পেঙ্গুইন
প্রায় চল্লিশ বছরের যাত্রা শেষে আটকে পড়ল সেই হিমদানব
বছরপাঁচেক ধরে এন্টার্কটিকার কাছের দক্ষিণ মহাসাগরে ভেসে বেড়াচ্ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিমশৈলটি। নাম এ২৩এ। এবার সেটি দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের অগভীর পানিতে আটকে পড়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) সমুদ্র বিজ্ঞানীরা এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সমুদ্র তীরের সঙ্গে ধাক্কা না-লাগায় পেঙ্গুইন আর সিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্য বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও সিএনএন এমন খবর দিয়েছে।
১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিকার ফিলচেনার বরফ সোপান ভেঙে প্রথম বেরিয়ে আসে প্রাচীনতম হিমশৈলটি। এরপরেও প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় দ্য ওয়েডেল সাগরপৃষ্ঠে আটকে থাকে এটি।
তিন হাজার ৩০০ বর্গ কিলোমিটার আকার ও এক লাখ কোটি টন ওজনের হিমদানবটি ২০২০ সাল থেকে দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপের দিকে ভেসে যাচ্ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে সমদ্রতলের পাহাড়ে আটকে ছিল কয়েক মাস। এতে উত্তর দিকে এটির যাত্রা কিছুটা থামকে যায়।
কিন্তু যখন হিমদানবটি মুক্ত হয়, তখন শঙ্কা করা হয়েছিল—এটি দক্ষিণ জর্জিয়ার দিকে যাবে এবং দ্বীপটিতে পেঙ্গুইন ও সিলের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কিন্তু সাগরতীর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে মহীসোপানে এটি আটকে গেলে সেই শঙ্কা কিছুটা কমে আসে। বিপরীতে, এ২৩এ আসার কারণে বন্যপ্রাণীদের জন্য কিছুটা সুবিধাই হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘এটির ধাক্কায় সাগরের নিচের পুষ্টিদায়ক খাবার আলগা হয়ে যাবে এবং এটির গলন থেকে পুরো অঞ্চলের বাস্তুসংস্থানের জন্য খাবার সহজলভ্য হয়ে যাবে।’আরও পড়ুন: শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে
আকারে যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের চেয়ে কিছুটা ছোট ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের দ্বিগুণ হবে হিমশৈলটি। আশঙ্কা করা হয়েছিল, দ্বীপটির সঙ্গে এটির সংঘর্ষ হবে অথবা কাছের অগভীর পানিতে গিয়ে ঠেকবে। এতে পেঙ্গুইন ও সিলের বাচ্চাদের খাবারে ব্যাঘাত হতে পারে বলেও ধারণা করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক জরিপের (বিএএস) সমুদ্রবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু মেইজার্স বলেন, ‘হিমশৈলটির এই আটকে থাকাটা ভালো নাকি খারাপ—তা এখনো পরিষ্কার না। কী ঘটতে যাচ্ছে, কৌতূহল নিয়ে তা দেখার অপেক্ষায় আছি।’
‘গত শনিবার (১ মার্চ) দ্বীপ থেকে প্রায় ৭৩ কিলোমিটার দূরে হিমশৈলটি আটকে পড়ে। এটি যদি সামনে আর অগ্রসর না হয় তাহলে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের তেমন আশঙ্কা নেই,’ বলেন তিনি।
২০২৩ সাল থেকে উপগ্রহ দিয়ে এ২৩এ হিমশৈলটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন এই বিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দশকে এই পথে ছোটবড় অসংখ্য হিমশৈল ভেসে আসলেও তা ভেঙে ছড়িয়ে পড়েছে কিংবা গলে গিয়েছে।’
