সাদা সাদা কালা কালা
‘হাওয়া’ এপিঠ ওপিঠে এরফান মৃধা শিবলু
সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমার জোয়ারকে আরও উত্তাল করে দিয়েছে ‘হাওয়া’। মুক্তির আগে থেকেই এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যার শুরু হয় সিনেমার 'সাদা সাদা কালা কালা' গানটি দিয়ে।
মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ২৯ জুলাই মুক্তি পাওয়া ‘হাওয়া’ সিনেমার এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন এরফান মৃধা শিবলু। যদিও তা ছিল পুরোটাই কাকতালীয়। 'সাদা সাদা কালা কালা' গানের কারিগর হাশিম মাহমুদ। ইউএনবির সঙ্গে শিবলুর সাক্ষাতকারের প্রসঙ্গে শুরু হলো এই মানুষকে নিয়েই।
আরও পড়ুন: অনেকবার বাধার মুখে পড়েছি কিন্তু হাল ছাড়িনি: বান্নাহ
শিবলু বলেন, 'সাদা সাদা কালা কালা' এখন গণমানুষের কাছে জনপ্রিয় হলেও এটি কিন্তু অনেক আগেই এক কনসার্টে গেয়েছেন। তখন আমি অল্প বয়সী। টিএসসির এক কনসার্টে হাশেম ভাই কোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র ছাড়া গানটি গেয়েছিলেন। হাশিম ভাইকে আমি চিনি অনেক দিন। বিখ্যাত হওয়ার মানসিকতা তার কখনও ছিল না। তার ইচ্ছা প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়ানো, মানুষের সঙ্গে মেশা। খুবই সরল মানুষ হাশিম ভাই।
গানটি সিনেমায় যুক্ত করার যেই পরিকল্পনা করেছিলেন পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন, তার শুরু থেকে শেষ অবদি ছিলেন এরফান মৃধা শিবলু। যেহেতু সিনেমার গল্প সমুদ্র ও জেলেদের নিয়ে গড়ে উঠেছে, তাই এক ফিশিং বোটে তিন দিনের জন্য গভীর সমুদ্রে পরিচালক সুমনের সঙ্গে যান শিবলু। দেখেন ৫০ ফুট একটি নৌকায় ২০-২৫ জন জেলে থাকেন। সেখানেই মাইজ ভাণ্ডারির একটি নৌকা ছিল, তাতে হারমোনিয়াম দেখতে পান তারা। যেখান থেকে একটি গানের পরিকল্পনা আসে নির্মাতার মাথায়। সেখান থেকেই নির্বাচিত হয় হাশিম মাহমুদের গানটি।
'সাদা সাদা কালা কালা' গানটি হাশিম মাহমুদের কণ্ঠেই রেকর্ড করা কথা ছিল শুরুতে। কিন্তু তার অসুস্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। গানটি পরবর্তীতে তৈরি প্রসঙ্গে শিবলু বলেন, গানটি নির্বাচনের পর সুমন ভাই সঙ্গীতায়োজনের দায়িত্ব দেন ইমন চৌধুরীকে। আর এর সঙ্গে বলেন দেন যে গানটিতে যেন খমক ছাড়া আর কোনো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করা হয়। সেই চিন্তা থেকে ইমন যুক্ত করেন মাছ ধরার ট্রলারে অনেক ধরনের জিনিসপত্র। তেলের ড্রাম, প্লাস্টিক বল, মগ, বাঁশ, লাঠি ও টিনের অনেক কিছু দিয়ে সাউন্ড তৈরি করে গানে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এর অন্যতম কারিগর মিঠুন চাকরা।
আরও পড়ুন: বিয়ে করলেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা
'সাদা সাদা কালা কালা' দিয়ে অনেকদিন পর সিনেমার কোনো গান এতটা আলোচনায় এসেছে। তবে অনেকের ধারণা এর পেছনে সিনেমাটির প্রচারণা ধরন। কিন্তু এমনটা একদম মনে করেন না এরফান মৃধা শিবলু।
শিবলু বলেন, আমি শুরুতে বলেছি এই গান দিয়ে বহু বছর আগে টিএসসির কনসার্টে মানুষের মন জয় করেছেন। আসলে গানটিই এমন। এছাড়া হাশিম ভাইয়ের লেখা এই গানের কথা-সুর খুবই সরল। এছাড়া গানটির সঙ্গীতায়োজনও ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা। রিদম এতটাই সহজ যে, কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই কণ্ঠে তুলে ফেলতে পারেন।
'সাদা সাদা কালা কালা' গাওয়ার পাশাপাশি সিনেমায় গানটির দৃশ্যে ছিলেন এরফান মৃধা শিবলু। তবে একটি বিষয় হয়তো অনেকের অজানা, পুরো সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পেছনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: মুক্তির আগেই আলোচনায় ‘হাওয়া’
