পদচারণা
দুই বছর পর মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর হবে শোলাকিয়া
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দুই বছর পর আবারও মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ। ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে দুই তৃতীয়াংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি। এবার চার স্তরে নিরাপত্তা বলয়ের বেষ্টনী থাকবে। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ।
জানা যায়, ১৭৫০ সাল থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেই হিসাব অনুযায়ী শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২শ’ ৭১ বছর। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া। কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের প্রতীক শোলাকিয়া ঈদগাহ স্থান করে আছে মানুষের হৃদয়ে। স্থানীয় হয়বতনগর সাহেব বাড়ির ঊর্ধ্বতন পুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ (র.) ওই জামাতে ইমামতি করেন।
সর্বশেষ ১৯২তম জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মো. ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
শোলাকিয়ার এ ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহটি প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর জমিদার বাড়ির লোকজন। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁ’র ৬ষ্ঠ বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাদ খান তার মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করেন। সেই ওয়াক্ফ দলিলে উল্লেখ রয়েছে, ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কিশোরগঞ্জ মৌজার এ মাঠের মূল আয়তন বর্তমানে ৬.৬১ একর। চারপাশে অনুচ্চ প্রাচীর ঘেরা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে মোট ২৬৫টি কাতার রয়েছে যেখানে একসঙ্গে দেড় লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। এছাড়া মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঈদগাহ সংলগ্ন খালি জায়গা, রাস্তা এবং নিকটবর্তী এলাকায় দাঁড়িয়ে সমসংখ্যক মুসল্লি এ বৃহত্তম ঈদজামাতে শরিক হন।
পড়ুন: ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ হোটেল আগাম বুকিং
প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন ধনী-গরীব নির্বিশেষে। সবার উদ্দেশ্য একটাই, যেন কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া হয়ে না যায় জামাতে অংশগ্রহণ, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ। সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ার শিক্ষা নিয়েই জামাত শেষে বাড়ির পথে শোলাকিয়া ছাড়েন তাঁরা।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, এবারের জামাতে জায়নামায ও মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। নিরাপত্তা জোরদারে মোবাইল নিয়েও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থধাকবে। শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে ঈদের দিনে কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। ড্রোন ক্যামেরাসহ ৫ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও মাঠে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হবে। এ কাজে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার ব্রিগেডের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে।
ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, এবার ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
পড়ুন: ঈদে পরিবহন খাতে ‘নৈরাজ্যের’ আশঙ্কা আরএসএফের
২ বছর আগে