ব্যয়
পরিচালন ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা সরকারের
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন বৈশ্বিক ও দেশীয় চ্যালেঞ্জের কারণে যেসব পরিচালন ব্যয় বেড়েছিল, আগামী বছরগুলোতে তা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সরকারি নথি অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ের ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ হবে পরিচালন ব্যয়।
চলতি অর্থবছরে মোট সরকারি ব্যয়ের ৫৯ শতাংশ পরিচালন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি, পণ্য ও সেবা ক্রয়, ভর্তুকি ও স্থানান্তর পেমেন্ট, দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এবং 'খাদ্য হিসাব পরিচালনা' সংক্রান্ত ব্যয়।
নথি অনুসারে, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালের পরিচালন ব্যয় ৫৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৬২.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বর্ধিত ব্যয়ের মূল চালিকাশক্তি
ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতায় সুদ পরিশোধ ক্রমাগত বেড়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, সামাজিক কল্যাণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পদক্ষেপের উপর জোর দিয়ে ২০১৯ সালে মোট সরকারি ব্যয়ের ভর্তুকি এবং স্থানান্তর সংক্রান্ত ব্যয় ২.৯ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে প্রায় ৪ শতাংশ হয়েছে।
২০১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পরিচালন ব্যয় গড়ে জিডিপির ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বজায় রেখেছে।
২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৬ শতাংশে।
দেশীয় সুদের হারের ঊর্ধ্বগতি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিনিময় হারের অস্থিরতা থেকে এটি বেড়েছে এবং এটি একই সঙ্গে সুদ পরিশোধ ব্যয়ও বাড়িয়েছে।
এইসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সরকার কৌশলগত সমন্বয় ও আর্থিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে পরিচালন ব্যয় জিডিপির ৮.৩ শতাংশে স্থিতিশীল রাখার প্রত্যাশা করছে।
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে খাদ্য ভর্তুকি ১৪.১ শতায়শ বেড়েছে। এটিও পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির একটি কারণ।
বেতন ও পণ্য ব্যয় ব্যবস্থাপনা
বেতন ও ভাতা সংক্রান্ত খাতে ২০১৯ সালে জিডিপির ১.৮ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ১.৪ শতাংশ কমে গেছে। তবে তা বেতন কমানোর কারণে নয়, বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণেই হয়েছে।
২০২৫ সালে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে; যা ২০১৯ সালের ১ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে কম।
নথিতে বলা হয়েছে, দক্ষ সরকারি সেবা প্রদান নিশ্চিত করার পাশাপাশি বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় বাড়াতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কোভিড-১৯ মহামারির বছরগুলোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সম্পদের পুনর্বিন্যাস এবং ২০২২ সাল থেকে গৃহীত সাশ্রয়ী নীতির কারণে পণ্য ও সেবার উপর ব্যয় ২০২৯ সালের মোট ব্যয়ের ৭.৩ শতাংশ ছিল। ২০২৩ সালে সেখান থেকে কমে দাঁড়ায় ৫.৯ শতাংশে।
২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত প্রাক্কলনে দেখা যায়, এ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় ছিল মোট ব্যয়ের ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
মধ্যমেয়াদে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলে প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।
ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণ এবং সামাজিক সমর্থন জোরদার করা
সরকার ভর্তুকি বরাদ্দসমূহ যুক্তিসঙ্গতভাবে নির্ধারণের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য জীবনযাত্রা সহায়তা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয় ব্যয়ের মধ্যে কৃষি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে রয়েছে।
জ্বালানি খাতে ধীরে ধীরে ভর্তুকি কমানো হবে। নিয়মতান্ত্রিক মূল্য সমন্বয় এবং ফর্মুলা ভিত্তিক জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি করা হবে।
তবে পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় বকেয়া ভর্তুকি দীর্ঘায়িত করার জন্য চলমান মনোযোগ প্রয়োজন।
প্রবৃদ্ধি ও স্থায়িত্ব বাড়ানো
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সরকার রপ্তানি বহুমুখীকরণ, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি, কৃষি উন্নয়ন এবং তৈরি পোশাক খাতে সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের পরিকল্পনা করেছে।
হাইব্রিড প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং আইসিটি পরিষেবা রপ্তানির উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি কৃষি ও রপ্তানিতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩ সপ্তাহ আগে
বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের ৩৩ শতাংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়: ড. দেবপ্রিয়
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশ একটি অনিশ্চিত আর্থিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে, যেখানে রাজস্বের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হয়।
