দাসিয়ারছড়া
ছিটমহল বিনিময়: ৮ বছরে বদলে গেছে দাসিয়ারছড়া
ছিটমহল বিনিময়ের ৮ বছরে বদলে গেছে কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহলগুলো।
যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার আনন্দ বিলুপ্ত ছিটমহলের ঘরে ঘরে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতের সর্ববৃহৎ ছিটমহল দাসিয়ারছড়া বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অন্তর্ভূক্ত হবার পর সর্বত্র লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটে।
দীর্ঘদিনের সেই স্মৃতিকে স্মরণ করার জন্য সোমবার (৩১ জুলাই) রাতে কালিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আলোচনাসভা,মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ নানা কর্মসূচি নিয়েছে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।
এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলা সদরে উত্তরবঙ্গ জাদুঘর আলোচনাসভার আয়োজন করেছে।
গত ৮ বছরে ১ হাজার ৬৪৩ একরের দাসিয়ারছড়াসহ কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ১৮টি ছিটমহলে বাস্তবায়িত হয়েছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প।
একসময়ের অন্ধকারাছন্ন পরিবেশ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। শতভাগ বিদ্যুত,অলিগলিতে পিচঢালা পথ,স্বাস্থ্যকেন্দ্র,সামাজিক নিরাপত্তা,যুব প্রশিক্ষণ,ভূমির সমস্যা সমাধান আর বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ঘুচে গেছে।
দাসিয়ারছড়ায় তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও চারটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে বিলুপ্ত ছিটমহলের সর্বত্র।
প্রায় ১০ হাজার লোকসংখ্যার দাসিয়ারছড়ায় প্রায় দুই হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে বিদ্যুত সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন,তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন ও ব্যাপকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হয়। যুব প্রশিক্ষণের জন্য আইসিটি সেন্টার স্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: ৪৬ বছর বয়সে দাখিল পাশ করলেন কুড়িগ্রামের রহিমা
অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে ২৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও পাঁচটি সেতু নিমার্ণ করা হয়। সরকারি খরচে নিমার্ণ করা হয় মসজিদ ও মন্দির। সড়কের দু’পাশে লাগানো ‘বাসক গাছ’ যোগ করেছে বাড়তি সৌন্দর্য।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দাসিয়ারছড়ায় শতভাগ সেচের আওতায় আনা হয়েছে কৃষি জমি। তিন হাজার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়িতে নিশ্চিত করা হয়েছে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র।
এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪ টি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। সেখানকার বাসিন্দাদের দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও স্মার্টকার্ড। এসব উন্নয়নে জীবনচিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে এখানকার মানুষের জন্য।
তবে এত কিছুর পরেও পৃথক ইউনিয়ন বাস্তবায়ন না হওয়ায় কিছুটা অতৃপ্তি রয়েছে দাসিয়ারছড়াবাসীর।
বাংলাদেশ ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘‘৬৮ বছরে যা পাই নাই,তা দুই বছরে পেয়েছি। ছিটমহলের মানুষ এখন নিজের পরিচয়ে আত্মনির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ‘মুজিবনগর’ নামে নামকরণ হয়েছে। তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছিমহলবাসী মুক্তি পেয়েছে। তাই দাসিয়ারছড়ায় ‘হাসিনানগর’ নামে একটি ইউনিয়ন পরিষদের দাবি সবার।’’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা নিবার্হী অফিসার সুমন দাস জানান, ‘‘ছিটমহলে ইতোমধ্যে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনা বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। মূল স্রোতধারায় ছিটমহলবাসীকে আনতে সরকারি নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতে হবে।’’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সৌখিন মাছ শিকারির খোঁচায় ১৬ কেজির বোয়াল!
১ বছর আগে
ছিটমহল বিনিময়ের ৭ বছর: উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে দাসিয়ারছড়া
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের সাত বছর পূর্তি আজ। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দিদশা ও গ্লানি কেটে প্রথম নাগরিক পরিচয় পায় সাবেক ছিটবাসীরা। সংযুক্ত হয় স্ব-স্ব দেশের মূল ভূখন্ডে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার মানুষ জানিয়েছে এই সাত বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে বদলে গেছে দাসিয়ারছড়া। বদলে গেছে তাদের জীবনমান।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিল সাবেক ছিটমহলবাসীদের জন্য একটি মুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। এইদিনে রক্তপাতহীনভাবে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ পান রাষ্ট্রীয় অধিকার। এসময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশে এবং ৫১টি ছিটমহল একীভূত হয় ভারতের সাথে। এর ফলে মুজিব-ইন্দিরা ছিটমহল বিনিময় চুক্তির সফল সমাপ্তি ঘটে শেখ হাসিনা ও মোদি সরকারের উদ্যোগের কারণে।
ছিট মিনিময়ের পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চালায় দেশের বৃহত্তম ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায়। এই সাত বছরে সরকার ৫৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে ২ হাজারেরও বেশি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। পাকা করা হয়েছে ২৬ কিলোমিটার সড়ক ও পাঁচটি ব্রীজ-কালভার্ট। নতুনভাবে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে। এমপিওভুক্ত করেছে নিম্নমাধ্যমিক ও মাদরাসাসহ চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, মন্দিরসহ তৈরি করে দেয়া হয়েছে রিসোর্স সেন্টার। ৩ হাজার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়িতে নিশ্চিত করা হয়েছে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এছাড়াও শতভাব সেচের আওতায় নেয়া হয়েছে কৃষি জমি। সরকারের এই উন্নয়ন পদক্ষেপে ব্যাপক খুশি সাবেক ছিটমহলবাসী।
২ বছর আগে