আত্মবিশ্বাস
ঢাকার বাচ্চারা ফ্ল্যাটে থেকে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খেলাধুলার মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন, প্রশিক্ষণের সময় মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ঢাকার বাচ্চারা ফ্ল্যাটে থেকে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মানসিক শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যত বেশি প্রশিক্ষণ দেবেন, তত বেশি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবেন।’
সেপ্টেম্বরে ২০২২ সালের সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বুধবার প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ট্রফি বাংলাদেশে আনার জন্য নারী ফুটবলারদের হাতে পুরস্কারের অর্থ এবং আর্থিক সম্মানী তুলে দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে চারবারের ফাইনালিস্ট ও স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ জিতে নেয় বাংলাদেশ নারী দল।
আরও পড়ুন: এখন মেগাপ্রজেক্ট নয় জনকল্যাণমুখী প্রকল্প নিয়ে আসুন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ক্রীড়াবিদদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে জাতি হিসেবে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে কষ্টার্জিত বিজয় অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিজয়ী জাতি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এটা অবশ্যই মনে রাখবেন। আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করেছি এবং খেলাধুলায়ও জয়লাভ করব। আপনাদের এই মনোভাব থাকতে হবে। তবেই সফলতা আসবে।’
গত ১৪ বছরে খেলাধুলার উন্নয়ন বিষয়ে শেখ হাসিন বলেন, ‘আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকে ক্রীড়া খাতের উন্নয়নের চেষ্টা করছি। প্রতিটি জেলায় একটি করে স্টেডিয়াম আছে এবং সেই স্টেডিয়ামটি প্রতিটি খেলার জন্য ব্যবহার করা হবে।’
প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই স্টেডিয়ামগুলো সব ধরনের খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করা হবে এবং স্কুলপর্যায়ে তাদের বার্ষিক ক্রীড়া ইভেন্টগুলোর জন্য ব্যবহার করতে পারে৷’
তিনি আরও বলেন, ‘তার সরকার বেশ কয়েকটি উপজেলায় ১২৫টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে এবং দ্বিতীয় ধাপে এরকম আরও ১৮৬টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ১৭৩টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে।’
আরও পড়ুন: মানুষ কথা বলবে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কাজে বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে দেশের ক্রীড়া খাতের উন্নয়নে সরকার প্রতিটি জেলায় ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ করবে এবং প্রতিটি বিভাগে বিকেএসপি থাকবে।
তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও সাহিত্য শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ব্রাজিল, পর্তুগাল, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে খেলোয়াড়দের পাঠিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে সরকার ‘সবার জন্য ক্রীড়া’ নীতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার বাচ্চারা ফ্ল্যাটে থেকে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে, খেলাধুলায় যায়ই না।’
তিনি অভিভাবকদের এ বিষয়ে তাদের সন্তানদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে এবং নিয়মিত খেলার মাঠে নিয়ে যেতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন: ২৫ জেলায় ১০০টি সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে বলেন এবং স্থানীয় ক্রীড়া উন্নয়নে অবদান রাখতে বলেন। তিনি বলেন, ‘তারা অন্তত তাদের সংস্থায় ক্রীড়াবিদ নিয়োগ করতে পারে যাতে তাদের জীবিকা নিশ্চিত হয়।’
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সাবিনা খাতুন এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
