হৃদয় মন্ডল
জামিনে কারামুক্ত স্কুলশিক্ষক হৃদয় মন্ডল
স্কুলশিক্ষক হৃদয় মন্ডল ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের’ মামলায় জামিন পেয়ে মুন্সীগঞ্জ কারাগার থেকে রবিবার মুক্তি পেয়েছেন।
জেলার আবুল বাশার জানান, বিকাল ৫টার দিকে মুন্সীগঞ্জ কারাগার থেকে হৃদয় মন্ডলকে ছাড়া হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিকাল ৪টার দিকে হৃদয় মন্ডলের জামিনের কাগজপত্র পেয়েছি।’
হৃদয় মন্ডলের গ্রেপ্তারের পদ দেশ-বিদেশের অধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানায়।
অধিকার সংগঠনগুলো তার গ্রেপ্তারকে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে খর্ব করার প্রচেষ্টা হিসাবে নিন্দা করেছে।
আরও পড়ুন: ১৯ দিন জেলে থাকার পর জামিন পেলেন হৃদয় মন্ডল
মুক্তির পর হৃদয় মন্ডল বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।
তিনি বলেন, ‘সেদিন ক্লাসে বিজ্ঞান পড়াচ্ছিলাম। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে প্রশ্ন করছিল। আমি এমন কিছু বলিনি যা সমস্যা হতে পারে। আমি খেয়ালও করিনি যে তারা মোবাইলে রেকর্ড করছে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু বিপথগামী শিক্ষার্থী, যারা পড়াশুনা করে না, তারা বিপথগামী শিক্ষকদের সঙ্গে মিলে এটা করেছে। এই মুহূর্তে কারও নাম বলতে পারছি না। প্রাইভেট টিউশনির জন্য তারা হয়তো আমার সঙ্গে এটা করেছে।’
এছাড়া রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন তিনি।
এর আগে এ মামলায় গ্রেপ্তারের ১৯ দিন পর ওই শিক্ষকের জামিন মঞ্জুর করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোতাহার আক্তার ভূঁইয়া।
হৃদয় মন্ডল বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক। ওই বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান আসাদ মিয়া তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সদর থানায় অভিযোগ করার পর তাকে ২২ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষক হৃদয় মন্ডলের মুক্তি দাবি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
তবে হৃদয় মন্ডলের স্ত্রী ববিতা হালদার দাবি করেছেন, কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে শত্রুতার জের ধরে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে ২০ মার্চ বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের (বিজ্ঞান বিভাগ) দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান ও ধর্মের ওপর হৃদয় মন্ডলের একটি ক্লাসের কথোপকথন রেকর্ড করে।
২২ মার্চ, কয়েকজন শিক্ষার্থী তার শাস্তির দাবিতে স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ করে। পরবর্তীতে ওই স্কুলের এক অফিস সহকারী (ইলেকট্রিশিয়ান) তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২ বছর আগে
১৯ দিন জেলে থাকার পর জামিন পেলেন হৃদয় মন্ডল
‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের’ মামলায় গ্রেপ্তারের ১৯ দিন পর মুন্সীগঞ্জের একটি আদালত স্কুলশিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে জামিন দিয়েছেন।
রবিবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোতাহার আক্তার ভূঁইয়া এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ২২ শে মার্চ বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারণ তার বিরুদ্ধে স্কুলের এক অফিস সহকারী আসাদ মিয়া ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতে’র অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন।
তবে হৃদয় মন্ডলের স্ত্রী ববিতা হালদার দাবি করেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার জন্য, তার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে ২০ মার্চ বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের (বিজ্ঞান বিভাগ) দশম শ্রেণির কিছু ছাত্র বিজ্ঞান ও ধর্মের ওপর হৃদয় মন্ডলের একটি ক্লাস কথোপকথন রেকর্ড করেছিল। যেখানে তিনি ‘ধর্মকে অসম্মান’ করেছিলেন বলে তাদের অভিযোগ।
২২ মার্চ কিছু ছাত্র হৃদয় মন্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ করে।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষক হৃদয় মন্ডলের মুক্তি দাবি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
পরে ওই দিন হাইস্কুলের একজন অফিস সহকারী (ইলেকট্রিশিয়ান) ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এর জেরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে শনিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্ত’ মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার ডেপুটি রিজিওনাল ডিরেক্টর স্মৃতি সিং বলেছেন, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা বাংলাদেশের চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার প্রতীক, যেখানে ক্রমশই স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শ্রেণিকক্ষে আলোচনার জন্য একজন শিক্ষকের গ্রেপ্তার হওয়া বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তা-ধারায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাউকে জেলে যেতে হতে পারে।’
