ট্রানজিট চুক্তি
অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তির সুবিধা কাজে লাগাতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশ এবং ভুটানের মধ্যকার স্বাক্ষরিত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে অগ্রণী পালনের জন্য ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে শুটিং কমপ্লেক্সে ভুটান অ্যাম্বাসি আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মেলা’- এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটান ২০২০ সালে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি-পিটিএ এবং চলতি বছরের ২২ মার্চ 'ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এসব চুক্তি উভয় দেশের মধ্য বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে সহায়তা করবে। ব্যবসায়ীরা পিটিএ এবং ট্রানজিট চুক্তির সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ঘতাতে পারে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা-স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামোসহ আর্থ-সামাজিক খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতি দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
আমরা এখন ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক যাত্রা শুরু করেছি উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড; বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক একীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। এজন্য নিকটতম প্রতিবেশিসমূহের মধ্যে আঞ্চলিক একীকরণ, আঞ্চলিক সংযোগ এবং আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পারস্পারিক আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।
আরও পড়ুন: ব্যবসা-বাণিজ্যে এশিয়া অঞ্চলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর
টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক আঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার মধ্যে অনেকগুলো চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রদান করা হয়েছে। ভুটান সীমান্তের খুব কাছে কুড়িগ্রামে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এসময় ব্যবসাবান্ধব এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য ভুটান সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি জানান, বাংলাদেশ এই অঞ্চলে কানেক্টিভিটি হাব হিসেবে বিবেচিত। সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে দুটি বন্দরসহ রেল যোগাযোগ এবং ট্রানজিট সুবিধা ভুটানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মেলা দুই দেশের ব্যবসা, উদ্যোক্তা এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের নেটওয়ার্ক তৈরি এবং ব্যবসা ও বিনিয়গের সুযোগ অন্বেষণের জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম প্রদান করা ছাড়াও বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিলসহ আবাসিক মিশন/দূতাবাসের প্রধান, ব্যবসায়িক চেয়ারপারসন এবং অন্যান্য ব্যবাসায়ী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলে।
উল্লেখ্য, ভুটানের প্রায় ২৫টি কোম্পানি মেলায় অংশগ্রহণ করেছে যেখানে দেশটির তৈরি ও উৎপাদিত প্রিমিয়াম মানের পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। মেলা ২৩-২৫ জুন পর্যন্ত চলবে।
মেলার পাশাপাশি ভুটানে বিনিয়োগের সুযোগ, বিশেষ করে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার ওপর একই ভেন্যুতে সেমিনারও অনুষ্ঠিত হবে।
ভুটান অ্যাম্বাসি আয়োজিত অনুষ্ঠানটির ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সহযোগিতায় ছিলো টিকে ইভেন্ট বাই ট্রাভেলার কি।
আরও পড়ুন: ইরান-বাংলাদেশ বাণিজ্য প্রসারে একত্রে কাজ করার আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর
বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই: বাণিজ্যমন্ত্রী
১ বছর আগে
ভারত-ভুটানের ট্রানজিট চুক্তি কার্যকরে গতি পাবে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পর সবচেয়ে কাছাকাছি ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশ ও ভুটানের।
স্থলপথে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে শেরপুর জেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর হয়ে ভুটানের রাজধানী থিম্পুর দুরত্ব মাত্র ৪০০ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে মধুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং দুই দেশের মধ্যে কিছু কিছু পণ্য নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এত কাছাকাছি দুরত্বের হলেও ভারতের সঙ্গে ভুটানের ট্রানজিট সমস্যার কারণে স্থলপথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তেমন এগুচ্ছে না।
তবে ভারতের সঙ্গে ট্রনজিট সমস্যা সমাধানের দৌড়গোড়ায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিচেন কুইনস্টুল।
আরও পড়ুন: হিলি স্থলবন্দরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ
১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর পরিদর্শনে এসে এমন আশার বানী শুনালেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট নিয়ে একাধিক দফায় আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে। এতে ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
এছাড়া ভারত-ভুটান ট্রানজিট চুক্তি কার্যকরে গতি পাবে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরসহ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভুটান। সেই চুক্তির অংশ হিসেবে সোমবার দুপুরে ভূটানের রাষ্টদূত রিচেন কুইনস্টুল শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর পরিদর্শনে আসেন। এসময় তিনি ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন বৈরিতা নেই বলে জানান।
এখন শুধু ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি অনুমোদন হলেই গার্মেন্টস পণ্য সহ অন্যান্য পণ্য ভুটান আমদানী করতে পারবে।
বন্দর পরিদর্শন শেষে ভুটানের রাষ্ট্রদূত স্থানীয় আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশি ব্যাবসায়ীরা ভুটান থেকে পণ্য আমদানি ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্যের পাশাপাশি শুটকি মাছ ও প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এ সময় বাংলাদের কাস্টমস কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী, ভুটান দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সেলর (ট্রেড) কেনচো থাইলোসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভুটান রাষ্ট্রদূত জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক-ব্যবসায়ীক বিষয়ে বেশকিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ভুটান থেকে ১৮টি পণ্য আমাদানি করার অনুমতি আছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ১০টি পণ্য ভুটানে যাচ্ছে।
আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ এবং ভুটান বন্ধু দেশ। এছাড়াও আমরা চেষ্টা করছি এই দুই দেশের আমদানি-রপ্তানিকৃত সকল পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
এছাড়াও বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক ব্যবসায়ী চুক্তিগুলোও দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি জানান, নাকগাঁও স্থলবন্দর নিয়ে ভুটানের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। এ বন্দর ব্যবহার করে ট্রানজিট চুক্তি কার্যকর হলে বন্দরের গতিশীলতাও অনেক বাড়বে।
কাস্টমস কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের তিনটি এলসি পয়েন্ট দিয়ে ভুটান বাংলাদেশে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার এলসি পয়েন্ট লো হলো নাকুগাঁও, গোবরাকুড়া ও করাইতলি।
ভুটান বাংলাদেশ থেকে প্রধান পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাক আমদানি করতে চায়। এর বিপরীতে পাথর, ফলসহ তাদের তৈরি পণ্য রপ্তানি করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী সর্বোতভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন যেন নির্বিঘ্নে এই কার্যক্রম করা যায়।
ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। তবে তালিকাভুক্ত পণ্যের ১৯ টি তালিকার বাইরেও পর্যায়ক্রমে আরও পণ্য রপ্তানি বাড়বে।
নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, বাংলাদেশ থেকে তিনটি পণ্য আমদানি করার জন্য রাষ্ট্রদূতকে আমরা অনুরোধ করেছি।
পণ্যগুলো হলো-শুঁটকি মাছ, প্লাস্টিক পণ্য ও তৈরি পোশাক। এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদনও দেয়া হয়েছে। ভুটানের সঙ্গে সরাসরি পণ্য আমদানি-রপ্তানি চালু হলে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের গতিশীলতাও অনেক বাড়বে।
সরকারের রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিনের দুয়ার খুলবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সোনাম এল রাবগী শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দর পরিদর্শন করেছিলেন।
তখন তিনি স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কী ধরনের সম্ভাবনা আছে তা নিয়ে আলোচনা ও সরেজমিনে পরিদর্শন করেছিলেন।
আরও পড়ুন: হিলি স্থলবন্দরে ১৮ বছর পড়ে থাকা ৫০ ট্রাক পণ্য ধ্বংস
দুই দিন বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু
১ বছর আগে
ট্রানজিট চুক্তি: ভারতের পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘এমভি ট্রান্স সামুদেরা’
বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারতের পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছেছে পণ্যবাহী একটি জাহাজ।
