যুদ্ধবন্দি
স্টিল কারখানার ২৫০০ ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দির ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ
অবরুদ্ধ মারিউপোল শহরের স্টিল কারখানা থেকে আজভ রেজিমেন্টের প্রায় দুই হাজার ৫০০ ইউক্রেনীয় যোদ্ধাকে বন্দি করার দাবি করেছে রাশিয়া। এছাড়া মস্কো-সমর্থিত এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এ সকল যুদ্ধবন্দিদের ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দেয়ায়, সেনাদের ভাগ্যে কি আছে তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
এর আগে শনিবার রাশিয়া আজভস্টাল স্টিল কারখানার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ঘোষণা করে। এর ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে লড়ে যাওয়া মারিউপোলের শেষ বাহিনীর পরাজয় ঘটেছে এবং ইউক্রেনের এই কৌশলগত বন্দর শহরটির পতন ঘটেছে।
গত তিন মাসের রুশ হামলায় শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শহরটির ২০ হাজারেরও বেশি নাগরিকের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে৷
শহরটির পতনের ফলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রায় তিন মাস ধরে চালানো যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে বলেই ধরা যায়।
এদিকে ইউক্রেনের অন্যতম মিত্র পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা এক অঘোষিত সফরে ইউক্রেনে পৌঁছেছেন। তার কার্যালয় জানিয়েছে, রবিবার দুদা ইউক্রেনের পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন।
আরও পড়ুন: মারিউপোলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া
পোল্যান্ড ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের ইচ্ছার দৃঢ় সমর্থক এবং যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটি লাখ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।
রাশিয়া ইউক্রেনের সমুদ্র বন্দরগুলোকে অবরুদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনে পশ্চিমা মানবিক সহায়তা এবং অস্ত্র সরবরাহের অন্যতম একটি প্রধান প্রবেশদ্বার হয়ে উঠেছে পোল্যান্ড। এছাড়া পোল্যান্ড ইউক্রেনকে তার শস্য ও অন্যান্য কৃষি পণ্য বিশ্ব বাজারে পৌঁছাতেও সহায়তা করছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আটক করার ভিডিও প্রকাশ করে ঘোষণা করেছে, তার বাহিনী মারিউপোলের স্টিল কারখানার বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ টানেল থেকে শেষ ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের বন্দি করেছে।
এতে আরও বলা হয়, মোট দুই হাজার ৪৩৯ জন বন্দি আত্মসমর্পণ করেছে।
যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা বন্দিদের ‘যুদ্ধবন্দি’ হিসেবে গণ্য করতে রুশ বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করেছেন।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক শনিবারও বলেছেন, ইউক্রেন তাদের (যুদ্ধবন্দী সেনা) প্রত্যেককে ‘ফেরানোর জন্য লড়াই করবে’।
অন্যদিকে মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের একটি এলাকার ক্রেমলিনপন্থী প্রধান ডেনিস পুশিলিন বলেছেন, আটক যোদ্ধাদের মধ্যে কিছু বিদেশি নাগরিক রয়েছে; এর বেশি বিস্তারিত তিনি জানাননি।
তিনি বলেন, ‘তারা নিশ্চিত ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হবেন।’
রুশ কর্মকর্তারা এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এসব যোদ্ধাদের (ইউক্রেনীয়) নব্য-নাৎসি এবং অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস পুশিলিনকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘আমি বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধার করতে হবে। সাধারণ মানুষ, সমাজ এবং সম্ভবত বিশ্ব সম্প্রদায়ের বুদ্ধিমান অংশের কাছ থেকে এর জন্য বিশেষ অনুরোধ রয়েছে।’
তবে ইউক্রেন সরকার আজভস্টাল দখলের রাশিয়ার দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন সংঘাতে ৩৭৫২ বেসামারিক মানুষের প্রাণহানি: জাতিসংঘ
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী যোদ্ধাদের বলেছিল তাদের মিশন সম্পূর্ণ এবং এখন তারা বেরিয়ে আসতে পারে। তারা এটিকে ‘গণআত্মসমর্পণ’ হিসেবে নয়, বরং এটিকে তারা উচ্ছেদ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
প্রসঙ্গত, ক্রেমলিন ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করা ক্রিমিয়ান উপদ্বীপ ও রাশিয়ার মধ্যে একটি স্থল বন্দর প্রতিষ্ঠা করার জন্য মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিল। অন্যদিকে এই বন্দরটি হারানোর ফলে ইউক্রেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর হারাবে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ শনিবার জানিয়েছেন, রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের প্রধান বন্দর ওডেসার কাছে ইউক্রেনের একটি বিশেষ-অপারেশন ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। সেইসঙ্গে উত্তর ইউক্রেনের জাইটোমির অঞ্চলে পশ্চিমা সরবরাহকৃত অস্ত্রের একটি ভাণ্ডারও ধ্বংস করেছে।
তবে এবিষয়েও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাসের বেশিরভাগ অংশে ব্যাপক লড়াইয়ের খবর দিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জাতির উদ্দেশ্যে তার রাতের ভিডিও ভাষণে বলেন, ‘ডনবাসের পরিস্থিতি খুব খারাপ।’
তিনি বলেন, ‘আগের দিনের মতো রাশিয়ার সেনাবাহিনী স্লোভিয়ানস্ক ও সিভিয়েরোডোনেটস্কে আক্রমণ করার চেষ্টা করছে।’
সিভিয়েরোডোনেটস্ক হল লুহানৎস্ক অঞ্চলের ইউক্রেনীয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রধান শহর। এই শহরটি ডোনেৎস্ক অঞ্চলের সঙ্গে ডনবাসকে সংযুক্ত করেছে।
শহরটির গভর্নর সের্হি হাইদাই বলেছেন, শহরের একমাত্র কার্যকরী হাসপাতালে মাত্র তিনজন ডাক্তার এবং ১০ দিন কাজ চালানোর মতো সরবরাহ রয়েছে।
আরও পড়ুন: খারকিভের চারপাশ থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার: ইউক্রেন
২ বছর আগে