ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর
খুলনায় সবজির দাম কমলেও অন্যান্য পণ্যের দাম লাগামহীন
শীতের কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর খুলনা নগরীতে কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম। তবে মুরগি ও গরুর মাংস, চাল, ডাল, তেল ও ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রীর দাম বেড়েই চলেছে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) খুলনা শহর ও আশপাশের বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তর দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করলেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও কারসাজির কারণে কমছে না ভোজ্যতেল, মুরগি ও গরুর মাংস, চাল, ডাল, তেল, ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তবে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে চাল ও মুরগির দাম। এসবের ফলে কৌশলে পকেট কাটা যাচ্ছে ভোক্তাদের, এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষ।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, নগরীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৫৪ টাক টাকা, আটাশ বালাম ৬৫ টাকা, ভালো মানের মিনিকেট ৭৫ টাকা, নিম্নমানের মিনিকেট ৬৫ টাকা, বাসমতি ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা, কালিজিরা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অথচ দেড় মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, আটাশ বালাম ৬৫ টাকা, ভালো মানের মিনিকেট ৭০ টাকা, নিম্নমানের মিনিকেট ৬০ টাকা, বাসমতি ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা, কালিজিরা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ চালের দাম প্রতি কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় টাকা।
এদিকে, মুরগির বাজারে যেন আগুন ঝরছে। নগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৪০ টাকা, কক মুরগি ৩২০ টাকা, সোনালী মুরগি ৩২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় এলাকায় অ্যাপ্রোচ রোডের কেসিসি সুপার মার্কেট, ময়লাপোতা সংলগ্ন কেসিসি সন্ধ্যা বাজার এলাকায় খোঁজখবর নিলে এমন চিত্র উঠে আসে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির মূল্য নিম্ন-মধ্য আয়ের ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
গরুর মাংসের দামও কোনোভাবেই কমছে না। নগরীসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলোতে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭ শ’ টাকা দরে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কয়েক বছর ধরে গরুর মাংস বিক্রি হয়ে আসছে চড়া মূল্যে। ফলে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস কেনা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করলেও মাংসের দোকানে তেমন কোনো অভিযান পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা।
এদিকে, ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে আরও এক দফা। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৭৫ টাকায়। যা এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেলেও দামও চড়া। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা। বাজারে সুপার পাম অয়েল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৮ থেকে ১৭৯ টাকা দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৮৬০ টাকায়, আর এক লিটারের বোতল বিক্রি হয় ১৭২ টাকায়। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হয় ১৯০ টাকা এবং সুপার পাম অয়েল প্রতি লিটার ছিল ১৮০ টাকা।
তবে কয়েখ মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে মশুর ডালের দাম। শনিবার খুচরা বাজারাগুলোতে প্রতি কেজি চিকন মশুর ডাল ১৪০ টাকা ও মোটা ডাল ১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া, স্বস্তি নেমেছে চিনির দামে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সাদা (ফ্রেশ) চিনি ১২৫ টাকা, লাল চিনি (প্যাকেটজাত) ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যা কয়েক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি সাদা (ফ্রেশ) চিনি ১৪০ টাকা ও লাল চিনি (প্যাকেটজাত) ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
তবে ডিমের দাম এখনও কমেনি। নগরীসহ গ্রামাঞ্চলে ব্রয়লার মুরগির লাল ডিমের হালি ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা ও সাদা ডিম ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া, শীতের শুরুতেই কমতে শুরু করেছে আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম। অল্প দামেই কেনা যাচ্ছে সব ধরনের সবজি।
নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নতুন আলু ৬০ টাকা, পুরনো আলু ৪০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা, দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চীনা রসুন ২২০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, শিম ২০ টাকা, কাঁচামরিচ মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লালশাক ও ঘিকাঞ্চন শাক ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কাঁচকলা প্রতি হালি ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এর আগে, গত ২০ ডিসেম্বর প্রতি কেজি নতুন আলু ১০০ টাকা, পুরনো আলু ৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা, দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চীনা রসুন ২২০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ মানভেদে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লালশাক ও ঘিকাঞ্চন শাক ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
কেসিসি সুপার মার্কেটের আপন পোল্ট্রি ফার্মের পরিচালক মো. রিপন হাওলাদার বলেন, ‘সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে। তবে চাল, ডাল, তেল, মুরগি ও গরুর মাংসসহ অন্যান্য পণ্যের দাম ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কমছে না।’
কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে আসা ক্রেতা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সবজির দাম কমে গেলেও অন্যান্য জিনিসের দাম কমানো প্রয়োজন।’
যেসব পণ্যের দাম কমছে না সেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
৯৩ দিন আগে
চট্টগ্রামে ৬ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ
চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দরটিলা সল্টগোলা এলাকায় বিভিন্ন গুদামে অভিযান চালিয়ে ৬ হাজার ১২০ লিটার খোলা ও পাম তেল জব্দ করেছে র্যাব-৭ ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম।
এসব তেল অবৈধভাবে মজুত করার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগে সল্টগোলার মেসার্স আসাদ বাণিজ্যালয়কে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রবিবার (১৫ মে) বেলা ১১টায় সল্টগোলা ঈশানমিস্ত্রীর বাজারে এ অভিযান চালানো হয়।
এর আগে গত শুক্রবার ও শনিবার নগরীর আগ্রাবাদ কর্ণফুলি বাজারে দুই দফা অভিযান পরিচালনা করে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল উদ্ধার করে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দিদার হোসেন বলেন, ভোক্তার অধিদপ্তর ও র্যাবের যৌথ পরিচালনায় এ অভিযান চালানো হচ্ছে। সকাল থেকে সল্টগোলা ঈশান মিস্ত্রী বাজারের কয়েকটি দোকানে আমরা অভিযান চালাই। এ সময় মেসার্স আসাদ নামে এক প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা ৬ হাজার ১২০ লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের সন্ধান পাই। এসব সয়াবিন তেল লিটারে ১৩৩ টাকা ও পাম তেল ১২৭ টাকা দরে কিনেছিল মো. ইলিয়াস হোসেন নামে ব্যবসায়ী। পরে মজুদ করে বর্তমান মূল্যে বিক্রি করে আসছে।
তিনি বলেন, আমাদের অভিযানে এ সত্যতা মেলায় আমরা মজুতদারির অপরাধে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আাদায় করি। এছাড়া ওই তেলগুলো আগের দামে বিক্রির আদেশ দিয়েছি ওই ব্যবসায়ীকে। আমাদের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পড়ুন: হবিগঞ্জে ২১ শ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি
১০৫১ দিন আগে