দস্যুমুক্ত
সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে র্যাবের বিশেষ অভিযান
জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্যরা।
শনিবার দপুর থেকে লং রেঞ্জ পেট্রোলের মাধ্যমে একটি বিশেষ অভিযানিক দল ‘এলিট টাইগার্স’ ট্রলারযোগে সুন্দরবনে প্রবেশ করে।
এ অভিযানের মাধ্যমে সাম্প্রতিক নব্য বনদস্যুদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা, দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য নৌ-পুলিশ, বন বিভাগ এবং কোস্ট গার্ডের সঙ্গে সমন্বয় সাধন, মাঠ পর্যায়ে সুন্দরবনে অভিযান পরিচালনার স্থান রেকি করা, আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলে র্যাব-৬ এর পক্ষে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে অপহৃত ১১ জেলে উদ্ধার
র্যাবের আভিযানিক দলটি সুন্দরবনের শরণখোলা, জয়মনি, বড়ইতলা, আন্ধারমনিক, মৃগামারি এলাকাসহ বনের শ্যালা নদীর বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালাবে। এছাড়া অভিযানের জন্য র্যাবের আরেকটি দলকে একটি স্পিডবোট ও বেঙ্গল টাইগার্স নামে অপর একটি ট্রলারসহ পূর্ণপ্রস্তুতি সহকারে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।
তিন দিনের এ বিশেষ অভিযান প্রয়োজনে বাড়ানো হবে বলে র্যাব ।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে র্যাব অনেক ঘাম ঝরিয়েছে, কষ্ট করেছে। যে কোনো মূল্যে সুন্দরবন যেন দস্যুমুক্ত থাকে, দস্যুদের পুনরাবৃত্তি যেন ওই এলাকাতে না ঘটে সেজন্য আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হবে, সেই মূলমন্ত্রকে নিয়ে আমরা অভিযানগুলো পরিচালনা করছি।
তিনি বলেন, বিগত দিনগুলোতে ১০ থেকে ১৫ জন অপহৃত হয়েছিল। আমাদের চার থেকে পাঁচটি টহল টিম এবং গোস্টগার্ডের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। তখন তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। অনেকে মুক্তিপণ দিয়ে আসছিল, আবার অনেকে পরবর্তীতে আমাদের আনাগোনা দেখে চলে আসে। বিষয়টি মিডিয়াতে আসে এবং যারা জেলে তারাও ভয় পায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুন্দরবন এলাকা দস্যু মুক্ত করা। আমরা যে তথ্য পেয়েছি তারই আলোকে কাউকে যদি আটক করতে পারি তাও করা হবে। আর জেলেদের অভয় দেয়া যে আমরা আছি আপনাদের পাশে। কোনো দুস্কৃতিকারী বা জলদস্যু যেন ক্ষতি করতে না পারে র্যাব সব সময় বলবৎ থাকবে। তারা এমন কোনো পরিস্থিতিতে না পড়ে সেই উদ্দেশ্যেই আমরা অভিযান শুরু করেছি।
সুন্দরবনে পূর্বের কোনো দস্যুবাহিনী নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন দুষ্টলোক বা জেলেদের মধ্য থেকে কেউ কেউ আধিপত্য বিস্তারের জন্য বা অপহরণ করে টাকা পয়সা আদায়ের জন্য দস্যু হওয়ার পরিকল্পনা করছে। নব্য জলদস্যু বলা যেতে পারে। আর পুরাতন যারা তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে আমাদের। তাদের মামলা, পুনর্বাসনসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আমরাই দেখভাল করি। তাদের দুঃখ-কষ্টসহ অন্যান্য বিষয় বিশেষ করে র্যাব-৬ দেখে থাকে। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে সেই অনুযায়ী বিচ্ছিন্ন কিছু লোকজন র্যাবের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু করা যায় কিনা। কিন্তু আমরা কোন অবস্থাতেই সেটি করতে দিব না।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আপাতত তিন-চার দিন অভিযান পরিচালনা করবো। প্রয়োজনে আরও সময় বাড়িয়ে নেবো। সুন্দরবন সার্বক্ষণিক আমাদের নজরদারীর মধ্যে থাকবে। যাতে করে জেলেরা যারা জীবিকা নির্বাহের জন্য যায় তারা যেন নির্বিঘ্নে তাদের কার্যকলাপ করতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে নয়ন বাহিনী নামের একটি নব্য বনদস্যু দল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বেড়ির খাল ও হরমাল খাল এলাকা থেকে ১৫ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে।
