বাটাগুর বাসকা
করমজল পর্যটন কেন্দ্র: প্রজনন হচ্ছে লবণ পানির কুমির ও ‘বাটাগুর বাসকা’ কচ্ছপ
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে লবণ পানির কুমির আর বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’ জন্ম নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। তাছাড়া করমজলে ভ্রমণে গিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসব বন্যপ্রাণী দেখে অনেক খুশি। বিশেষ করে শিশুরা কুমির ও কচ্ছপ ছানা দেখে বেশি উচ্ছ্বসিত।
সোমবার দুপুরেও প্রজনন কেন্দ্রের ডিজিটাল ইনকিউবেটর থেকে কুমিরের ছানা ফুটেছে। ছানা ফুটাতে কুমিরের ৩৮টি ডিম ৮২ দিন ইনকিউবেটরে রেখে নিবিড় পরিচর্যা করে বন বিভাগ। প্রজনন কেন্দ্রের চৌবাচ্চায় রেখে কুমিরের বাচ্চাগুলোকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এবার বন বিভাগ কুমিরের ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফুটাতে সফল হয়েছে এবং পুকুরে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা প্রজনন হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকার ২০০০ সালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলে। লবণ পানির কুমির এবং বিরল প্রজাতির বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ এই কেন্দ্রে প্রজনন হয়। ২০০৫ সাল থেকে রোমিও-জুলিয়েট কুমির জুটি দিয়ে প্রজনন শুরু হয়। এরপর ওই প্রজনন কেন্দ্রে পিলপিল-আলেকজান্ডার যুক্ত হয়। বর্তমানে রোমিও এবং জুলিয়েট প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে বলে বন বিভাগ জানায়। আর ২০১৪ সালে বিরল প্রজাতির আটটি বাটাগুর কচ্ছপ নিয়ে কচ্ছপ প্রজনন শুরু করে বন বিভাগ।
পড়ুন: পাটের দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের ১ জুন পর্যন্ত প্রজনন কেন্দ্রে কুমির এক হাজার ১৫০টি ডিম দিয়েছে। এর মধ্যে ৫০৭টি ডিম থেকে ছানা ফুটে বের হয়। বর্তমানে প্রজনন কেন্দ্রে এক থেকে ৪০ বছর বয়সের ১২৯টি কুমির রয়েছে। এই পর্যন্ত জন্ম নেয়া ২০৬টি কুমির সুন্দরবনের নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত কচ্ছপে ৩২৭টি ডিম পাড়ে এবং ২৭৪টি কচ্ছপের ছানা ফোটে। বর্তমানে কেন্দ্রে ৪৩২টি কচ্ছপ রয়েছে।
সূত্র মতে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে জুলিয়েট এবং পিলপিল দুটি কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ১৬৪টি ডিম পাড়ে। কিন্তু বন বিভাগ ডিমগুলো থেকে একটি ছানাও ফোটাতে পারেনি। আর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুমিরের চারটি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। ২০২১ সালে প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরে একটি ডিমও পাড়েনি।
পড়ুন: চা শ্রমিকদের মজুরি ২০১৯ সালেই বৃদ্ধি করা উচিৎ ছিল: গবেষক আশ্রাফুল
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, চলতি বছর ২২ জুন প্রজনন কেন্দ্রের কুমির পিলপিল ৩৮টি ডিম পাড়ে এবং ডিজিটাল ইনকিউবেটরে রাখা হয়। ৮২ দিন পর সবগুলো থেকেই বাচ্চা ফুটেছে। প্রজনন কেন্দ্রে চৌবাচ্চায় কুমিরের ছানাগুলো লালন পালন করে বড় করে তোলা হবে। সেখানে বিভিন্ন সাইজের ১৬টি চৌবাচ্চা রয়েছে। ৬ থেকে ৭ বছর চৌবাচ্চায় কুমির থাকবে। পরবর্তীতে সুন্দরবনের নদী-খালে এই কুমির অবমুক্ত করা হবে।
এই পর্যন্ত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া ২০৬টি কুমির সুন্দরবনের নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয় বলে তিনি জানান।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তথ্য মতে, বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের জীবনচারণ, প্রজনন ও সংখ্যা নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে জানতে করমজল থেকে গত ২০১৭ সালে জিপিএস ট্রান্সমিটার স্যাটেলাইটযুক্ত দুটি, ২০১৮ সালে পাঁচটি এবং ২০১৯ সালে পাঁচটি কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে ছাড়া হয়। স্যাটেলাইটযুক্ত ১২টি কচ্ছপের মধ্যে ২০১৮ সালে একটি বরিশালে গিয়ে মারা যায়, দুটি ভারতে বিচরণ করছিল, দুটি বিভিন্ন নদী-খালে কয়েশত কিলোমিটার বিচরণ করার পর জেলেদের জালে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে জেলেদের কাছ থেকে উদ্ধার করে কচ্ছপ দুটি করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে রাখা হয়।
বাকি কচ্ছপগুলোর বর্তমান অবস্থান তারা জানে না। তবে জিপিএস ট্রান্সমিটার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওই কচ্ছপের বিচরণের সময় বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ট্রিয়া ভিয়েনাজু, টিএসএ, প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশন এবং বন বিভাগ সুন্দরবনের করমজলে বাটাগুর বাসকা নামে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা
বন বিভাগের তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে ২১ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। সমুদ্রে পাঁচ প্রজাতির কচ্ছপের বাস। সারা বিশ্বে ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ আছে। প্রকার ভেদে একটি কচ্ছপের গড় আয়ু ২০০ থেকে প্রায় ৩০০ বছর।
বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের করমজলে ভ্রমণে যাওয়া নানা বয়সের নারী-পুরুষ পর্যটকরা জানান, প্রাকৃতিভাবে গড়ে উঠা সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য তাদেরকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে গিয়ে কুমির এবং কচ্ছপ দেখে তারা বেশি আনন্দ পায়। আর সে কারণের ছেলে মেয়েদের নিয়ে তারা প্রায় প্রতিবছর সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ঘুরতে আসেন।
২ বছর আগে