শান্তি আলোচনা
ইউক্রেনে ৮২৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনায় ইতোমধ্যে ভাটা পড়েছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করতে ৮২৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই চুক্তির আওতায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বিষয়টি কংগ্রেসকে অবহিত করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ইউক্রেনকে ৩ হাজার ৩৫০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, সমপরিমাণ জিপিএস ইউনিট, যন্ত্রাংশ, খুচরা সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে। আর এসব অস্ত্রসস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সামরিক সহায়তার (ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং) পাশাপাশি ন্যাটোর মিত্রদেশ ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ে থেকে পাওয়া তহবিল ব্যবহার করবে ইউক্রেন।
আরও পড়ুন: শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে এগিয়ে নেবে। সেইসঙ্গে ইউক্রেনের নিরাপত্তা জোরদার করবে।
এ ছাড়া, ইউক্রেনকে ইউরোপের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি শক্তি হিসেবেও অভিহিত করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
সম্প্রতি ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলাস্কায় বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে বৈঠকের পরও ইউক্রেনে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া, এরই মধ্যে এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র।
গত জুলাইয়ে ইউক্রেনকে আরও দুটি অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ৩২২ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রস্তাবের আওতায় ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সাঁজোয়া যুদ্ধযান সরবরাহ করার কথা ছিল। আরেকটি প্রস্তাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং স্বচালিত কামানভিত্তিক যানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কারের জন্য ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ দেওয়া হয়।
৯৮ দিন আগে
কেন জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসতে নারাজ পুতিন?
সম্প্রতি আলাস্কা সম্মেলনের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার পরবর্তী ধাপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হন।
তবে এ বিষয়ে ত্রেমলিনের জবাবের প্রতীক্ষায় ছিল সবাই। এরপর সোমবারের (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউসের বৈঠকের পর নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে মস্কো এবং তা ইউরোপ-আমেরিকার নেতাদের সঙ্গে মিলছে না।
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্রেমলিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি পর্যায় উন্নতকরণের সুযোগের ধারণাটি আলোচনায় এসেছে। তবে কোন নেতা বা প্রতিনিধিকে সেই পর্যায়ে উন্নীত করা হতে পারে— এমন কোনো নাম তিনি উল্লেখ করেননি এবং সুস্পষ্ট করেও কিছু বলেননি।
এরপর মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আরেকটু সমঝোতার সুরে বলেন, দ্বিপক্ষীয় কিংবা ত্রিপক্ষীয় কোনো কাজই আমরা প্রত্যাখ্যান করছি না। তবে যেকোনো আলোচনায় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
পুতিনের আপত্তির কারণ কী হতে পারে?
এসব বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠকের বিষয়ে সম্মত হওয়ার মতো অবস্থানে পৌঁছায়নি ক্রেমলিন।
অবশ্য এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। কারণ এই যুদ্ধ একতরফাভাবে পুতিনই শুরু করেছিলেন। পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত ‘পিপলস রিপাবলিক’ দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেশটিতে হামলা শুরু করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
পুতিন এ-ও মনে করেন, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মিক জায়গা থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ইউক্রেনকে আলাদা করা ছিল ‘ঐতিহাসিক ভুল’।
চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া কর্মসূচির পরিচালক ওরিসিয়া লুতসেভিচ বলেন, যদি এই বৈঠক হয়, তাহলে পুতিনকে এই ব্যর্থতা মেনে নিতে হবে যে তিনি এমন এক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন, যাকে তিনি হাসির পাত্র বলে পরিহাস করেন এবং যে দেশের অস্তিত্বই তিনি স্বীকার করেন না।
