দ্বিতীয় এলিজাবেথ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যারা থাকছেন
ব্রিটেনের রাজ পরিবারকে নিয়ে বিশ্বের মানুষ ও মিডিয়ার যে আগ্রহের শেষ নেই তা আলাদা করে বলতে হয় না। বিশেষ করে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে। বিশ্ব প্রমাণ পেয়েছে তার মৃত্যুতে। শোক যেমন আছে, শেষযাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে খুঁটিনাটি কী হচ্ছে তাও জানতে নেট দুনিয়ায় ঘুরে আসতে ভুল হচ্ছে না।
সোমবার হচ্ছে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। বিশ্বের বিভিন্ন নেতাদের যানজট এড়াতে তাদের বাসে করে চলাচল করার অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি মানুষের মাঝে বেশ আগ্রহ জাগিয়েছে। একইভাবে এই আয়োজনে কে থাকবেন আর কে থাকবেন না তা নিয়েও খোঁজখবর শুরু হয়েছে।
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে অতিথিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। বরং যারা আয়োজনে অংশ নিবেন তাদেরকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।
আারও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম
রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যারা থাকবেন
শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বিশ্বের মানুষ সোমবার রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তার গৌরবময় জীবন ও উত্তরাধিকারকে স্মরণ করবে। রানি ৯ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং তখন থেকেই রাজপরিবার ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের মানুষ শোক পালন করছে।
১৯৬৫ সালে উইনস্টন চার্চিলের পর রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াই যুক্তরাজ্যে প্রথম রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। একটি রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মানে যুক্তরাজ্য সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে। যা শোক প্রকাশের জন্য করা হয়।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। এখানেই প্রিন্স উইলিয়ামস ও কেট মিডলটনের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল।
আারও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন
রাজপরিবারের সদস্যরা
রানির পরিবারের অধিকাংশই উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থার (এএনআই) মতে, তালিকায় রাজা চার্লস তৃতীয় এবং রানি কনসোর্ট ক্যামিলা পার্কার বোলস, প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল, প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটন, রানির কন্যা প্রিন্সেস অ্যানে ও স্যার টিমোথি লরেন্স, প্রিন্সের মতো রানির সবচেয়ে কাছের পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অ্যান্ড্রু ও সারা এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড ও সোফি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য সরকারের সিনিয়র সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
বিশ্ব নেতারা
এএনআই অনুসারে, প্রায় ৫০০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিন্স, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন।
অন্যান্য দেশের রাজ পরিবার
এএনআই আরও জানায় যে ইউরোপজুড়ে রাজপরিবারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও রানি ম্যাথিল্ড, নেদারল্যান্ডের রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার এবং রানি ম্যাক্সিমা, স্পেনের রাজা ফিলিপ ষষ্ঠ ও রানি লেটিয়া, সুইডেনের রাজা কার্ল গুস্তাফ ও রানি সিলভিয়া এবং মোনাকোর প্রিন্স আলবার্ট ও রাজকুমারী শার্লিন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু শেষকৃত্যের জন্য ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে থাকবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও তার যুক্তরাজ্য সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নেপাল থেকে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণ খাডকা সেখানে থাকবেন এবং শ্রীলঙ্কা থেকে রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে শেষকৃত্যে অংশ নিতে যুক্তরাজ্যে যাবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রানির শেষযাত্রায় অন্যান্যদের সঙ্গে অংশ নিবেন।
আারও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিকৃতি বিশিষ্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার এখন কি করা হবে?
রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যারা থাকবেন না
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য দেশের রাজনৈতিক প্রধান থেকে শুরু করে রাজপরিবারের স্বতন্ত্র সদস্য এবং বিশ্বজুড়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনেক অতিথি যুক্তরাজ্যে উপস্থিত হতে শুরু করেছে।
যদিও আনুষ্ঠানিক অতিথির তালিকা প্রকাশ করা হয়নি, তবুও এএনআই একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যারা রানিকে বিদায় জানাতে যুক্তরাজ্যে যাবেন না। এর মধ্যে দেশের তালিকায় যে দেশগুলো থাকছে:
রাশিয়া
বেলারুশ
আফগানিস্তান
মিয়ানমার
সিরিয়া
ভেনেজুয়েলা
আারও পড়ুন: পর্দায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি রাজা চার্লস তৃতীয়কে তার সিংহাসনে আরোহণে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কিন্তু পুতিনের এই শুভেচ্ছা যুক্তরাজ্যের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বাভাবিকভাবেই পুতিন যুক্তরাজ্যে থাকছেন না।
এখানে এটাও লক্ষণীয় যে উত্তর কোরিয়া, ইরান এবং নিকারাগুয়াকে আমন্ত্রণ পাঠানো হলেও তা শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতদের, ওই দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের নয়।
আরেকটি খবর যা সম্প্রতি ছড়িয়েছে তা হল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত থাকবেন।
তবে এএনআইয়ের মতে, যুক্তরাজ্য সরকার এই গুজবকে বাতিল করেছে। বরং শুধুমাত্র বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।
এএনআই জানিয়েছে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সাত লাখ ৫০ হাজার মানুষ উপস্থিত থাকবে।
আারও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
২ বছর আগে
পর্দায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রয়াত হয়েছেন কিছুদিন হলো। তার ঐতিহাসিক জীবন সম্পর্কে জানতে পুরো বিশ্বের অনেকের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। আর তাকে জানা আরও সহজ হয়েছে সিনেমা ও সিরিজের পর্দায় তার জীবন দেখার পর। মূলত সেগুলো নিয়েই এই লেখা সাজানো হবে। তবে এর আগে একটা বিষয় জানিয়ে রাখি।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ নিজেও কিন্তু মঞ্চে অভিনয় করেছেন। আর সেটি মাত্র ১৫ বছর বয়সে।
২ বছর আগে
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শোকবইয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষর
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্য খোলা শোকবইয়ে সাক্ষর করছেন।
বুধবার বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন নিজ বাসভবনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেখেন, রানি ‘মানব ইতিহাসে অতুলনীয় উত্তরাধিকার রেখে গেছেন এবং সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে ছিলেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু’বার রানির সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেন। একবার ১৯৬১ সালে যখন রানি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফর করেছিলেন এবং পরে ২০১০ সালে যখন রানি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে সফর করেছিলেন।
হাইকমিশনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার বাসভবনে গিয়ে রানির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
আরও পড়ুন: বাকিংহাম প্যালেসে রানির মরদেহ
রানির প্রতি শোক জানাতে ব্রিটিশ হাইকমিশনে প্রধানমন্ত্রী
রানির জন্য শোক বই খুলছে ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন
২ বছর আগে
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন
ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দেশ স্বাধীন হওয়ার ১২ বছর পর ১৯৮৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে আসেন।
ইউপিআইয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশটির তৎকালীন সামরিক সরকারের রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে অল্প সংখ্যক ব্যক্তির উপস্থিতিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বামী প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে রানি সে রাতে নিজস্ব বিমানে করে বংলাদেশে আসেন।
ধূসর নীল রঙের স্যুট পরিহিত রানি ও তার স্বামীকে মোটর শোভাযাত্রায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেখানে তারা শেষবার ১৯৬১ সালে এসেছিলেন। তখন বাংলাদেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান।
রাজকীয় এই দম্পতি কমনওয়েলথ সম্মেলন উদ্বোধন করার উদ্দেশ্যে ভারতের নয়াদিল্লি যাওয়ার আগে বাংলাদেশে ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর অবস্থান করেন।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে তখন বিশ্বের তৃতীয় দরিদ্রতম দেশ বলে অভিহিত করা সত্ত্বেও বাংলাদেশের তৎকালীন সামরিক সরকার ঢাকায় রানির সফরের জন্য দুই মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রঙিন পোস্টার, ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক’- লেখা ব্যানার এবং ইউনিয়ন জ্যাক পতাকায় বিমানবন্দর থেকে ১৮ মাইল পথ সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম
রানির বাংলাদেশ সফরের উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে একটি ছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন। যেখানে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছিলেন।
রাজধানী ঢাকা থেকে ৩৫ মাইল দক্ষিণে একটি ‘মডেল ভিলেজ’ পরিদর্শনের জন্য রানি ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলেন এবং সেখানে দেখেছিলেন কীভাবে চাল থেকে মুড়ি তৈরি হয়, পাশাপাশি হস্তশিল্প, লেপ ও মৃৎপাত্র তৈরির প্রক্রিয়াও দেখেছিলেন।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ ঢাকার ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ সেন্টার পরিদর্শন করেন এবং সেখানে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে দেখা করেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্পর্কে ১০টি বিষয়
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে ফখরুলের শোক
২ বছর আগে
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রাসকে সমবেদনা জানিয়ে বৃহস্পতিবার একটি চিঠি লিখেছেন।
এতে আরও বলা হয়, চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমি, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনার মাধ্যমে মহান রানি এলিজাবেথ দ্য সেকেন্ডের আকস্মিক মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যের জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সহানুভূতি ও সমবেদনা জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আন্তরিক ভাবনা ও প্রার্থনা শোকাহত রাজপরিবারের সদস্য ও যুক্তরাজ্যের শোকাহত জনগণের সঙ্গে রয়েছে এবং আমরা মহান রানির বিদেহী আত্মার চির শান্তি ও মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছি।’
তিনি উল্লেখ করেছেন যে মহান্ রানি শুধুমাত্র ২.৫ বিলিয়ন কমনওয়েলথ জনগণের স্তম্ভ ও শক্তিই ছিলেন না বরং তিনি করুণা, মর্যাদা, প্রজ্ঞা ও সেবার প্রতীকও ছিলেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্বের সমসাময়িক ইতিহাসে সবচেয়ে কিংবদন্তী এবং দীর্ঘ সময় রাজত্বকারী রাজা হিসেবে মহান রানি কর্তব্য, সেবা ও ত্যাগের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন এবং বিশ্বজুড়ে তার অগণিত মানুষের কাছে উৎসর্গের একটি অতুলনীয় উত্তরাধিকার রেখে গেছেন।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন যে মহান রানি আমাদের নাগরিকদের জন্য অনুপ্রেরণা, সাহস ও শক্তির এক অসাধারণ উৎস হয়ে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে মহান রানি ও আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকথা এবং অটোয়া ও কিংস্টনে দুই কমনওয়েলথ সরকার প্রধানের বৈঠক চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি লন্ডনে ২০১৮ সালের সিএইওবিএম-এ আমাদের শেষ ব্যক্তিগত আলাপচারিতার প্রশংসা করি।’
তিনি উল্লেখ করেন যে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের জনগণের জন্য মহান রানির অভিনন্দনের সবচেয়ে আবেগপূর্ণ বার্তাটি ছিল- ‘আমরা বন্ধুত্ব ও স্নেহের বন্ধন ভাগ করি, যা আমাদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে এবং পঞ্চাশ বছর আগের মতো এটি আজও গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম
তিনি আরও বলেন, ‘তার দুঃখজনক মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষ এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে শুধু একজন বিশ্বস্ত বন্ধুকেই হারালাম না, একজন প্রকৃত অভিভাবককেও হারালাম।’
শেখ হাসিনা সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার জন্য রাজপরিবারের সদস্য ও যুক্তরাজ্যের জনগণ, রাজ্য এবং কমনওয়েলথের সদস্যদের জন্য প্রার্থনা করেছেন।
আরও পড়ুন: রানির মৃত্যু: অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও দাফন
২ বছর আগে
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম
সাত দশকেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান।
তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিক ঘটনাক্রম হচ্ছে:
২১ এপ্রিল, ১৯২৬: লন্ডনের মেফেয়ারে প্রিন্সেস এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের ভবিষ্যতের রাজা ষষ্ঠ জর্জ ও রানি এলিজাবেথের প্রথম সন্তান তিনি। পরে তাকে রানির মা বলা হয়।
১০ ডিসেম্বর, ১৯৩৬: এলিজাবেথ তার চাচা রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড সিংহাসন ত্যাগ করার পর এবং তার বাবা রাজা হওয়ার পর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন।
১৩ অক্টোবর, ১৯৪০: যেসব শিশু বিমান হামলার (ব্লিটজ) সময় তাদের মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের উদ্দেশ্যে এলিজাবেথ ১৪ বছর বয়সে বিবিসি চিলড্রেনস আওয়ার অনুষ্ঠানে প্রথম বক্তব্য দেন।
১৯৪৫: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের হয়ে কাজ করার জন্য এলিজাবেথকে অক্সিলারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসে একজন সাবল্টার্ন (জুনিয়র অফিসার) করা হয়।