উপগ্রহের চিত্র থেকে ধারণা করা হয়েছিল, অন্যান্য বরফখণ্ডের পরিচিত গতিপথ অনুযায়ী ছোট ছোট টুকরোতে ভেঙে যাচ্ছে না এই বিশালাকার হিম দানবটি। তবে জানুয়ারিতে এটির থেকে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপটি পেঙ্গুইন ও সিলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন ক্ষেত্র। যদি হিমশৈলটি খুব কাছাকাছি চলে আসে, তাহলে পেঙ্গুইন ও সিলের মতো প্রাণীদের বরফের বিশাল স্তূপ এড়াতে অনেক দূর পর্যন্ত যাত্রা করতে বাধ্য হতে পারে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মেইজার্স বলেন, এর ফলে দ্বীপের শাবক ও বাচ্চাদের কাছে ফিরে আসা ও খাবারের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে হিমশৈলটি আটকে যাওয়ার কারণে দ্বীপটির প্রাণীদের জীবনে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
সাউথ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ ও সাউথ জর্জিয়ায় প্রায় ৫০ লাখ সিল ও ৩০টি ভিন্ন প্রজাতির সাড়ে ছয় কোটি প্রজননকারী পাখির বাস। এরইমধ্যে বার্ড ফ্লুর প্রভাবে ওই এলাকার পেঙ্গুইন ও সিলগুলো সমস্যায় পড়েছে। এই হিমশৈল সংকট আরও বাড়িয়ে দিত বলে তাদের শঙ্কা।
যুক্তরাজ্য ও আর্জেন্টিনার মধ্যে বিরোধপূর্ণ একটি অঞ্চল দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ। ব্রিটিশদের অধীনেই বৈদেশিক অঞ্চল হিসেবে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে কোনো স্থায়ী মানববসতি নেই। এ অঞ্চলটি দিয়ে জাহাজও চলাচল করে থাকে। তবে হিমশৈলটির কারণে জাহাজ চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে না বলে জানান বিএএসের গবেষকরা। আয়তনে বিশালাকার হওয়ায় সহজেই এটি পাশ কাটিয়ে নিরাপদে জাহাজগুলো পার হতে পারবে বলে মত দেন তারা।
এ সময় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব নিয়ে মেইজার্স সবাইকে সতর্ক করেন। তিনি জানান ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ষাট হাজার কোটি টন বরফ ভেঙে ও গলে গিয়েছে। এর জন্য তিনি বৈশ্বিক উষ্ণায়নকেই দায়ী করেন।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন, প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে যদি পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তাহলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১২ মিটারের মতো বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া গত বছর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫ এর উপরে ওঠার কারণে সারাবিশ্বে দাবানল, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে, যা উষ্ণায়নেরই ফলাফল বলে উল্লেখ করেন গবেষকরা।
৫৬ দিন আগে
সান ফ্রান্সিসকো চিড়িয়াখানায় ৪০ বছর বয়সী পেঙ্গুইনের মৃত্যু
বিশ্বের প্রাচীনতম পেঙ্গুইনগুলোর মধ্যে একটি ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইন ৪০ বছর বয়সে সান ফ্রান্সিসকো চিড়িয়াখানায় মারা গেছে।
সান ফ্রান্সিসকো চিড়িয়াখানা ও উদ্যান কতৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্যাপ্টেন ইও নামক পুরুষ পেঙ্গুইনটি এমন প্রজাতির, যাদের গড় আয়ু ২০ থেকে ৩০ বছর হয়ে থাকে।
১৯৮০ এর দশকে মাইকেল জ্যাকসনের শর্ট ফিল্মের জন্য পেঙ্গুইনটির ক্যাপ্টেন ইও নামকরণ করা হয়েছিল।
চিড়িয়াখানা বলেছে, প্রাণীটি তার দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হারিয়েছিলো এবং বিশেষ কৌশলে তাকে খাবার দিতে হত।
ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইনগুলো দক্ষিণ আমেরিকার অধিবাসী। তারা ২ ফুট (৬০ সেন্টিমিটার) লম্বা এবং ওজনে ১৪ পাউন্ড এর বেশি হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে প্যারেডে হামলা: সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ
১০২৮ দিন আগে