বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান
ধানমন্ডিতে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান: চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
ধানমন্ডির আবাসিক এলাকা থেকে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সরাতে উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করায় গণপূর্ত সচিবসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই রুল জারি করেন।
আরও পড়ুন: খুলনার সদ্য সাবেক ডিসি ও ডুমুরিয়ার ইউএনওকে হাইকোর্টে তলব
যাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করা হয়েছে তারা হলেন-গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক প্রকৌশলী মো. শাহ আলম, অথরাইজড অফিসার নুরুজ্জামান হোসেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার বৈশিষ্ট্য রক্ষার নির্দেশনা চেয়ে সেখানকার দুই বাসিন্দা এম এ মাসুদ এবং এম এ মতিন হাইকোর্টে ২০১১ সালে রিট করেন।
এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেন।
একইসঙ্গে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নতুন স্কুল, কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও অনুমোদনের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১১ জুন রায় দেন।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, রায়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে আদালত রাজউকসহ বিবাদীদের ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা থেকে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো অপসারণ করা এবং ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কয়েকটি শাখা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেন।
এসব নির্দেশনা পালন না করায় মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক প্রকৌশলী মো. শাহ আলম, অথরাইজড অফিসার নুরুজ্জামান হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।
শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেছেন।
আরও পড়ুন: জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’র সঙ্গে জয় বঙ্গবন্ধু অন্তর্ভুক্তি চেয়ে হাইকোর্টে রিট
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না মর্মে হাইকোর্টের রায় স্থগিত
২ বছর আগে
‘হাতিরঝিল’ প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ ঘোষণার রায় স্থগিত হয়নি: শুনানি ২৭ জুন
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ করা সব হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র করা লিভ টু আপিলের ওপর ২৭ জুন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
রবিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এই আদেশ দিয়েছেন।
আদালতে রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অপরপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টে লে-আউট প্ল্যানের নির্দেশনার বাইরে কতিপয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে রাজউকের নিষ্ক্রিয় থাকার প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালে হাইকোর্টে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। ওই সময় রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে ওই রুলের শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৩০ জুন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। রায়ে ওই পকল্প এলাকার ভেতরে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ সহ চার দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা সুপারিশ করেন হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়, ‘প্রতিটি ফোটা পানি অতি মূল্যবান। পানির চেয়ে তথা সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ এ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতিটি ফোটা পানির দূষণ প্রতিরোধ একান্ত আবশ্যক।’
আরও পড়ুন: হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ: হাইকোর্ট
পানির অস্তিত্ব নিয়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘দেয়ার ইজ নো ‘প্ল্যানেট বি’। দ্বিতীয় কোন পৃথিবী নেই। এ পৃথিবী ব্যতীত আর কোন গ্রহে পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় নাই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে এক ফোটা পানি এ পৃথিবীর বাইরে থেকে আনতে সক্ষম হয় নাই। অথচ এ খরচের শতভাগের একভাগ টাকা খরচ করলে আমরা আমাদের গ্রহের পানিকে দূষণমুক্ত ব্যবহার যোগ্য রাখতে সক্ষম।’
হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নিয়ে উচ্চ আদালত বলেন, হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোরূপ ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না।
রায়ে হাইকোর্ট চারটি নির্দেশনা হলো-
১.সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদে রায় মোতাবেক রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকা যা ‘হাতিরঝিল’ নামে পরিচিত পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি তথা জনগণের জাতীয় সম্পত্তি।
২.‘হাতিরঝিল’ এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদের রায় অনুযায়ী বেআইনি এবং অবৈধ।
৩. ‘হাতিরঝিল’ প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দকৃত সবহোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো।
৪. এ রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।
এছাড়াও হাতিরঝিলের বিষয়ে উচ্চ আদালত ৯ দফা সুপারিশ করেন।
সেগুলো হলো-হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনায় একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ তথা ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীন গঠন করা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ, জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন করা। নির্ধারিত দূরত্বে বিনামূল্যে সব জনসাধারণের জন্য পান করার পানির ব্যবস্থা করা। পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারিরীক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করা। পানির জন্য ক্ষতিকর হেতু লেকে সব ধরনের যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা। হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ বাজেট থেকে বরাদ্দ করারও সুপারিশ করেন হাইকোর্ট।
তাছাড়া হাইকোর্ট এ রিট মামলাটিকে চলমান রাখেন। রায় প্রদানকারী দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর গত ২৪ মে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। এরপর রাজউক হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) দায়ের করে।
আরও পড়ুন: হাতিরঝিলকে রক্ষা করার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে
২ বছর আগে