স্বপ্না
স্বপ্নার স্বপ্ন পূরণ, গর্বিত এলাকাবাসী
রংপুর শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার সদ্যপুস্করিণী ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রামটি এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে ফুটবলকন্যাদের হাত ধরে।
এক অজপাড়াগাঁ থেকে জাতীয় নারী ফুটবল দলসহ অনূর্ধ্বভিত্তিক দল ও বিভিন্ন ক্লাবে খেলছেন এখানকার মেয়েরা।
এদেরই একজন সিরাত জাহান স্বপ্না। তার ধুলোমাখা শৈশব আর কৈশোরের দিনগুলো ছিল অভাব অনটনে ভরা। তবুও শত বাধা পেরিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে উঠলেন অজপাড়াগাঁয়ের এই মেয়েটি।
পালিচড়া জয়রাম গ্রামে জন্ম নেয়া স্বপ্নার ফুটবল খেলা নিয়ে যারা এতদিন বিরোধিতা করতেন আজ তারাও খুশিতে আত্মহারা।
নেপালের সঙ্গে ইতিহাস গড়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা দলে রংপুরের সদ্যপুস্করিণী ইউনিয়নের পালিচড়ার মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্নার জন্য এখন হাসছে গোটা রংপুর।
আরও পড়ুন: বাঘিনীদের রাজসিক বরণ
পালিচড়ার জয়রাম গ্রামে স্বপ্নার বাড়িতে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক মানুষের ভিড়। অনেকে স্বপ্নার মা বাবার সঙ্গে দেখা করতে ছুটে আসছেন বাড়িতে। মিষ্টি বিতরণ করছেন, হৈ-হুল্লোড়ে মেতেছেন গ্রামের মানুষজন।
হাট, বাজার, দোকান, পাড়া-মহল্লা সবখানেই এখন চলছে স্বপ্নার বন্দনা। যা শুরু হয়েছে সোমবার রাত থেকেই।
স্থানীয়রা জানান, সিরাত জাহান স্বপ্না যেমন আমাদের গর্ব তেমনি গোটা দেশের একজন সম্পদ। এই গ্রামের মেয়েরা অনেক বাধা উপেক্ষা করে ফুটবল খেলা শুরু করে। আমরা স্বপ্ন দেখছিলাম বিশ্বজয়ের। সেটি পূরণ হয়েছে।
স্বপ্নারা তিন বোন। এরমধ্যে দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। স্বপ্না সবার ছোট।
ছোটবেলায় ফুটবলের প্রতি স্বপ্নার আগ্রহ দেখে রাগ করতেন মা লিপি বেগম। পরে মেয়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনে দেন উৎসাহ, দেন সাহস।
স্বপ্নার মা লিপি বেগম বলেন, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে তার ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তখন রাগ করতাম। পরে আমার ভাই আব্দুল লতিফ এসে তাকে নিয়ে যায়। সেই থেকে খেলে। মেয়েকে খুব কষ্ট করে মানুষ করছি।
আরও পড়ুন: সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের জন্য ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা বিসিবির
আজ গর্ববোধ হচ্ছে।
স্বপ্নার বাবা মোকছার আলী একজন কৃষক। মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দের সীমা নেই তারও।
মোকছার আলী বলেন, খুব আনন্দ লাগছে। আজকে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল জয়ী হয়েছে। এতে আমার মেয়ে খেলেছে। আমরা সবাই খুব খুশি। আমার মেয়ের জন্য সকলে দোয়া করবেন। সে যাতে দেশের জন্য আরও ভালো কিছু করতে পারে।
পালিচড়া গ্রামের মোতালেব হোসেন বলেন, স্বপ্না আমাদের গ্রামের সুনাম ছড়িয়ে দিয়েছে। তার কারণে গোটা দেশের মানুষ আজ এই অজপাড়াগাঁটিকে চিনছে। আমরা তার এই সাফল্যে গর্বিত।
সদ্যপুস্করিণী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ মিলন খান বলেন, এই গ্রাম নারী ফুটবলারদের গ্রাম। এর আগে কখনও সাফ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এটাই প্রথম। এই দলে স্বপ্না দশ নস্বর জার্সি পরে খেলেছে।
তার এই সফলতায় আমরা খুশি এবং আনন্দিত। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, তাকে বড় সংবর্ধনা দেয়ার।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
এই টুর্নামেন্টে স্বপ্নার জোড়াগোলে ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এক গোল দিয়েছে স্বপ্না। ভুটানকে এক গোল দেয়ার ১২ মিনিটের মাথায় ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন স্বপ্না।
ফাইনালে স্বপ্নাকে মাঠে নামানো হয়েছিল। কিন্তু ইনজুরির কারণে কিছুক্ষণ পরে তাকে তুলে নেয়া হয়।
ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের বিপক্ষে মোট চারটি গোল করেছেন স্বপ্না।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরলেন সাফজয়ী নারী ফুটবল দল
২ বছর আগে