বিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানি রোধের পদক্ষেপ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে মুদ্রা বৈচিত্র্যকরণ সত্ত্বেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত সোমবার ছিল ৩৭ দশমিক শুন্য ৮ বিলিয়ন ডলার।
এই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (এসিইউ) এর জুলাই-আগস্টের বকেয়া এক দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করায় রিজার্ভ কমে ৩৭ দশমিক শুন্য ৬ বিলিয়ন হয়ে গিয়েছিল। গত বছরের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল ৪৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। সে অনুযায়ী এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১১ দশকিম ৫ বিলিয়ন ডলার ।
এলসি কেনার জন্য মার্কিন ডলার বিক্রির চাপ, ভ্রমণ, চিকিৎসার খরচ এবং বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মেটাতে ব্যক্তিগত চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এটি হচ্ছে।
পড়ুন: আমদানিতে কড়াকড়ি সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে
১ সেপ্টেম্বর ২০২২ এ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক শুন্য ৫ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে 'স্থিতিশীলতা' আনতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) এবং চলতি অর্থবছর ২০২২-২৩-এ রিজার্ভ থেকে ২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, রেমিটেন্স বাড়লেও ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে গেলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ, এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
পড়ুন: ২ বছরের মধ্যে প্রথম ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলো রিজার্ভ
বৈদেশিক মুদ্রার হার বাজারভিত্তিক করা হবে: অর্থমন্ত্রী
২ বছর আগে
‘২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৬ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা সরকারের’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) গ্রাজুয়েশন করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। ২০২৬ সালে তা কার্যকর হবে, এরপর আরও তিন বছর পর অর্থাৎ ২০২৯ সাল থেকে এলডিসিভুক্ত দেশের বাণিজ্য সুবিধা আর থাকবে না বাংলাদেশে।
শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ওভারসিস করেসপনডেন্ট অব বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি ‘যৌক্তিক’: বাণিজ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই বিশ্ববাণিজ্য করতে হবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে রপ্তানি বাণিজ্যের এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমরা ভূটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করেছি। আরও বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে পিটিএ বা এফটিএ এর মতো বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের জন্য গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা চলছে।
এছাড়া শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির কারণে চীন এবং ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। চীন বাণিজ্য ব্যাবধান কমাতে ৯৯ ভাগ পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সেপা চুক্তি করার জন্য কাজ করছে। দেশের অর্থনীতির ভিত্তি শক্ত রাখার জন্য রপ্তানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
মন্ত্রী বলেন, গত বছর প্রায় ৬০ বিলিয়ন রপ্তানি হয়েছে। ২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২৬ সালে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের তৈরি পোশাক খাতে মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ ভাগ অবদান রাখছে।
পাশাপাশি আইসিটি, লেদার, প্লাস্টিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাটসহ প্রায় ১০টি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর রপ্তানি দিনদিন বাড়ছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমাদের আরও সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমার বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী ছিল, তাদের তৈরি পোশাক খাত প্রায় বন্ধ। চীন তৈরি পোশাক শিল্প রিলোকেট করছে।
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
ফলে আমাদের সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেছে। আমাদের দক্ষ জনশক্তি রয়েছে, উৎপাদন খরচ কম। তৈরি পোশাক শিল্পে গ্রিন ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। ফলে রপ্তানি বাণিজ্যে আমাদের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সফল হয়েছে। ভূটান ও নেপালের সঙ্গে সড়ক পথের ফ্রি ট্রানজিট সুবিধা দিতে সম্মত হয়েছে ভারত। ভারতের সঙ্গে সড়ক, নৌ এবং আকাশ পথে ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ বাড়ছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হচ্ছে, নদীর পানি বন্টন সবমিলিয়ে সাতটি চুক্তি হয়েছে। এতে করে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে।
ভারত বাংলাদেশের তিনটি স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করছে, আরও চাইলে বাংলাদেশ বিবেচনা করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে।
টিপু মুনশি বলেন, ডিমের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। ডিম আমদানির বিষয়টি দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিয়ে প্রয়োজনে বিবেচনা করা হবে। বাংলাদেশ একসময় সুই, সুতা, বোতাম, কার্টুনসহ সকল এক্সরেসরিজ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করতো, আজ বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিদেশে গার্মেন্টস এক্সরেসরিজ রপ্তানি করছে। আমাদের সক্ষমতা আছে, এগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
ওভারসিস করেসপনডেন্ট অব বাংলাদেশ (ওকাব) এর আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক কাদির কল্লোল, সদস্য-সচিব নজরুল ইসলাম মিঠু এবং ওকাবের সিনিয়র সদস্য ফরিদ হোসেনসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দায়িত্বশীল হতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
২ বছর আগে