জ্বালানি মন্ত্রণালয়
সিলেটের কৈলাশটিলার ৭ নাম্বার কূপ থেকে জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহ শুরু
সিলেট গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রের ৭ নাম্বার কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।শনিবার সকাল ১১ টা থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডের মহাব্যাপস্থাপক (পরিচালন) প্রকৌশলী আব্দুল জলিল প্রামানিক।তিনি বলেন, আজ থেকে এই কূপ থেকে প্রতিদিন ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে।শনিবার সকালে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন গ্যাস সরবরাহের উদ্বোধন করেন।এর আগে গত ৭ মে থেকে এই কূপ থেকে পরীক্ষামূলক গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। তা সফল হওয়ায় শনিবার (১৪ মে) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরবরাহ শুরু হল।কৈলাশটিলা ৭নং কূপ থেকে ২০১৬ সালের দিকে গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: কৈলাশটিলায় নতুন আবিষ্কৃত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরুএরপর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কর্তৃপক্ষের হয়ে কূপটিতে ওয়ার্ক-ওভার শুরু করে রাষ্ট্রীয় তেল, গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। ওয়ার্ক-ওভার কাজ শেষ হয় গত মাসের দিকে।নানা পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে জাতীয় গ্রিডে এই কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয় বলে জানিয়েছেন বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী।এখন এই কূপ থেকে ২৮০০ পিএসআই-তে গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান তিনি।সিলেট গ্যাসফিল্ড সূত্রে জানা গেছে, কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের সাতটি কূপের মধ্যে এতোদিন দুটি কূপ থেকে দৈনিক দুই কোটি ৯০ লাখ ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতো। এখন ৭ নম্বর কূপ থেকে এক কোটি ৯০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। সবমিলিয়ে এখান থেকে চার কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, এ কূপটি (৭ নম্বর) ওয়ার্ক ওভারের আগে তাদের প্রত্যাশা ছিল দৈনিক ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এখান থেকে পাওয়া যাবে। কিন্তু দৈনিক পাওয়া যাচ্ছে ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর সঙ্গে উপজাত হিসাবে মিলবে দৈনিক ২৫০ ব্যারেল কনডেনসেট যা থেকে ২২ লাখ টাকার জ্বালানি তেল পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্র: ১০ মে থেকে আসবে ১৭-১৯ এমএমসিএফডি গ্যাস
মিজানুর রহমান আরও জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরপিসের ধারণা মতে, এই স্তরে মজুত রয়েছে ৭৫৮ বিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস। প্রতি হাজার ঘটফুট গ্যাস ১০ ইউএস ডলারে হিসাব করলে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বলে তিনি জানান।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের দেয়া তথ্যানুসারে, ২০১০-১২ সালে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি বাপেক্সের কারিগরি সহায়তায় সিলেটের গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা, জৈন্তাপুরের হরিপুর ও হবিগঞ্জের রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে নতুন করে ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক (থ্রিডি সাসমিক) জরিপ চালানো হয়। এ জরিপে কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রের ৭ নম্বর কূপে তেল ও গ্যাস মজুতের সম্ভাব্যতা পায় বাপেক্স। এ কূপের ১২টি স্তরে তেল ও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায় তারা। তার মধ্যে চারটিতে তেল, একটিতে তেল-গ্যাস আর বাকি সাতটিতে গ্যাস মজুতের ধারণা দেয়া হয়।২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোলাপগঞ্জ সফর করে দেশের প্রথম তেল খনি হিসেবে ঘোষণা করে এই কূপের খনন কাজের উদ্বোধন করেন। পুরোদমে খনন শুরু হয় ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবর। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ খনন কাজ শেষে একটি স্তরে গ্যাসের সন্ধান পেলেও তেলের খোঁজ পায়নি বাপেক্স। ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় গ্রিডে ৮-১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় এই কূপ থেকে। কিন্তু ২০১৬ সালের অক্টোবরে গ্যাস উত্তোলনের হার ০.৫ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এলে ২ নভেম্বর বন্ধ হয়ে যায় এই কূপ।এখন ফের শুরু হলো গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ। মূলত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সিলেট গ্যাস ফিল্ড কর্তৃপক্ষ কূপটিতে ওয়ার্ক-ওভার শুরু করে। তাদের হয়ে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব তেল, গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি বাপেক্স এই কাজ শুরু করে। বাপেক্সের কাজ শুরু হয় গেল মাসে।বর্তমানে দেশের ২২টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হয়।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে আরও ৩ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
২ বছর আগে