বাড়ানো
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা
বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক ব্যবস্থাপনার পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানাচ্ছেন, বিশেষ করে এই খাতের আর্থিক দুর্দশার আরও কার্যকর সমাধান হিসেবে অতিরিক্ত ও বিতর্কিত ব্যয়ের দিকে ইঙ্গিত করছেন।
তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, বর্তমানে ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রয়েছে। ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকারের চুক্তিকেই এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এস এম শামসুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির বোর্ডের পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে বড় আকারের বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি পর্যন্ত- ব্যাপক অযৌক্তিক খরচ রয়েছে। এছাড়া দাম বৃদ্ধির উপর আর্থিক সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া প্রয়োজেন।’
আরও পড়ুন: জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বিদ্যুৎ, উৎপাদন খরচ ও বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান মোকাবিলায় মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও জাতীয় অর্থনীতির ওপর থেকে আর্থিক চাপ কমানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
খুচরা ভোক্তাদের ওপর এ প্রভাব সর্বনিম্ন রাখা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে হামিদ বলেন, ‘উৎপাদন খরচ মেটাতে খুচরা ও পাইকারি উভয় পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে হবে। তবে গ্যাসের দাম শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সমন্বয় করা যেতে পারে।’
দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রথাগত শুনানি পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে পাইকারি বিদ্যুতের দামে ৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে সরকারের অভ্যন্তরের সূত্রগুলো।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ২০২২-২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ১১ টাকা ৩৩ পয়সা এবং প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি হয়েছে ৬ টাকা ৭ পয়সা। এ সময় প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
এই ভারসাম্যহীনতার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, কারণ বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে অতি উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার।
বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ৮২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনে ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে সরকার। একই সময় নিজস্ব কেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিপিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রগুলো থেকে গড়ে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ৭ টাকা ৬৩ পয়সা, সেখানে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বা আইপিপির (বেসরকারি খাত) বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ পড়েছে ১৪ টাকা ৬২ পয়সা। এ ছাড়া রেন্টাল প্ল্যান্টে প্রতি ইউনিটে খরচ হয়েছে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, পাবলিক প্লান্টে ৬ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের খরচ ৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
বিপিডিবি সূত্র জানায়, গত দেড় দশকে ১১ বার পাইকারি পর্যায়ে এবং ১৩ বার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় হারের মধ্যে ব্যবধান আরও বেড়েছে এবং এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় প্রায় ১২ টাকা এবং প্রতি ইউনিট বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা ৭ পয়সায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) শুনানিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিষ্ঠানে অন্যায্য ব্যয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইউএনবিকে বলেন, ‘কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এসব সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তৃত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে তা অকার্যকর করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি কি আসন্ন?
তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্যায্য ব্যয় কমাতে পদক্ষেপ নিতে সরকারের অনীহা দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সরকারকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপারেটরদের বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এখন বাস্তবতা হচ্ছে, ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও শীতকালেও দেশে ব্যাপক লোডশেডিং হয়।’
তিনি বলেন, এত উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করা সত্ত্বেও সরকার বিদেশ থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, এটা 'হাস্যকর'।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সম্প্রতি এক সেমিনারে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে অতি উৎপাদিত বিদ্যুৎ সক্ষমতা হ্রাসের বিষয়টি অনুপস্থিত।
সার্বিক ব্যয় কমাতে ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবিলম্বে বন্ধের সুপারিশ করেন তিনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এম তামিম বলেন, খরচ না কমিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়ানোর দায় ভোক্তার ওপর চাপানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকারি ভর্তুকি কমানো যেতে পারে। কিন্তু এতে ডলার সংকটেরও সমাধান হবে না, জ্বালানি আমদানি সমস্যারও সমাধান হবে না। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে লোডশেডিং ঠেকানো যাবে না।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বা লোকসান কমাতে আরও বন্ড ইস্যু নিয়ে দ্বিধায় সরকার
৮ মাস আগে
বিসিবি সভাপতির মেয়াদ আরও ১ বছর বাড়ানোর ইঙ্গিত পাপনের
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ও নবনিযুক্ত ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন অন্তত আরও এক বছরের জন্য বিসিবির দায়িত্ব বহাল রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তিনি এই ইঙ্গিত দেন।
আরও পড়ুন: চিকিৎসক আমাকে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে বলেছেন: পাপন
নাজমুল বলেন, ‘সবেমাত্র মন্ত্রী হয়েছি। প্রথমে মন্ত্রণালয়ের দিকে মনোনিবেশ করা যাক। যেহেতু এটি খেলাধুলার বিষয়, তাই এটি আমার জন্য কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
দুই ভূমিকার বিপরীতধর্মী চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। একই সঙ্গে ক্রিকেটের পাশাপাশি অন্যান্য খেলার উন্নতির প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন।
আরও পড়ুন: নারী ক্রিকেট নিয়ে ব্যর্থতা স্বীকার করল পাপন
তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এটা সম্ভব।’
নাজমুল বলেন, বর্তমান মেয়াদই হবে তার শেষ মেয়াদ।
আইসিসির বিভিন্ন কমিটিতে তার সদস্যপদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্তত এ বছর আমাকে সভাপতি হতে হবে।’
নাজমুল বর্তমানে আইসিসির মনোনয়ন কমিটি এবং এইচআর অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটিতে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: সাকিবকে যখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখনই আমরা তাকে পাই না: পাপন
২০১২ সাল থেকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিসিবির নেতৃত্ব দিয়ে দীর্ঘতম মেয়াদে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
বিসিবি সভাপতি হিসেবে নাজমুলের সিংহাসন পাকাপোক্ত হওয়ায় সংসদ সদস্য ও ক্রিকেট কিংবদন্তি মাশরাফি বিন মুর্তজাকে বিসিবির মুকুট জয়ের আশায় আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন: আপাতত বিসিবিতে থাকবেন আকরাম, পরবর্তী সিদ্ধান্ত ২৪ ডিসেম্বর: পাপন
১০ মাস আগে
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাতের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বহুল আলোচিত বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হলে নিয়োগ পরীক্ষা আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে।
ফরহাদ বলেন, অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সেশনজট থাকলেও এখন বলা যায় উল্লেখযোগ্য কোনো সেশনজট নেই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর ফলে শিক্ষার্থীরা সাধারণত ১৬ বছরে এসএসসি, ১৮ বছরে এইচএসসি এবং ২৩/২৪ বছরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পায়। সাধারণ প্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর। তাই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরেও তাদের চাকরির জন্য আবেদন করার জন্য কমপক্ষে ৬/৭ বছর থাকে।
আরও পড়ুন: বন্দর এলাকার দূষণ রোধে সংসদে আইন পাস
ফরহাদ হোসেন বলেন, এছাড়া ৩০ বছরের মধ্যে কোনো প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করলে, নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে ১/২ বছর সময় লাগলেও তা গণনা করা হয় না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি অবসরের বয়স ৫৭ থেকে ৫৯-এ উন্নীত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই শূন্যপদের সংখ্যা কমে এসেছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এ প্রেক্ষাপটে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হলে বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। এটি নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও প্রতিযোগিতার কারণ হতে পারে। এটি ৩০ বছরের কম বয়সী প্রার্থীদের মধ্যে হতাশার কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: পেটেন্ট মেয়াদ ২০ বছর রেখে সংসদে বিল পাস
মেয়াদ শেষ হলে পৌরসভায় প্রশাসক, সংসদে বিল পাস
২ বছর আগে