ভারত সফর
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদিনহো এখন ঢাকায়
ভারত সফর শেষে এবার ঢাকায় পা রেখেছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের কিংবদন্তি ও ২০০২ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল দলের সদস্য রোনালদিনহো।
তিনবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
আরও পড়ুন: এএফসি মহিলা এশিয়া কাপ: অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ব্রাজিলিয়ান আইকন সরাসরি হোটেল রেডিসনে পৌঁছান। এদিকে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য নতুন করে সাজানো হয়েছিল হোটেল রেডিসন।
হোটেলে বিশ্রাম নেওয়ার পর রোনালদিনহো বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা।
বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত অবস্থানকালে হোটেল রেডিসনে বাংলাদেশের পুরুষ ও নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও সাবিনা খাতুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ব্রাজিলিয়ান সুপার স্টার।
পরে তিনি বুধবার রাত ১১টায় রাজধানী ত্যাগের আগে একই হোটেলে নির্বাচিত অতিথিদের মিলন ও শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এর আগে তিন দিনের সফরে রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় পৌঁছান।
রোনালদিনহো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করে তাকে একটি জার্সি উপহার দেন।
ভারতীয় ক্রীড়া উদ্যোক্তা শত্রু দত্তের আমন্ত্রণে রোনালদিনহো কলকাতা সফর করেন।
আরও পড়ুন: মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ
ফিফা বিশ্বকাপ: মালদ্বীপের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিলেন সাদ
নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে: ভারত সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বলেছেন, তিন বছর পর তার সাম্প্রতিক ভারত সফর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ভারতে তার সরকারি সফর নিয়ে বুধবার বিকালে সরকারি বাসভবন গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা গোটা সফরজুড়ে ভালো প্রতিবেশী হিসেবে সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ভারতের আন্তরিকতা ও অঙ্গীকার লক্ষ্য করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধানে তার সফরের সময় (৫-৮ সেপ্টেম্বর) গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা বাস্তবায়িত হলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে, এই সফর উভয় দেশকে একটি নতুন পথে এগিয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি উভয় দেশের
জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া শিগগিরই একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা ও নয়াদিল্লি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে উভয়ই আন্তরিকতা তুলে ধরে সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে।
তিনি আরও বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর থেকে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী তার সফরের অনেকগুলো অর্জন তুলে ধরেন- কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নদী থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ঐকমত্য, ভারত ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তসীমান্ত রেল যোগাযোগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সম্মত হওয়া এবং চিনি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি বন্ধ করার আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা সড়ক’ উদ্বোধনের পরিকল্পনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
পড়ুন: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে: দোরাইস্বামী
অভিন্ন নদীগুলোর দূষণের ক্ষেত্রে নদীগুলোর পরিবেশ ও নাব্যতা উন্নত করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া হবে, রেল পরিষেবার মান বাড়ানোর জন্য তথ্য-প্রযু্ক্তির সমাধান বিনিময় এবং ২০২২ সালের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি সাক্ষরের জন্য কাজ শুরু করতে দু’দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সফরকালে, দুই পক্ষ সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সাক্ষর করেছে যার মধ্যে রয়েছে-
সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় কুশিয়ারা নদী থেকে বাংলাদেশে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার, বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল (সিএসআইআর) -এর মধ্যে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা।
তিনি আরও যোগ করেন, ভারত এবং বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের (বিসিএসআইআর) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, ভারতের ভোপালে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে, রেলপথ মন্ত্রণালয় (রেলওয়ে বোর্ড), সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে। ভারত এবং রেল মন্ত্রণালয়, ভারতে বাংলাদেশ রেলওয়ে
কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার, রেল
মন্ত্রণালয় (রেলওয়ে বোর্ড), ভারত সরকার এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আইটি সিস্টেমে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ভারতীয় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন 'প্রসার ভারতী' এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য এফওআইএস এবং অন্যান্য আইটি অ্যাপ্লিকেশন (বিটিভি) সম্প্রচারে সহযোগিতা এবং বিটিসিএল এবং এনএসআইএল-এর মধ্যে মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার
বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ কুশিয়ারা অভিন্ন নদী থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানি পাবে এবং এর ফলে রহিমপুর লিংক ক্যানেলের মাধ্যমে পাঁচ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাবে।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ প্রযুক্তি, সবুজ অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে।
‘আমরা বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে ভারতের প্রস্তাবিত দ্বিতীয় গেটের নির্মাণ কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে সম্মত হয়েছি। এই ভালো কাজটি শুরু করতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই ভারত সফর করবে,’ তিনি যোগ করেন।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসামের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে জ্বালানি (ডিজেল) পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে প্রবাহিত হবে।
তিনি যোগ করেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প’ এর অধীনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৯ এপ্রিল, ২০১৮ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়।
‘এই প্রকল্পের আওতায় ভারত সরকারের অর্থায়নে মোট ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার (বাংলাদেশ অংশে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতীয় অংশে পাঁচ কিলোমিটার) পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অংশে ১২৬
দশমিক ৫৭ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ১২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন সম্পন্ন হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের চাহিদা মেটাতে প্রতিকূল অবস্থায় পাইপলাইন নির্মাণের ফলে জ্বালানি পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে এবং ভারত থেকে সহজে, দ্রুত এবং ডিজেল আমদানি করা যাবে।
পড়ুন: জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানাবে ভারত
তিনি বলেন, এখন রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০-৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হয় এবং একবার
পাইপলাইন নির্মাণ শেষ হলে ভারত থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে, চলমান প্রকল্পের অধীনে পার্বতীপুরের স্টোরেজ ক্ষমতা ১৫ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে স্টোরেজ ক্ষমতা ২৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
তিনি বলেন, জ্বালানির আমদানি উৎসকে বৈচিত্র্যময় করার লক্ষ্যে জি-টু-জি এর ভিত্তিতে ২০২২ সালের
২৮ আগস্ট ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি জ্বালানি সরবরাহকারী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
এলএনজি আমদানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা এলাকায় বিপুল গ্যাসের চাহিদার কথা চিন্তা করে সরকার একটি আন্তসীমান্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে
ভারত থেকে বাংলাদেশে রেগ্যাসিফাইড এলএনজি (আরএলএনজি) আমদানির কথা বিবেচনা করছে। শেষ পর্যন্ত, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড ( আইওসিএল) এবং এইচ-এনার্জি’র প্রস্তাবের বিপরীতে পেট্রোবাংলা উভয় সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন-বাইন্ডিং সমঝোতা সাক্ষর সই করেছে।
তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ভাষা ও সংস্কৃতির মিলের কারণে আমাদের সম্পর্ক গভীর হয়েছে।’
এ ছাড়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ও স্বাধীনতার পর সহযোগিতা এই বন্ধুত্বকে বিশেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভারতের সঙ্গে মৈত্রী রক্তের বন্ধন: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী রক্তের অক্ষরে ও রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এ বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে।সোমবার সকালে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর দপ্তরে ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
ড.হাছান বলেন, গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সফল একটি ভারত সফর করেছেন এবং এ সফরে অনেকগুলো অর্জন আছে, যেমন- কুশিয়ারা নদীর পানি আমাদের পক্ষে বন্টন, ভারতের স্থলভাগের ওপর দিয়ে তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি সুবিধা যার জন্য আমরা বহুদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম, আলাপ-আলোচনার মধ্যেই ছিলাম সেটি এ সফরে সুরাহা হয়েছে, এটি একটি বড় অর্জন।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ: তথ্যমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: যৌথ সম্মতিতে যেসব সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ-ভারত
ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং বন্ধুত্বের সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব প্রদর্শনপূর্বক ভারতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক সফরে (৫০৮ সেপ্টেম্বর) দুই দেশ যৌথ সম্মতিতে একমত হয়েছে। সেগুলো হলো-
অবিচল বন্ধুত্ব
আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের চেতনায় বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রেল সংযোগ উন্নয়ন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত
চলমান দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের মূল্যায়ন, যেমন:
- টঙ্গী-আখাউড়া লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর
- বাংলাদেশ রেলওয়েতে রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ
- ভারতীয় রেলওয়ের স্বনামধন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ
- বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার উন্নতি নিশ্চিতে আইটি-সংক্রান্ত সহযোগিতা প্রদান
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থীর সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ-ভারত রেল সংযোগের উন্নয়নে গৃহীত নতুন উদ্যোগ
- কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নিউ গীতালদহ রেল সংযোগ
- হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন
- বেনাপোল-যশোর রেল পথ ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং রেল স্টেশনের মানোন্নয়ন
- বুড়িমারী ও চ্যাংড়াবান্ধার মধ্যে রেল সংযোগ পুনঃস্থাপন
- সিরাজগঞ্জে একটি কন্টেইনার ডিপো নির্মাণ ইত্যাদি
বাংলাদেশের অনুরোধে অনুদানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০টি ব্রডগেজ ডিজেল লোকোমোটিভ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ধাক্কা প্রতিরোধ করা
ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুনের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের আনুমানিক সরবরাহ নিশ্চিতে উভয় দেশের সরকারের মাঝে বিশেষ ব্যবস্থায় (জি২জি) দুদেশের মধ্যে পণ্য সরবরাহের সম্ভাবনা।
মানুষ এবং পণ্যের স্বাচ্ছন্দ্যপুর্ণ চলাচলের সুবিধা নিশ্চিতকরণ
আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো দ্রুত সম্পন্নকরণ, যার মধ্যে ৪,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বিভিন্ন সীমান্ত ক্রসিংগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসন এবং বাণিজ্য-সম্পর্কিত অবকাঠামো রয়েছে।
আরও পড়ুন: আনুষ্ঠানিক মুক্তির আগে প্রধানমন্ত্রী দেখবেন ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’
সীমান্ত নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা
একটি শান্তিপূর্ণ এবং অপরাধমুক্ত সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, ত্রিপুরা সেক্টর থেকে শুরু করে সমগ্র সীমান্তের কাঁটাতারবিহীন অংশগুলোতে কাঁটাতার নির্মাণের কাজ শেষ করার বিষয়ে উভয় নেতা একমত হয়েছেন।
সীমান্ত রক্ষাবাহিনী কর্তৃক পদক্ষেপের মাধ্যমে সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাসকরণে সাহায্য করেছে। অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার চোরাচালান এবং পাচার রোধে বিশেষত নারী ও শিশুপাচার রোধে পারস্পরিক সহযোগিতাও প্রশংসিত হয়েছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
উভয় নেতাই সন্ত্রাসবাদের সকল রূপ ও অভিব্যক্তি নির্মূলে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এই অঞ্চল ও এর বাইরে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা এবং মৌলবাদের বিস্তার প্রতিরোধ এবং সে সম্পর্কিত পদক্ষেপে সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য যানবাহন সংগ্রহের পরিকল্পনাসহ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা লাইন অফ ক্রেডিটের অধীনে প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক চূড়ান্তকরণে সম্মত হয়েছে।
বর্ধিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত উপকূলীয় রাডার সিস্টেম সমঝোতা স্মারকের প্রাথমিক কার্যকারিতা চূড়ান্তকরণ।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব চলে যাবে কি না, সে এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর: ওবায়দুল কাদের
নদীর পানি সংক্রান্ত সহযোগিতা
এক দশকেরও বেশি সময় পর যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের সভা আহ্বান করা, যেখানে সব অভিন্ন নদীর ব্যাপারে সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়, যা প্রশংসিত হয়েছে।
আসাম রাজ্য সরকারসহ ভারতের সকল অংশীদারদের সহযোগিতায় কুশিয়ারা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি শুষ্ক মৌসুমে উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের জমিতে সেচ দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কৃষকদের সাহায্য করবে এবং একইভাবে, দক্ষিণ আসামও এর দ্বারা উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফেনী নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের অনুরোধের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
ত্রিপুরার জনগণের জন্য খাবার পানি প্রকল্পটির মাধ্যমে এখন শিগগিরই ফেনী নদী থেকে এক দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদত্ত অনুমোদন এবং ছাড়পত্রের ভিত্তিতে ২০১৯ এ স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক কার্যকর হবে৷
তথ্য বিনিময় এবং অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তির কাঠামো প্রণয়নের জন্য এখন আরও অন্যান্য নদীগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গঙ্গার পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করতে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনে উভয় পক্ষই সম্মত হয়।
২০১১ সালে চূড়ান্ত হওয়া তিস্তা চুক্তি শেষ করার জন্য বাংলাদেশ পুনরায় অনুরোধ জানায়।
নদী দূষণ মোকাবিলা, নদীর পরিবেশ ও নাব্যতা উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা
সিঙ্ক্রোনাস গ্রিড কানেক্টিভিটির মাধ্যমে কাটিহার (বিহার) থেকে পার্বতীপুর (বাংলাদেশ) হয়ে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৭৬৫ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনে ‘স্পেশ্যাল পারপাজ ভেহিকল’ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ। এই সংযোগের মাধ্যমে মৌসুমী চাহিদামাফিক বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নেপাল, ভূটান এবং বাংলাদেশকে সংযুক্তপূর্বক উপ-আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড বাস্তবায়ন বেগবান হয়েছে। ভারত জানায়, যে এই জাতীয় নেটওয়ার্ক স্থাপনে অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা গৃহীত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা বাই-ব্যাক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
