নবায়নযোগ্য
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল জরুরি: বক্তারা
সবুজ অর্থায়নকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিবেদিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি তহবিল গঠন অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন বক্তারা।
তারা বলছেন, নিবেদিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি তহবিল গঠন ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হবে না।
শনিবার (১ জুন) ‘সেকেন্ড ঢাকা রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড ফাইন্যান্স টক’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা সবুজ জ্বালানি তহবিল গঠন বিষয়ে এই পরামর্শগুলো তুলে ধরেন।
রাজধানীর সামরিক জাদুঘরের মাল্টিপারপাস হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ নামে একটি সংগঠন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও জলবায়ু প্রতিবেদক তাহমিদ জামি।
বিশ্বব্যাংকের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স অ্যান্ড পি কনসালটেন্ট এম মুরশেদ হায়দার বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়নের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য তহবিলের অভাব।
তিনি বলেন, ‘সবুজ পণ্যের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু পুনঃঅর্থায়ন স্কিম রয়েছে, কিন্তু সবুজ জ্বালানির উন্নয়নে ডেডিকেটেড নবায়নযোগ্য তহবিল নেই।’
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ থেকে সুরক্ষা এবং উচ্চতর মুনাফা অর্থায়নের ক্ষেত্রে মূল বিষয়, যা নীতি সহায়তার মাধ্যমে নিশ্চিত করা দরকার।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ডেডিকেটেড অর্থায়ন স্কিমের অভাবের কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক চৌধুরী লিয়াকত আলী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি আরও স্বীকার করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন ব্যবহারের কিছু মানদণ্ড রয়েছে যা বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা পূরণ করতে পারে না। ফলে ব্যাংকগুলো এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা চায়।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ বিএনপির
বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের রেক্টর, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কিছু অর্থ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, এই তহবিলগুলোর আর্থিক ক্লোজিং একটি বিশাল সময় নেয়। কারণ বিনিয়োগকারীদের তহবিল গ্রহণের জন্য কিছু মানদণ্ড পূরণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে ছাদে সৌর বিদ্যুতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সফল ব্যবসায়িক মডেল বিকশিত হয়নি, যার ভিত্তিতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকাস্থ সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ডেপুটি হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন নায়োকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রোম, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সিদ্দিক আহমেদ এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাসটেইনেবিলিটি ইউনিটের চিফ অপারেটিং অফিসার সাব্বির হোসেন।
সেমিনারের আরেক সেশনে স্রেডার সাবেক সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, সার্বিকভাবে ভর্তুকি ভালো নয়। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে রূপান্তরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য।আরও পড়ুন: সেচ পাম্পের জ্বালানি নবায়নযোগ্য করলে সাশ্রয় হতে পারে ৫০০০ মেগাওয়াট: পরিবেশমন্ত্রী
৫ মাস আগে
বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জৈব জ্বালানি বাড়াতে উৎসাহিত করে: নসরুল হামিদ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জৈব জ্বালানির পরিমাণ বাড়াতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের জন্য জ্বালানি বৈচিত্র্য, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের কৌশল গ্রহণ করে কাজ করছি। ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
শনিবার (২২ জুলাই) ভারতের গোয়ায় জি-২০ উপলক্ষে ‘এনার্জি ট্রানজিশন মিনিস্টারিয়াল মিটিং’-এ বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রায় ১ হাজার ১৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও জাতীয় গ্রিডে আসছে ৮২৫ দশমিক ২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৩০টি প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ১ হাজার ২৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও ৮ হাজার ৬৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাইপলাইনে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৯৯৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন: নসরুল
তিনি আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মোট প্রায় ৯ হাজার ৯৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন পাইপলাইনে রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
এসময় ভারতের বিদ্যুৎ, নতুন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিমন্ত্রী আর কে সিং, ব্রাজিলের খনি ও জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্দ্রে সিলভেরা ডি অলিভেরা, ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি ও খনিজসম্পদমন্ত্রী আরিফিন তাসরিফ, কপ২৮ এর সভাপতি (মনোনীত) ড. সুলতান আল জাবের, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ড. প্রমোদ সাওয়ান্ত এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা সভায় বক্তব্য দেন।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্যোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ৬০ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী দুই কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
সৌর মিনি-গ্রিডের মাধ্যমে অফ-গ্রিড এলাকায় গ্রিড মানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে এবং ৭টি সোলার পার্ক স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১ লাখ বায়োগ্যাস প্লান্ট আছে। ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) এর সহযোগিতায় বাংলাদেশে একটি বায়ুসম্পদ মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত আমলের মতো দিনে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হলে এখন কি হতো: নসরুল
তিনি বলেন, পাঁচটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২৪৫ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমন্বিত জ্বালানি এবং পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানেও গুরুত্ব পাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌর, বায়ু ও হাইড্রো ইত্যাদি), পারমাণবিক, বিদ্যুৎ আমদানি (হাইড্রো), হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া, সিসিএস (কার্বন ডাই অক্সাইড) ক্যাপচার অ্যন্ড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট-এর পরিকল্পনা।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের কারণে বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হারিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই সাহসী পদক্ষেপ সবুজ ও পরিষ্কার জ্বালানির প্রতি আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। তবে একটি ঘনবসতিপূর্ণ জাতি হিসেবে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’
নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ধরন অনেক উন্নত দেশের থেকে আলাদা এবং বেস-লোড পাওয়ার হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ অনুপযুক্ত।
তিনি বলেন, সৌর প্রকল্পের জন্য জমির অভাব একটি বড় বাধা। এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং গবেষণা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি; বিশেষ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও বায়ু শক্তির জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাই সরকার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়।
আরও পড়ুন: ২ সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে: নসরুল হামিদ
১ বছর আগে
নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব চায় জার্মানি
জার্মানির স্টেট সেক্রেটারি এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশনের বিশেষ দূত জেনিফার মরগান বলেছেন, তারা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও শক্তিশালী অংশীদারিত্ব তৈরি করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমি এখানে শুনতে এবং শিখতে এসেছি; এবং আমরা একসঙ্গে মিলে কি করতে পারি তা দেখতেও এসেছি। আমি মনে করি আমাদের একে অপরের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’
তিনি আরও বলেন,এটা স্পষ্ট যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জ্বালানি সক্ষমতা থেকে একাধিক সুবিধা পাওয়া যায়।
শনিবার বাংলাদেশে জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের সঙ্গে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জার্মানির জলবায়ু বিষয়ক প্রথম দূত জেনিফার মরগান এসব কথা বলেন।
দূত বলেন, দ্রুত সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং স্পষ্ট এর (জলবায়ু পরিবর্তনের)প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
জার্মান জলবায়ু দূত বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জ্বালানি দক্ষতার বিষয়ে কাজ করতে চাই এবং কীভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জ্বালানি দক্ষতার প্রচেষ্টা বাড়াতে পারি তা দেখতে চাই।’
৪ এপ্রিল প্রকাশিত জাতিসংঘের আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) প্রতিবেদনে দেখায় যে, গত এক দশকে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের বৃদ্ধি কমেছে। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নির্গমন অর্ধেক করা, লক্ষ্যমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখাসহ আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান ঢাকার
২ বছর আগে