আনঅফিসিয়াল
অরিজিনাল ফোন চেনার উপায়: ফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি
আসল ফোন চেনার উপায় জানা থাকলে যাবতীয় বিড়ম্বনার অবসান ঘটতে পারে ফোনটি কেনার সময়। সর্বশেষ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ কনফিগারেশনের সেটটি বাজেটের মধ্যে পেতে হলে ফোন যাচাই বাছাই আবশ্যক। বাজারে হাজারো ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন থেকে পছন্দের হ্যান্ডসেটটি লুফে নিতে বাজার দরের পাশাপাশি তার কারিগরি জ্ঞানও প্রয়োজন। তবে এর মানে এই নয় যে স্মার্টফোনের ব্যাপারে একদম দক্ষ হতে হবে। এই জ্ঞান মুলত যে ফোনটি কেনা হচ্ছে তা আসল না নকল সে বিষয়ে সাবধানতার দিকে নির্দেশ করছে। অনেক সময় অসকতর্কতার কারণে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সবচেয়ে নামকরা কোম্পানির নকল ফোন কিনে প্রতারিত হতে হয়। তাই সঠিক ফোন চেনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েই আজকের এই নিবন্ধ।
অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল ফোনের মধ্যে পার্থক্য
অরিজিনাল ফোনগুলো ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করে আইনগতভাবে দেশের বাজারে প্রবেশ করে। সেই সঙ্গে এগুলোর আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নাম্বার সরকারি ডাটাবেসে নিবন্ধিত হয়ে যায়। একই ভাবে দেশের ভেতরে প্রস্তুতকৃত ফোনগুলোর আইএমইআই নাম্বারও দেশের মোবাইল ফোন ডাটাবেসে নিবন্ধিত থাকে। স্বভাবতই এই অফিসিয়াল ফোনগুলোর দাম বেশি হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, ভ্যাট-ট্যাক্স না দেয়ার কারণে আমদানিকৃত নকল ফোনগুলোর দাম অপেক্ষাকৃত কম হয়। এই ফোনগুলো অবিকল অফিসিয়াল ফোনের মতোই দেখতে এবং প্রথম দিকে একদম অরিজিনাল ফোনের মতই কাজ করে। কিন্তু পরবর্তীতে ফোন ব্যবহারের সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
আরও পড়ুন: মোবাইল ফোন পানিতে পড়ে গেলে করণীয়
আনঅফিসিয়াল ফোন কেনার ঝুঁকি
ম্যালওয়্যার অ্যাটাক
একটি নকল মোবাইল সেট ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি যে বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় তা হলো- ম্যালওয়্যারের সংক্রমণ। এই ম্যালওয়্যার ফোনটি যে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হয় সেই নেটওয়ার্ক জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য মোবাইল ফোনকেও সংক্রমিত করে ফেলতে পারে।
এই ম্যালওয়্যারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হলো কী-লগিং। এর মাধ্যমে কোন হ্যাকার যখন ফোনের অ্যাক্সেস পেয়ে যায়, তখন তারা ফোনটিতে ক্ষতিকারক লিঙ্ক পাঠাতে থাকে। ফোন ব্যবহারকারি সেই লিঙ্কে ক্লিক করা মাত্রই ফোনের প্রয়োজনীয় তথ্য এবং ব্যবহারকারির ব্যক্তিগত তথ্য তার অজান্তেই পাচার হয়ে যায়।
র্যানসমওয়্যারের ঝুঁকি
র্যানসমওয়্যার নকল মোবাইল ফোনে খুব সহজেই গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। ফলে ফোন ব্যবহারকারি সেই ফাইলগুলো ব্যবহার করতে পারে না। ম্যালওয়্যারের মত এটিও যে কোন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি ফোনকে সংক্রমিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: দেশের বাজারে ১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা’র রিয়েলমি ৯ ফোরজি ও সি৩৫
অনিরাপদ অপারেটিং সিস্টেম (ওএস)
নকল মোবাইল ফোনগুলো নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে আপডেট হয় না। এর ফলে ফোনটি পূর্ণ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে না। ওএস ডিভাইসের মডেল, সিপিইউ কোর, র্যাম, স্টোরেজ ইত্যাদির উপর ভুল রিপোর্ট তৈরি করে। ধীরে ধীরে ফোনটি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়তে থাকে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি
