আইফোন অ্যাপ
নারীর নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষায় মোবাইল অ্যাপ
তথ্য ও প্রযুক্তির বদৌলতে জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও এই একুশ শতকে এখনও প্রশ্ন রয়েই গেছে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে। অন্ধকার নির্জন রাস্তা থেকে শুরু করে জনাকীর্ণ এলাকা সর্বত্র হুমকিতে থাকে নারীর ব্যক্তিগত সুরক্ষা। সময়ের এই চিরন্তন সমস্যার নিরসণকল্পে সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে প্রযুক্তি ভিত্তিক গবেষণা। সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকা ছোট্ট স্মার্টফোনটিকে রক্ষাকবজ হিসেবে প্রতীয়মান করতে নেয়া হচ্ছে নানা প্রকল্প। তারই ফলশ্রুতিতে বিগত দশক জুড়ে তৈরি করা হয়েছে নিত্য নতুন মোবাইল অ্যাপ। চলুন, সেগুলোর মধ্য থেকে বহুল ব্যবহৃত সেরা ১০টি মোবাইল অ্যাপস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
নারীর নিরাপত্তায় সেরা ১০টি ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন অ্যাপস
লাইফ৩৬০ (Life360)
নারীর নিরাপত্তার স্বার্থে নির্মিত পুরাতন অ্যাপগুলোর মধ্যে অন্যতম এই লাইফ৩৬০ (https://www.life360.com/intl/)। ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামেই অ্যাপটি চালু করে। এটি ব্যবহারের জন্য অ্যান্ড্রয়েড ৯ ও তার পরের সংস্করণ অথবা আইওএস ১৫ ও এর ঊর্ধ্ব সংস্করণগুলো থাকতে হবে।
বর্তমানে ৪ পয়েন্ট ৭ (আইওএস) ইউজার রেটিং সমৃদ্ধ অ্যাপের সাইজ ১৬৯ এমবি। অপরদিকে ১৭ দশমিক ৮ এমবি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের রেটিং ৪ দশমিক ৫।
আরও পড়ুন: ঢাকার বাসরুট খুঁজে পেতে দরকারি কিছু মোবাইল অ্যাপ
লোকেশন শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি লাইফ৩৬০ ২ দিন পর্যন্ত অবস্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ রাখতে পারে।
তবে যে বিষয়টি এই অ্যাপকে সবার থেকে আলাদা করেছে তা হচ্ছে, এতে একসঙ্গে একাধিক জন পরস্পরের রিয়েল-টাইম অবস্থান দেখতে পারেন। তাছাড়া গাড়িতে ভ্রমণকালে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে অ্যাপটি তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি পরিষেবাকে জানাতে পারে।
বিসেইফ (bsafe)
এটি এমন একটি অ্যাপ যার মাধ্যমে খুব দ্রুততার সঙ্গে ব্যক্তির অবস্থান তার বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করা যায়। এর বিশেষ ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে জরুরি মুহূর্তে এসওএস সিগন্যাল পাঠানো এবং স্বয়ংক্রিয় ভিডিও রেকর্ড করা। এছাড়া এতে রয়েছে ফোন স্পর্শ ছাড়াই সাহায্য আবেদনের জন্য বার্তা পাঠানোর সুবিধা।
আরও পড়ুন: দামি ফ্ল্যাগশিপ ফোন কেনার সুবিধা-অসুবিধা
২০১১ সালের ২০ মে প্রকাশিত অ্যাপটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মোবাইল সফটওয়্যার এএস। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটির জন্য ডিভাইসে জায়গা রাখতে হবে ১০ দশমিক ৫ এমবি, আর আইওএস অ্যাপের জন্য ৮৭ দশমিক ১ এমবি। বিসেইফ অ্যান্ড্রয়েড ৯ (https://www.getbsafe.com/bsafe-app) ও তার ওপরের সংস্করণ এবং আইওএস ১৩ এবং তার পরবর্তী সংস্করণগুলোর জন্য প্রযোজ্য। ব্যবহারকারীদের বিবেচনায় অ্যাপটির রেটিং ৩ দশমিক ৭ (আইওএস) এবং ৩ দশমিক ১ (অ্যান্ড্রয়েড)।
আইশেয়ারিং (iSharing)
