মেডিকেল বোর্ড
ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু ‘রহস্যজনক’: মেডিকেল বোর্ড
সিলেটের ওসমানীনগরে একটি বাসা থেকে এক প্রবাসী পরিবারের পাঁচজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার ও তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা ‘রহস্যজনক ও অজ্ঞাতকারণে’ মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গঠিত মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
মারা যাওয়া তিন জন ও অসুস্থ হওয়া আরও দুজনের শরীরের কোন চেনতানাশক বা খাদ্য বিষক্রিয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মেডিকেল বোর্ড।
মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, “নিহত ও অসুস্থদের শরীরে কোন বিষয়ক্রিয়া বা চেনতানাশক ব্যবহারের প্রমাণ মেলিনে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া শরীরের বাহ্যিক বা ভেতরে কোন আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যায়নি। এছাড়া মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবদেনে এই ঘটনাকে ‘রহস্যজনক ও অজ্ঞাতকারণে’মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।”
এই অজ্ঞাতকারণের মধ্যে অক্সিজেন স্বল্পতাও একটি কারণ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় ‘মাদকাসক্ত’ যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই সিলেটের ওসমানী নগরে শোয়ার ঘর থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্যকে। তাদের হাসপাতালে পাঠানোর পর ওইদিনই মারা যান গৃহকর্তা রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলাম। এর ১১ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রফিকুলের মেয়ে সাদিয়া ইসলামও।
এ ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তপক্ষ। বোর্ডের প্রধান করা হয় মেডিকেল কলেজটির উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির চক্রবর্তীকে।
এরআগে গত ২৩ আগস্ট এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন জানান, খাদ্যে বিষয়ক্রিয়া বা হত্যা নয়। নিছক দুর্ঘটনা থেকেই মারা গেছেন প্রবাসীরা।
পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন জানান, পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধান ও নিহত তিনজনের ঘরে পাওয়া বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পর্যবেক্ষণ করে পুলিশ বিষক্রিয়ার কিছু পায়নি। হত্যারও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আমাদের ধারণা তিন প্রবাসীর মৃত্যু নিছকই দুর্ঘটনা।
ঘরের জেনারেটরের ধোঁয়া থেকে এমনটি ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা তার।
এছাড়া প্রবাসীরা ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। নিজেদের ফ্ল্যাটের জন্য তারা আলাদা একটি জেনারেটর ব্যবহার করতেন। সাধারণত জেনারেটর বাড়ির বাইরে চালানো হয়। তবে ওই প্রবাসী পরিবার জেনারেটরটি তাদের ফ্ল্যাটের ভেতরে চালিয়েছিলেন। এতে জেনারেটরের ধোঁয়াও শোবার ঘরে প্রবেশ করেছিল।
তিনি বলেন, তদন্তকালে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে জেনারেটর চালিয়ে ওই ঘরে সাত মিনিটের বেশি অবস্থান করতে পারিনি। জেনারেটর ঘরের মধ্যে থাকার কারণে ধোঁয়ায় থাকা যাচ্ছিল না। এছাড়া বিকট শব্দও হচ্ছিলো।
তিনি আরও বলেন, তারা শীতের দেশ থেকে এসেছেন। কিন্তু ঘটনার সময়ে এখানে প্রচুর গরম ছিলো। এক কক্ষে গাদাগাদি করে সাত জন শুয়েছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থও ছিলেন। ঘরে একটি স্ট্যান্ডফ্যান ও একটি সিলিং ফ্যান চালু ছিল। দরজার পাশে থাকা স্ট্যান্ডফ্যান বাইরে থেকে জেনারেটরের ধোঁয়া আরও বেশি শয়নক্ষে টেনে আনছিলো। এসব কারণে শাসরুদ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
পুলিশ সুপার বলেন, আমরা সুস্থ হয়ে ওঠা রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম ও ছেলে সাদিকুল ইসলামের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারাও শত্রুতা বা খাদ্যবিষক্রিয়ার কোন তথ্য জানাতে পারেননি। এছাড়া ওই প্রবাসী পরিবারের সঙ্গে সমাজে, বাড়িতে জায়গা–সম্পত্তি কিংবা অর্থনৈতিক লেনদেন নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। পরিবারটি নিছক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
প্রবাসীরা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেই বাসার মালিক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলক। ঘটনার পরপরই তিনি ওই বাসায় যান। ওই ফ্ল্যাটের জেনারেটর থেকে অস্বাভাবিক ধোঁয়া হচ্ছিলো বলে জানিয়েছেন ঝলকও।
তিনি বলেন, জেনারেটরটি তাদের ডাইনিং রুমের মধ্যেই ছিলো। এরপাশের কক্ষেই প্রবাসী সাতজন ঘুমিয়েছিলেন। ফলে জেনারেটরের ধোঁয়া সরাসরি ওই কক্ষে প্রবেশ করতেই পারে।
অসুস্থ অবস্থায় পাঁচজনকে উদ্ধার ও দুজনের মৃত্যুর পরদিন এ ঘটনায় ওসমানী নগর থানায় মামলা করেন নিহত রফিকের শ্যালক দিলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, তারা ১৮ জুলাই থেকে ওই বাসায় ভাড়া থাকছেন। আমার বাবা-মা-স্ত্রীও ওই বাসায় ছিলেন। প্রতিদিনই জেনারেটর চলেছে। কিন্তু আগে তো কখনো সমস্যা হয়নি।
আরও পড়ুন: ওসমানীনগরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
ওসমানীনগর ট্রাজেডি: আরেক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর মৃত্যু
২ বছর আগে