অসময়ে যমুনায় ভাঙন
অসময়ে যমুনার ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ
বর্ষা শুরুর আগেই সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর তীরবর্তী পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৭’শ একর জমির কালো বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে অসময়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে করে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে অজানা এক আতঙ্ক বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ দিনে চৌহালী উপজেলার দক্ষিণ এলাকার বেশকিছু বাড়ি-ঘর ও অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দক্ষিণ চৌহালীর বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানুই থেকে চর সলিমাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদীর বাম তীরে তীব্র নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ভাঙন কবলিত পরিবারদের পাশে প্রশাসন
বিনানই গ্রামের কৃষক মো.আয়নুল হক ও চরসলিমাবাদ গ্রামের আলী হোসেনসহ অনেকেরই অভিযোগ, বর্ষা আসতে না আসতেই যমুনার ভাঙনের তাণ্ডব শুরু হলেও ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এছাড়া এই এলাকার যমুনার মাঝ নদীতে বিশাল চর জেগে ওঠায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা দফায় দফায় পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
মিটুয়ানি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, গত বছর থেকেই বিদ্যালয়টি ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ যদি জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলে প্রায় ৫শ’শিক্ষার্থীর পাঠ দানের বিদ্যালয়টি বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: সিলেটে নদী ভাঙনে হুমকির মুখে বিশ্বনাথের গোবিন্দনগর গ্রাম
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে পাশ্ববর্তী খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের মানুষজন জানালেন খাষপুখুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।
চৌহালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক সরকার জানান, বাঘুটিয়া ও খাষপুখুরিয়া বেশ কিছুদিন ধরেই যমুনার ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে অনেক ফসলি জমিসহ বেশ কিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে, বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
সিরাজগঞ্জ পাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন জানান, চৌহালী উপজেলার এতদিন টাঙ্গাইল নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনে থাকা ওই অংশে যমুনার ভাঙন শুরুর বিষয়টি শুনেছি। তবে সম্প্রতি ওই অংশটি সিরাজগঞ্জের আওতায় আসলেও এখনও অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।
টাঙ্গাইলের অধীনে থাকা অবস্থায় চৌহালীর ওই অংশে সাড়ে তিন কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাবনা একনেক মিটিংয়ে উপস্থাপনের জন্য দেয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ভাঙনে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে বাঁধে আশ্রয়!
এদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যমুনা ও তার শাখা নদী করতোয়া, বড়াল ও হুড়াসাগর নদীতে এখন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এসব নদীতে ক্রমাগতভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী, বেলকুচি, শাহজাদপুর, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যমুনা নদীর অভ্যান্তরে নিম্নাঞ্চলের কালো বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল তলিয়ে গেছে। এতে নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকার প্রায় সাড়ে ৭’শ বিঘা (১’শ হেক্টর) জমির কালো বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। এতে এই অঞ্চলের কৃষকদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ফসলের আরও ক্ষতি হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
২ বছর আগে