২০১২ সালের ১৬ জুন এই অ্যাপটিকে ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে নির্মাতা আইশেয়ারিং সফট ইন করপোরেশন। আইশেয়ারিং অ্যাপটির (https://isharingsoft.com/) মাধ্যমে দূরবর্তী কোনও অঞ্চলে ভ্রমণকালে পরিবারের সদস্যের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যায়। জিপিএসের এই রিয়েল-টাইম সুবিধাটি ব্যবহারকারী এবং তার পরিবার দু’জনেই একই সঙ্গে উপভোগ করতে পারে। এছাড়া এটি ব্যক্তির অবস্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাখে এবং তা পর্যালোচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানের জন্য আগাম সতর্কবার্তা দেয়। এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে ডায়াল ছাড়াই দ্রুত কন্টাক্ট করতে সহায়তা করে।
অ্যান্ড্রয়েডের ৬৩ এমবির জন্য প্রয়োজন হবে অ্যান্ড্রয়েড ৭ এবং তার ওপরের সংস্করণগুলো। অপরদিকে, ২১৫ দশমিক ৮ এমবি আইওএসের অ্যাপটি চলবে আইওএস ১৩ পয়েন্ট ৪ বা তার পরবর্তী সংস্করণগুলোতে। আইশেয়ারিংয়ের আইওএস অ্যাপটির ইউজার রেটিং ৪ দশমিক ৮ এবং অ্যান্ড্রয়েডটির রেটিং ৪ দশমিক ৬।
আরও পড়ুন: মোবাইল ফোন হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয়
নুনলাইট (Noonlight)
দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহজ ইন্টারফেসের কারণে বেশ আগের হলেও নারী গ্রাহকদের জন্য জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে নুনলাইট। পর্যায়ক্রমিক বাগ ফিক্সিং-এর মাধ্যমে নিয়মিত আপডেটগুলোর কারণে অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েডে ৪ দশমিক ৫ ও আইওএসে ৪ দশমিক ৭ রেটিং অর্জন করেছে।
২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারিতে প্রকাশ করা অ্যাপটি ধীরে ধীরে উন্নত করার মাধ্যমে বর্তমান অবস্থায় এনেছে নির্মাতা নুনলাইট ইন করপোরেশন। ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য নিরাপত্তামূলক অ্যাপগুলোর মতো এটিও জিপিএস প্রযুক্তিতে সজ্জিত।
নুনলাইট (https://www.noonlight.com/noonlight-app) অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটির সাইজ ২৪ দশমিক ০৪ এমবি এবং আইওএস অ্যাপটি ১৭০ দশমিক ৩ এমবি। অ্যাপটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে হলে প্রয়োজন হবে অ্যান্ড্রয়েড ৫ এবং তার অধিক ওএস কিংবা আইওএস ১২ ও তার পরের ওএসগুলো।
আরও পড়ুন: ডিপ ফ্রিজ খুঁজছেন? যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন
লেটসট্র্যাক (Letstrack)
জিপিএস প্রযুক্তির আরও একটি মূল্যবান প্রয়োগ হচ্ছে এই লোকেশন শেয়ারিং অ্যাপটি। লেটসট্র্যাক লিমিটেড নির্মিত অ্যাপটির অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণের সাইজ ২৫ দশমিক ৫ এমবি এবং আইওএস সংস্করণের সাইজ ১৬৫ দশমিক ৭ এমবি। ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে যাত্রা শুরু করা অ্যাপটি (https://india.letstrack.com/) শুধুমাত্র নারীদের জন্যই নয়, শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য। এর দুর্দান্ত ট্র্যাকিং ক্ষমতার শতভাগ উপভোগ করতে হলে আইওএস ১৫ এবং তার পরের ওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড ৯ ও এর ঊর্ধ্ব ওএসগুলো ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়াও এতে রয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটের সুবিধা। সামগ্রিক বিবেচনায় এ পর্যন্ত অ্যাপটির রেটিং ৩ দশমিক ৬ (আইওএস) এবং ৪ দশমিক ১ (অ্যান্ড্রয়েড)।
মাই সেফটিপিন (My SafetiPin)