তাছাড়া রাশিয়ার মানুষদেরও বোঝানো কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি। ওরিসিয়া বলেন, দিনের পর দিন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে রুশ নাগরিকদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে যে, জেলেনস্কি একজন নাৎসি, ইউক্রেন হলো পশ্চিমাদের হাতের পুতুল রাষ্ট্র… জেলেনস্কির সরকার অবৈধ। তাহলে হঠাৎ তিনি কেন তার সঙ্গে কথা বলতে যাবেন? ক্রেমলিন এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে— বৈঠক হলে সেটিই হয়ে উঠবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মস্কো যে শুধু জেলেনস্কি সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে চলেছে, তা-ই নয়। তারা দেশটির নির্বাচনের স্থগিতাবস্থা নিয়েও বারবার প্রশ্ন তুলেছে। যদিও সামরিক আইনের আওতায়ই ইউক্রেনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।
সর্বশেষ শান্তি আলোচনার প্রস্তাবে যেকোনো চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির আগে ইউক্রেনে নির্বাচনের দাবি করেছে মস্কো। এমনকি তারা জেলেনস্কির নামও মুখে নেন না, বলে কিয়েভ প্রশাসন।
একটু পেছনে ঘুরে তাকালে দেখা যাবে, এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি তুরস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে প্রথম সরাসরি আলোচনায় জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে এক ইতিহাসের বই লেখকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন পুতিন।
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের সিনিয়র ফেলো এবং রাশিয়া বিষয়ক খবর ও বিশ্লেষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আর পলিটিকের প্রতিষ্ঠাতা তাতিয়ানা স্তানোভায়ার ভাষ্যে, আসলে ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না পুতিন। তার কাছে এই যুদ্ধ মূলত ইউক্রেনের সঙ্গে নয়, বরং পশ্চিমাদের মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে। তবে পুতিন যদি মনে করেন যে বৈঠক সফল হতে পারে, তাহলে আবার এতে রাজি হতেও পারেন।
তাতিয়ানা আরও মনে করেন, বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে সেখানে অবশ্যই মূল বিষয়গুলো আলোচনার জন্য থাকতে হবে। এর মধ্যে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ার মতো বিষয় রয়েছে। কিন্তু জেলেনস্কি শুরু থেকেই মস্কোর এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। আর এক্ষেত্রে ট্রাম্প পরিবর্তন আনতে পারেন বলে ধারণা পুতিনের।
আরও পড়ুন: ‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
তিনি বলেন, রাশিয়া যা চাইছে তা অর্জনে ট্রাম্প সহায়ক হতে পারে বলে মনে করে মস্কো। এ কারণে রুশ দাবিগুলো নিয়ে কিয়েভকে আরও নমনীয় ও খোলামেলা হতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তাতিয়ানা।
তার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রাখতে এবার হয়তো উশাকভের প্রস্তাব অনুযায়ী ইস্তানবুলে বৈঠকে বসতে রাজি হতে পারেন পুতিন। সেখানে প্রতিনিধি দলে উশাকভ ও ল্যাভরভকেও পাঠাতে পারেন প্রেসিডেন্ট। তবে জেলেনস্কির সঙ্গে এমন কোনো বৈঠকে বসবে না ত্রেমলিন, যেখানে তাদের সব দাবি প্রত্যাখ্যান করা হবে।
এদিকে, সোমবার রাতে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে এক বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
ওই পোস্ট দিয়ে তিনি ঘুমাতে গেলেন, আর উঠে বুঝতে পারলেন যে বিষয়টি এখনো চূড়ান্তই হয়নি। পরে সুর বদলে ফক্স নিউজে বলেন, আমি একভাবে পুতিন আর জেলেনস্কির মধ্যে সেট-আপটা করেছিলাম। তবে জানেনই তো, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তো তাদের! আমরা তো ৭ হাজার মাইল দূরে।’
কিন্তু কোনো ছাড় না দিয়েই পুতিন যখন আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সম্মানিত হয়েছেন, তখন বর্তমান পরিস্থিতিতে তার এই বৈঠকে রাজি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এমনকি আগস্টের শুরুর দিকে ইউক্রেনে ড্রোন হামলার মাত্রা সামান্য কমালেও সোমবার রাত থেকে আবার তা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে সোমবার রাতভর মোট ২৭০টি ড্রোন ও ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে মস্কো।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জেলেনস্কির ওপর ট্রাম্পের চাপে যদি কাঙ্ক্ষিত ফল না পায় রাশিয়া, তাহলে তাদের সামরিক শক্তি তো আছেই।
তবে যে প্রশ্নের উত্তর আসলে কেউই জানে না, সেটি হলো— এই আলোচনা ব্যর্থ হলে এর দায় কার ঘাড়ে চাপাবেন ট্রাম্প?