আরও পড়ুন: এখনও ৫ মাসের খাদ্য আমদানি করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যথেষ্ট: প্রধানমন্ত্রী
২ বছর আগে
তরুণ প্রজন্মের পথচলায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ
বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একজন মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর ৫৫ বছরের জীবনে ১২ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন কারাগারে। বাঙালি জাতির মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বিসর্জন দিয়েছেন তাঁর সমস্ত সুখ, শান্তি এবং পারিবারিক কল্যাণ। দেশের জন্য শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়ে দুঃসাহসিক আন্দোলনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। মুলত একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সেই দেশটির তরুণ সমাজ। বঙ্গবন্ধু তাঁর গোটা তারুণ্যকেই উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে। এখন এই অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষার দায়িত্ব বর্তমান তরুণ প্রজন্মের। এই দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে তরুণদের শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে উপজীব্য করে এই ফিচার।
বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে তরুণদের জন্য শিক্ষা
নেতৃত্ব
বঙ্গবন্ধু ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক, সমন্বয়কারি এবং সর্বপরি একজন যুগান্তকারি নেতা। তিনি তরুণ সমাজের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তরুণরা খুব দ্রুত তাঁর চিন্তা ও আদর্শ নিজেদের মাঝে লালণ করতে পারতো। বঙ্গবন্ধুর জাদুকরী নেতৃত্বে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশের তরুণদের মধ্যে অভূতপূর্ব সংহতি আনতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে তিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে এক প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করেন। বঙ্গবন্ধু যেখানেই যেতেন, হাজার হাজার তরুণ তাকে ঘিরে জড়ো হতো। ১৯৬৬ সালে তার ঘোষিত ছয় দফা কর্মসূচিতে দেশের লাখ লাখ তরুণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। এটিকে বলা হয় বাঙালির মুক্তির সনদ। তরুণ ছাত্র-জনতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আন্দোলনে যোগ দিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের ক্ষমতার ঘাঁটি নাড়িয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর নির্দেশে এদেশের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি ছিলেন তরুণদের অগাধ বিশ্বাস ও আস্থার উৎস। এই জনপ্রিয় নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন বর্তমানের প্রতিটি তরুণের জীবনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
পড়ুন: বঙ্গবন্ধু সৌভাগ্যবান যে তিনি বঙ্গমাতাকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছিলেন: প্রধানমন্ত্রী
আত্মবিশ্বাস
লক্ষ্য অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বাসে অটল হওয়াটা ছিলো হিমালয়ের মতো। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের নির্যাতন, কারাবরণ ও অপমান সত্ত্বেও তিনি দেশপ্রেমের আদর্শ থেকে তিল পরিমাণ বিচ্যুত হননি। নিজের আদর্শ, বিঃশ্বাসের প্রতি অগাধ আস্থাই বঙ্গবন্ধুকে একজন সফল রাজনীতিবিদের পরিণত করেছিলো। ঠিক এমনি একটি ব্যক্তিত্ব দরকার আজকের তরুণ সমাজের জন্য। বহুকষ্টে অর্জিত সোনার বাংলার স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে তরুণদের এমনি বৈশিষ্ট্যের অধিকারি হওয়া দরকার, যেখানে সে নিজের জায়গায় অটল থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থে সমূহ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
অকুতোভয়