ড. ভট্টাচার্যের মতে, সরকারের মোট ঋণের দুই-তৃতীয়াংশ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসে, যার ফলে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮৫০ ডলারে পৌঁছায়।
বৃহস্পতিবার(৪ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এশিয়া ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশের অংশীদারিত্বে সিপিডি আয়োজিত 'বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের পরিস্থিতি: উদ্বিগ্ন হওয়ার কি কোনো কারণ আছে?' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় বাংলাদেশের ঋণ কাঠামোর জটিলতার ওপর আলোকপাত করেন সেমিনারে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
ড. দেবপ্রিয় পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, 'জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যয়ের ৩৪ শতাংশ ঋণ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, এই পরিসংখ্যানে অভ্যন্তরীণ ঋণের জন্য ২৮ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণের জন্য ৫ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা মাত্র তিন বছরে ২৬ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: এমপিদের সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি তদন্ত করতে হবে: সিপিডির মুস্তাফিজুর রহমান
কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০১৮-১৯ সাল থেকে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, রাজস্ব বাজেট এখন এতটাই টানাটানি যে, উন্নয়ন প্রকল্পে এক পয়সাও অর্থায়ন করা সম্ভব নয়।
ঋণ পরিশোধের বৃহত্তর প্রভাব তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় অর্থনীতিবিদদের সতর্কবাণীর প্রতি নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাখ্যানমূলক মনোভাবের সমালোচনা করেন। তিনি ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে দুই বছর আগে করা নিজের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা উল্লেখ করেন। ২০২৫ সাল থেকে শুরু করে ২০২৬ সালে ঋণ পরিশোধে প্রত্যাশিত অস্বস্তির ওপর জোর দেন তিনি।
আরও পড়ুন: আ.লীগ ছাড়া সবাই বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বন্ধ করতে চায়: সিপিডি
তিনি বেসরকারি খাতের ঋণের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, মোট ঋণের ৮০ শতাংশই সরকারি ঋণ, বাকি ২০ শতাংশ বেসরকারি খাত। তিনি দেশের দায় ও বিনিময় খাতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রভাবের ওপর জোর দিয়ে ব্যক্তিগত ঋণ এবং এর ব্যবহার দেশে বা বিদেশে যেখানেই হোক না কেন, অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান জানান।
বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণ একত্রিত করে ড. ভট্টাচার্য মাথাপিছু দায়বদ্ধতার বোঝার উপর জোর দিয়েছিলেন, যা কেবল বৈদেশিক ঋণের জন্য ৩১০ ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের ক্ষেত্রে প্রায় ৮৫০ ডলারে উন্নীত হয়। বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতির এই সামগ্রিক বিশ্লেষণ সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় রাজস্বের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা ও কৌশলগত পরিকল্পনার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
আরও পড়ুন: এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার-সোনালির দাম বেড়েছে ১০-৩০ টাকা
৮ মাস আগে
সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প, ব্যয় হবে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা
সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা ও বাঘের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে “সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প” নামে প্রকল্পটি ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের জীবিত বাঘ ও মৃত বা শিকারীদের হাতে হত্যার শিকার বাঘের জরিপ, উঁচু টিলা ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। বাঘের ক্যানাইন ডিস্টেম্পার ভাইরাস নিয়ে হবে গবেষণা। সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মানুষের হাতে সুন্দরবনের বাঘ হত্যা কমবে এবং বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা বনবিভাগের।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে মাছ ধরা ও পর্যটনে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা ১ জুন থেকে
প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের মূল কাজ হচ্ছে বাঘ ও মৃত বা শিকারীদের হাতে হত্যার শিকার বাঘের জরিপ করা।
ইতোমধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ, শিকার করা প্রাণী ও খাল জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। নভেম্বর মাসে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে জরিপ শুরু হবে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যাতে বাঘগুলো আশ্রয় নিতে পারে এজন্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১২টি উঁচু টিলা তৈরি করা হবে। শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় বাঘের আশ্রয়স্থলে দুর্বৃত্তের আগুন নিয়ন্ত্রণে একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এই টাওয়ার থেকে ওই এলাকায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে লাগা আগুন দেখে দ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে পারবেন বনরক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।