অপহরণের ছয় দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে দস্যুদের কবল থেকে অপহৃত জেলেরা ছাড়া পায়।
আরও পড়ুন: ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সুন্দরবন ঘুরলেন প্রধানমন্ত্রী কন্যা
সুন্দরবনে পর্যটকের খরা, হতাশায় ট্যুর অপারেটররা
১ বছর আগে
‘সুন্দরবনকে র্যাবের দস্যুমুক্ত করাই মানসম্পন্ন চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা’
পুলিশের বিদায়ী মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, শুক্রবার মুক্তির পর ‘অপারেশন সুন্দরবন’ দর্শকদের মন জয় করছে।
আইজিপি বলেন, দুই ঘন্টা ২১ মিনিটের চলচ্চিত্র হওয়া সত্ত্বেও এটি দর্শকদের মনোযোগ রাখতে সক্ষম হয়েছে। অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার এবং সাসপেন্সে ভরপুর ছবিটি দর্শকদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে। ভিএফএক্স, সাউন্ড কোয়ালিটি, অভিনেতাদের পারফরম্যান্স – সব মিলিয়ে ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর সাফল্যের পরিমাণ বেশি।
শুক্রবার বিকালে বসুন্ধরা সিটি মলের স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা দেখার পর বেনজীর আহমেদ এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পেছনে ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প: আইজিপি
তিনি বলেন, ‘আমাদের র্যাব সৈন্য ও কর্মকর্তারাও দারুণ কাজ করেছে। বিভিন্ন উপায়ে অপারেশনের দৃশ্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাটি দেখার পরে দর্শকরা আমাদের অফিসারদের কুশলতা ও দক্ষতা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে। ’
‘অপারেশন সুন্দরবন’- এর গল্প উল্লেখ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, দস্যুদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত সুন্দরবনে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে র্যাব অভিযান শুরু করে। অফিসার ও সৈন্যদের দক্ষ ও চৌকস অভিযানের মাধ্যমে সুন্দরবনে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর মাধ্যমে সেই সাফল্যের গল্প জাতির সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছিলাম।
তিনি বলেন, তবে, একটি চলচ্চিত্র দিয়ে শুধুমাত্র র্যাবের সাফল্য তুলে ধরা সম্ভব নয় এবং আমি মনে করি এই চলচ্চিত্রটি আংশিকভাবে র্যাবের অনেক সাফল্য তুলে ধরে। ছবিটি নির্মাণের পরিকল্পনার পর আমি চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপঙ্কর দীপনকে সুন্দরবনে যেতে, সেখানে থাকতে, ভাওয়ালী, মধু সংগ্রহকারী, জেলেসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে চিত্রনাট্য লিখতে বলেছিলাম। দীপন সেই পরামর্শ অনুসরণ করেছিলেন।
বিদায়ী আইজিপি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর প্রায় ৪০ বছর সুন্দরবন ছিল ডাকাতদের অভয়ারণ্য। র্যাব তাদের হাত থেকে সুন্দরবনকে মুক্ত করার পাশাপাশি একটি মানসম্পন্ন চলচ্চিত্রকে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হয়েছে।’
আইজিপি বলেন, আগে আমি যখন দীপনের সঙ্গে ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এ কাজ করেছি, তখন পুলিশ কমিশনার ছিলাম। আর ‘অপারেশন সুন্দরবন’ পরিকল্পনা করার সময় আমি র্যাবের মহাপরিচালক(ডিজি) ছিলাম। ছবিটি মুক্তির সময় আমি আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক, কমান্ডার খন্দকার আল মঈন; র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রাইসুল আজম; প্রযোজক অরুণ চৌধুরী, চয়নিকা চৌধুরী, অভিনেত্রী তানজিকা, চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এ হক অলিক, অভিনেত্রী ও পরিচালক হৃদয় হক, রায়হান রাফি এবং ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর শিল্পীরা।
আরও পড়ুন: র্যাবের বর্তমান ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ নতুন আইজিপি
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা দরকার: আইজিপি
২ বছর আগে