তরুণ মুজিব ছাত্রজীবন থেকেই এদেশের মানুষের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে লড়াই করেছেন। মৃত্যুভয় তার ছিল না। বঙ্গবন্ধুর জীবনের এক দীর্ঘ সময় কেটেছে কারাগারে। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “যদি আমি পরে আদেশ দিতে না পারি”। তার মানে তিনি অনুমান করেছিলেন যে, তাকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া বা এমনকি হত্যা করা হতে পারে। এ কারণে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তাঁর অনুপস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে বলেছেন। অর্থাৎ প্রাণের হুমকি আছে জেনেও তিনি পিছপা হননি। তাঁর স্বাধীনতা ঘোষণাটি শুরু হয়েছিলো এই শব্দগুলো দিয়ে- “এটি সম্ভবত আমার শেষ ভাষণ। কিন্তু আপনাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।” এ থেকে বোঝা যায় যে, তিনি চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। একজন আত্মত্যাগী মানুষের লক্ষ্য অর্জনে কোন কিছু বাধা হয়ে দাড়াতে পারে না। আর এই আগুন-ই দরকার আজ প্রতিটি তরুণের বুকে।
পড়ুন: বঙ্গমাতার ত্যাগ ও অকুণ্ঠ সমর্থনেই শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মানবতাবাদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন সোনার বাংলা গড়ার। বাঙালির প্রতি তাঁর পরম মমতা ও ভালোবাসা তাঁকে বাঙালি জাতির হৃদয়ে চির উজ্জ্বল করে রেখেছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বিবিসির ডেভিড ফ্রস্টকে বলেছিলেন, “আমার সবচেয়ে বড় শক্তি হল জনগণের প্রতি আমার ভালবাসা। আর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হল- আমি তাদের খুব বেশি ভালবাসি।” তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, সেটি হলো- “মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা মেয়েদের বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও। তাদের বাসার ঠিকানা হবে ধানমন্ডি-৩২।” এমন কথা যিনি বলতে পারেন তিনি নিঃসন্দেহে মহামানব। আজ প্রতিটি প্রাণেরই দাবি, দেশের মানুষের প্রতি এমন নিঃস্বার্থ ভালবাসার।
নিষ্ঠা
বাংলাদেশে স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সফল রাজনৈতিক জীবন তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইরত বাঙালিদের ওপর অত্যাচার সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকদের প্রতি তাঁর কঠোর আপোষহীন মনোভাব গোটা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। তাঁর জীবন যুবসমাজকে নৈতিকভাবে নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে নিপীড়ন ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করে। জাতিকে বিকশিত করতে তিনি প্রতিটি নাগরিককে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। তার সৎ সাহসের মুল চালিকা শক্তি ছিলো তার ন্যায়পরায়ণতা। আর এই সত্য বলার সাহস এবং সঠিক বস্তুকে আদায় করার দাবী আজও বাঙালীকে শেখায় ঘুরে দাড়াতে।
পড়ুন: 'ব্রেভহার্ট': বঙ্গবন্ধুকে গ্যালারি কসমসের শৈল্পিক শ্রদ্ধা নিবেদন
সৃজনশীলতা
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাঁর দর্শন সম্পর্কে জানতে হলে তাঁর লেখা তিনটি বই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়া এবং গভীরভাবে উপলব্ধি করা উচিত। তিনি অত্যন্ত সপ্রতিভ ভাবে তাঁর ‘অসমাপ্ত স্মৃতিকথা’, ‘দ্যা প্রিজন ডায়েরিস’ এবং ‘আমার দেখা নয়া চায়না’ বইগুলোতে তাঁর ভেতরকার সত্ত্বাকে ব্যক্ত করেছেন। তাঁর 'অসমাপ্ত স্মৃতিকথা' ও 'কারাগারের ডায়েরি' বই দুটিতে বিস্ময়কর ভাবে চিত্রায়ন ঘটেছে বাঙালি জাতির উত্থান ও স্বাধীনতা অর্জনের একটি অবিচ্ছেদ্য ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র।
চিত্তাকর্ষক বক্তৃতা
রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের তাঁর সেই কালজয়ী ভাষণ আজও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ। এই ভাষণ যুগে যুগে তরুণ প্রজন্মকে আলোকিত করেছে। এই ভাষণ সমগ্র জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিল এবং স্বাধীনতার জন্য তাদেরকে সম্মুখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ভাষণের প্রতিটি শব্দে তাঁর অভাবনীয় বাগ্মীতা প্রকাশ পায়। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বের শক্তিশালী সব দেশগুলোর সামনে তিনি ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান নিয়ে কথা বলেন। এমনকি কর্মসংস্থানের অভাব এবং পণ্য আমদানির উচ্চ মূল্যে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের সংগ্রামের কথাও বলেছিলেন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মুখপাত্র। বর্তমানেও সমাজ সংস্কারের জন্য এমনি স্পষ্টবাদী এবং প্রভাবশালী বক্তার প্রয়োজন।
