স্থায়ী সমাধান
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের স্থায়ী সমাধানে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব চায় ইউএনএইচসিআর-এনজিও
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও রাষ্ট্রহীনদের জন্য টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও সুশীল সমাজের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ইউএনএইচসিআরের ২০২৩ সালের আঞ্চলিক এনজিও কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিক রিফিউজি রাইটস নেটওয়ার্ক (এপিআরআরএন), ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব ভলান্টারি এজেন্সিস (আইসিভিএ) এবং এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক অব রিফিউজিসের (এপিএনওআর) সহযোগিতায় এ কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনে ৭১ লাখ বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
"টেকসই সমাধানের জন্য অন্তর্ভুক্তিমুলক প্রচার" প্র্রতিপাদ্য সামনে রেখে বেশ কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে এতে। এ অনুষ্ঠানে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৯ টি দেশের ১৬১ টি সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী ১৮০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী একত্রিত হয়েছিলেন।
২০২২ সালের শেষে রেকর্ড করা তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এই অঞ্চলে ৭০ লাখেরও বেশি শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী এবং ৫০ লাখ সংঘাত-প্রভাবিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ (আইডিপি) রয়েছে।
বাস্তুচ্যুতদের বেশিরভাগই আশ্রয় পাওয়া দেশগুলোতে দীর্ঘস্থায়ীভাবে বাস করছে।
ইউএনএইচসিআর’র এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক ইন্দ্রিকা রাতওয়াতে বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তি একটি জটিল বিষয়, যা প্রায়শই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে যখন আমরা শরণার্থীদের জন্য স্থানীয়ভাবে সমাধান খুঁজে বের করার জন্য শিক্ষা, জীবিকা, দক্ষতা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়গুলো নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করি।’
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানবিক অংশীদারদের জীবনের সব ক্ষেত্রে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রহীন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা কীভাবে সমগ্র সমাজের উপকারের জন্য স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে সে বিষয়ে আলোচনা হয় এ কনসালটেশনে। এ ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের বিষয়ে সর্বোত্তম অনুশীলন ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেয় এটি।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আইসিভিএ'র আঞ্চলিক প্রতিনিধি কেয়া সাহা চৌধুরী বলেন, ‘ফলপ্রসু অন্তর্ভুক্তির জন্য বাস্তুচূতদের প্রতি ধারণার পরিবর্তন প্রয়োজন। মনে করতে হবে- জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা শুধু সহায়তার সুবিধাভোগী নয় বরং সম্পদ, তারা যে সব সম্প্রদায়ের অংশ, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একই সঙ্গে সম্প্রসারণের মাধ্যমে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সহায়ক নীতি ও সুরক্ষা প্রয়োজন।‘
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে যুদ্ধ ও দুর্যোগে ২০২২ সালে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৭১ মিলিয়ন: প্রতিবেদন
ইউএনএইচসিআর, এনজিও ও কমিউনিটি-ভিত্তিক সংস্থাগুলো কীভাবে জাতীয় ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তির প্রচারের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা এবং সমর্থন করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।
এপিএনওআর-এর নির্বাহী পরিচালক নাজিবা ওয়াজেফাদোস্ট বলেন।
এপিএনওআর’র নির্বাহী পরিচালক নাজিবা ওয়াজেফাদোস্ট বলেন, শরণার্থী নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোর ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। এই সংস্থাগুলো তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সম্প্রদায়গুলোকে বুঝতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে। যোগাযোগের ঘাটতিগুলো পূরণ করতে পারে এবং সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সমাধানগুলো সহজতর করতে পারে। দ্বিতীয়ত, লিঙ্গ ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে শরণার্থী সম্প্রদায়ের মধ্যে এবং সরকারি সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে সব স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের ন্যায়সঙ্গত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করা উচিত।’
শরণার্থী নেতৃত্বাধীন সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও স্বীকার করেছেন আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা। কীভাবে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে পুনর্বাসন ও পরিপূরক পথগুলোতে জড়িত হতে আরও উৎসাহিত করা যায় এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি অনুমানযোগ্য ও ন্যায়সঙ্গত দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়।
