কনটেইনার ডিপো
সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে আগুন: বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এরপর কমিটিকে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায় ও কারণ নিরুপণ করে তিন মাসের মধ্যে হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত ও হতাহতদের ক্ষতিপূরণ চেয়ে জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি মো.মজিবুর রহমন মিয়া ও বিচরপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। রুলে সীতাকুণ্ডে নিহত ও আহতদের পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। অপর এক রুলে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বপালনে ব্যর্থতা ও অবহেলা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কেন নেয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকে অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি কেন সরবরাহ করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
কেমিকেল রক্ষণাবেক্ষণে জন্য সুর্নিদিষ্ট স্থান নির্ধারণ করার নির্দেশনা ও ডিপোতে সংরক্ষিত কেমিকেলের পরিমাণ, কি ধরনের কেমিকেল রাখা হবে তা প্রদর্শনের নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি), স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি এবং বিএম কনটেইনার বিডি লিমিটেডের এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবীর পল্লব।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে নিহত প্রত্যেককে ২ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে রিট
এর আগে গত ২৯ জুন জনস্বার্থে এ বিষয়ে ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট ও চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ (সিসিবি) ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাওসার এ রিট করেন। ওই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবীর পল্লব। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অরবিন্দ কুমার রায়ের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আব্বাস উদ্দীন, আবুল কাশেম পারভেজ ভুইয়া ও শামসুন্নাহার লিজা।
রিটে সীতাকুণ্ডে নিহতদের প্রত্যেককে দুই কোটি ও আহতদের প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
গত ৮ জুন সীতাকুণ্ডের আগুনে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার সংশ্লিষ্টদের প্রতি ওই দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। লিগ্যাল নোটিশের পরও কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এ রিট করা হয়।
গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নেভানোর এক পর্যায়ে রাসায়নিকের কনটেইনারে বিস্ফোরণ ঘটে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৫১ জনের লাশ উদ্ধার হলেও ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত হওয়া ১৪ জনসহ ৪৩ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এখনো আটজনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। তাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার বিস্ফোরণে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিসের আরও এক কর্মীর মৃত্যু
২ বছর আগে