পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন
যেভাবে পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন করবেন
দেশের ভেতরে ও বাইরে পাসপোর্ট একটি জরুরি নথিপত্র। অনেক ক্ষেত্রে নতুন পাসপোর্ট করার সময় সরবরাহকৃত তথ্যে ভুল হয়ে যায়। এছাড়া খুব প্রয়োজনের সময় পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য প্রথম আবেদনে তাড়াহুড়োর সময় ভুল হয়ে দু-একটা তথ্য। অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও এই ভুল করাটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল থাকা অবস্থায় পাসপোর্ট ব্যবহারে বিভিন্ন ঝামেলার সূত্রপাত ঘটতে পারে। তাই সময়, শ্রম ও আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে আগে থেকেই সাবধান হওয়া দরকার। আর এখানে আসে পাসপোর্টে ভুল সংশোধন করার কথা। ২০২১ এর ৯ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্টে ভুল সংশোধন বা পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আজকের ফিচারটিতে আলোচনা করা হবে পাসপোর্ট ভুল সংশোধন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য নিয়ে।
এক নজরে পাসপোর্টে ভুল সংশোধন বা পরিবর্তন পদ্ধতি
বাংলাদেশের যে কোন ধরনের পাসপোর্টের ভুল সংশোধনের জন্য পাসপোর্ট রি-ইস্যুর আবেদন করতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশ সরকারের ফর্মস বাতায়ন ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করে পূরণ করতে হবে। অতঃপর পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে জমা রশিদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
সব শেষে তৈরিকৃত সম্পূর্ণ আবেদন পত্রটির দুইটি কপি তৈরি করে এক কপি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক সত্যায়িত করাতে হবে। অতঃপর আবেদনপত্রে দুটি কপি নিয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যেয়ে সহকারি পরিচালকের কক্ষে জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ ও সময়
এরপর থেকে পাসপোর্টের ধরনের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত সরকারি কার্যদিবস পর পাসপোর্ট সংশোধন বা পরিবর্তনের আবেদন ফর্মে প্রদানকৃত মোবাইল নাম্বারে বার্তা আসবে। তারপর পাসপোর্ট অফিসে যেয়ে সংগ্রহ করা যাবে সংশোধিত কিংবা পরিবর্তিত পাসপোর্টটি।
পাসপোর্টে কোন কোন তথ্যগুলো সংশোধন বা পরিবর্তন করা যায়
বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীদের নাম, জন্ম তারিখ, বাবা-মায়ের নাম, পেশা, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং বৈবাহিক অবস্থায় কোন ভুল থাকলে অথবা প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্য সেগুলোর যথাযথ সংশোধন বা পরিবর্তন করে নেয়া যাবে।
আরও পড়ুন: পড়ুন: পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
পাসপোর্ট সংশোধন বা পরিবর্তন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
পাসপোর্টধারীর নাম ও জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে
১। পাসপোর্টধারীর ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রের ফটোকপি (এক্ষেত্রে অবশ্যই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন থাকতে হবে)
২। পাসপোর্টধারীর জেএসসি অথবা এসএসসি অথবা এইচএসস-এর সমমানের পরীক্ষার সনদপত্রের ফটোকপি
৩। বিবাহিত পাসপোর্টধারীর ক্ষেত্রে বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি
এখানে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে- জন্ম তারিখ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সংশোধন করা যায়।
আরও পড়ুন: বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করার নিয়ম
পাসপোর্টধারীর বাবা-মায়ের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে
১। পাসপোর্টধারীর জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদের ফটোকপি
২। জেএসসি বা এসএসসি বা এইচএসসি এর সমমানের পরীক্ষার সনদপত্রের ফটোকপি
৩। বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
পাসপোর্টধারীর পেশা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে
১। পাসপোর্টধারী যে কর্মক্ষেত্রে কাজ করেন তার প্রত্যয়নপত্র
২। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহকৃত পরিচয়পত্রের ফটোকপি
আরও পড়ুন: মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
পাসপোর্টে স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা সংশোধন বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে
স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পাসপোর্টধারীর আবার নতুন করে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে। কিন্তু বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদনের দরকার হয় না।
পাসপোর্টধারীর বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে
এক্ষেত্রে পাসপোর্টধারীকে আবেদনপত্রের সঙ্গে তার কাবিননামা সংযুক্ত করতে হবে।
আরও পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
পাসপোর্ট সংশোধন ফি
সাধারণ ক্ষেত্রে সংশোধিত পাসপোর্ট-এর জন্য সরকারি ২১ কর্মদিবস প্রয়োজন হয়। এর জন্য পাসপোর্ট রি-ইস্যু ফি ৩,৪৫০ টাকা। জরুরি বা ৭ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট সংশোধন করাতে হলে পাসপোর্ট সংশোধন ফি পড়বে ৬,৯০০ টাকা।
এই ফি যে কোন তফসিলভূক্ত ব্যাংকে জমা দেয়া যেতে পারে। সোনালী ব্যাংক ছাড়াও ব্যাংক এশিয়া, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক পাসপোর্ট সংশোধনের ফি জমা নিয়ে থাকে। ফি জমাদানের পর ব্যাংক থেকে একটি জমা রশিদ দেয়া হবে। এতে থাকা রশিদ নম্বর সহ ব্যাংকের যাবতীয় তথ্য আবেদনপত্রের ‘ফি প্রদান সংক্রান্ত তথ্য’-এর অংশে লিখতে হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা ২০২১
অবশেষে
পাসপোর্টে ভুল সংশোধনের এরকম নিরবচ্ছিন্ন নীতিমালা থাকার পরেও নতুন পাসপোর্ট করার সময় সতর্কতার সাথে আবেদন ফর্ম পূরণ করা উচিত। কারণ খুব প্রয়োজনের সময় কাগজপত্র যথাসময়ে প্রস্তুত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এছাড়া সংশোধিত হয়ে পাসপোর্টটি হাতে পাবার ক্ষেত্রেও প্রায়শই কাল বিলম্ব হয়। তাই তথ্য প্রদানের মুহূর্তে যেন কোন ভুল না হয় সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়। আর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র সহ সংযুক্ত কাগজপত্রের মধ্যে তথ্যের সামঞ্জস্যতা থাকা জরুরি। নতুনবা পাসপোর্ট সংশোধের আবেদনের পূর্বেই লেগে যেতে পারে আরো বেশি সময়।
২ বছর আগে