পদ্মা সেতুর উদ্বোধন
দৃশ্যমান হলো রূপসা রেল সেতু
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন ২৫ জুন রূপসা রেল সেতুর সপ্তম ও সর্বশেষ স্প্যানটি বসেছে। রূপসা নদীর ওপর সবগুলো স্প্যান বসানোতে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের রেল সেতু। ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মোংলা-খুলনা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সেই সাথে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সাথে খুলনা ও মোংলা বন্দরের রেল যোগাযোগের পথ সুগম হবে। ভারতের সঙ্গে মোংলা বন্দরের রেল যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানে মালামাল পরিবহন করা যাবে।
খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর একটি রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ। রূপসা নদীর ওপরে যুক্ত হচ্ছে পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এছাড়া ২১টি ছোটখাটো ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মাণ এবং খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত আটটি স্টেশন নির্মাণকাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: খুলনার পর্যটন শিল্পের দুয়ার উন্মোচন
ইতোমধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণ কাজ করছে। বাকি কাজ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেলসেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণের এই প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতীয় বহুজাতিক প্রযুক্তি, প্রকৌশলী, নির্মাণ, উৎপাদন ও আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান লার্সেন এ্যান্ড টার্বো (এলঅ্যান্ডটি)।
জমি অধিগ্রহণ, রেল লাইন ও রেল সেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যয় বেড়ে চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা হয়েছে ।
জানা গেছে, রূপসা রেল সেতুটি দুই দশমিক পাঁচ মিটার ব্যাসের এবং এর গড় গভীরতা ৭২ মিটার। রেলসেতুর ভায়াডাক্টের ৮৫৬টি পাইলের সবগুলোই বসানো হয়েছে। এর মোট পাইল বেস-গ্রাউটিং ৮৫৬টি, পাইল ক্যাপ ১৩৬টি, পিয়ার ১৩৬টি, স্প্যান ইর্যাকশান ১৩৬টি ও ব্যাক স্ল্যাব ১৩৬টির সবগুলোই সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর পাইল ৭২টি, পাইল ক্যাপ আটটি, বিয়ারিং ৩২টি সম্পন্ন হয়েছে। ব্রিজটির উপরিভাগ স্টিলের গার্ডার এবং আরসিসি ডেকের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। মূল সেতুর উপরিভাগে সাতটি স্প্যান বসানো হয়েছে। প্রধান সেতুর জন্য নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স স্ট্যান্ডার্ড হাই-ওয়াটার লেভেল (এসএইচডাব্লিউএল) থেকে ১৮ দশমিক ২৯ মিটার।
সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে রূপসা রেলসেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বলেন, রূপসা রেল সেতুর মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। ইতোমধ্যে রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ স্প্যান বসেছে গত ২৫ জুন। নদীর ওপরে সাতটি স্প্যান বসানো হয়েছে। আর নদীর দুই পাশে রেল সেতুর সংযোগে ২ কিলোমিটার করে চার কিলোমিটার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। ফলে এখন আর কোনো কাজ বাকি নেই। শুধুমাত্র পেন্টিংয়ের কাজ চলছে। এমন টুকটাক কাজ চলতে থাকবে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় লাখের বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত: জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
তিনি বলেন, এখন যে কোনো দিন রেল সেতুর অংশের কাজ বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে বুঝিয়ে দিতে পারবো। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেল সেতু আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।
তিনি বলেন, রূপসা সেতুর ওপর দাঁড়ালে সম্পূর্ণ রেল সেতু দেখা যাচ্ছে। রেলপথ নির্মাণকাজ চলছে। রেলপথ বসাতে তেমন সময় লাগবে না। ছোটখাটো কিছু ব্রিজ এবং আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলোও শেষ পর্যায়ে। আগামী চার মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংয়ের কাজও সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। এর মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ট্রায়েল রান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগেও দু-একবার ট্রায়েল রান করানো হবে। সবশেষে আলোচনা সাপেক্ষে রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: বাগেরহাট হবে নতুন অর্থনৈতিক হাব
দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তনের আশাব্যক্ত করে রেল সচিব বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের রেল সংযোগ তৈরি করবে। একইসঙ্গে পদ্মা রেল সেতু চালু হলে মোংলা থেকে মালামাল খুলনা-যশোর হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে সরাসরি ট্রেন ঢাকায় যাবে। সময় ও পথ কমে আসবে। এতে মোংলা বন্দরের কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল হবে। মোংলায় নতুন জেটিরও নির্মাণ কাজ চলছে। জাহাজও আসবে। সব মিলিয়ে মোংলা বন্দরের চাহিদা বেড়ে যাবে-ইনশাআল্লাহ।
২ বছর আগে
নয়া দিল্লীতে বাংলাদেশ হাই কমিশনে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপন
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়েছে।
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান শনিবার সকাল ৯টায় হাই কমিশন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন।
আরও পড়ুন: কানাডায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের উদ্যোগে বাণিজ্যিক সেমিনার
দিবসটির স্মরণে দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাণী পাঠ করা হয়।
বক্তৃতায় ইমরান বলেন, পদ্মা সেতু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের পথে আমাদেরকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু বাঙালি জাতির আত্ম-মর্যাদার প্রতীক, এদেশের মানুষের সাহস, সংকল্প ও সক্ষমতার প্রতীক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের প্রতীক।
আরও পড়ুন: অ্যানজাক দিবসে নিহতদের প্রতি ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের শ্রদ্ধা
পরে দূতাবাসের কর্মীরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরাসরি যুক্ত হন এবং বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করে।
২ বছর আগে
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন: ফরিদপুরে ২ দিনব্যাপী কর্মসূচি
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ফরিপুরে দুই দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শহরের প্রধান সড়কের বিভিন্নস্থানে সুদৃশ্য তোড়ণ স্থাপন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসবকে সফল করতে ফরিদপুরের রাজনীতিবিদ এবং কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করে বিভিন্ন প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের আবেগের বিষয়। বাঙালি জাতির অহংকার এই পদ্মা সেতু। এজন্য পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসব পালনের জন্য ফরিদপুরে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত
তিনি বলেন, ওই দিন সকালে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হবে। র্যালিটি শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফরিদপুরের শেখ জামাল স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে সবাই সরাসরি সম্প্রচার করা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনবেন। ফরিদপুরের স্টেডিয়ামে এই জন্য পদ্মা সেতুর একটি বড় রেপ্লিকা তৈরি করা হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইশতিয়াক আরিফ বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ফরিদপুরকে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে। ফরিদপুরের সরকারি-বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও ব্যক্তিমালিকানা ভবনগুলো আলোকসজ্জা করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ঐতিহাসিক এই দিনটিকে বরণ করে আমরা স্মরণীয় করে রাখতে চাই।
আরও পড়ুন: জনগণের টাকায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু, বিএনপির সহ্য হচ্ছে না: আইনমন্ত্রী
ফরিদপুরের পৌর মেয়র অমিতাভ ঘোষ বলেন, সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে শহরের টেপাখোলা মোড় থেকে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পর্যন্ত সাতটি তোড়ণ নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।
২ বছর আগে