হাজরাপুর ইউনিয়ন
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ যেভাবে একজন তরুণ আইটি উদ্যোক্তার জীবন বদলে দিয়েছে
মুন্সি সোহাগ হোসেন এক সময় ভ্যান চালাতেন এবং পড়াশোনার খরচ যোগাতে দোকানে কাজ করতেন। তবে তিনি এখন মাগুরার একজন তরুণ আইটি উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন।
মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন ২৪ বছর বয়সী যুবক সোহাগ।
২০১৬ সালে ভারতীয় আইসিসিআর স্কলারশিপ পেয়ে গুজরাট টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে আইটি বিষয়ে স্নাতক করার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন সোহাগ।
স্নাতক শেষ করার পর ২০২০ সালে আইটি সেক্টরে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল সেক্টর বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে।
স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সোহাগ মাগুরা সদরে ‘পলিটেকস’ নামে একটি ফার্ম গড়ে তোলেন, যা তার জীবন বদলে দেয়।
সম্প্রতি সোহাগের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কীভাবে একটি স্থায়ী বাড়ি তার পড়াশোনায় সহায়তা করেছে এবং ডিজিটাল বিপ্লব তাকে একজন আইটি উদ্যোক্তা করে তুলেছে।
১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে নোয়াখালীতে নদী ভাঙনে তাদের বাড়িঘর এবং সমস্ত সম্পদ হারিয়ে তার পরিবার উদ্বাস্তু জীবনযাপন করে। এরপর ১৯৮৬ সালে তারা মাগুরায় চলে আসেন। শেষে ১৯৯০-এর দশকে গৃহহীন পরিবারের জন্য তৈরি গুচ্ছগ্রামে একটি বাড়ি পান তার মা সখিনা বেগম।
পড়ুন: ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপ ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা: জয়
২০১৭ সালে সোহাগ তার বাবা মুন্সি আবুল হোসেনকে হারিয়েছেন। তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে তিনি পরিবারে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন। অন্য দুই ভাইয়ের ভাঙ্গারি (ছোট) ব্যবসা আছে।
সোহাগ বিজ্ঞান বিভাগে ২০০৯ সালে এসএসসি এবং ২০১১ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। মাগুরা আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০১২ সালে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়ন বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেন।
হঠাৎ করেই ভারতীয় স্কলারশিপ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
সোহাগ বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন দিনমজুর। দরিদ্র্য হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল স্কলারশিপ নিয়ে ভারতে যাওয়া।’
স্কুল জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে অনেক অপমান শুনতে হয়েছে। আমি যখন পড়াশোনায় ভালো করতাম, তখন সচ্ছল পরিবারের অনেক ছাত্র আমাকে অপমান করত। তবে কেউ কেউ আমাকে উৎসাহিত করেছেন।
২০২০ সালে সোহাগ যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন আইটি সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চাকরি না করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ডিজিটাল বাংলাদেশে স্ব-কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বানে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।’
সোহাগ তার আশেপাশের মানুষের প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য 'পলিটেকস' নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছেন।
পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে মাটি ছাড়াই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষ
তিনি বলেন, ‘আমরা মাগুরা সদর উপজেলা প্রশাসনের জন্য একটি বড় ডেটা-ম্যানেজমেন্ট সফ্টওয়্যার তৈরি করেছি যাতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রকৃত তথ্য জানতে এবং সেই অনুযায়ী তাদের জন্য পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়।’
তার প্রতিষ্ঠানটি এখন একই উদ্দেশ্যে জেলার শ্রীপুর উপজেলায় আরেকটি ডেটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি করছে।
তিনি জানান, তার ফার্ম বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করে এবং মাসে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করে। তার ফার্মে তিনজন প্রকৌশলী ও দুজন বিপণন কর্মকর্তা রয়েছেন।
সোহাগ বলেন, ‘আমরা সিকমেড, তিরুপতি ইন্টারন্যাশনাল, শেরপাস্পেসের মতো কিছু বিদেশি কোম্পানির সাথেও কাজ করছি।
এছাড়াও সোহাগের ফার্ম যুব সম্প্রদায়ের জন্য তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং সাইবার-নিরাপত্তা জ্ঞানের জন্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘কীভাবে ব্যবসাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপ দিতে হয় সেই বিষয়ে আমি প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার, সোহাগ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে (ডিজিটাল বাংলাদেশের) একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। তিনি আইটি আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং ব্যবহার করে একজন আইটি উদ্যোক্তা হয়েছেন।’
পড়ুন: বৃষ্টির পর ঢাকা শহরে এডিস মশার আতঙ্ক বেড়েছে
২ বছর আগে