সবুজ জ্বালানি
সবুজ জ্বালানির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ: সরকারি নথি
নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন খরচ, বিশেষ করে সৌর বিদ্যুতের, সাম্প্রতিক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়নি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) নথিতে এই হতাশাজনক তথ্য পাওয়া গেছে।
নথিপত্র অনুসারে,নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখনও দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক শতাংশের নিচে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানির সময় দেয়া নথি থেকে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে শূন্য দশমিক ০৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সবুজ জ্বালানি: মিনি সৌর গ্রিডগুলো বাঁচাতে চায় সরকার
সরকারি নথি থেকে আরও দেখা যায়, ক্রমবর্ধমান বার্ষিক আর্থিক ক্ষতি পূরণে সরকার জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসারে মনোযোগ অব্যাহত রেখেছে বিশেষ করে ভাড়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
এদিকে বিপিডিবি ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম বর্তমান ৫ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে আরও ৬৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। আর তা না হলে সংস্থাটি ৩০ হাজার ২৫১ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানায়।
বিইআরসি’র কারিগরি মূল্যায়ন দল ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে বিইআরসি এখনো এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বিপিডিবি’র নথিতে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে (মার্চ পর্যন্ত) ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সরকারকে প্রতি ইউনিটে গড়ে ৪৩ দশমিক ৪২ টাকা খরচ করতে হয়েছে। তারপর ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫ দশমিক ৫১ টাকা, কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১২ দশমিক ৭৭ টাকা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে (সোলার) ১২ দশমিক ৬৪ টাকা, গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩ দশমিক ৪৬ টাকা এবং জলবিদ্যুৎ থেকে ২ দশমিক ৬৭ টাকা এবং আমদানি করা বিদ্যুতের জন্য ৫ দশমিক ৯৫ টাকা।
আরও পড়ুন: জ্বালানি খাত উন্নয়নে মার্কিন বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হবে: নসরুল হামিদ
সর্বোচ্চ ৫৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ বিদ্যুৎ গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে, ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ ফার্নেস ওয়েল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে, ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে, শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে, এক দশমিক ০৩ শতাংশ জলবিদ্যুৎ থেকে, ৯ দশমিক ২০ শতাংশ আমদানি এবং মাত্র শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে উৎপাদন করা হয়েছে।
খরচ উল্লেখযোগ্য হ্রাসের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এত বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সবুজ জ্বালানির দিকে মনোযোগ দেয়া হয়নি।
বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দাবি করেছে, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ৮৯ শতাংশ কমেছে।
টিআইবি বলছে, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম দেশ যেখানে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বর্তমান উৎপাদন মাত্র ৭৭৯ মেগাওয়াট।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে ধীরগতির বিষয়ে বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি মুনাওয়ার মঈন বলেন, ‘বাজেটের সঙ্গে সঠিক নীতি সহায়তার অভাব এই খাতের উন্নয়নে প্রধান সমস্যা।’
আরও পড়ুন: প্রযুক্তি ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশ্বাস ডেনমার্কের
এই মুহূর্তে একমাত্র সম্ভাব্য স্থাপনা হলো নেট মিটারসহ ‘রুফটপ সোলার’। তবে আর্থিক প্রণোদনাসহ উপযুক্ত অর্থায়ন বিকল্প শিল্প মালিকদের দ্রুত স্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি স্থাপনা বাড়ানোর জন্য বাজেট বরাদ্দসহ একটি লক্ষ্যভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার নেট মিটারিং ও অন্যান্য নীতি নির্দেশিকাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।’
সম্প্রতি একটি ওয়েবিনারে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন,সবুজ জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ভূমি স্বল্পতার প্রধান প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী প্রযুক্তির পাশাপাশি বিদেশি আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম আরও বাড়লে জনগণের জন্য বড় চাপ হবে: জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা
২ বছর আগে