১০৬ দিন আগে
শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনকে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় নেতারা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই শীর্ষ বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের নেতারা বৈঠকে বসেন, যেখানে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং ভবিষ্যতে রাশিয়ার হামলা ঠেকানোর উপায়।
নিরাপত্তা নিয়ে কী ধরনের নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
বৈঠকের পর জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বিস্তারিত আলোচনার পর আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ হবে। প্রায় ৩০টি দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হতে পারে, যাদের বলা হচ্ছে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’। যুক্তরাষ্ট্রও কিছু সহায়তা করবে, তবে কীভাবে সেটি করবে তা পরিষ্কার নয়।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার জেলেনস্কি বলেন, এই সহায়তা নানা রূপে আসতে পারে, যা হতে পারে সরাসরি সৈন্য পাঠানো, গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ, আকাশসীমা ও কৃষ্ণসাগরে নিরাপত্তা দেওয়া, এমনকি শুধু আর্থিক সহায়তাও হতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে ইউরোপের কোন কোন দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত?
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা আশ্বাস রক্ষার অংশ হিসেবে সৈন্য পাঠাতে রাজি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, ‘আমাদের ইউক্রেনকে স্থলে সহযোগিতা করতে হবে।’ তবে জার্মানি এ বিষয়ে আরও সন্দিহান।
বিষয়টি নিয়ে এখনো অনেক কিছু নির্ধারণ করা বাকি। তার মধ্যে পশ্চিমা সেনারা কি যুদ্ধবিরতি লাইনে অবস্থান করবে? নাকি শুধু কিয়েভ ও লভিভের মতো বড় শহরে প্রশিক্ষণ দেবে? কিংবা রুশ হামলার মুখে পড়লে তাদের কার্যপদ্ধতি কী হবে? ইত্যাদি অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ইউরোপের নেতৃত্বাধীন একটি শান্তিরক্ষা অভিযান সমন্বয় করবেন।
সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির পাশে বসে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক সহায়তা আসবে।’ তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে মূল দায়িত্ব ইউরোপের দেশগুলোকেই নিতে হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘তারাই সামনের সারির নিরাপত্তা রক্ষক, কারণ তারা সেখানেই রয়েছে। তবে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনতে চায় ইউক্রেন। কিয়েভ মনে করে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হতে পারে এই চুক্তি। তবে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কতটা অবদান রাখবে, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদের সম্ভাবনাকে সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন তিনি, অথচ এটিই ইউক্রেনে ভবিষ্যত রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ হতে পারত বলে মনে করে কিয়েভ।
আরও পড়ুন: জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন: ট্রাম্প
আবার ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা অভিযানে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব সেনা পাঠাবে— এমন সম্ভাবনাও নেই। এক্ষেত্রে তুলনামূলক বাস্তবসম্মত একটি বিকল্প হতে পারে, পেন্টাগন প্রস্তাবিত আকাশ প্রতিরক্ষা বা ‘স্কাই শিল্ড’ উদ্যোগে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পশ্চিম ও মধ্য ইউক্রেন, বিশেষ করে কিয়েভ শহরের ওপর আকাশ প্রতিরক্ষা জোন থাকবে, যা ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান দ্বারা পরিচালিত হবে।
রাশিয়া কী বলছে?
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, আলাস্কার বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিন সম্মত হয়েছেন যে ইউক্রেন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়ার অধিকার রাখে।
এ বিষয়ে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, বিষয়টি ন্যাটোর আওতার বাইরে থাকলেও তা কার্যত ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫–এর সমতুল্য হবে, যেখানে একটি দেশের ওপর আক্রমণকে সবার ওপর আক্রমণ হিসেবে ধরা হবে।
তবে উইটকফের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে রাশিয়ার বক্তব্য মেলে না। ক্রেমলিন বলেছে, পশ্চিমা সৈন্যদের ইউক্রেনে উপস্থিতির ঘোর বিরোধী রাশিয়া। যেকোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে (ইউক্রেনে) শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেওয়ার সম্ভবনা নেই।
এদিকে, রাশিয়ার অস্তিত্বগত নিরাপত্তা সংকটের দোহাই দিয়ে পুতিনের যুদ্ধ লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের পুরোটাই দাবি করছেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে এখনও ইউক্রেনের কাঙ্ক্ষিত যেসব অঞ্চল রাশিয়া নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি, সেগুলোরও দখল চান রুশ পেসিডেন্ট।
এর পাশাপাশি তিনি ইউক্রেনের ‘সামরিকীকরণ ও নাৎসিকরণ’ প্রক্রিয়ার স্থগিত চান। অর্থাৎ, পুতিন চান, জেলেনস্কিকে অপসারণ করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার কঠোরভাবে সীমিত করা হোক।
আপাতদৃষ্টিতে ইউক্রেনে শান্তি পুনর্স্থাপনে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতায় অগ্রগতি দেখা গেলেও মৌলিক অবস্থান থেকে সরেনি রাশিয়া। পুতিন এখনও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করেন না, এমনকি যুদ্ধ থামানোর কোনো ইঙ্গিতও দেননি তিনি। এত কিছুর মধ্যেও রুশ বোমাবর্ষণ থামেনি, যাতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইতিহাস কী বলে?
এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে কিয়েভ তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ছেড়ে দিয়েছিল। বুদাপেস্ট স্মারকলিপির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন ও ফ্রান্স প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ইউক্রেনের ‘ভৌগোলিক অখণ্ডতা’ ও ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা’ রক্ষা করবে এবং ‘বল প্রয়োগ ও হুমকি’ থেকে বিরত থাকবে।
সেই সময় অনেক ইউক্রেনীয় রাজনীতিক মনে করেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়লে দেশটি রুশ হামলার ঝুঁকিতে পড়বে, কিন্তু ক্লিনটন প্রশাসনের এ বিষয়ে জোরাজুরিতে তা বাস্তবায়িত হয়ে যায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের মে মাসে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট লিওনিদ কুচমা এক বন্ধুত্ব চুক্তি সই করেন। পাশাপাশি ইউক্রেনের সোভিয়েত-পরবর্তী সীমান্তের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। চুক্তির অংশ হিসেবে কিয়েভ তার নৌবাহিনীর বেশিরভাগ রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে এবং ২০ বছরের জন্য সেভাস্তোপোল নৌঘাঁটি মস্কোকে ইজারা দেয়।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন দোনেৎস্ক ছেড়ে দিলে শান্তিচুক্তি সম্ভব: ট্রাম্প
এত কিছুর পরও রুশ আগ্রাসন থামানো যায়নি। ২০১৪ সালে সেনা মোতায়েন করে ক্রিমিয়া দখল ও অঞ্চলটি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে নেয় ক্রেমলিন। এখন পুতিন বলছেন, পুরো ইউক্রেনই ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার অংশ।
তাই অতীতের ভঙ্গ প্রতিশ্রুতির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউক্রেন এবার আরও স্পষ্ট নিশ্চয়তা চাইবে, তা বলাই বাহুল্য।
১০৬ দিন আগে
ইউক্রেনের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসতে চায় রাশিয়া
ইউক্রেনের সঙ্গে ফের ‘সরাসরি আলোচনা’ শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কোনো শর্ত ছাড়াই আগামী ১৫ মে তুরস্কের ইস্তানবুলে তিনি এই বৈঠক করতে চাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
এমন এক সময় তিনি এই প্রস্তাব দিয়েছেন, যখন রাশিয়াকে নিঃশর্তভাবে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন ও তার মিত্র দেশগুলো। এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে আরও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে মস্কো বলেও হুঁশিয়ারে দেন তারা। যদিও তাদের এই আল্টিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর ২০২২ সালের মার্চে ইস্তানবুলে হওয়া অসফল বৈঠকের উদহারণ টেনে সেই আলোচনাই ফের শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। রবিবার (১১ মে) টেলিভিশনে দেওয়া এক বিরল বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘স্থায়ী ও ফলপ্রসূ শান্তির দিকে এগিয়ে যেতে আন্তরিক আলোচনা করতে চাচ্ছে রাশিয়া।’
ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চলাকালীন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে একমত হওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেননি তিনি। এরআগে শনিবার ইউরোপের শক্তিধর চার দেশ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘মস্কো যদি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হয়, তাহলে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থিত তাদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সোমবার থেকে শুরু হবে। এরআগে এ বিষয়ে ট্রাম্পকে অবগত করা হয়েছে।’
এরআগে ‘খুবই উচ্চ পর্যায়ের’ বৈঠকের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তিনবছর ধরে চলা এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধে তারা একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন।’ এদিকে, শান্তি আলোচনায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে শর্ত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা তখনই হবে, যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা রাশিয়ার
মস্কোর প্রস্তাব
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে বলে দাবি করেন পুতিন। যার মধ্যে রয়েছে—জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধ রাখা, যাতে ইউক্রেনও রাজি হয়েছে; ইস্টার সানডেতে ত্রিশ-ঘণ্টার একতরফা অস্ত্রবিরতি; এছাড়াও গেল ৮ থেকে ১০ মে দুদিনের একতরফা অস্ত্রবিরতি।
ইউক্রেন বারবার এসব পদক্ষেপ ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বিপরীতে রাশিয়া নিজেই এসব অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
গেল মার্চে, ত্রিশ দিনে সীমিত একটি অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যাতে রাজি হয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু নিজস্ব শর্ত জুড়ে দিয়ে তা আটকে দিয়েছিল রাশিয়া।