যেকোনো এলাকার স্বাভাবিক নিরাপত্তা অবস্থা যাচাই করে আগে থেকেই নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করতে পারা। মূলত এই বিশেষত্ব দিয়েই ডেভেলপার সেফটিপিন ২০১৬ সালের ৯ মার্চ প্রকাশ করে এই অ্যাপটি। এটি জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) ব্যবহার করে তুলনামূলক নিরাপদ রুটের খোঁজ দিতে পারে। একই সাথে ব্যবহারকারীর বন্ধু বা পরিবারও তার অবস্থান দেখে নিতে পারে। এ সময় ব্যবহারকারী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকলে অ্যাপটি পরিবারের সদস্য বা বন্ধুকে সতর্ক বার্তা পাঠায়।
আরও পড়ুন: স্মার্ট টিভি খুঁজছেন? জেনে নিন ফিচার ও দাম
মাই সেফটিপিন (https://safetipin.com/my-safetipin-app/) অ্যাপটি চালানোর জন্য প্রয়োজন হবে অ্যান্ড্রয়েড ৪ দশমিক ৪ ও তার পরের সংস্করণ এবং আইওএস ১৩ বা তার পরবর্তী সংস্করণ। অ্যান্ড্রয়েডে অ্যাপটির সাইজ ২৩ দশমিক ৫ এমবি (মেগাবাইট) এবং আইফোনে ১৩৪ দশমিক ৩ এমবি। মাই সেফটিপিনের বর্তমান ইউজার রেটিং আইওএস (আইফোন অপারেটিং সিস্টেম)-এ ৩ দশমিক ৪ এবং অ্যান্ড্রয়েড-এ ৩ দশমিক ৯।
ইউআরসেইফ (UrSafe)
ইউআরসেইফ (https://ursafe.com/) অ্যাপটি সরাসরি মেট্রোপলিটান পুলিশের নাগরিক পরিষেবার সঙ্গে সংযুক্ত। এখানে শুধুমাত্র একটি ট্যাপ অথবা ভয়েস নির্দেশনার মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন বার্তা পাঠানো যায়। জরুরি অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ কল করার জন্য ফোন স্পর্শ বা নাম্বার ডায়ালেরও প্রয়োজন হয় না। এমনকি পরিস্থিতি বিশেষে প্রয়োজনে এটি লাইভ ভিডিও ও অডিও স্ট্রীমিং চালু করে দিতে পারে।
অত্যাধুনিক এই অ্যাপটি নির্মাণ করে ইউআরসেইফ টেকনোলজিস। ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত হয় ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। ৭২ এমবি সাইজের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণটির বর্তমান রেটিং ৪ দশমিক ৪। অপরদিকে ১৫০ দশমিক ৪ এমবির আইওএস সংস্করণের রেটিং এখন পর্যন্ত ৩ দশমিক ৮। অ্যাপটি চালানোর জন্য অ্যান্ড্রয়েড ৭ ও তার অধিক অথবা আইওএস ১১ বা তার পরের ওএস সমর্থিত ডিভাইস থাকা দরকার।
আরো পড়ুন: ২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ১০ মুদ্রা
৪ মাস আগে
চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোন খুঁজে পাওয়ার উপায়
স্মার্টফোন চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে চরম নিরাশার মধ্যে ডুবে যাওয়াটা খুব অতিরঞ্জিত ব্যাপার নয়। পকেট, ব্যাকপ্যাক, পার্স বা কাউন্টারটপ সহ সম্ভাব্য সব রকম জায়গায় খোঁজার পরও ফোন পাওয়া না গেলে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কের উদ্রেক হয়। তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে- বেশ কিছু উপায় আছে, যা ফোন হারিয়ে যাবার বিড়ম্বনা থেকে অচিরেই মুক্তি দিতে পারে। এই নিবন্ধে চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোন খুঁজে পাওয়ার সেই উপায়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হবে।
চুরি হওয়া অ্যান্ড্রয়েড ফোন ট্র্যাক করার উপায়
গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের গুগল ম্যাপ, জিমেইল এবং গুগল প্লে স্টোর সহ পূর্ব-ইন্সটল করা সব কিছু ব্যবহারকারির গুগল অ্যাকাউন্টে জমা থাকে। তাই ফোন হারালেও কম্পিউটারের ওয়েব ব্রাউজারে গিয়ে গুগল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি ট্র্যাক করা যেতে পারে। গুগলে ফাইন্ড মাই অ্যান্ড্রয়েড টাইপ করলে প্রথম অনুসন্ধান ফলাফল ফোনটির সর্বশেষ পরিচিত অবস্থান সহ একটি মানচিত্র দেখাবে।
গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া অ্যান্ড্রয়েড ফোন ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সেটা যেখানেই থাকুক ফোনটি অবশ্যই চালু থাকতে হবে এবং তার লোকেশন মুড অন থাকতে হবে। ট্র্যাক করা লোকেশনে ফোন না পাওয়া গেলে ফোনের তথ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে শেষ অবলম্বন হিসেবে দূর থেকে ফোনের সমস্ত ডাটা মুছে ফেলতে হবে।
এ ক্ষেত্রে একবার ফোনের সব ডাটা মোছা হয়ে গেলে, ডিভাইসটি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। উপরন্তু, ফোন থেকে ডাটা মুছলেও এসডি কার্ডের ডাটা থেকে যায়।
পড়ুন: অরিজিনাল ফোন চেনার উপায়: ফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি
ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ
প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ফাইন্ড মাই মোবাইল নামে একটি সেটিং রয়েছে, যা গুগলের ফাইন্ড মাই ডিভাইসের মতোই কাজ করে। হারিয়ে যাওয়া ফোনটি যদি অফ করা না থাকে, সেক্ষেত্রে ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের অ্যাপের মাধ্যমে বা অনলাইনে তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফোনটি ট্র্যাক করা যেতে পারে। এইভাবে ফোনের সর্বশেষ অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়। ফাইন্ড মাই মোবাইলের মাধ্যমে ফোনের ব্যাক আপ নেয়া, বার্তা এবং ফোন কল পুনরুদ্ধার করা এবং এমনকি ব্যাটারির আয়ু পর্যন্ত বাড়ানো যায়।
ওয়্যারলেস ক্যারিয়ার ব্যবহার
বেশিরভাগ ওয়্যারলেস ক্যারিয়ার হারিয়ে যাওয়া অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি সনাক্ত করতে গুগল এর ফাইন্ড মাই ডিভাই-এ যেতে বলবে। যদি ফোন চুরি হয়ে যায় বা এটি ফেরত পাওয়ার কোনো উপায় না থাকে, তাহলে ওয়্যারলেস ক্যারিয়ারের ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে ফোনটি নিখোঁজ বা চুরি হয়েছে বলে রিপোর্ট করা যেতে পারে। এমনকি এর সাহায্যে দূর থেকেই ডিভাইসটির লক বা তথ্য মুছে ফেলা যায়।
থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার
হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া ডিভাইসগুলোর খোঁজের জন্য গুগল-নির্মিত বেশ কয়েকটি অ্যাপ আছে। এগুলোর মাধ্যমে বাড়ির সদস্যদের অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে, হারিয়ে যাওয়া অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসটি সহজেই খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এমনকি ফোনটি বন্ধ থাকলেও জিপিএস লোকেটার ব্যবহার করে এগুলো সহজেই লোকেশন খুঁজে বের করে ফেলতে পারে।
এছাড়া কোনো অনিরাপদ স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করা যায়। আর কল ফরওয়ার্ড করা, লক সেট করা, ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা এই অ্যাপগুলোর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভূক্ত। অ্যাপগুলোর মধ্যে লাইফ-৩৬০, লস্ট অ্যান্ড্রয়েড, হোয়্যার্স মাই ড্রয়েড এবং অ্যান্টি থেফ্ট অ্যাপগুলো বেশ কার্যকর।
পড়ুন: মোবাইল ফোন পানিতে পড়ে গেলে করণীয়
আইএমইআই সংখ্যা ব্যবহার
