বৈদশিক মুদ্রা
বৈদশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক, বিলাসবহুল পণ্যে আমদানি ঋণ নিষিদ্ধ
অত্যাবশ্যক পণ্য ও জ্বালানি আমদানির ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যয়ে কঠোর হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৭ ধরনের পণ্য আমদানির ঋণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এতে আমদানি চাহিদা হ্রাস পাবে যা সাম্প্রতিক মাসে ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখন থেকে এসব পণ্য আমদানির জন্য আমদানিকারকরা ব্যাংক ঋণ পাবেন না। ঋণের এলসি আগে অনুমোদিত হলে ব্যাংকগুলো ফরেক্স ব্যবহার করতে পারবে না।
আরও পড়ুন: আগামী ১২ জুলাই পর্যন্ত গভর্নর ছাড়া চলবে বাংলাদেশ ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রতা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনাকে আরও সুসংহত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি বন্ড খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিনের হার পুনর্নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছে।
মোটরকার (সেডানকার, এসইউভি, এমপিভি ইত্যাদি), ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান ধাতু ও মুক্তা, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রসাধনী, আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা সামগ্রী, ফল ও ফুল, নন সিরিয়াল ফুড যেমন অ-শস্য খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়; যেমন টিনজাত খাদ্য, চকলেট, বিস্কিট, জুস, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ অন্যান্য বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্রের জন্য ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
এসব পণ্যের জন্য আমদানি এলসি খোলার বিপরীতে প্রয়োজনীয় মার্জিন আমদানিকারকদের নিজস্ব উৎস থেকে জমা করতে হবে। বিদ্যমান ঋণ হিসাব খুলে বা নতুন ঋণ হিসাব তৈরি করে আমদানি ঋণের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আমদানিকারকের অনুকূলে কোনো মার্জিন প্রদান করা যাবে না।
শিশু খাদ্য ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক স্বীকৃত প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ও যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, স্থানীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্প, কৃষিপণ্য এবং অন্যান্য সরকারি অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে আমদানি ঋণ খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন বজায় রাখতে হবে।
২ বছর আগে
টাকার মান আরও কমল, ডলার প্রতি নতুন বিনিময় হার ৮৯ টাকা
বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার প্রতি মার্কিন ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা নির্ধারণ করায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান আরও এক টাকা ১০ পয়সা কমেছে।
বৈদশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল করতে বিল অব কালেকশন (বিসি) বা আমদানির ক্ষেত্রে এ হার ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছর সপ্তম বারের মতো অবমূল্যায়নের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মার্কিন ডলার বিনিময়ের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড রেট নির্ধারণ করেছে। এর ভিত্তিতে অন্যান্য উদ্দেশ্যে বিনিময় হার শূন্য দশমিক ০৫ টাকা থেকে শূন্য দশমিক ১৫ টাকা অতিরিক্ত নির্ধারণ করা হবে।
আরও পড়ুন: অস্থির ডলার স্থিতিশীল করতে অভিন্ন বিনিময় হার নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর সিইও ও এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে বৈঠকের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রবিবার ডলারের এ অভিন্ন বিনিময় হার নির্ধারণ করেছে।
সোমবার (৩০ মে) থেকে এ নতুন বিনিময় হার কার্যকর হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে যোগ দেয়া অনেক ব্যাংকার এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে যা প্রকৃত পক্ষে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের জন্য ভালো নয়।
ব্যাংকাররা বলেন, ‘বাস্তবতা স্বীকার না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনও ডলারের দাম ৯০ টাকার নিচে রাখতে চায়। যদিও বাস্তবে ডলার ৯৫ টাকা করে বিনিময় হচ্ছে।’
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বৈদশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে ও বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরহারের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও মার্কিন ডলারের অস্থিতিশীল হারের কারণে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: খোলা বাজারে ডলারের দামের ঊর্ধ্বমুখীতা কমেছে
কবির বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, সব সরকরি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংককে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
ডলারের চাহিদা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এলসি মার্জিন বাড়ানোসহ আমদানির ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে মিল রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে ৩০ শতাংশের বেশি অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপ করেছে।
২ বছর আগে
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক মাস পর বেড়ে ৪৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (এসিইউ) দুই দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর চলতি বছরের ৬ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে আসে। আর এটি গত এক বছরে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল।
চলতি (জুলাই-মার্চ) অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স প্রবাহের ফলে রবিবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪৪ দশমিক ৩০ মার্কিন ডলারে।
আরও পড়ুন: চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৩.২৫ বিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। অথচ ছয় মাস আগেও বাংলাদেশের ব্যাংকের কাছে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ ছিল।
তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি এখনও নেতিবাচক। এই ৯ মাসে প্রবাসীরা ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে গত অর্থবছরের একই সময়ে তারা ১৮ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
এতে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও ৯ মাসে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৮ শতাংশ কমেছে।
আরও পড়ুন: রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই, বলছেন অর্থনীতিবিদরা
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, নগদ প্রণোদনা আড়াই শতাংশে উন্নীত করার পর ধীরে ধীরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।
সিরাজুল ইসলাম ইঙ্গিত দেন যে এপ্রিলে রমজান ও ঈদের জন্য রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। কেননা প্রবাসীরা সাধারণত উৎসবের সময় দেশে তাদের আত্মীয়দের কাছে বেশি অর্থ পাঠান।
২ বছর আগে