২০ নভেম্বর, ১৯৪৭: এলিজাবেথ ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে গ্রিস ও ডেনমার্কের প্রিন্স ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনকে বিয়ে করেন।
১৪ নভেম্বর, ১৯৪৮: প্রিন্স চার্লস জন্মগ্রহণ করেন। ফলে তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন।
আরও পড়ুন: রানির মৃত্যু: অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও দাফন
১৫ আগস্ট, ১৯৫০: এলিজাবেথের দ্বিতীয় সন্তান ও একমাত্র কন্যা অ্যান জন্মগ্রহণ করেন।
৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২: এলিজাবেথ তার বাবা জর্জ ষষ্ঠের মৃত্যুর পর রানি হন।
২ জুন, ১৯৫৩: ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে একটি জমকালো রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে তাকে মুকুট পরানো হয়। তিনি কমনওয়েলথ সফরে বারমুডা, ফিজি, টোঙ্গা, অস্ট্রেলিয়া ও জিব্রাল্টারসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে বের হন।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০: এলিজাবেথের তৃতীয় সন্তান প্রিন্স অ্যান্ড্রু জন্মগ্রহণ করেন।
১০ মার্চ, ১৯৬৪: এলিজাবেথের চতুর্থ সন্তান প্রিন্স এডওয়ার্ড জন্মগ্রহণ করেন।
মে, ১৯৬৫: এলিজাবেথ পশ্চিম জার্মানিতে এক ঐতিহাসিক সফর করেন। যা ছিল ৫২ বছরের মধ্যে কোনো ব্রিটিশ সম্রাটের প্রথম জার্মান সফর।
১৯৭৭: এলিজাবেথ সিংহাসনে বসার রজত জয়ন্তী উদযাপন করেন।
১৯৯২: এ বছরটি ছিল এলিজাবেথের ভাষায় ‘অনুস হরিবিলিস’ বা ভয়ংকর বছর। তার চার সন্তানের মধ্যে তিন সন্তানের বিয়ে ভেঙ্গে যায়। সে বছর আগুনে উইন্ডসর ক্যাসেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মন্দার মধ্যে মেরামতের খরচ জোগাতে রানিকে আয়কর দিতে হয়।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২) : ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
৩১ আগস্ট, ১৯৯৭: প্রিন্সেস ডায়ানা প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তার দুঃখ প্রকাশের জন্য জনসাধারণের চাপের মুখে এলিজাবেথ ডায়ানার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি অভূতপূর্ব টেলিভিশন সম্প্রচার করেন।
২০০২: এলিজাবেথ তার সিংহাসনে আরোহণের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেন। এ বছরে এলিজাবেথের মা ও তার বোন মার্গারেটের মৃত্যু হয়।
২০ ডিসেম্বর, ২০০৭: ভিক্টোরিয়াকে ছাড়িয়ে এলিজাবেথ সবচেয়ে দীর্ঘজীবী ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী হন।
মে, ২০১১: এলিজাবেথ আয়ারল্যান্ডে এক ঐতিহাসিক সফর করেন। যা আইরিশ স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ সম্রাটের প্রথম সফর।
২০১২: এলিজাবেথ সিংহাসনে তার হীরক জয়ন্তী পূর্ণ করেন।
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫: এলিজাবেথ রানি ভিক্টোরিয়াকে ছাড়িয়ে ব্রিটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী সম্রাট হন।
১১ জুন, ২০১৬: ব্রিটেন এলিজাবেথের আনুষ্ঠানিক ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে তিন দিনের জাতীয় উৎসব উদযাপন করে।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭: প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে এলিজাবেথ সিংহাসনে ৬৫ বছর পূর্ণ করে নীল জয়ন্তী উদযাপন করেন।
মার্চ, ২০২০: করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে এলিজাবেথ ও ফিলিপ লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেস থেকে উইন্ডসর ক্যাসেলে চলে যান।
৯ এপ্রিল, ২০২১: প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে মারা গেলে এলিজাবেথের ৭৩ বছরের বিবাহিত জীবনের অবসান হয়।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
২০ অক্টোবর, ২০২১: এলিজাবেথ লন্ডনের একটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে একটি রাত কাটান। ডাক্তারদের নির্দেশে তিনি পরবর্তী মাসগুলোতে তিনি শুধুমাত্র তুলনামূলক হালকা দায়িত্ব পালন করেন।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২: এলিজাবেথ ৭০ বছরের সার্বভৌম সিংহাসন জীবনের মধ্য দিয়ে প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে প্লাটিনাম জুবিলি পালন করেন।
জুন, ২০২২: প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপনে চারদিনের সরকারি ছুটির সময় এলিজাবেথ সীমিত পরিসরে জনসম্মুখে এসেছিলেন।
৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২: বরিস জনসন ও লিজ ট্রাসে এলিজাবেথের সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডে রানির গ্রীষ্মকালীন বাসভবন বালমোরাল প্রাসাদে দেখা করেন। ঐতিহ্যগতভাবে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো অনুষ্ঠিত হলেও তার রানির চলাফেরার সমস্যার জন্য প্রথমবারের মতো এ বৈঠক বালমোরালে সম্পন্ন করা হয়।
৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২: এলিজাবেথ স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে ৯৬ বছর বয়সে মারা যান। তার বড় ছেলে তৃতীয় চার্লস রাজা হন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে
২ বছর আগে