চর্মরোগ
বন্যা: দোয়ারাবাজারে কমেছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে নরসিংপুর, বাংলাবাজার, লক্ষীপুর ইউনিয়নসহ উঁচু এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘর থেকে পানি নামলেও বাকি ৬ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘর থেকে এখনও পানি সরেনি।
কিছু এলাকায় পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ। জ্বালানি ও খাদ্য সংকট, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও পানিবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধিসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন বিশেষত নিম্নাঞ্চলের বন্যার্ত পরিবারগুলো।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চিলাই, খাসিয়ামারা ও চেলা নদীর বেড়িবাঁধ কাম সড়কের শতাধিক স্থানে ভাঙন ছাড়াও উপজেলার সবকটি পাকা ও কাঁচা সড়কজুড়ে ভাঙনসহ ধসে গেছে অনেক ব্রিজ-কালভার্ট। ফলে অফিসপাড়াসহ জেলা ও উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন পেশাদার মানুষজন।
আরও পড়ুন: সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন সংগঠনগুলো বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণসহ নানাভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। তবে বেসরকারি ত্রাণের তুলনায় সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগীরা।
পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ, বন্যা পরবর্তী গৃহ ও কৃষি পূনর্বাসনের জন্য বকেয়া কৃষিঋণ মওকুফ করে বিনা সুদে চাহিদামাফিক ঋণ বিতরণে স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, পানি দ্রুত কমছে, তবে পুরো উপজেলাজুড়ে পরপর তিনদফা আগ্রাসি বন্যায় সৃষ্ট ভাঙনে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভর্টি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে সর্বক্ষেত্রে দুর্ভোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বন্যা দুর্গত এলাকায় সরকারি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ
২ বছর আগে
বন্যা শেষে সিলেটে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির পর সিলেট ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ডায়রিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা।
সিভিল সার্জন সিলেট অফিস সূত্র জানায়, সিলেটে ১৭ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত সিলেটে ৪০০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া চর্মরোগ ও শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৫০ জন। দিন দিন পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
আরও পড়ুন: মেহেরপুরে ডায়রিয়া আক্রান্ত নারীর মৃত্যু
সূত্র জানায়, কয়েকদিনে সিলেটে ডায়রিয়ার প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। গত ১৭ মে থেকে ২২ মে রবিবার পর্যন্ত ১১৪ জন ডায়রিয়ার রোগী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ৩ দিনে তা ৫৫০ জনে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জেলায় ১৪০টি এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে তিনটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে সর্বোচ্চ ১৬টি করে মেডিকেল টিম রয়েছে। এছাড়া কানাইঘাটে ১২, জৈন্তাপুরে ১১, বিশ্বনাথে ১১, গোয়াইনঘাটে, জকিগঞ্জে, সদর ও ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি করে, ওসমানীনগরে ৯, দক্ষিণ সুরমায় ৮, বালাগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জে ৭টি করে টিম কাজ করছে। এর বাইরে জেলা শহরের জন্য তিনটি টিম রাখা হয়েছে।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মে জয় শংকর দত্ত বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে জেলায় ৪৫০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি চর্মরোগসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চর্মরোগ নিয়ে অনেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তবে ডায়রিয়া ছাড়া অন্যান্য রোগের রিপোর্টিং এখনো পুরোপুরিভাবে নেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রিপোর্টিং করা হচ্ছে। সিলেটে বন্যাপরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির তেমন অবনতি ঘটছে না। আমাদের মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের তিনটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এছাড়াও ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন চালু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা প্রতিদিন ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন করবো। যা আগামী ১৫ দিন অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, নগরীর বন্যা কবলিত প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি আর বস্তি এলাকার মানুষ বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নগরীতে