রবিবার পুতিন বলেন, ‘ক্রেমলিনের এমন একটি যুদ্ধবিরতি দরকার, যা তাদের একটি স্থায়ী শান্তির দিকে নিয়ে যাবে। তারা এমন যুদ্ধবিরতি চায় না, যাতে ইউক্রেন নতুন করে অস্ত্র মজুত ও সামরিক বাহিনীতে নতুন জনশক্তি নিয়োগের সুযোগ পায়।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে কথা বলে আগামী ১৫ মে শান্তি আলোচনার আয়োজনের অনুরোধ করবেন বলেও জানান পুতিন।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন করেছিল তুরস্ক, যদিও তা সফল হয়নি। প্রস্তাবিত চুক্তিতে ইউক্রেনের ‘নিরপেক্ষ মর্যাদা, দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর আকার কতটা হবে, সেই সীমা আরোপ করে দেওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চলগুলোর মর্যাদা নিয়ে আলোচনা বিলম্বিত করা হয়েছিল।
সেই আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করে রাশিয়া। পুতিন বলেন, ‘যারা সত্যিই শান্তি চাচ্ছেন, ফের শান্তি আলোচনা শুরুর প্রস্তাব নাকচ করে দিতে পারেন না তারা।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সিআইএ কর্মকর্তার ছেলে নিহত
খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংকেত
শনিবার ইউরোপীয় নেতাদের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। চার ইউরোপীয় দেশের নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠককে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংকেত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
জেলেনস্কির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এক যৌথ বিবৃতিতে সোমবার থেকে পরবর্তী ত্রিশ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন তারা। যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক উদ্যোগের সুযোগ তৈরি করার উদ্দেশ্যে তারা এই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দাবি করেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলোর সহায়তায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের নেতৃত্ব দেবে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া যদি এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তাহলে তাদেরকে ইউরোপ ও আমেরিকার ব্যাপক সমন্বিত নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে।’
২০৭ দিন আগে
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার আহ্বান চীনের
এবার রাশিয়ার পরিক্ষিত মিত্র চীন; ইউক্রেন ও মস্কোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাতের অবসানের জন্য ১২-দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে শান্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার সকালে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিকল্পনায় রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অবসান, পারমাণবিক স্থাপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা, বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য মানবিক করিডোর স্থাপন এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় শস্য রপ্তানি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।
চীন এই সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকার দাবি করেছে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের ‘হ্রাস’ করতে এবং ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এমনকি চীন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সংঘাতে উসকানি দেয়ার অভিযোগ এনেছে এবং বলেছে তারা মূলত ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে এই সংঘাতকে টিকিয়ে রেখেছে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিরোধীতা করতে গিয়ে ক্রমেই চীন ও রাশিয়ার বৈদেশিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই সপ্তাহে মস্কো সফরের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলো শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ: বাংলাদেশসহ ৩২টি দেশ ভোট দেয়নি
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা সম্ভবত রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তারা কোনও প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
চীনের এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তার দেয়া ১২-দফা প্রস্তাব নিয়ে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেয়ার কোনও আশা আছে কিনা- বা চীনকে নিরপেক্ষ ভাবা হচ্ছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রস্তাবটি প্রকাশের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চীন যে ইউক্রেনের শান্তির পক্ষে কথা বলা শুরু করেছে, আমি এটিকে খারাপ মনে করি না। আমাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত দেশ আমাদের অর্থাৎ ন্যায়বিচারের পক্ষে আসছে।’