এ ছাড়া সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে যাতে বাঘ প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নাইলোনের বেড়া (ফেন্সিং) দেওয়া হবে। এটি সফল হলে পরে ৬০ কিলোমিটার ফেন্সিং করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় বাঘের ক্যানাইন (মুখে থাকা সামনের বড় দুটি দাঁত) ডিস্টেম্পার ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা হবে। এজন্য সুন্দরবন থেকে বাঘের মল সংগ্রহ করা হবে। এই মলের মাধ্যমেই বাঘের দাঁতে সংক্রমিত ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করবেন দেশীয় গবেষকরা।
অন্যদিকে সুন্দরবনে বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ার ফলে মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রাণহানী নিরসনে ৩৪০ জন ভিটিআরটি (ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম) সদস্য ও ১৮৪ জন সিপিজি (কমিউনিটি পেট্রল গ্রুপ) সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এর সঙ্গে লোকালয়ে আসা দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রাকার লাগানো হবে। বাঘের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য বনকর্মী-কর্মকর্তা সিপিজি ও ভিটিআরটি সদস্যদের দেওয়া অ্যাপস দেওয়া হবে।
তারা এই অ্যাপসের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বাঘের গতিবিধি দেখতে পারবেন। এর ফলে লোকালয়ে বাঘ এলে তারা দ্রুত সুন্দরবনে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবে।
সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ৩ মাস পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলো সুন্দরবন
এ ছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে, ড্রোন ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ট্রাকার, নাইলোনের বেড়া, জিপিএস, বাঘ অজ্ঞানের জন্য ট্রাংকুলাইজিং গান, ক্যামেরা, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের জন্য পোশাক ও প্রশিক্ষণ উপকরণসহ বেশকিছু আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনা হবে।
প্রকল্প শেষে প্রকল্পের সব কার্যক্রম নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি ফিল্ম করা হবে। যা পরে সুন্দরবন ও সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার দায়িত্বে আসা কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগবে।
তবে প্রকল্প প্রস্তাবে বাঘ না থাকা এলাকায় বাঘ স্থানান্তরের মাধ্যমে বাঘের আবাসস্থল সংরক্ষণের কথা ছিল। তবে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের সময় বাঘের উপস্থিতি পাওয়ায় বাঘ না থাকা এলাকায় বাঘ স্থানান্তরের বিষয়টি প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে “সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প”- এর আওতায় সুন্দরবন ও বাঘ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এই প্রশিক্ষণের ফলে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাঘ রক্ষায় কাজের আন্তরিকতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।
সুন্দরবন সুরক্ষায় কাজ করা ভিটিআরটির সদস্য মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী এলাকার লাকি বেগম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাঘ ও সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় কাজ করি। আমাদের এ বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞান খুবই কম। শুনেছি আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণ দিলে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারব।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ খুব ভালোভাবে চলছে। সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের বাঘ জরিপের জন্য ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সিপিজি, ভিটিআরটি প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে। সর্বোপরি বাঘ সংরক্ষণ ও বাঘ বাড়ানোর জন্য বেশকিছু কাজ করা হবে।
এ ছাড়া পুরো প্রকল্পের কার্যক্রম ভিডিও করা হবে। যা দিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করা হবে। এই ফিল্মটি পরবর্তীকালে সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে
১ বছর আগে
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বাড়ল ১১১৭ কোটি টাকা
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর ব্যয় আরও ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সেতু বিভাগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
অনলাইনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৈঠকের ফলাফল নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল হোসেন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ১৩ হাজার ৬৫৮ কোটি ৯৯ লাখ কোটি টাকা হবে যা চীনা ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে পরিশোধ করা হবে।’
আরও পড়ুন: ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে টোল আদায় ৬৬০.২৪ কোটি টাকা: কাদের
সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুন মাসে। তবে সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বর্ধিত ব্যয় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অনুমোদন করেছে। এবং প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