স্মৃতি সিং আরও বলেছেন, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের এই ঘটনা বিদ্যমান সংকটের পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে, একটি দেশের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য হুমকিস্বরূপ এই ঘটনা।’
এদিকে, শিক্ষক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন সমাবেশে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক অধ্যাপক ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ক্লাসরুমে উত্থাপিত প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর দিতে গিয়ে মুন্সীগঞ্জে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয়কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে দু'পক্ষের সংঘর্ষে মাদরাসা শিক্ষক নিহত, আহত শতাধিক
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, শঙ্কায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
২ বছর আগে
স্কুলশিক্ষক হৃদয় মন্ডলের মুক্তি দাবি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে’ স্কুলশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে মুক্তি দেয়ার অনুরোধ করেছে।
হৃদয় মন্ডল ক্লাসরুমে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করার পরে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বলেন, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’
সিং বলেন, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা বাংলাদেশের চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার প্রতীক, যেখানে ক্রমশই স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শ্রেণিকক্ষে আলোচনার জন্য একজন শিক্ষকের গ্রেপ্তার হওয়া বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তা-ধারায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাউকে জেলে যেতে হতে পারে।’
আরও পড়ুন: হিন্দুসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
তিনি বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নির্বিচারে আটক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে অপরাধীকরণ করার ফলে জনগণের মধ্যে উদ্ভূত ভীতি সঞ্চারের পরিস্থিতি নথিভুক্ত করছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের এই ঘটনা বিদ্যমান সংকটের পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে, একটি দেশের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য হুমকিস্বরূপ এই ঘটনা।’
বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং সেন্টার ফর উইমেন জার্নালিস্টসহ বেশ কয়েকটি সুশীল সমাজ এবং একাডেমিক সংগঠন শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছে এবং শিক্ষকদের শিক্ষা দেয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
একইভাবে, সারাদেশে মানবাধিকার রক্ষক, আইনজীবী ও শিক্ষকরা গ্রেপ্তারের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার দ্রুত তদন্তের দাবি অ্যামনেস্টির
সিং বলেছেন, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে আটক করা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবক্ষয়ের লজ্জাজনক উদাহরণ। এ পরিস্থিতি উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে মানুষ মুক্তভাবে ও নিরাপদে মত প্রকাশ করতে পারে। কোনো ধরনের ভয় ছাড়াই শিক্ষকরা ক্লাসে কথা বলতে পারবেন তা নিশ্চিত করতে হবে।’
এক শিক্ষার্থীর রেকর্ড করা অডিও ফাইল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, বিজ্ঞানের একটি ক্লাসে ‘ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপার’; ‘বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত’-এ নিয়ে কথা বলেছিলেন গ্রেপ্তার ওই শিক্ষক।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সংগ্রহ করা অডিও রেকর্ডিংটিতে ওই শিক্ষককে বলতে শোনা যায়,‘ধর্মের কোনো প্রমাণ নেই। শেষমেশ ধর্মের ব্যখ্যা কোথায় যায় জানো? শেষমেশ ওই ঈশ্বর দেখে, ঈশ্বর সমাধান দেবেন, পরকালে বিচার হবে। এসব বিশ্বাসের বিষয়। কোন প্রমাণ নেই৷ আর বিজ্ঞান প্রমাণ সাপেক্ষ’।
রেকর্ড করার দুদিন পর ২২ মার্চ স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সংবাদমাধ্যমকে জানান, হৃদয় মন্ডলের শাস্তি চেয়ে শিক্ষার্থী ও অন্যরা স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ করছে। সেদিনই স্কুলটির একজন অফিস সহকারী হৃদয় মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে আছেন তিনি। দু’বার তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।
পরবর্তী জামিন শুনানি হবে ১০ এপ্রিল।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অ্যামনেস্টির বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: তথ্যমন্ত্রী
২ বছর আগে