পড়ুন: বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজতে কমিশনের রূপরেখা প্রস্তুত: আইনমন্ত্রী
দেশপ্রেম
বাঙালী জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তিনি শিখিয়েছেন প্রকৃত দেশপ্রেমের অর্থ। এদেশের মানুষের জন্য তাঁর পরম আত্মত্যাগ কখনোই ম্লান হবে না। তিনি সব সময় ছিলেন জনগণের জন্য এবং জনগণের নেতা। আর এটি কোনো সময়ের সীমাবদ্ধতা দিয়ে আবদ্ধ করা যাবে না। তাঁর এই অনুসরণীয় আদর্শ এখনও পূর্ণাঙ্গ দেশপ্রেমিক তৈরি করতে সক্ষম। পাক হানাদার বাহিনীর অমানুষিক নির্যাতন ও অপমান তাঁর দেশপ্রেমকে টলাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার নিমিত্তে এখনকার তরুণদের মননে, চিন্তায়, মেধায় ও চেতনাতে দেশপ্রেমকে লালণ করতে হবে।
সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি
বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালে মন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে তাঁর সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য এবং বাংলাদেশের সব প্রান্তে সংগঠনের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করেছিলেন। ধীরে ধীরে সংগঠনটি বহুলাংশে সমর্থনের মঞ্চ পেলে তিনি শুরু করেন ৬ দফা আন্দোলন। তিনি জানতেন যে, একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক মেরুদন্ড ছাড়া তিনি একটি স্বাধীন জাতির বৃহৎ লক্ষ্য ও স্বপ্ন অর্জন করতে পারবেন না। এভাবে সাময়িক সফলতার চেয়ে বৃহৎ অর্জনের চিত্র অবলোকন করা একজন নিখুঁত নেতার গুণাবলি। আর এই বৈশিষ্ট্যটি এখন খুবই প্রয়োজন।
আদর্শ নাগরিক
“বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির মাঝে স্বাধীনতার অর্থ নিহিত নয়। স্বাধীনতা মানে মাথা উচু করে সম্মানজনক ভাবে জীবন যাপন করা। নৈতিকতার সাথে আত্মসমালোচনা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সর্বপরি আত্মশুদ্ধি ছাড়া একজন আদর্শ নাগরিক হওয়া যায় না।” বঙ্গবন্ধুর এই কথাটি ছিলো সে সময়ের তরুণদেরকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কথাটির শব্দগুলো কোন সময়ের গন্ডিতে বাধা নয়। এটি এখনো প্রতিটি তরুণের জন্য প্রযোজ্য। একটি মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করে এমন কোন ভাষা, সংস্কৃতি অথবা নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দেয়া হলে প্রতিটি নাগরিকের উচিত তার প্রতিবাদ করা।
পড়ুন: বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে রুল
শেষাংশ
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে তরুণদের শিখতে প্রস্তুত হতে হবে এবং তাদের ভবিষ্যত জীবনের পথের পথপ্রদর্শক হিসাবে লালন করতে হবে। তরুণদের চিন্তাধারায় আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে; তাদের অবশ্যই শিক্ষিত ও দক্ষ এবং সর্বোপরি দেশপ্রেমিক হতে হবে। মাদক, জঙ্গিবাদ এবং অন্যান্য সামাজিক পাপাচারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান কঠোর এবং চির আপসহীন হতে হবে। তরুণদেরও তাদের নিজস্ব সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে হবে এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে তাদের আদর্শ ও দর্শন অনুসরণ করতে হবে।
২ বছর আগে
ভ্রমণের উপকারিতা: দেশ বিদেশ ভ্রমণ আপনার মধ্যে কি পরিবর্তন আনতে পারে?
ভ্রমণ মানে শুধু সৈকতের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে নিয়ে প্রিয় পানীয়তে চুমুক দেওয়া নয়। নয় অস্ত যাওয়া সূর্যটাকে হা করে গিলে ফেলার ভঙ্গিমাকে ফ্রেমবন্দি করে ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা। ভ্রমণের উপকারিতা তখনই অনুধাবন করা যায়, যখন জীবনের ঝক্কি-ঝামেলা পেছনে ফেলে প্রিয় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়া হয়। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে জীবনের ভারিক্কি মতবাদ নিয়ে জম্পেশ আড্ডার আমেজের রদ বদলটা ভ্রমণের ভূমিকা সরবে ঘোষণা করে। চলুন জেনে নেয়া যাক, দেশ বিদেশ ভ্রমণ একটা জীবনকে আমূল বদলে দিতে কতটুকু প্রভাব ফেলে।