অরিজিনাল ফোনের নির্মাতারা তাদের ডিভাইসগুলো বাজারে বিক্রি করার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। উদ্দেশ্য একটাই আর তা হচ্ছে- গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অ্যাপল, অ্যান্ড্রয়েড-এর মতো নিবন্ধিত কোম্পানিগুলো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রোটোকল এবং সুরক্ষা মান নিশ্চিত করে থাকে। অধিকাংশ ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নির্গমনের সংস্পর্শে এড়ানোকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো সুরক্ষার প্রতিটি স্তর পূরণের জন্য মোবাইল ডিভাইস, চার্জার এবং ব্যাটারির মান নিশ্চিত করে। বিশেষ করে ব্যাটারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই কোম্পানিগুলো আপসহীন ভাবে অত্যাধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে৷
আরও পড়ুন: ফোন ফ্যাক্টরি রিসেট করার সঠিক পদ্ধতি
অন্যদিকে, নকল মোবাইল, চার্জার এবং ব্যাটারিগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায় না। ফলশ্রুতিতে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বাইরে থেকে যায় গ্রাহকদের নিরাপত্তার বিষয়টি। বিভিন্ন গণযোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাটারি বিস্ফোরণের ঘটনা একদমি নতুন নয়। শরীরের খুব কাছাকাছি থাকায় নিমেষে টাইম বম-এ পরিণত হওয়া এই বস্তুটি গ্রাহকদের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। নিম্নমানের ব্যাটারি মানেই এর ভেতরে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলোর বিক্রিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে অঙ্গহানীর দিকে নিয়ে যায়।
ত্রুটিপূর্ণ নেটওয়ার্ক
আনঅফিসিয়াল ফোনের গ্রাহকদের একটি সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে- নেটওয়ার্কের ব্যাঘাত ঘটা। যেমন- কল করার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে শব্দ শোনা। নকল ফোনগুলো স্বাভাবিকভাবেই কল গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। এমনকি কিছু কিছু স্থানে নেটওয়ার্ক বারও দেখা যায় না।
এছাড়া নকল ডিভাইসগুলোর নেটওয়ার্ক-এর গতি কম থাকে, যা গ্রাহকদেরকে চরম হতাশাজনক অভিজ্ঞতা দেয়। বেশিরভাগ লোকেশনে নকল ফোনের সিগন্যাল এবং কল ব্যর্থতার প্রবণতা বেশি থাকে। বাধ্য হয়ে ফোন কেনার অল্প সময়ের মধ্যে তারা ফোনটি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। অন্যদিকে, একটি জেনুইন ফোনে কোনো সমস্যা ছাড়াই সহজেই কল করা এবং গ্রহণ করা যায়।
আরও পড়ুন:
পরিবেশগত ঝুঁকি
নকল ডিভাইস, চার্জার এবং ব্যাটারি নিম্নমানের উপাদান দিয়ে তৈরি থাকে। এতে থাকা রাসায়নিক উপাদান শুধু মানুষের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং পরিবেশেরও ক্ষতি করতে পারে। এই ধরনের ডিভাইস তৈরিতে ব্যবহৃত সস্তা এবং নিম্নমানের ধাতু ও রাসায়নিক উপাদানগুলো ল্যাবে পরীক্ষিত থাকে না। স্বভাবতই, এই ফোনগুলো হয় ত্রুটিযুক্ত এবং এতে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের আশেপাশের সম্পত্তির ক্ষতি করার সম্ভাবনা থাকে।
আনঅফিসিয়াল ফোনে থাকা পারদ এবং সীসা পরিবেশের ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এগুলো থেকে রাসায়নিক পদার্থ যেমন তামা, ক্যাডমিয়াম, লিথিয়াম, জিঙ্ক এবং আর্সেনিক বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করতে পারে।
আরও পড়ুন: হোমিকরসিন: বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত নতুন অ্যান্টিবায়োটিক
কিভাবে অফিসিয়াল ফোন যাচাই করবেন?