এক লাখ ৬০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিনই যে এলাকায় যাচ্ছে পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট বিতরণ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, সিলেটে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগী বাড়ছে। তবে আতঙ্কজনক পর্যায়ে নয়। গ্রামীণ জনপদ নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তিত নই। তবে সিটি করপোরেশন নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। কারণ নগরীর যেসব এলাকা পানিতে তলিয়েছে এর একটা বিশাল জনগোষ্টী বস্তিবাসী। এই নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে ১৮৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবারের রিপোর্টে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭১ জনে। হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর কোন চাপ নেই। ওসমানী হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত কিছু রোগী থাকলেও তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন। নগরীর শাহী ঈদগাহের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর কোন চাপ নেই। সব মিলিয়ে সিলেটের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুব একটা খারাপ বলা যাবে না।
আরও পড়ুন: ডায়রিয়া: শয্যা সংকট, মানিকগঞ্জে মেঝেতে চলছে চিকিৎসা
ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিশুদ্ধ পানি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের উদ্যোগে চারটি ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে একটি, মোট পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিন বর্তমানে কাজ করছে। ইতোমধ্যে নগরীতে দুটি মেশিন বিশুদ্ধ পানি দিতে কাজ করছে। একটি মেশিন ঘণ্টায় ৫০০ লিটার পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারে। আর একটি মেশিন সুনামগঞ্জে রাখা হয়েছে। অপর দুটি মেশিন সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কাজ করছে।
২ বছর আগে
খুলনায় অবৈধ কয়লার চুল্লী: কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি
খুলনার রূপসা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ কয়লার চুল্লী। এসব কয়লা পোড়ানো ধোঁয়ায় বিনষ্ট হচ্ছে চির চেনা প্রকৃতি ও পরিবেশ। এছাড়া কালো ধোয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার মানুষ। কয়লার চুল্লী গড়ে উঠলেও মানা হচ্ছে না নীতিমালা। তবে অবৈধ কয়লার চুল্লীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বসতবাড়ির পাশে কয়লার চুল্লীর বিষাক্ত ক্ষতিকর ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্কদের মধ্যে চর্মরোগের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধোঁয়ার কারণে ফসল, গাছপালা বিনষ্ট হচ্ছে এবং গাছের ফল-ফলাদিও কমে যাচ্ছে। জলাশয়ের হচ্ছে মাছেরও ক্ষতি। এমনকি ভর্য়কর এ কালো ধোঁয়ায় সর্দি কাশি এবং শ্বাসকষ্ট জনিত রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।
রূপসা উপজেলার কয়লার চুল্লীগুলো পরিবেশ ও উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা এবং ভেঙে দিলেও কর্তৃপক্ষকে তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে এ ব্যবসা। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ক্ষতির মুখে পর্যটন ব্যবসায়ীরা
রামনগর নতুন বাজার খেয়া ঘাটের পূর্ব পাড়ের উত্তর পাশে পুরাতন মোমিন রাইস মিল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোসা. আনজিরা খাতুন বলেন, এই কয়লার চুল্লীর কালো ধোঁয়ার কারনে শ্বাসকষ্ট, কাশি ও সর্দির খুব সমস্যা হয়।
একই এলাকার জামিলা খাতুন বলেন, ‘যেই ধোঁয়া শুরু হয়, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার ছেলেটার কাশি হয়। ডাক্তার দেখাতে এবং ওষুধ কিনতে এক হাজার থেকে এক হাজার পাঁচশ টাকা লাগে।’
একইভাবে ঘনবসতি এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম ও সালমা বেগম বলেন, কয়লা চুল্লীর কালো ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়, গলা জ্বলে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ ফুটবল: ৬ লাখ পিস টি-শার্ট তৈরি করেছে সনেট টেক্সটাইল
কয়লা চুল্লীর অবৈধ ব্যবসার কথা স্বীকার করে জামাল খাঁ বলেন, আমি বাপ-দাদার আমল থেকেই এ ব্যবসা করছি। তবে, এটি অবৈধ জেনেও পেটের দায়ে করি। এছাড়া এ কয়লা দেশেই ব্যবহার হয়ে থাকে।
খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মারুফ বিল্লাহ বলেন, গতবছর আমরা অভিযান চালিয়ে কয়লার চুল্লী ভেঙে দিয়েছিলাম। এখন পুনরায় চালু হলে আবারও অভিযান চালানো হবে।
রূপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অবৈধ কয়লার চুল্লীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ ‘শাপলা পাতা’ মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি, বিলুপ্তির আশঙ্কা
২ বছর আগে