জীবনের নানা ক্ষেত্রে ভ্রমণের উপকারিতা
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ থেকে মুক্তি
মাত্র তিন দিনের একটি স্বল্পমেয়াদী ছুটি যে কোন যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ অনুভূতিকে স্বাধীনতা এবং সুস্থতায় রূপ দিতে ইতিবাচক এবং তাত্ক্ষণিক প্রভাব ফেলে। অধিকন্তু, বাড়িতে ফিরে আসার পরেও এই উপকারী প্রভাবগুলো বেশ কিছু দিন স্থায়ী হয়।
ব্যাপারটাকে চলন্ত বাসের গতি জড়তার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। চলন্ত বাস আচমকা ব্রেক কষলে শরীরের উপরের অংশ স্বাভাবিকভাবেই সামনের দিকে হেলে পড়ে। এই প্রাকৃতিক কার্যকলাপটিই ঘটে ভ্রমণের সময়। নিত্য অস্থিরতা থেকে হঠাৎ দু-একদিনের ভ্রমণ স্থিরভাবে জীবনটাকে উপভোগ করতে দেয়। এ সময় সেই গতি জড়তাটা পুরোটাই কাটিয়ে উঠেন ভ্রমণকারি। এটি মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধির প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
পড়ুন: ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ গাইড: দর্শনীয় স্থান সমূহ, খরচ
সুস্বাস্থ্যের স্থায়ীত্ব
মনের পাশাপাশি ভ্রমণ দেহের সুস্থতার উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অবশ্য ভ্রমণের সময় ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভ্রমণ শারীরিক অনুশীলনে অভ্যস্ত হওয়ার একটি দুর্দান্ত সুযোগকে উন্মুক্ত করে। এর অর্থ হতে পারে সারাদিন ধরে শহরের চারপাশে হাঁটা বা কায়াকিং, হাইকিং এবং সাঁতার কাটা। ভ্রমণ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
গ্লোবাল কমিশন অন এজিং এবং ট্রান্সআমেরিকা সেন্টার ফর রিটায়ারমেন্ট স্টাডিজ একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, যে পুরুষ এবং মহিলারা ছয় বছরে দুবার ভ্রমণ করেন, তাদের চেয়ে যারা এক বছরে দুবার ভ্রমণ করেন, তাদের হার্ট অ্যাটাক বা অন্য হৃদরোগে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি
ভ্রমণের ফলে সৃষ্ট অভিজ্ঞতাগুলো শুধুই স্মৃতির অবতারণা করে না। মস্তিষ্ককে সদা সচেতন রাখার মাধ্যমে মানুষের উদ্ভাবনী হওয়ার ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয়। ভ্রমণের সময় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা, নতুন রীতিনীতির সাথে পরিচিত হওয়ার সাথে যা আগে কখনো করা হয়নি তার সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়।
পড়ুন: ঘুরে আসুন মালদ্বীপ: অপরূপ এক দ্বীপদেশ ভ্রমণ গাইড
এটি ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিকে মোকাবেলার জন্য তার ভেতরকার সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করে। চিরচেনা বৃত্তবন্দি-সদৃশ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসাটা বাস্তব দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিখিয়ে দেয় যে, সবকিছুরই একটি বিকল্প আছে।
ভ্রমণ এমন একটি অবস্থা যা প্রতিটি ইন্দ্রিয়কে স্পর্শ করে। নতুন দৃশ্য আর খাবার তো আছেই; তার পাশাপাশি নতুন সুর, নতুন গন্ধ এমনকি নতুন সম্পর্ক একটি শক্তিশালী সংবেদনশীলতার জন্ম দেয়। এগুলো যে কোন সমস্যা সমাধানের সময় নতুন ভাবে ভাবনার রসদ যোগায়। অভিনব যুক্তি, বিশেষায়িত পরিকল্পনা, দ্রুত শিখে নেয়ার প্রবণতা সব কিছু নতুন সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত করে। এক কথায় যত বেশি ভ্রমণ করা হবে, ভ্রমণকারি তত বুদ্ধিমান হবেন।
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি
ভ্রমণ একজন মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের আস্থা অর্জনের জন্য প্রেরণা যোগায়। বিশদ অভিজ্ঞতা সুদূরপ্রসারি চিন্তা করতে সাহায্য করে। কর্মজীবনের এর প্রভাব অপরিসীম, কেননা কর্মক্ষেত্রের বিস্তারের জন্য প্রয়োজন বহুজাতি, বহু সংস্কৃতির সংমিশ্রণ।
পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত কোথায়? কীভাবে যাবেন?