মঙ্গলবার রাতে ‘এমভি ট্রান্স সামুদেরা’ নামের কার্গো জাহাজটি বন্দরের এনসিটি জেটিতে নোঙর করে। জাহাজটিতে এক কনটেইনার পণ্য (রড) রয়েছে। এ চালানটি বাংলাদেশের ভূখণ্ড হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে (আসাম) যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে এমভি সেঁজুতি জাহাজে কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রানজিটের চার কনটেইনার পণ্য এসেছিল। গত মাসে মোংলা বন্দর দিয়ে ট্রানজিটের আরেকটি সফল ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। চলতি সপ্তাহে মেঘালয় থেকে চায়ের কনটেইনার ডাউকি-তামাবিল হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ট্রানজিটের ট্রায়াল রানের শেষ চালানটি কলকাতা বন্দরে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ট্রান্স সমুদেরা জাহাজের শিপিং এজেন্ট ম্যাঙ্গো লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল সুজন ভূইয়া জানান, কলকাতা বন্দর থেকে মোট ১২৪ একক আমদানি পণ্য বোঝাই করে জাহাজটি রাত ৮টায় চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে। এর মধ্যে একটি কনটেইনারে ট্রানজিট পণ্য আছে। বাকি কনটেইনারে পণ্যের আমদানিকারক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। এর আগে ২০২০ সালের ২১ জুলাই ট্রান্সশিপমেন্টের প্রথম চালান কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছিল।
পড়ুন: ঢাকা-দিল্লির মধ্যে যেসব সমঝোতা স্মারক সই ও প্রকল্প ঘোষণা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট চুক্তির আওতায় আমদানি-রপ্তানি দুই ধরনের পণ্য উঠানামায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার একক আমদানি-রপ্তানি-খালি কনটেইনার ওঠানামা করছে, ফলে ভারত থেকে আসা-যাওয়া করা ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য অনায়াসেই এই বন্দরে ওঠানো-নামানো সম্ভব।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ট্রায়াল রান সম্পন্ন হচ্ছে- এটি গৌরবের। এতে বন্ধু প্রতিম দুই দেশ উপকৃত হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানান, ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দর শতভাগ প্রস্তুত।
পড়ুন: বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ভারত নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে থাকবে: দ্রৌপদী মুর্মু
২ বছর আগে
তামাবিল হয়ে মেঘালয়ে গেল কলকাতার পণ্য
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর ব্যবহার করে মেশিনারিজ পণ্যবাহী একটি কন্টেইনারের চালান কলকাতা থেকে মেঘালয়ে পৌঁছেছে। কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি বুধবার দুপুরে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর হয়ে মেঘালয়ে যায়।
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্যা ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি)’ ট্রানজিট চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি স্থলবন্দর ব্যবহারের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে ভারত।
এই সময় বন্দরে সিলেটের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার নীরজ কুমার জয়সওয়াল ও গৌহাটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার এবং মিশন প্রধান শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুরসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থতিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: তামাবিল দিয়ে দেশে ফিরলেন ন্যাপ সভাপতিসহ ১০ বাংলাদেশি
গত ১ আগস্ট ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে একটি জাহাজ ছেড়ে আসার পর গত ৭ আগস্ট রবিবার সকালে মোংলা বন্দরে এসে নোঙর করে। ৮ আগস্ট (সোমবার) দুপুরে কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য খালাসের পর দুটি কন্টেইনারের একটি ভারতের মেঘালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বুধবার সকালে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে আসে। প্রথম চালানে মেশিনারিজ পণ্য নিয়ে আসা ইলেক্ট্রো স্টিল কাস্টিং লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজের ১৬ দশমিক ৩৮০ মেট্টিক টন লোহার পাইপসহ একটি কন্টেইনারের চালান তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মেঘালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা জানান, অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্যা ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি) চুক্তির আওতায় পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চুক্তিটি হয়। এরপর প্রথমবারের মতো ২০২০ সালের জুলাইয়ে ট্রায়াল রান হয়েছিল। তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী নৌযান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।
সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার নীরজ কুমার জয়সওয়াল জানান, ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি জানান, ২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তারই প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাসের পর তামাবিল দিয়ে মেঘালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: তামাবিল সীমান্তে বাংলাদেশিদের ভারতে প্রবেশে বাধা
সিলেটের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত এসিএমপি ট্রানজিট চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে একটি অনন্য মাইলফলক সৃষ্টি হলো। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
২ বছর আগে