কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা
টেসলার রোবট ‘অপটিমাস’ দেখালেন ইলন মাস্ক
শিশু যখন হাঁটতে শেখে তখন তার প্রতিটি কদমে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা যায়। এই বুঝি পড়ে গেলাম! সেজন্যই হয়তো ছোট ছোট কদমে ধীরে ধীরে পা ফেলতে শুরু করে। ঠিক শিশুর মতোই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার কার্যালয়ে শুক্রবার দেখা মেলে মানব রোবটের হেঁটে আসার দৃশ্য।
মঞ্চের এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। ধীর কদমে হেঁটে এসে রোবটটি দর্শকদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানায়। রোবটটির নাম রাখা হয়েছে অপটিমাস।
প্রতিষ্ঠানটির কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দিবসে (এআই ডে) টেসলা যে রোবটটি দেখিয়েছে তা আপাতত একটি প্রোটোটাইপ। যা ভারী বস্তু উঠানোসহ নানা কাজ করতে পারে।
হেঁটে আসা রোবটটি একটি প্রোটোটাইপ হলেও মঞ্চে পরবর্তীতে তিনজন মানুষজে তার ও অন্যান্য সংযুক্ত যন্ত্রাংশসহ রোবট আনতে দেখা যায়। যা দেখতে মোটেই মাস্কের ভাস্য অনুযায়ী রোবটের মতো নয়।
আরও পড়ুন: সময় ও খরচ বাঁচাতে গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ওষুধ উদ্ভাবনে কাজ করছে
কার্যালয়ে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে মাস্ক বলেন যে শুক্রবার তারা যে রোবটটি দেখতে পেয়েছে প্রকৃতপক্ষে এটি আরও বেশি কাজ করতে পারে।
মাস্ক অন্যান্য রোবট ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করে বলেন, জাঁকজমক ও আয়োজন করে যে রোবটগুলো দেখানো হয় সেগুলোর আসলে ‘ব্রেন’ থাকে না। নিজে থাকে চলার মতো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা না থাকার কথাও বলেন তিনি। তবে অপটিমাসের মাধ্যমে তিনি কিছু এআইয়ের নমুনা দেখান।
তবে নতুন এই রোবট নিয়ে সমালোচনাও করতে দেখা গেছে। মঞ্চে দেখানো নমুনায় এআই গবেষক ফিলিপ পিকনিউস্কি সন্তুষ্ট হননি। তিনি টুইটারে লিখেছেন, এটি বেশ তামাশার এবং সম্পূর্ণভাবে ‘স্ক্যাম’।
আরও পড়ুন: ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনে নিচ্ছেন ইলন মাস্ক
মাস্ক জানান, এই প্রথম রোবটটি কোনো সাহায্য ছাড়াই হেঁটেছে। টেসলার লক্ষ্য কি তা জানিয়েছেন মাস্ক। তিনি জানান, এমন রোবট তৈরি করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি যা কাজের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সক্ষম হবে। আর রোবটটি তৈরি ও বাজারজাত করা হবে অধিক হারে। যা লক্ষাধিকও হতে পারে। এর মূল্য হবে একটি গাড়ির দামের চেয়েও কম। দামের ধারণা দিয়ে মাস্ক জানান, ২০ হাজার মার্কিন ডলারের কম হতে পারে।
আরও পড়ুন: ইলন মাস্ক সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কর তথ্য
জাপানে ছোট দোকানগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে বুদ্ধিমান রোবট
জাপানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানগুলোতে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে পণ্য সাজিয়ে রাখার জন্য রোবট ব্যবহার করা হয়েছে।
টোকিও শহরে অবস্থিত ফ্যামিলিমার্ট দোকানের তাপানুকূল তাকগুলোর সামনে-পেছনে চলাচল করতে টিএক্স স্কারা নামের এক রোবটকে দেখা যায়।
রোবটটির মূল কাজ হচ্ছে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে পানীয় তাকে সাজিয়ে রাখা। সহজভাবে বললে, একটি দোকানে কোন পানীয় বেশি চলছে তা সামনের দিকে রাখা। পাশাপাশি তাকের ফাঁকা স্থান পানীয় দিয়ে পুনরায় পূরণ করা।
টিএক্স স্কারার রয়েছে ক্লিপবিশিষ্ট বিশেষায়িত যান্ত্রিক হাত। সাজিয়ে রাখার বিষয়টি যথাযথ করতে রোবটটিতে ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। একটি তাকের সামনে বা পাশের ফাঁকা যায় নড়াচড়া করে ক্যামেরার সাহায্যে রোবটটি পরখ করে নেয় কোন স্থানটি খালি এবং কোন পানীয় শেষের দিকে। এরপর যান্ত্রিক হাতের সাথে যুক্ত ক্লিপ ব্যবহার করে বোতল বা ক্যান ধরে ওই খালি স্থানে রেখে দেয়।
টিএক্স স্কারা জাপানের ‘কনবিনি’তে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কনবিনি হচ্ছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জলখাবার, পানীয় ও উপহার সামগ্রীর দোকান। যেগুলো মোটামুটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে, আছে তিন হাজার ধরনের পণ্য। তবে এসব দোকানে রয়েছে তুলনামূলক কম কর্মচারী।
আরও পড়ুন: জাহাজ পরিষ্কার করবে রোবট!
রোবট কেন প্রয়োজন হতে পারে পানীয় অংশের জন্য তা দোকানগুলো ঘুরে দেখলেই সহজে বুঝতে পারবে যে কেউ। পানীয় অংশ পুরোটাই তাপানুকূল। ফলে একজন মানুষের পক্ষে বারবার সেখানে যেয়ে প্রয়োজনমাফিক পণ্য সাজিয়ে রাখা কষ্টকর। তাছাড়া দোকানের অর্থ পরিশোধের জায়গা থেকে তা বেশ দূরেই হয়ে থাকে। তাই সহজ সমাধান যান্ত্রিক কিছু। এই চরিত্রে টিএক্স বেশ ভালোই খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।
তবে রোবটটির মূল্য কত হতে পারে তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। একটি রোবট দিনে এক হাজার বোতল ও ক্যান সাজিয়ে রাখতে পারে। টিএক্স স্কারার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টোকিও ভিত্তিক টেলেক্সিস্টেন্স জানিয়েছে, ফাঁকা স্থান পূরণ ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে সাজিয়ে রাখতে রোবটিতে যে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়েছে তার নাম গরডন।
টেলেক্সিস্টেন্সের প্রধান নির্বাহী জিন তোমিওকা বলেন, ‘আমরা মানুষের দ্বারা করা সমস্ত পুনরাবৃত্তিমূলক ও বিরক্তিকর কাজগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করতে চাই। সেই দিকেই আমরা যাচ্ছি। আর সেটা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে রোবট ব্যবহার করা।’
জাপানে ফ্যামিলিমার্ট দোকান রয়েছে ১৬ হাজারটি। যার মধ্যে ৩০০ দোকানে টিএক্স স্কারা রোবট রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের উৎসাহের মধ্যে কুমিল্লায় চলছে ‘রোবট তৈরি’ প্রশিক্ষণ
মঙ্গলগ্রহের জন্য রোবট তৈরিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অপার সম্ভাবনা