ঘন ঘন ঘোরাঘুরি অপরিচিত কারখানা বা ট্রেড শোয়ের প্রবেশদ্বারে কড়া নাড়ার যাবতীয় ভয় কর্পূরের মত উড়িয়ে দিতে পারে। ভ্রমণের ফলে বিচিত্র পৃথিবীতেও এমন কিছু জায়গার সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলো বিভিন্ন দেশে একই রকম। স্বাভাবিক ভাবেই একই রকম পরিবেশ অজানা দেশে পেলেও সেখানে মানিয়ে যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না।
তাছাড়া একদম নতুন জায়গা খাপ খাইয়ে নিতে ঠিক কতটুকু সময় লাগছে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা হয়ে যায়। ফলে একজন পর্যটক এমন জায়গায় যেতেও পিছপা হননা যে জায়গার ব্যাপারে কোথাও থেকে কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
অধিক বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতা
যে ব্যক্তি পৃথিবীর যত বেশি মাইল পথ অতিক্রম করেছে, সেই সংখ্যার থেকেও তার বন্ধু সংখ্যা বেশি। এটি জটিল কোন অঙ্ক নয়; বরং সেই বন্ধুরা শুধু চেনামুখের থাকে না, বিভিন্ন বিপদে-আপদে তাদের সাহায্যও পাওয়া যায়। বছরে যিনি দু’একবার ভ্রমণের জন্য ঘুরতে বের হন এমন মানুষের থেকে যিনি ঘন ঘন ঘুরে বেড়ান এমন মানুষের কথায় যে কেউ সহজেই বুদ হয়ে যান।
পড়ুন: রাতে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা
গহীন শ্বাপদসংকুল জঙ্গলে এক রাত, খরস্রোতা কোন নদীর পাশে বসে ভবঘুরেদের সাথে আড্ডা, দুর্গম উপত্যকার লেকের পানিতে গোসলের গল্প শোনার ভাগ্য সব সময় সবার হয়ে ওঠে না। তাছাড়া প্রতিটি এলাকার স্থানীয় লোকেরা তাদের থেকে ভিন্ন অন্য কোন জনগোষ্ঠীর ভয়-দুঃখ-আনন্দের কথা শুনতে পছন্দ করেন।
উন্নত কর্মজীবন
অফিসের চারা দেয়ালের মধ্যবর্তী দূরত্ব যতই হোক না কেন, তাতে মনোরম লেক আর মাথার উপর আকাশ না থাকলে কোন লাভ নেই। অনেকে কাজের পরিবেশ ভালো করার জন্য ডেস্কে বা অফিসের দেয়ালে প্রেরণামূলক পোস্টার লাগান। কেউ কেউ ইউটিউবে প্রেরণামূলক ভিডিও দেখেন। কিন্তু এক সময় এসব কিছুই যেয়ে মিশবে বিরক্তিতে। কারণ এগুলো পুনরাবৃত্তিমুলক ক্রিয়াকলাপ।
তাই যে নিয়োগকর্তারা সুস্থ কর্মক্ষেত্র চর্চা করেন তারা কর্মীদেরকে পেইড ভ্যাকেশন বা অতিরিক্ত বোনাস হিসেবে কোথাও ঘুরে আসতে অফার করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অফারগুলো থাকে দেশের বাইরে ভ্রমণের। শুধু মানসিক প্রশান্তি-ই নয়, ভ্রমণকারি কর্মীরা তাদের সৃজনশীলতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে আরো লাভজনক কাজ উপহার দিতে পারেন।
পড়ুন: ফ্লাই ডাইনিং: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বাংলাদেশের প্রথম ঝুলন্ত রেস্টুরেন্ট
দৈনন্দিন জীবনের চক্র থেকে পরিত্রাণ
ভ্রমণ মাত্রই বৈচিত্র্যের অবগাহন। দৈনন্দিন জীবনের তাড়াহুড়ো থেকে বেরিয়ে আসাতে এর কোন বিকল্প নেই। ঘড়ির কাটায় বাঁধা জীবন থেকে মুক্ত করে দেশ-বিদেশ ঘোরাঘুরি এক উন্নত জীবনের স্বপ্ন যাপন করতে শেখায়। যারা ৯ থেকে ৫টার গোলক ধাঁধাঁর নৈরাশ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাদের একমাত্র ওষুধ ভ্রমণ।
এখানে ভারসাম্যে নিয়ে আসতে হবে জীবনে একের পর এক অর্জনের পেছনে ছুটে যাওয়াটাকে। নতুবা জীবনের আসল উদ্দেশ্য হিসেবে শান্তিতে বেঁচে থাকা আর আর্থিক উন্নতির মাঝে এক বিশাল সীমারেখা রচিত হবে। তখন জীবনের শেষ প্রান্তে হাজার অর্জনের পরে একরাশ অপ্রাপ্তির কষ্ট থেকে যাবে।
যোগাযোগ এবং ভাষার দক্ষতা