এশিয়া প্যাসিফিক রিফিউজি রাইটস নেটওয়ার্কের এপিআরআরএন-এর কো-সেক্রেটারি জেনারেল হাফসার তামিসুদ্দিন বলেন, ‘শরণার্থীরা স্থানীয়দের সঙ্গে যেন নিজেদের দক্ষতা যোগ করতে পারে তার জন্য আমাদের উদ্ভাবনী উপায়গুলো ভাবতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে শরণার্থীদের সেই দক্ষতাগুলো কাজে লাগানোর এবং সমাজে অবদান রাখার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যাতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী থেকে সক্ষম সম্প্রদায়গুলোতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।’
আরও পড়ুন: ভারতের মণিপুরে সহিংসতায় নিহত বেড়ে ৬০, কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত
আলোচনার সুপারিশগুলো ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইউএনএইচসিআর নির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে এবং ২০২৪ সালের জুনে জেনেভায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাপী এনজিও কনসালটেশনে এগুলো জানানো ও সমর্থন করা হবে।
প্রথম ইউএনএইচসিআর-এনজিও আঞ্চলিক পরামর্শ জুলাই ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোভিড -১৯ এর প্রেক্ষাপটে শরণার্থীদের সামাজিক-অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির দিকে মনোনিবেশ করেছিল।
১ বছর আগে
এবারের বর্ষায়ও ঢাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা, নেই কোনো স্থায়ী সমাধান
বর্ষা আসার সাথে সাথে ঢাকাবাসী প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার সমস্যায় পড়ে। মেগা সিটির দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের জন্য এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের রাস্তা থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা নেয়া উচিত ছিল।
দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন, বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও খাল ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকায় এ বছর জলাবদ্ধতা কম হবে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে কয়েকজন নগরবাসী আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রহিমুল্লাহ বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এই রাস্তায় চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়বে কারণ বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেই এগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।’
মালিবাগ এলাকার গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা করতে তেজগাঁও যেতে হবে। সেখানে একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে এবং নির্মাণ কাজের কারণে পুরো এলাকাটি দুর্গম হয়ে পড়েছে।’
জলাবদ্ধতার কারণে আসন্ন বর্ষায় সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনর পদক্ষেপ
এবারের বর্ষায় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪৬টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০৪ ও উত্তরের ৪২টি। এসব স্থানে বিগত বছরগুলোয় বৃষ্টির পানি জমেছিল। তার আলোকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জানায়, জলাবদ্ধপ্রবণ ১০৪টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৯টির বেশি স্থানের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু অংশের কাজ চলছে। এছাড়া জলজট নিরসনে ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও খাল পরিষ্কারের কার্যক্রম চলছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির অতিরিক্ত জলাবদ্ধতাপ্রবণ ৩২টির বেশি এলাকা মতো। পল্টন, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল,গোপীবাগ, কমলাপুর, টিকাতলী, আগাসাদেক রোড, আগামাসি লেন, আব্দুল হাদি লেন, ইস্কাটন রোড, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ইস্কাটন রোড, নিউমার্কেট, বাটা মোড়, ধানমন্ডি ঈদগাহ রোড, ঝিগাতলা, নাজিম উদ্দিন রোড, নবাবগঞ্জ পার্ক, আজিমপুর, কে এম দাস লেন সংলগ্ন রাস্তা, আরকে মিশন রোড ও অভয়দাস লেন গোপীবাগ বাজার রোড ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকা।
অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, গত বছর জলাবদ্ধপ্রবণ ১০৩টি স্থান ছিল। এবার এসব স্থানের মধ্যে ৬১টির সংস্কার করা হয়েছে। বাকি ৪২টি স্থান সংস্কারের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া ড্রেন ও খালের পরিষ্কারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা উত্তরের অতিরিক্ত জলাবদ্ধ এলাকা প্রায় ৩০টির মতো- মিরপুর-১০, মিরপুর-১৩, মিরপুর সাংবাদিক কলোনি এলাকা, মিরপুর কালশী, বিমানবন্দর সড়কের আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী পর্যন্ত, শহীদ আব্দুর ওয়াব রোড, মিরপুর শেওরা পাড়া, কাজী পাড়া, মনিপুর, মধুবাগ, বাংলামোটর, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর লালমাটিয়, কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবন সংলগ্ন এফডিসি এলাকা পর্যন্ত, নাখালপাড়া, নিকুঞ্জ-১, ২, গ্রীন রোড, তে বসুন্ধরা সিটির পিছনে তেজতুরি বাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়িল, বাড্ডা ও কুড়িল নতুন বাজার এলাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ (অতিরিক্ত সচিব) ইউএনবিকে বলেন, গত বছর দক্ষিণ সিটিতে ১০৪টি স্পটে পানি জমাট থাকতো। এই জায়গা গুলো চিহ্নিত করে এবার সংস্কার কাজ করেছি। ১০৪টির মধ্য ৫টি স্পট বাকি আছে। এই স্পট ১৯ মের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়া ১৫ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার করেছি। আমরা আশা করছি এবার বর্ষায় গতবারের তুলনায় সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
পড়ুন: কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা
২ বছর আগে