২০২২ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধন করেন এবং পরের দিন থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
সরকার সম্প্রতি ঠিকাদারদের পরিশোধের ওপর মূল্য সংযোজন কর ১০ দশমকি ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্ট এবং শরীয়তপুরের জাঞ্জিরা পয়েন্টের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সড়ক-রেল সেতু নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যা রাজধানী, ঢাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
মূল পরিকল্পনা অনুসারে, ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: বহিরাগত চাপে পদ্মা সেতু থেকে সরে গেছে বিশ্বব্যাংক: ভবিষ্যতের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রথম সংশোধনীর পর প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা হয় এবং সময়সীমা ধরা হয় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবং দ্বিতীয় সংশোধনীর পরে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা হয় এবং সময়সীমা ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
ভূমি অধিগ্রহণের বিশেষ অনুমোদনে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
সমস্ত প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়েই প্রকল্পের সময়সীমা প্রথমে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল, তারপরে আবার ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং সবশেষে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
২০০১ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু ঋণ: ২ কিস্তির ৩১৬.০২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সেতু বিভাগ
১ বছর আগে
মহামারি পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের জন্য বাজেটের বাস্তবসম্মত ব্যয় পরিকল্পনা প্রয়োজন: সিপিডি
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সরকারের প্রতি আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য একটি সুস্পষ্টভাবে বাস্তবায়নের দিক-নির্দেশনাসহ বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের (এলডিসি) জন্য বাজেট বাস্তবায়ন কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং ঝুঁকির কারণ ও সেগুলো পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ করার বিষয়ে কিছু সুপারিশ দিয়েছে।
মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি তাদের বাজেট সুপারিশ প্রকাশ করে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বাজেট প্রস্তাব পাঠ করেন এবং সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সুপারিশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে খাদ্যের দাম অনেক বেশি: সিপিডি
সিপিডি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উভয় ক্ষেত্রেই সামগ্রিক কর-রাজস্ব খাতের সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তোরণের পর বাংলাদেশ আমদানি শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। তাই এলডিসি-পরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা প্রয়োজন।
সিপিডি সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারি ব্যয়ের তথ্যাদিতে সাধারণ জনগণের অভিগম্যতার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি ব্যয়ে আরও স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে।
রপ্তানি প্রণোদনা খাতকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার আলোকে সংস্কার করতে হবে। যাতে প্রকৃত যোগ্য খাত শুধুমাত্র প্রণোদনা পেতে পারে।
২০৩০ সালের মধ্যে একটি সুস্থ ও উন্নত দেশ গড়তে শিক্ষা, কৃষি, শিশু ও নারী স্বাস্থ্য উন্নয়নে বাজেট ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি।
আরও পড়ুন: বাজেটে জীবন, জীবিকার সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই: সিপিডি
বাজেটের সুপারিশগুলো মহামারি পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার এবং খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির বৈশ্বিক প্রভাবের জন্য পর্যায়ক্রমে সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়েও দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, মহামারিজনিত কারণে প্রান্তিক জনগণ খুব বেশি ভুগছে। অন্যদিকে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
স্থির আয়কারী জনগোষ্ঠী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর যদি আবার খাদ্যের দাম বেশি হয়ে যায় তবে তারা পুষ্টি সমস্যার সম্মুখীন হবে। বাজেটে খাদ্য মূল্যে ভর্তুকি যেমন দরকার, তেমনি বিভিন্ন প্রান্তিক মানুষের জন্য প্রণোদনা নির্ধারণ করা দরকার।
সংস্থাটি মার্কিন ডলারের সঙ্গে বাংলাদেশি টাকার স্থিতিশীল বিনিময় হারের প্রস্তাব করেছে। কারণ এটি অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং শিল্প উৎপাদন খরচের মূল্যবৃদ্ধি উভয়কেই প্রভাবিত করেছে।
মহামারি পুনরুদ্ধারের সরকারি কৌশলের প্রশংসা করে সিপিডি বলেছে যে, সরকারি নীতি সঠিক; কিন্তু বাস্তবায়ন জটিল এবং কখনও কখনও বিতরণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।
আরও পড়ুন: দেশের রপ্তানি, সরকারি ব্যয় কমে যাওয়াটা বড় উদ্বেগের: সিপিডি
২ বছর আগে