আইএমইআই নম্বর দিয়ে হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোনটি ট্র্যাক করতে আইএমইআই ট্র্যাকার-ফাইন্ড মাই ডিভাইস নামে একটি থার্ড পার্টি আইএমইআই ট্র্যাকিং অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে।
ফোনের আইএমইআই বা ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি নাম্বার হল ১৫-অঙ্কের একটি সংখ্যা যা প্রত্যেকটি ফোনের জন্য অনন্য। এটি স্মার্টফোনের সেটিংস ছাড়াও ডিভাইসের ব্যাটারি সংলগ্ন স্থানে পাওয়া যায়। আইএমইআই নাম্বার দিয়ে আইনত ব্যবস্থা নেয়া যায়। উপরন্তু, আইএমইআই ট্র্যাকার আইএমইআই নাম্বার ধরে ফোনটি ব্লক করে দেয়, যেন ভবিষ্যতে অন্য কেউ ফোনটি ব্যবহার করতে না পারে।
চুরি হওয়া আইফোন ট্র্যাক করার উপায়
ফাইন্ড মাই আইফোন অ্যাপ ব্যবহার
আইফোন হারানো গেলে কম্পিউটারে ওয়েব ব্রাউজারে গিয়ে আইক্লাউড-এ সাইন ইন করতে হবে। সেখানেই পাওয়া যাবে ফাইন্ড মাই আইফোন লিঙ্ক। এরপর মাই আইফোনের ইন্টারফেসে ড্রপ-ডাউন মেনু থেকে সমস্ত ডিভাইস চেক করে হারিয়ে যাওয়া আইফোনটির মডেল নির্বাচন করতে হবে। অতঃপর অ্যাপটি মানচিত্রে আইফোনটির অবস্থান ট্র্যাক করা শুরু করবে।
আইফোন হারানো গেলে লস্ট মোড সক্রিয় করা জরুরি। এটি যে কোন দূরত্বে থেকে ফোন ট্র্যাকিং বন্ধ করা ছাড়াই ডিভাইস লক করে দিবে। তাছাড়া এর লক স্ক্রিনে ডিভাইসের ফোন নম্বর সহ একটি বার্তা প্রদর্শন করবে। ফলে আশেপাশের লোকজনের কেউ ডিভাইসটি কুড়িয়ে পেলে সাথে সাথে আসল ব্যবহারকারিকে ফোন দিতে পারবে। শেষ উপায় হিসেবে এই অ্যাপ দিয়ে দূর থেকেই আইফোনের ডাটা মুছে ফেলা যায়। এতে করে আইফোনটি আর ট্র্যাক করা যাবে না, তবে ডাটা ভুল হাতে চলে যাওয়া থেকে আটকানো যাবে। দূর থেকে আইফোনের ডাটা মুছে ফেলার আগে আইক্লাউড ব্যাকআপে গুরুত্বপূর্ণ ফটো, ভিডিও, গান এবং অন্যান্য ডাটার অনুলিপি করে রাখা উচিত।
পড়ুন: ফোন ফ্যাক্টরি রিসেট করার সঠিক পদ্ধতি
অ্যান্টি-থেফ্ট অ্যাপ ব্যবহার
এই থার্ড পার্টি অ্যাপটি আইফোনসহ আইপ্যাড বা ম্যাকবুক যাই হোক না কেন, যে কোন অনুপস্থিত ডিভাইস খুঁজে পাওয়াটা অত্যন্ত সহজ করে তোলে। এর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে এর একক ইন্টারফেসে সমস্ত ডিভাইস সংযুক্ত করা যেতে পারে। এই অ্যাপ ডিভাইসটি ধরে থাকা ব্যক্তির ছবি তুলতে পারে, ডিভাইসটি কোন এলাকায় প্রবেশ করলে বা ছেড়ে যাওয়ার সময় সতর্ক করতে পারে।
প্রি অ্যান্টি-থেফট চালু রাখার জন্য অ্যাপটি আগে থেকেই আইফোনে ইনস্টল করে রাখতে হবে। ডিভাইস হারানো গেলে বা চুরি হলে যে কোন ওয়েব ব্রাউজারে প্রে-প্রোজেক্ট খুলতে হবে। এরপর ব্যবহারকারির অ্যাকাউন্টের শংসাপত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে হবে। ভেতরে প্রবেশের পর ডিভাইসের তালিকা থেকে ব্যবহারকারি নিজের হারিয়ে যাওয়া ডিভাইসটি সনাক্ত করবেন। ইনবক্সে রিপোর্ট পাওয়ার জন্য অনুপস্থিত নামের বিকল্পটিতে টগল করতে হবে। এখান থেকে অ্যালার্ম ট্রিগার করা, দূর থেকে ডিভাইস লক করা এবং ডাটা মুছে ফেলার মত সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।
গুগল টাইমলাইন ব্যবহার
আইফোনের লোকেশন মুড অন থাকলে গুগলের টাইমলাইন ডিভাইসের সমস্ত অবস্থান রেকর্ড করবে। ফলে আইফোনটি হারিয়ে গেলে, মানচিত্রে অবস্থানের তথ্য অ্যাক্সেস করে শেষ অবস্থানটি জানা যাবে। এর জন্য অবশ্যই একটি নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট কানেকশন চালু থাকতে হবে।
পড়ুন: আপনার স্মার্টফোন দিয়ে আয় করার সেরা কিছু উপায়!