দেশ-বিদেশ ঘোরা মানে নতুন মানুষের সাথে পরিচিতি; নতুন ভাষার সাথে পরিচিতি। অজানা দেশটিতে চলাফেরা করার তাগিদে অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রকৃতিগত ভাবে শিখে নিতে হয় সে দেশের ভাষা। এভাবে যত দেশ ঘোরা যায়, তত ভাষা সম্পর্কে জানা যায়।
পড়ুন: কলকাতা ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার উপায় ও খরচ
এখানে এই শিখনটি একদম ব্যাকরণসহ ভাষা শিক্ষার দাবি করে না। স্থানীয়দের মূল্যবোধ, চাওয়া-পাওয়া, বোঝাপড়া বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় শব্দগুলোই এখানে মূখ্য বিষয়। এভাবে বহু ভাষায় দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি যে কোন প্রতিষ্ঠান এবং দেশের জন্য সম্পত্তি সদৃশ।
জীবনের জন্য নতুন উদ্দেশ্য ও কাজের সন্ধান লাভ
কোন এক ভ্রমণ কখনো জীবন পরিবর্তনকারী অভিজ্ঞতা হতে পারে। নতুন চাকরির খোঁজ বা ব্যবসা শুরু করার মত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকালে ভ্রমণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সঠিক দিকনির্দেশনা, উপযুক্ত রশদ এবং কাজের নতুন ধারণা পাওয়ার মাধ্যমে একজন পর্যটক উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীতে পরিণত হতে পারে। পৃথিবীর অধিকাংশ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের স্থাপিত হওয়ার সাথে মিশে আছে এরকম হাজারো ভ্রমণ গল্প।
প্রকৃতি ও পৃথিবীর সৌন্দর্য্যে অবগাহন
বিস্তৃত ফসলের মাঝে ঘুরে বেড়ানো, নীল রঙের কোন লেকের শান্ত পানিতে ডুব দেয়া বা পর্বত চূড়ায় মেঘের ধোয়াশায় নিজের ঝাপসা হাতের আঙ্গুল গোনার বিনিময় করা কোন কিছু দিয়েই সম্ভব নয়। এই সৌন্দর্যপ্রীতি শুধু প্রকৃতির প্রশংসা করার জন্য নয়। গোটা বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের তুলনায় নিরন্তর প্রাপ্তির পেছনে ছুটে যাওয়া দেহটা যে কত ক্ষুদ্র তা অনুধাবন করা।
পড়ুন: সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান: অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নগরী
এই শ্বাসরুদ্ধকর আশ্চর্যগুলো জীবনটাকেও একইভাবে সুন্দর করার জন্য দৃষ্টি খুলে দেয়। মানুষের প্রতিটি কর্মকান্ডের উপর নির্ভর করে এই প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য। তাই এগুলো রক্ষার্থে ভ্রমণপিপাসুরা অনেক যত্নবান হয়ে ওঠেন। নিজের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য গভীর উপলব্ধিতে এই নিঃসীম সৌন্দর্য্যের প্রতি তাদের ঔদাসিন্য থাকে না।
শেষাংশ
সর্বোপরি, ভ্রমণের উপকারিতা নতুন এক জীবন ধারণের মাইলফলক স্থাপন করে। দেশ-বিদেশ ঘোরার ব্যাপারে যে তথাকথিত ভয়টি কাজ করে তা হলো ঘুরে বেড়াতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকলে নিঃসন্দেহে বেশি দেশ ভ্রমণ সম্ভব। কিন্তু এখানে ভয়ের ব্যাপারটি আসে ভূল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সমাজে সর্বজনবিদিত তথাকথিত জীবনের জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন বড় ত্যাগ স্বীকারে, বড় বিনিয়োগে। তা করতে যেয়ে এমনকি কখনো প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার পরিক্রম হয়।
এক্ষেত্রে ভ্রমণ নিছক বিনোদন হিসেবেই বিবেচিত হয়। কিন্তু ভ্রমণকে উপজীব্য জীবনও হতে পারে সেই সমাজ স্বীকৃত উন্নত মানের। তার জন্য সেই বিনিয়োগ, সেই ত্যাগ-তিতিক্ষাগুলো পরিকল্পিত উপায়ে ধাবিত করতে হবে ভ্রমণকে উদ্দেশ্য করে।
পড়ুন: হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ও খরচ
২ বছর আগে