অতুলনীয়
বাঘিনীদের অতুলনীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে ভক্তদের অনুরাগ
কাঠমান্ডু থেকে ফ্লাইটটি যখন ঢাকায় অবতরণ করে, তখন বিমানে থাকা বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বিমানবন্দরের বাইরে তার ও দলের জন্য কী অপেক্ষা করছে তা কল্পানাও করতে পারেনি।
সাবিনা জানতেন যে তার দলের শিরোপা তুলে নেয়ার ও দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতার ক্ষমতা রয়েছে। তবুও, রাজধানী শহরটি তার জন্য কী পরিকল্পনা করেছে সে সম্পর্কে তার কোনও ধারণা ছিল না।
যখন তারা বিমানবন্দরের প্রক্রিয়া শেষে মিডিয়া কর্নারে বেরিয়ে আসে, তখন সাবিনা জানতে পারলেন সেখানে শত শত মিডিয়াকর্মী ক্যামেরা নিয়ে তাদের ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করছেন। হাজার হাজার ভক্ত তাদের শুভেচ্ছা জানাতে অপেক্ষা করছেন।
ভক্তদের পাশাপাশি ব্যান্ড পার্টিও দেশাত্মবোধক গানের তালে তালে তাদের অপেক্ষায় ছিল। তারা সাবিনা ও তার দলের ছবি দিয়ে সজ্জিত ট্রাকে বাঁশি, ড্রাম এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিল।
আরও পড়ুন: বাঘিনীদের রাজসিক বরণ
বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনের কথা ছিল। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ভিড় সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শত শত পুলিশ সদস্য থাকলেও তারা ব্যর্থ হয়। সেখানে শতাধিক আনসার সদস্যও ছিল। তারাও অনুরাগী ভক্তদের সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সেখানে সংবাদ সম্মেলন করতে না পারায় কর্তৃপক্ষ তা বাতিল করতে বাধ্য হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এবং
শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তাদের প্রায় এক ঘন্টা সময় লেগেছিল।
পরিস্থিতি দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন সাবিনা ও তার সতীর্থরা।
বিদেশের মাটিতে ফুটবল খেলার পর বাংলাদেশ নারী দল ঢাকায় ফিরে আসার এটাই প্রথম ঘটনা নয়। কিন্তু আজকের প্রত্যাবর্তন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটিই প্রথম যে শিরোপা ট্রফি জিতে দেশে ফিরলো বাঘিনীরা।
শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিমানবন্দরে একটি সংক্ষিপ্ত এবং আকস্মিক সংবাদ ব্রিফিং সাবিনা বলেন যে তারা অবিচ্ছিন্ন সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ।
আরও আধঘণ্টা পর, সাবিনা এবং তার দল ওপেন-ডেক বাসে ওঠেন— এবং সাম্প্রতিক স্মৃতিতে এইভাবে অভ্যর্থনা পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি দল হয়ে ওঠেন।
শত শত গণমাধ্যমকর্মী এবং হাজার হাজার ভক্তকে দূরে ঠেলে সাবিনা ও তার দলকে খোলা ডেক বাসে হাঁটার পথ তৈরি করতে পুলিশকে লড়তে হয়েছিল।
যখন সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা এবং সহযোদ্ধা বাঘিনীদের জন্য একটি ওপেন-ডেক চ্যাম্পিয়নের বাসের স্বপ্ন সত্যি হলো, তখন তারা উল্লাসিত জনতার কাছে তাদের অভ্যর্থনা জানানো মালা ছুড়ে দেয়। তারা একই সঙ্গে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছিল। তারা সম্ভবত, একটি
দুর্দান্ত সংবর্ধনার স্বপ্ন দেখেছিল, তবে সম্ভবত এটি তাদের প্রত্যাশার বাইরে ছিল।
খোলা ডেক বাস তাদের বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সদর দপ্তরে নিয়ে যায়। পথে হাজার হাজার সমর্থক তাদের বরণ করে নেন।
সাবিনা ও তার দল ভবিষ্যতে আরও অনেক ট্রফি জিতবে। তবে এই দিনটি তাদের এবং বাংলাদেশি ফুটবল ভক্তদের স্মৃতিতে অতুলনীয় হয়ে থাকবে।
তারা শুধু প্রথম বাংলাদেশি নারী দল হিসেবে সাফ শিরোপা জিতেছে তাই নয়, তারাই প্রথম বাংলাদেশি দল যারা এমন গৌরবময় সংবর্ধনা পেয়েছে!
আরও পড়ুন: বাঘিনী রূপনাকে বাড়ি উপহার দেয়ার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
স্বপ্নার স্বপ্ন পূরণ, গর্বিত এলাকাবাসী
২ বছর আগে