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বৃহস্পতিবার বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে আলোচনা করবে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ধরনই বলে দেয় যে চীন এ ক্ষেত্রে কোনওভাবেই একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি ন্যায্য এবং টেকসই শান্তি ছাড়া আর কিছুই চাই না ... তবে এই প্রস্তাবগুলো নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক হবে কিনা এ বিষয়ে আমরা সন্দিহান।’
শান্তি প্রস্তাবে প্রধানত সব দেশের ‘সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করার’- প্রয়োজনীয়তার উল্লেখসহ দীর্ঘকাল ধরে থাকা চীনা অবস্থানের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
এটিকে ‘স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতার’- অবসানও বলা হয়েছে। যেটি মার্কিন আধিপত্য এবং অন্যান্য দেশে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য এটি একটি আদর্শ শব্দ।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের খসড়া রেজ্যুলেশন: ইউক্রেনের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘একটি দেশের নিরাপত্তার বিনিময়ে অন্য একটি দেশ নিরাপত্তা পেতে পারে না এবং সামরিক ব্লকগুলোকে শক্তিশালী করে বা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা করা যায় না।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সব দেশেরই যৌক্তিকভাবে নিরাপত্তা স্বার্থ ও উদ্বেগগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত এবং সঠিকভাবে তা সমাধান করা উচিত।’
বৃহস্পতিবার চীন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং রাশিয়ার প্রতি ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে পাশ হওয়া প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
চীন সেই ১৬টি দেশের মধ্যে একটি, যারা জাতিসংঘে ইউক্রেনের পক্ষে তোলা আগের পাঁচটি প্রস্তাবের প্রায় সবকটির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বা ভোট দেয়ায় বিরত থেকেছে।
ইউক্রেন তার মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবারের প্রস্তাবটির খসড়া তৈরি করেছে। ১৪১টি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে এবং ৭টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এসময় ৩২টি দেশ ভোট দেয়ায় বিরত ছিল।
যদিও চীন খোলাখুলি মস্কোর সমালোচনা করেনি, তবে তারা বলেছে যে সংঘাত তাদের ‘কাম্য নয়’ এবং বারবার বলেছে যে কোনওভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
এটি মূলত পুতিনের বক্তব্যের প্রতিউত্তরে বলা হয়েছে।
কেননা এর আগে পুতিন তার বক্তব্যে বলেছে, রাশিয়া তার ভূখণ্ড রক্ষা করার জন্য ‘সব ধরনের উপায়’- ব্যবহার করবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধে কেউই বিজয়ী হয়না।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সকল পক্ষের উচিত যুক্তিবোধ এবং সংযম বজায় রাখা... রাশিয়া ও ইউক্রেনের সমঝোতায় সমর্থন করা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনরায় সরাসরি সংলাপ শুরু করা, ধীরে ধীরে সংঘাতের পরিস্থিতি হ্রাসের চেষ্টা করা এবং যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।’
আরও পড়ুন: রাশিয়ার নিকট যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দাবির জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ
১০১৪ দিন আগে
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু
ইউক্রেনে রুশ সেনা ঢুকার পঞ্চম দিনে দু’দেশের প্রতিনিধি দল যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, দেশটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার চায়।
এদিকে রুশ আলোচক ভ্লাদিমির মেডিনস্কি বলেছেন, মস্কোও দু’পক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট একটি চুক্তি করতে চায়।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ১৬ শিশু নিহত ও ৪৫ জন আহত: প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি
এ আলোচনা শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ সৈন্যদের অস্ত্র জমা দেয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়া তিনি অবিলম্বে ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদ দেয়ার জন্য জোটটির প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: রাশিয়ান হামলায় বিশ্বের বৃহত্তম কার্গো বিমান পুড়ে ছাই
এর আগে বিবিসি ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য দেশটির প্রতিনিধি দল ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে পৌঁছেছে।
তাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় থাকবে- যুদ্ধবিরতি ও ইউক্রেন ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার।
১৩৭৫ দিন আগে