এই প্রক্রিয়াটির জন্য প্রথমে যেতে হবে গুগলের টাইমলাইনে। গুগল অ্যাকাউন্টে সাইন ইন করতে হবে। অতঃপর হারিয়ে যাওয়ার দিন-তারিখ নির্বাচন করে দিলে স্ক্রোল করে আইফোনের সর্বশেষ রিপোর্ট করা অবস্থান দেখা যাবে। অবস্থানের সাথে সাথে ফোনটি গুগলের সাথে শেষবার সংযুক্ত হওয়ার সময়টি নোট করতে হবে। এভাবে দূরত্ব ও সময় তথ্য থেকে সূত্র গ্রহণ করে হারিয়ে যাওয়া আইফোনটির খোঁজ পাওয়া যেতে পারে। লোকেশনে গিয়ে ডিভাইসটি সংগ্রহের সময় প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
অয়্যারলেস ক্যারিয়ারে রিপোর্ট করা
হোক সেটা আইফোন বা সেলুলার সহ একটি আইপ্যাড, হারিয়ে যাওয়া ডিভাইস সম্পর্কে ওয়্যারলেস ক্যারিয়ারে রিপোর্ট করা উচিত। কল, টেক্সট এবং ডাটা ব্যবহার রোধ করতে ক্যারিয়ারকে অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে বলতে হবে।
আইহাউন্ড ব্যবহার
হারানো আইফোনটি অন্য কোন কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হলে এই বিনামূল্যের নিরাপত্তা প্রোগ্রামটি আসল ব্যবহারকারিকে সতর্ক করে। পাশাপাশি ডিভাইসটি কোথায় ব্যবহার করা হচ্ছে তার অবস্থানও ট্র্যাক করে। আইফোনটি কোন কম্পিউটারে প্লাগ ইন করার সাথে সাথেই এর আসল ব্যবহারকারি একটি ইমেল নোটিফিকেশন পাবেন।
অতঃপর আইহাউন্ড-এর ওয়েবসাইটে লগ ইন করে এটি কোথায় ব্যবহার করা হচ্ছে তার একটি বিশদ প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। প্রায় সময়ই চোর আইফোন সুইচ অফ করে মেমরি কার্ড ফরম্যাট দিতে একটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করে। এ ক্ষেত্রে আইহাউন্ড ফোন ট্র্যাক করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরি ভূমিকা রাখে।
পড়ুন: পুরনো স্মার্টফোনের আয়ু বাড়ানোর ৫টি টিপস
শেষাংশ
চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোন খুঁজে পাওয়ার উপায়গুলো শুধু তাৎক্ষণিক ট্র্যাকিং-এই সাহায্য করে না, বরং ফোনটি ব্যবহারে পূর্ব-সতর্কতার প্রতিও গুরুত্বারোপ করে। যে কোন ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাঁটা বা ভ্রমণের সময় সর্বদা নিশ্চিত করতে হবে যে, ফোনটি ব্যাগে নিরাপদে সুরক্ষিত আছে। ফোনের লক স্ক্রিন পরিবর্তন করে তার স্ক্রিনশট নিয়ে বন্ধুর ফোনে শেয়ার করে রাখতে হবে। পরামর্শ দিই। এতে হারানো ফোনটি অনুসন্ধানের সময় সুবিধা হবে। চুরি যাওয়া ফোনটির অবস্থান ট্র্যাক করা গেলে নিজে থেকে একাকী এটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা উচিত নয়। এতে মারাত্মক প্রাণঘাতী হুমকি থাকতে পারে। এধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে পুলিশী সহায়তা নেয়া উত্তম।
২ বছর আগে