বিটিআরসি আইএমইআই নাম্বারের মাধ্যমে অফিসিয়াল ফোন যাচাই
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্ষেত্রে
প্রতিটি অফিসিয়াল স্মার্টফোনে ১৫-সংখ্যার একটি আইএমইআই নাম্বার থাকে। এটি প্রতিটি ফোনের জন্যই আলাদা হয়, যা ডিভাইসের প্যাকেজিং-এও উল্লেখ থাকে। একটি আনঅফিসিয়াল ফোন থেকে একটি অফিসিয়াল ফোন চেনার জন্য এই কোডটিই যথেষ্ট।
অর্থাৎ প্রকৃত ফোন যাচাই করতে সর্বপ্রথম এই ১৫-সংখ্যার আইএমইআই কোডটি খুঁজে বের করতে হবে। এই অনুসন্ধানটি দুটি উপায়ে চালানো যেতে পারে:
প্রথমটি হলো→ *#০৬# ডায়াল করলে সাথে সাথেই ১৫-সংখ্যার আইএমইআই নাম্বারটি মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠবে।
আরও পড়ুন: আপনার স্মার্টফোন দিয়ে আয় করার সেরা কিছু উপায়!
আরেকটি অনুসন্ধান পদ্ধতি হলো ফোনের সেটিংস-এর মাধ্যমে। সেটিংস থেকে খুঁজে বের করতে হবে অ্যাবাউট ডিভাইস। এখানে ক্লিক করলে দ্বিতীয় স্ক্রিন থেকে বাছাই করতে হবে স্ট্যাটাস। অতঃপর মোবাইল স্ক্রিনে কাঙ্ক্ষিত আইএমইআই নাম্বারটি প্রদর্শন করবে।
এবার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে যে কোন ব্রাউজার (যেমন গুগল ক্রোম) থেকে imei.info ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এরপর দৃশ্যমান ডায়ালগ বক্সে সেই ১৫-সংখ্যার আইএমইআই নাম্বারটি লিখে চেক-এ ক্লিক করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গেই ফোনের সমস্ত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদর্শিত হবে।
এই অংশে যদি ফোনের স্ক্রিনে ফোনের তথ্য না দেখিয়ে ভিন্ন কিছু দেখায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি একটি নকল ফোন।
আরও পড়ুন: অভয় অ্যাপ: কিশোরীদের নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা
আইফোনের ক্ষেত্রে
প্রথমে সিম কার্ড স্লটে ফোনের সিরিয়াল নাম্বার পরীক্ষা করতে হবে। অথবা সেটিংস থেকে জেনারেল তারপর অ্যাবাউট-এ যেয়েও পাওয়া যাবে সিরিয়াল নাম্বার।
এবার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে checkcoverage.apple.com ওয়েবসাইটে যেতে হবে। তারপর সেখানে দেখানো ডায়লগ বক্সে সিরিয়াল নাম্বারটি লিখে চেক-এ ক্লিক করতে হবে।
এই অংশে হ্যান্ডসেট নকল হলে স্ক্রিনে ‘অবৈধ সিরিয়াল নম্বর’ বার্তা প্রদর্শন করবে। আর যদি তা না করে তাহলে বুঝতে হবে মোবাইল ফোনটি আসল।
আরও পড়ুন: পুরনো স্মার্টফোনের আয়ু বাড়ানোর ৫টি টিপস
এসএমএস-এর মাধ্যমে অফিসিয়াল ফোন যাচাই
মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে যেয়ে টাইপ করতে হবে KYD, তারপর একটি স্পেস; অতঃপর ১৫-সংখ্যার আইএমইআই নম্বার। অর্থাৎ ম্যাসেজটি এরকম হবে- "KYD 1234567890ABCDE"।
তারপর ম্যাসেজটি পাঠিয়ে দিতে হবে ১৬০০২ নাম্বারে। এর সঙ্গে সঙ্গেই একটি উত্তর আসবে আর এই উত্তরটিই নিশ্চিত করবে যে মোবাইল ফোনটি অফিসিয়াল নাকি আনঅফিসিয়াল।
শেষাংশ
শুধু সঠিক স্মার্টফোনটি কেনাই নয়; অরিজিনাল ফোন চেনার উপায় জানা মানে সেটির দীর্ঘস্থায়ী ও যথাযথ ব্যবহার। ঘন ঘন সেট বদলানোর পাশাপাশি বারবার ফোন মেরামতের ঝামেলা থেকেও রেহাই মিলবে, যদি ফোন নির্বাচনে সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেয়া যায়। দৈনন্দিন জীবনের এই অবিচ্ছেদ্য বস্তুটি থেকে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো এর নিঁখুত নির্বাচন। অন্যথায়, সাময়িক ভুল সিদ্ধান্তে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয়ের মাধ্যমে এই দরকারি জিনিসটি উল্টো চরম বিপত্তির কারণ হয়ে দাড়াবে।
আরও পড়ুন: মোবাইলের আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ চালু
২ বছর আগে