জ্বালানি খাতে সহযোগিতা
বাংলাদেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে উভয় পক্ষই আন্তঃসীমান্ত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত সমাপ্তির আশা করছে যার মাধ্যমে ভারত থেকে সরাসরি বাংলাদেশে উচ্চ গতির ডিজেল পরিবহন হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারত উভয় দেশের অনুমোদিত সংস্থার মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা নিশ্চিতে সম্মত হয়েছে।
এই বছরের আসাম ও মেঘালয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারত আসাম থেকে ত্রিপুরায় পেট্রোলিয়াম, তেল এবং লুব্রিক্যান্ট পরিবহনের সুবিধার্থে বর্ধিত সহায়তার জন্য বাংলাদেশের প্রতি ধন্যবাদ জানায়।
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল), ভারত সরকারের একটি পিএসইউ, এখন বাংলাদেশে জি-টু-জি (সরকার থেকে সরকারে) ভিত্তিতে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ করার অনুমোদন লাভ করেছে৷
উন্নয়ন সহযোগিতা
বাংলাদেশ ভারত সরকারের সাথে যুক্ত লাইন অফ ক্রেডিট এর অধীনে, বিশেষত গত বছরের তহবিল বিতরণের কার্যকারিতা এবং গতির জন্য ভারতের প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশকে প্রায় ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেয়াতি ঋণ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ভারতের শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী। ভারত কর্তৃক অন্যান্য দেশকে দেওয়া সকল উন্নয়ন অর্থায়নের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা ২৫% করে বাংলাদেশকে প্রদান করে।
আরও পড়ুন: আশা করি তিস্তা চুক্তিসহ সব অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে: প্রধানমন্ত্রী
দ্বিপাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং সংযোগ বৃদ্ধি
উভয় নেতা বাংলাদেশ-ভূটান-ভারত-নেপাল মোটরযান চুক্তি কার্যকর করার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন। একবার সম্মত হলে, চারটি দেশের সীমান্তে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক যানবাহন নিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করা সম্ভব হবে।
উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধিতে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মহেন্দ্রগঞ্জ (মেঘালয়) থেকে হিলিকে (পশ্চিমবঙ্গ) সংযুক্তকারী একটি নতুন হাইওয়ে নির্মাণকল্পে একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব করেছে ভারত। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কেও তাদের অংশগ্রহণে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।
বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে তার ভূখণ্ডে নির্দিষ্ট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন/বিমানবন্দর/সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে ভারতের দেওয়া বিনামূল্যের ট্রানজিট ব্যবহার করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে, ভারত তৃতীয় কোনো দেশে বাংলাদেশী রপ্তানির সুযোগ করে দিয়েছে। এটি নেপাল এবং ভূটানে রপ্তানিকারী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরকে ইতিমধ্যেই দেওয়া বিনামূল্যের ট্রানজিট সুবিধার বহির্ভূত।
পারস্পরিক লাভজনক দ্বিমুখী বাণিজ্য
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তির অধীনে সফল পরীক্ষামূলক চালান সম্পন্ন হয়েছে।
ভারতের ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের সংযোগকারী মৈত্রী সেতুটিও চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এবং ভারত বাংলাদেশকে রামগড়ে অবশিষ্ট অবকাঠামো, অভিবাসন এবং শুল্ক সুবিধা দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করেছে।
দ্বিমুখী ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য, ভারতীয় পণ্যের ওপর বাংলাদেশ কর্তৃক আরোপিত বন্দর নিষেধাজ্ঞা অপসারণে আবারও জোর দেওয়া হয়।
উভয় পক্ষের বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তাদেরকে ২০২২ সালের মধ্যে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে এবং ২০২৬ সালের আগে এটি সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ২০২৬ বাংলাদেশ তার এলডিসি অবস্থা থেকে উন্নীত হবে এবং বর্তমানে ভোগ করা শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধাগুলো ধরে রাখতে উদ্যোগ নেবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য চলাচলের সুবিধার্থে, দেশের ব্যস্ততম স্থলবন্দর, বেনাপোল-পেট্রাপোল আইসিপিতে একটি দ্বিতীয় মালবাহী গেট নির্মাণের উদ্দেশ্যে তহবিল গঠনের জন্য ভারতের দেওয়া প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
বঙ্গবন্ধুর ওপর যৌথভাবে নির্মিত বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ খুব শীঘ্রই শেষ হবে এবং আগামী বছর মুক্তি পেতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রের যৌথ প্রযোজনা এবং দুর্লভ ভিডিও ফুটেজের যৌথ সংকলনে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ।
২০১৮ সাল থেকে বিনা মূল্যে ভারতের নামকরা হাসপাতালে ১০০ জনেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে ভারতের উদ্যোগ গভীরভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারত প্রয়োজনে সব সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করে: প্রধানমন্ত্রী
