আত্মরক্ষা
ইরান হামলা করলে আত্মরক্ষায় পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত ইসরায়েল
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে, সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে প্রাণঘাতী বিমান হামলার প্রতিশোধ নিলে তারা আত্মরক্ষা করতে এবং পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত রয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ায় ইরানি কনুলেটে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে তেহরান। ওই হামলা ইসরায়েল চালিয়েছে বলে বিশ্বাস করে মার্কিন সামরিক বাহিনীও। তবে ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গাজায় ছয় মাসের যুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলকে মানবিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে।
আরও পড়ুন: রুশ নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রে ড্রোন হামলা
ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রধান সামান্থা পাওয়ার বুধবার আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে বলে যে 'বিশ্বাসযোগ্য' প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা তিনি মেনে নিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহে বলেছেন, গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবাহ বাড়াতে ইসরায়েল যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা ও স্থল হামলায় অন্তত ৩৩ হাজার ৩৬০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৭৪ হাজার ৯৯৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কতজন বেসামরিক ও কতজন যোদ্ধা রয়েছে তা আলাদা করে জানাতে না পারলেও নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর যুদ্ধ শুরু হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরান হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে তারা দেশটিকে রক্ষা করতে এবং পাল্টা হামলা চালাতে প্রস্তুত রয়েছে।
ইরান গত সপ্তাহে দামেস্কে বিমান হামলায় নিহত তার দুই জেনারেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। তারা এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করলেও ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইরান বা ওই অঞ্চলে সমর্থিত বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট প্রস্তুত রেখেছে এবং অন্যান্য সেনাদের সক্রিয় করেছে।
সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইরানি ভূখণ্ড থেকে হামলা হলে এটি স্পষ্ট যে, মধ্যপ্রাচ্যকে উত্তেজিত করতেই ইরান হামলা চালাবে। ’
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েল আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত করেছে। 'যেখানে প্রয়োজন সেখানে কীভাবে কাজ করতে হবে তা আমরা জানব।’
হাগারি বলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল এরিক কুরিলা ইসরায়েলি সামরিক নেতাদের সঙ্গে কৌশলগত মূল্যায়নের জন্য ইসরায়েলে পৌঁছেছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে তীর্থযাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১৭
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সপ্তাহে বলেছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এখনো আগের মতোই দৃঢ়।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বিক্ষোভ, জিম্মি মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং গাজায় হামাসের হাতে আটক কয়েক ডজন জিম্মির মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে তেল আবিবের রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা জিম্মিদের বড় বড় ছবি এবং ইংরেজি ও হিব্রু ভাষায় লেখা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।
অক্টোবরে দেশটিতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে চলতি মাসের শুরুতে হাজার হাজার ইসরায়েলি জেরুজালেমে জড়ো হয়, যা সরকারবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। প্রায় ছয় মাসের যুদ্ধ নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে বিভক্তি তৈরি করেছে, যদিও দেশটির অধিকাংশই মূলত যুদ্ধের পক্ষে রয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, আগাম নির্বাচন ইসরায়েলকে ছয় থেকে আট মাসের জন্য অচল করে দেবে এবং জিম্মি আলোচনাকে থামিয়ে দেবে। তিনি হামাসকে ধ্বংস করার এবং সমস্ত জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে সেই লক্ষ্যগুলো অধরা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বৃহস্পতিবার বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি "আসন্ন", ইউএসএআইডি প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারকে নরম করে বলেছেন, সেখানে এরইমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে তা "বিশ্বাসযোগ্য"।
জিন-পিয়েরে বলেন, ‘এ কারণেই আমরা গাজায় পৌঁছানো মানবিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজায় ত্রাণ বহনকারী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি গাজার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তাই আমরা অবশ্যই এই প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছি, যাতে গাজায় আরও বেশি সহায়তা পাওয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ত্রাণের প্রবাহ বাড়াতে ইসরাইলকে চাপ দেওয়া অব্যাহত রাখবে।
মার্কিন চাপের মুখে ইসরায়েল নাটকীয়ভাবে গাজায় সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত সপ্তাহে বলেছে যে তারা আরও একটি কার্গো ক্রসিং খুলবে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আগের চেয়ে আরও বেশি ট্রাক পাঠাবে। কিন্তু কয়েকদিন পরও এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা বলছেন, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর গাজায় বিপুল সংখ্যক লোক অনাহারে রয়েছে।
যদিও ইসরায়েল বলছে, তারা এই অঞ্চলে প্রবেশকারী ত্রাণ ট্রাকের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়েছে, জাতিসংঘের কর্মীরা কেবল সামান্য বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সরাসরি ইরানে হামলা চালানোর হুমকি ইসরাইলের
৭ মাস আগে
হামলা হলে পুলিশের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
পুলিশের ওপর হামলা হলে তাদের আত্মরক্ষা করার অধিকার রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সংসদে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ বলেই আক্রমণের মুখে পড়লে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার কি তাদের থাকবে না? তাদের (বিএনপির) মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে যে পুলিশের দিকে বোমা, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার পরও বা তারা বন্দুক হামলার শিকার হওয়ার পরও তারা (পুলিশ) কিছুই করতে পারে না।’
এর আগে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা সংসদে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশের বিপরীতে ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের দলের সাম্প্রতিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে।
তার এই বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আন্দোলন ও কর্মসূচি যেখানে শান্তিপূর্ণ ছিল, সেখানে পুলিশ কিছুই করেনি।
পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ঢাকা-দিল্লির বহুমাত্রিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রত্যাশা
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক। হ্যাঁ, আমি পুলিশকে বলেছি কিছু না বলার জন্য, এটা ঠিক আছে, কিন্তু পুলিশ প্রথমে কিছুই করেনি। যদি কোনো ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হয়, তবে সেই ব্যক্তির সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’
বর্তমান সংসদের ১৯তম অধিবেশনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তার সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মিছিল ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে কেউ কিছু বলবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। যেখানে কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, সেখানে কেউ কিছু করবে না।’
তিনি বলেন, বিএনপির লোকজন হামলার চেষ্টা করে বা মিডিয়া কভারেজের জন্য পরিস্থিতি তৈরি করে।
মিডিয়া এবং বিরোধী দলগুলোর একটি অংশের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সাম্প্রতিক সময়ে হতাশা ছড়াচ্ছে যেন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তবে তারা (সমালোচক) ভালো অবস্থায় আছে।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য ঝুঁকিতে নেই। গত ১৬ আগস্ট আইএমএফও তার মূল্যায়নে মন্তব্য করেছে যে বাংলাদেশ কোনো সংকটে নেই।
পড়ুন: শ্রীলঙ্কার মতো সংকট বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থ পরিশোধে টান পড়তে পারে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
২ বছর আগে