গানটি প্রসঙ্গে শেষ কথা বলতে গিয়ে শিবলু আবারও বলেন হাশিম মাহমুদকে নিয়ে। জানান, গানের এই গুণী কারিগরকে আবারও ফিরে পেতে চান তারা। তাকে সুস্থ করে তুলতে নিজেদের উদ্যোগও রয়েছে। এমন একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলোয় আরও আলোকিত হওয়া যে এখনও বাকি।
২ বছর আগে
মুক্তির আগেই আলোচনায় ‘হাওয়া’
মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ মুক্তি পাবে ২৯ জুলাই। তবে এ নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ আগে থেকেই। সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ শিরোনামে একটি গানও এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে, যা ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
‘হাওয়া’তে অভিনয় করেছেন একঝাঁক তারকা। তাদের মধ্যে রয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরীফুল ইসলাম রাজ, সুমন আনোয়ার, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খান, রিজভী রিজু, মাহমুদ আলম, বাবলু বোস প্রমুখ।
সিনেমাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে প্রচারণা শুরু হয়েছে। শুটিংয়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা পোস্ট করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি দর্শকরাও ‘হাওয়া’ নিয়ে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি প্রকাশের পর।
গানটির গীতিকার ও সুরকার হাশিম মাহমুদ। কণ্ঠ দিয়েছেন আরফান মৃধা। এ নিয়ে একটি লেখা ফেসবুকে পোস্ট করেন সিনেমার পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন। তিনি লেখেন, ‘আমি যখন চারুকলায় পড়তাম তখন অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা আর মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল এবং তারা বেশিরভাগই গানের মানুষ ছিল। তখন আমরা কাঁধে গীটার নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম, গান করতাম। চারপাশে অনেকেই তখন গান করত।’
হাশিম মাহমুদের সঙ্গে পরিচয়ের কথা বলতে গিয়ে পরিচালক লেখেন, ‘সেই সমইয়ের অনেকের গানই এখন খুব জনপ্রিয়। কিন্তু আমার কাছে হাশিম ভাই এর গান ছিল ভিন্ন কিছু। কত বিকেল পার করেছি হাসিম ভাইয়ের গানে। অনেক বছর আগে আমি আর শোয়েব, হাশিম ভাই কিছু গান রেকর্ডও করেছিলাম, কিন্তু পরে সেই রেকর্ডিংগুলি আমরা হারিয়ে ফেলি। আমি যখন হাওয়ার কাজ শুরু করবো, তখনই ঠিক করেছিলাম সাদা সাদা কালা কালা গানটা সিনেমাতে রাখতে চাই।’
মেজবাউর রহমান সুমন আরো লেখেন, ‘কিন্তু হাশিম ভাইকে আমার দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সে তখন আর চারুকলায় আসেনা। পরে জানতে পারি তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। অনেক খোঁজ খবর করার পর আমরা হাশিম ভাইকে খুঁজে পাই। হাশিম ভাইকে দিয়েই গানটি গাওয়াতে পারলে সবথেকে ভালো হতো। কিন্তু সেটা সম্ভভ হয়নি তার অসুস্থতার কারণে।’
‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি প্রসঙ্গে পরিচালক জানান এতে খমক ছাড়া কোন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। নৌকার সব কাঠ বাস হাড়ি পাতিল দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গানটির সঙ্গীতায়োজন করেছেন ইমন চৌধুরী। আর যন্ত্রগুলো বাঁজিয়েছে মিঠুন চাকরা।
অতল সমুদ্রে গন্তব্যহীন একটি ফিশিং ট্রলারে আটকে পড়া আট মাঝি মাল্লা এবং এক রহস্যময় বেদেনীকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে ‘হাওয়া’ সিনেমার গল্প।
পড়ুন: কন্যার ছবি প্রকাশ্যে আনলেন তিশা
যুক্তরাষ্ট্রে শাকিব খানের প্রথম সিনেমা মুক্তি
২ বছর আগে