বোরো খেত
তাহিরপুরে বোরো খেতে ভয়াবহ ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ, কৃষকেরা দিশেহারা
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ছোট-বড় বিভিন্ন হাওরে বোরো ধানখেতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্রি-২৮ ও ৮১ জাতের ধানে এর প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে। রোগের প্রভাবে ধানে চিটা হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা। ধান নষ্ট হওয়ায় সারাবছর খাদ্যের যোগান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাওর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছর উপজেলার ছোট-বড় ২৩ টি হাওরে ১৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ হয়েছে হাওরে বেশি।
দিনে গরম ও রাতে ঠাণ্ডা থাকার কারণে ২৮ জাতের ধান নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে। ছত্রাক নাশক স্প্রে করেও এর সুফল পাচ্ছেন না কৃষকরা।
শনিবার সকালে মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক নিলু দাস বলেন, মাটিয়ান হাওরে এবার ১১ কিয়ার জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। এরমধ্যে তিন কিয়ার জমির ব্রি-২৮ ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে তার। আক্রান্ত তিন কিয়ার জমি থেকে কোনো ধান পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: বরগুনায় বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা
একই হাওরে সূর্য্যেরগাঁও গ্রামের বর্গাচাষী কৃষক আবুল কাশেম ২০ কিয়ার জমিতে বিভিন্ন জাতে ধান চাষাবাদ করেন এবার। এর মধ্যে ব্রি-৮১ জাতের ধান ছয় কিয়ার জমিতে চাষাবাদ করেন তিনি।
তিনি জানান, তার রোপিত ব্রি-৮১ জাতের ধান ছয় কিয়ার একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে।
শনির হাওর পাড়ের কৃষক মুক্তার আহমেদ বলেন, বর্তমানে হাওরে ধান পাকার সময়। এসময় ধানের শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধু ২৮ ধানেই নয়, সুবর্ণ ধানেও এবার এরোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা কীটনাশক দিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুফল পাননি।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এলাকার অনেক কৃষক আমাদের কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। অনেকে উপকৃত হচ্ছেন, আবার অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন না।
বালিজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আজাদ হোসেন জানান, তিনি নিজে হাওর ঘুরে দেখেছেন অনেকের ব্রি-২৮ ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি কৃষি বিভাগের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান-উদ-দৌলা বলেন, ব্রি-২৮ ধান রোপণ না করার জন্য আমরা হাওর পাড়ের কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কৃষকরা তা মানছে না। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন এবং কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, হাওরের কিছু কৃষি জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের বিষয়টি তিনি দেখেছেন। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে
১ বছর আগে
সিলেটে ৪০০ বিঘা বোরো খেত প্লাবিত
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কোম্পানিগঞ্জের কয়েকটি হাওরের পানিতে নিচু জমির প্রায় ৪০০ বিঘা বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, রবিবার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের ফুকছা হাওর, ভাই কুড়ি, মটরের কুড়ি, দেওয়ার কর, কাপনা কুড়ি, ডাইলা হাওর, আখাই কুড়ি, কাংলাঘাটি ও দরম হাওর মিলিয়ে প্রায় ৪০০ বিঘা জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফসল রক্ষা বাঁধের বাইরে আবাদ করা ওইসব জমির ফসল ছিল দুধ ও দানা পর্যায়ে।
আরও পড়ুন: বাঁধ ভেঙে ফেনীতে ৭ গ্রাম প্লাবিত
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পঙ্কজ জানান, ইছাকলস ইউনিয়নের ৫০ বিঘা জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে পাথারচাউলি হাওর রক্ষা বাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে হাওরের হাজারো হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যাবে।
পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলম বলেন, পাহাড়ি ঢলের শঙ্কায় এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাউটি হাওরে বাঁধ তৈরি করি। তবুও পানি আটকানো যায়নি। প্রবল স্রোতে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করে বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। পানির এমন প্রবাহ থাকলে ফসল রক্ষা বাঁধের সীমা উপচে উপজেলার সমস্ত বোরো ফসল তলিয়ে যাবে।
এ বছর উপজেলায় পাঁচ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী ফখরুল আহমেদ বলেন, কোম্পানীগঞ্জে হাওরে এবার ৬ দশমিক ৫৭১ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এক কোটি ৪৭ লাখ টাকার ব্যয় বরাদ্দে এ বাঁধ মজবুত হলেও অতিরিক্ত পানি বেড়ে উপচে পড়লে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত লুসিকান্ত হাজং বলেন, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে, আমাদের ফসল রক্ষা বাঁধগুলো এখনও নিরাপদ জোনে আছে। ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের ফসল তলিয়ে গেছে, সেসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
২ বছর আগে