যাসাচুসেটসে একটি অদ্ভূত আইন প্রবর্তন হয়। যে মহিলারা হাই হিল জুতা ব্যবহারের মাধ্যমে পুরুষদের প্রলুব্ধ করবে, তাদেরকে ডাইনি হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে।
১৮ শতকে ইউরোপ জুড়ে রেনেসাঁ এবং ইনলাইটেনমেন্ট বিপ্লব শুরু হওয়ার সাথে সাথে পুরুষদের হিল পরার প্রবণতা কমে যেতে শুরু করে। শুধুমাত্র সামাজিক অবস্থা প্রদর্শনের জন্য হাই হিল পরা এ সময় অযৌক্তিক হিসেবে গণ্য হয়েছিলো। ১৭৪০ সালের মধ্যে পুরুষরা হাই হিল জুতা পরা বন্ধ করে দেয়।
আরও পড়ুন: মাইকেল শিরোনামে নির্মিত হবে ‘কিং অফ পপ’ মাইকেল জ্যাকসনের বায়োপিক
নারীর পায়ে হাই হিল
নারীর পায়ে হাই হিলের সবচেয়ে পুরাতন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ১২ শতকে ভারতের রামাপ্পা মন্দিরে একজন ভারতীয় নারীর ভাস্কর্যতে।
১৪০০-এর দশকে ইউরোপের মহিলারা বিশেষ করে স্পেন ও ভেনিসে উচু প্ল্যাটফর্ম যুক্ত এক বিশেষ ধরনের জুতা পরতেন যাকে চপইন বলা হতো। এগুলো মূলত এক ধরনের খড়ম, যা পা কে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা ও আবর্জনা থেকে বের করে আনার জন্য সাধারণ জুতার উপরে পরা হত।
ফরাসী রানী ক্যাথরিন ডি মেডিসি প্রথম নারী যিনি হাই হিল পরতেন। সময়টি ছিলো ১৫০০ দশকের মাঝামাঝি পর্যায়। এর আগ পর্যন্ত মহিলারা শুধুমাত্র চপইন পরতেন।
১৮ শতকে প্রথমবারের মত সাধারণ মহিলারা হাই হিল ফ্যাশন চর্চা করতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ ইতিহাসের এক অসাধারণ দলিল: জাফর ইকবাল
২ বছর আগে