সহযোগিতার ভবিষ্যত ক্ষেত্র
ভারতে বাংলাদেশী স্টার্ট-আপ প্রতিনিধি দলের প্রথম সফর।
সুন্দরবন সংরক্ষণে যৌথ উদ্যোগ।
মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, গ্রিন এনার্জি, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং অর্থ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত পরিষেবাগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
আঞ্চলিক সমস্যা
ভারত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত দশ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া এবং মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এইসব লোকদের নিরাপদ, টেকসই এবং দ্রুত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে তার অব্যাহত প্রতিশ্রুতির ওপরে জোর দিয়েছে।
ভারত বিমসটেক সচিবালয়ের আয়োজনে এবং এর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় পক্ষ তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আরও পড়ুন: রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: ঢাকা-দিল্লির ৭টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনা, রেলপথ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করি সফরটি অত্যন্ত সফল হবে। এটি আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।’
প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন।
আরও পড়ুন: দেশকে শক্তিশালী ভিত্তি দিতে জাতির পিতা সবকিছুই করেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বাংলাদেশ মনে করে এই সফর দুই দেশের মধ্যে নতুন ‘সহযোগিতার দ্বার’ খুলে দেবে।
হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার আলোচনায় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার রোধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ইউক্রেন সংকট, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও চলমান কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশি চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে চায়।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার আগে ২০১৯ সালে শেষবার সফর করার পর তিন বছর পর শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন। এই সফর বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার থেকে আর কোন শরণার্থী নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এই সফরটি শক্তিশালী ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং পারস্পরিক আস্থা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন যার মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবেন। শেখ হাসিনার কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত একটি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ারও কথা রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং তাকে একটি আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দেয়া হবে। এরপর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরকালে হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ছাড়াও ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনকরের সঙ্গেও দেখা করবেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শেখ হাসিনার আজমীর সফরেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেয়া মধ্যাহ্নভোজেও যোগ দেবেন।
তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২০০ জন সদস্যের বংশধরদের বাংলাদেশ সরকারের একটি উদ্যোগ মুজিব বৃত্তি প্রদান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে শক্তিশালী করার জন্য বঙ্গবন্ধু সবকিছু করেছিলেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সহযোগিতার নতুন দ্বার খুলবে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমওএফএ) জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এই সফর বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী ৫-৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৯ সালে ভারত সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সফরে প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন, যেখানে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও হাসিনার সঙ্গী হবেন।
ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভ্যর্থনা জানাবেন এবং তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। সফরে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন শেখ হাসিনা।
পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ঢাকা-দিল্লির বহুমাত্রিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রত্যাশা
শেখ হাসিনা ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
হায়দরাবাদ হাউসে তিনি মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় মিলিত হবেন। পরে সেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মধ্যাহ্নভোজে শেখ হাসিনা যোগ দেবেন।
নয়াদিল্লিতে হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় সফরের সময় বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সফরে তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ ও গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২০০ জন সদস্যের বংশধরদের বাংলাদেশ সরকারের একটি উদ্যোগ মুজিব বৃত্তি প্রদান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
পড়ুন: শ্রীলঙ্কার মতো সংকট বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী
হামলা হলে পুলিশের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী