চাকরির ইন্টারভিউ
চাকরির ইন্টারভিউয়ে প্রত্যাশিত বেতন নিয়ে যেভাবে কথা বলবেন
পেশাগত জীবন গঠনের সব থেকে সংবেদনশীল পর্যায়টি হচ্ছে চাকরির ইন্টারভিউ। যেখানে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ওপর নির্ভর করে পুরো ক্যারিয়ার, বিশেষ করে চাকরিটি যদি হয় খুব প্রয়োজনীয় অথবা বহু প্রত্যাশিত। নিয়োগকর্তার সঙ্গে এই আলাপচারিতায় প্রতিটা বাক্য তাৎক্ষণিকভাবে গড়ে দেয় চাকরি পাওয়ার মাইলফলক।
এই আলাপের শেষ পর্বে থাকে বেতন সম্পর্কিত কথোপকথন, যে মুহূর্তটি চাকরি প্রার্থীদের জন্য আরও উত্তেজনার। প্রত্যাশিত বেতন নিয়ে কথা বলার এই ছোট্ট পর্বটি কীভাবে সফলভাবে সম্পন্ন করা যায়, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রত্যাশিত বেতন বলতে আসলে কী বোঝায়
কোনো সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য সম্মানী হিসেবে নিয়োগর্কতার কাছে প্রার্থীর যে পরিমাণ অর্থের দাবি থাকে সেটিই প্রত্যাশিত বেতন নামে অভিহিত। কাজের ধরন ও ক্ষেত্র, দেশ, ও সময়ের ভিত্তিতে এই সম্মানী পরিবর্তিত হয়। আর প্রত্যাশার সঙ্গে মৌলিকভাবে জড়িয়ে থাকে প্রার্থীর দক্ষতা, যার পরিপূরকভাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অভিজ্ঞতা। এর সঙ্গে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে কাজটির চাহিদা, উপলব্ধতা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা।
আরও পড়ুন: চাকরির জন্য সিভি তৈরিতে যে বিষয়গুলো পরিহার করবেন
এই সব উপাদানের সাপেক্ষে যে পরিমাণ অর্থ দাবি করা হচ্ছে প্রার্থী আসলেই তার প্রাপ্য কি না তা প্রমাণ করা জরুরি। আর তারই যাচাই-বাছাই চলে চাকরির ইন্টারভিউতে।
বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রার্থীর ঐচ্ছিক বিষয় হলেও অঙ্কটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যথাযথ গবেষণার প্রয়োজন। নতুবা খুব কম দাবি করার ফলে প্রার্থী সঠিক আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। শুধু তাই নয়, এটি দীর্ঘ মেয়াদে তার ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং একই সঙ্গে সেই কাজের বাজার নষ্ট করে। অন্যদিকে খুব বেশি দাবি করার মাধ্যমে চাকরির সুযোগটাই হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে।
কীভাবে প্রত্যাশিত বেতন নির্ধারণ করবেন
আত্ম-মূল্যায়ন
নিজের বাজার মূল্যটা ঠিক কত তা বুঝতে হলে নিজেকে একটি পণ্য বা সেবা হিসেবে চিন্তা করতে হবে। একটি পণ্য চূড়ান্ত ভাবে বিক্রিযোগ্য হওয়ার পূর্বে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যায়। এ সময় তার যাবতীয় খরচের সঙ্গে লাভের পরিমাণ যোগ করে তারপর ঠিক পণ্যের দাম। একজন ব্যক্তির পারদর্শিতার মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারটিও ঠিক একই। এখানে যাচাই করতে হয় একটি কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেতে কতটা শ্রম এবং সময় দেওয়া হচ্ছে। শারীরিক শ্রম অপেক্ষা মানসিক শ্রমের মূল্য বেশি।
আরও পড়ুন: ফুড ব্লগার বা ভ্লগার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার উপায়
অপেক্ষাকৃত কম রসদে তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে কাজটি সম্পন্ন করা। মুলত এর উপর ভিত্তি করেই প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে ওঠে কোনো কর্মচারী বা কর্মকর্তার বাজার মূল্য।
এই মূল্য যাচাইয়ের জন্য প্রার্থীকে প্রথমে দেখতে হবে বাজারে তার পারদর্শিতার চাহিদা কতটুকু। এই নিরীক্ষায় উতড়ে গেলে তারপরেই আসবে দক্ষতার বিষয়টি। কাজের ইন্ডাস্ট্রি ভেদে এই বিষয়টিকে বিশেষায়িত করে উচ্চ শিক্ষা, পেশাগত ট্রেনিং এবং সরাসরি কাজের অভিজ্ঞতা। ব্যবহারিক বা প্রযুক্তিগত কাজগুলোতে প্রায় ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা গুরুত্ব পায়। আবার যে পারদর্শিতাগুলো খুব কম দেখা যায়, কিন্তু বাজারে চাহিদা প্রচুর, এগুলোর সম্মানী নিলামের মত বাড়তে থাকে।
নেটওয়ার্কিং
বেতন কত হওয়া উচিৎ তা জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একই ইন্ডাস্ট্রির লোকদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং করা। ক্যারিয়ারের শুরুতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এবং শিক্ষকগণ এই নেটওয়ার্কিংয়ে ব্যাপক অবদান রাখে। তাদের মধ্যে যারা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পদের বেতনের ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যায়।
স্বভাবতই তথ্য সংগ্রহের জন্য এটি খুব স্বল্প মেয়াদী উপায় নয়, কেননা বেতন নিয়ে কথা বলতে কেউই প্রস্তুত থাকেন না। দীর্ঘ দিন সম্পর্কের সুবাদে এরকম তথ্য পাওয়া সম্ভব। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিন থেকেই বিভিন্ন ক্লাব, সিনিয়র ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সান্নিধ্য অর্জনের চেষ্টা শুরু করতে হবে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপ ও ফোরামের দৌলতে নেটওয়ার্কিং অনেকটা সহজ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করবেন যেভাবে
৯ মাস আগে
চাকরির ইন্টারভিউয়ে নিজেকে শান্ত রাখার উপায়
ইন্টারভিউ ভীতি খুবই সাধারণ একটা বিষয়, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদের জন্য সর্বাধিক যোগ্য প্রার্থীরাও এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকেন। যিনি প্রথমবার এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন তিনিও জানেন যে চাকরির চাকরির ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণের পূর্বে এবং ইন্টারভিউ চলাকালীন নিজেকে শান্ত রাখা জরুরি। কিন্তু যখন নিয়োগকর্তাদের সামনে নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করার সময় আসে, তখন নিজের অবচেতনেই সবাই স্নায়ুবিক চাপ অনুভব করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে হঠাৎ করে হাত ঘামতে শুরু করে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় এবং মুখ শুকিয়ে যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক চাকরির ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণের পূর্বে এবং ইন্টারভিউ চলাকালীন সময় কিভাবে শান্ত থাকা যায়।
চাকরির ইন্টারভিউয়ে অস্থিরতার কারণ
মুখোমুখি প্রশ্নোত্তরের সময় নিয়োগকারীদের কয়েক জোড়া দৃষ্টির সামনে যে কোন চাকরি প্রার্থীই যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন তা হচ্ছে- কোথাও কোন ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো! একদিকে মনে-প্রাণে যখন তিনি ভাবছেন পুরো পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে তখন তিনি অনুভব করতে শুরু করেন, তার কন্ঠনালীর আশেপাশের পেশী টানটান হয়ে যাচ্ছে।
এ সময় তার কথা বলার সময় কণ্ঠস্বরে কম্পন সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে হাত-পা সহ সর্বাঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্কে জমা করে নিয়ে আসা তথ্যগুলো তখন একে অপরের সাথে রীতিমত দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু করে, চূড়ান্ত মুহুর্তে যেটি যে কোন একটি তথ্যের উপর মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়। এ সময় বুকের ভেতর বাড়তে থাকা হৃদস্পন্দনের শব্দ নিজের কান-অব্দি পৌছে যায়।
পড়ুন: বাংলায় শিক্ষাদানকারী অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম: পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির অনন্য মাধ্যম
এই উদ্বেগ মূলত একটি সহজাত প্রবৃত্তি। ব্যথা বা যন্ত্রণার মত যে কোন শারীরিক সমস্যা অথবা স্নায়বিক চাপের মত যে কোন মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হলে মস্তিষ্ক এরকম প্রতিক্রিয়া দেখায়। শারীরিক বা মানসিক হুমকিগুলো মস্তিষ্কে প্রবেশের সাথে সাথেই স্নায়ুতন্ত্র বিপুল পরিমাণে অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যেগুলো স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত।
অ্যাড্রেনালিন রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বাড়ানোর পেছনে মুল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। আর প্রাথমিক স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল রক্ত প্রবাহে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। এ সময় মস্তিষ্ক বেশি পরিমাণে গ্লুকোজ ব্যবহার করে এবং সেই সাথে টিস্যু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থের যোগান বৃদ্ধি পায়। আর শারীরিকভাবে এর প্রকাশভঙ্গি স্বরূপ উদ্বেগ সৃষ্টি হয়, যাকে স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া নামে পরিচিত।
দীর্ঘস্থায়ী চাপের সময় শরীর অত্যধিক পরিমাণে কর্টিসল তৈরি করে, যা অত্যন্ত ক্লান্ত এবং নির্দিষ্ট কাজে মনযোগ দিতে অক্ষম করে তোলে। উচ্চ কর্টিসলের মাত্রা কোন কিছু শেখার এবং স্মৃতিশক্তির সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশকে অবনতির দিকে নিয়ে যায়। এর সাথে অ্যাড্রেনালিনের অবিরাম নিঃসরণ যে কোন পরিস্থিতির উপর স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ হারাতে সহায়তা করে, যা একটি ইন্টারভিউয়ের জন্য খুবই দরকারি ব্যাপার।
পড়ুন: গুগলে কীভাবে চাকরি পেতে পারেন
চাকরির ইন্টারভিউয়ে নিজেকে শান্ত রাখার কৌশল
ইন্টারভিউয়ের দিনটির জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা
যে কোন কাজের জন্যই শারীরিক ও মানসিক ভাবে উপযুক্ত থাকার কোন বিকল্প নেই। ইন্টারভিউয়ের আগের রাতে ভালো ঘুম না হলে শত প্রস্তুতি থাকলেও পরের দিন সকালে কাঙ্ক্ষিত পার্ফর্মেন্স আসবে না। এছাড়া সকালের নাস্তা সঠিক সময়ে খেয়ে বের হওয়া বেশ জরুরি। হালকা খাবার বা ফল দিয়ে স্বাস্থ্যকর নাস্তা উদ্যমী দিনের সূচনা করাতে পারে। তবে ভরপেট খেয়ে ইন্টারভিউতে যাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজেকে ভাল ভাবে হাইড্রেটেড রাখার দিকে খেয়াল দিতে হবে।
যাদের ইতোমধ্যে শরীরচর্চার অভ্যেস আছে তাদের জন্য সুখবর। নিদেনপক্ষে শারীরিক দিক থেকে কোন বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে না। আর যাদের এরকম অভ্যাস নেই তারা সম্ভব হলে ইন্টারভিউয়ের দিন ভোর বেলা কোন খোলা পার্কে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে নিতে পারেন।
সাধারণ করপোরেট সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে সুন্দর পোশাক পরিধান করা
সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছেদ মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। যে কোনও পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসী হতে চাইলে, সেই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিজের পছন্দের সেরা পোশাকটি বেছে নেওয়া উচিত। অতঃপর সেটা ভালো ভাবে পরিধান করে গেলে পোষাকের অসংলগ্নতা নিয়ে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। চাকরিপ্রার্থী তখন নির্দ্বিধায় তার ইন্টারভিউয়ের প্রতি পূর্ণ মনযোগ দিতে পারবেন।
পড়ুন: কর্মজীবনে সাফল্যের জন্য কিভাবে নিজেকে গ্রুমিং করবেন?
তাই সাক্ষাৎকারের আগে কোম্পানির ড্রেস কোডটি ভালো করে চেক করে নেয়া জরুরি। অতঃপর নিজের ব্যক্তিত্ব এবং করপোরেট সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে এমন একটি পোশাক বেছে নিতে হবে। সুস্থ শরীর ও প্রফুল্ল মনের সংমিশ্রণে ইন্টারভিউয়ে ‘আগে দর্শনধারী’ ক্ষেত্রটিতে অনায়াসেই কৃতকার্য হওয়া যাবে। এরপরে সম্পূর্ণ মনযোগ দিয়ে ‘পরে গুণ বিচারী’ ক্ষেত্রটিতে কৃতকার্য হওয়া পালা।
ইন্টারভিয়ের জন্য সর্বতভাবে প্রস্তুত থাকা
প্রথমেই সঠিক সময়ে উপস্তিতিটা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাফিক জ্যামের কথা মাথায় রেখে অনেকটা সময় হাতে নিয়ে আগে ভাগেই ঘর থেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য বের হয়ে যেতে হবে। এখানে ভুল করা মানেই ইন্টারভিউয়ের পুরোটা সময় ধরে নিজের অস্থিরতার সাথে যুদ্ধ করা।
টার্গেটকৃত কোম্পানী সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণা ও নিজের কাজের অভিজ্ঞতা সহ ইন্টারভিউয়ের সাধারণ প্রশ্নোত্তরগুলোর উপর নিজের দখল রাখতে হবে। একটা ফাইলে করে জীবনবৃত্তান্ত, কভার লেটার, সার্টিফিকেট, কলম এবং নোটপ্যাড নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
পড়ুন: চাকরির সিভি ও পোর্টফোলিও তৈরির প্রয়োজনীয় কিছু ওয়েবসাইট
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে কম্পিউটার, হেডফোন, স্পিকার এবং কনফারেন্সের অ্যাপ সঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা তা আগে থেকে চেক করে রাখতে হবে। সর্বসাকূল্যে, ইন্টারভিউয়ের সময় কোন কিছুর ঘাটতির কারণে সৃষ্টি বিড়ম্বনা অস্থিরতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে সদাপ্রস্তুত চাকরি প্রার্থীর নিজের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস থাকে এবং তাকে ইন্টারভিউ করে নিয়োগকর্তারাও অভিভূত হন।
ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা
প্রায়ই ক্ষেত্রে দেখা যায়, চাকরিপ্রার্থীরা ইন্টারভিউতে যাওয়ার সময় সেই চাকরিকেই জীবনের একমাত্র অবলম্বন ভেবে থাকেন। এটি না হলে সব-ই শেষ। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। এটা চিরন্তন সত্য যে, এমন চাকরি আরো আছে এবং সেখানে আবেদনের মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার অজস্র সম্ভাবনা আছে।
প্রতিটি মতবাদেরই একটা উৎকৃষ্ট বিকল্প আছে। কতটুকু কোম্পানির প্রিয়পাত্র হওয়া যাবে তার পরিবর্তে চিন্তা করতে হবে কোম্পানিটি একটি নির্ভরযোগ্য চাকরির জন্য কতটা উপযুক্ত। সুতরাং, নিয়োগকর্তারা ঠিক যেভাবে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রার্থীকে যাচাই করছেন, একইভাবে প্রার্থীরও পূর্ণ অধিকার আছে কোম্পানীকে যাচাই করা।
পড়ুন: অনলাইনে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে প্রয়োজনীয় পাঁচ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
যে কোন প্রত্যাখ্যান স্বাভাবিক ভাবেই মনোক্ষুন্ন অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্কে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের জন্যও এই প্রত্যাখ্যাত হওয়া অভিজ্ঞতার ভূমিকা আছে। তাই মস্তিষ্ককে বুঝতে দিতে হবে যে, এই চাকরিটিই জীবন ধারনের শেষ অবলম্বন নয়। এখানে চাকরিটা হয়ে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। তাই আরো উত্তম সুযোগ অপেক্ষা করছে বিধায় এই প্রত্যাখ্যানের ঘটনাটি ঘটেছে।
ইন্টারভিউয়ের নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছানো
যে কোন পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে এটি একটি সাধারণ উপায়। সাধারণ লেনদেনের ক্ষেত্রেও ঠিক আগমুহূর্তে পৌঁছা ঠিক নয়। এতে বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই এক্ষেত্রেও অস্থিরতাকে পাশ কাটানোর জন্য যথেষ্ট সময় নিয়ে বাসা থেকে ইন্টারভিউয়ের উদ্দেশ্যে বের হতে হবে। এতে দৌড়ে ইন্টারভিউ রুমে প্রবেশ করার অবস্থার সৃষ্টি হবে না। এ অবস্থায় শুধু যে নিয়োগকর্তারাই বিরক্ত হন তা নয়, চাকরিপ্রার্থীর নিজেরও স্বাভাবিক হতে বেশ বেগ পেতে হয়।
আর ইন্টারভিউয়ের ওয়েটিং রুমে আগে যেয়ে বসে থাকার অনেক সুবিধা আছে। এ সময় বাইরের যানজট পেরিয়ে আসার অস্থিরতা কমানো এবং ওয়াশ রুমে যেয়ে বাইরের ধুলো-বালি ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে নেয়া যায়। কাপড়ের কোথাও কোন অসংলগ্নতা থাকলেও তাও ঠিক করে নেয়া যায়। ফলে একদম ফ্রেশ অবস্থায় হাজির হওয়া যায় নিয়োগকর্তাদের সামনে।
পড়ুন: যে ১০টি সফটওয়্যার জানা থাকলে চাকরি পেতে সুবিধা হবে
এছাড়া পুরো ইন্টারভিউটা নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনাগুলো আরো একবার ঝালিয়ে নেয়ার জন্য এই নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছানোর কোন বিকল্প নেই। আর কোম্পানির অফিসের এলাকাটি যদি আগে থেকে পরিচিত না থাকে তাহলে তো এ বিষয়টি একদম বাধ্যতামূলক হয়ে দাড়ায়।
পরিশিষ্ট
চাকরির ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণের পূর্বে এবং ইন্টারভিউ চলাকালীন নিজের মন ও মস্তিস্ক শান্ত রাখার উপায়গুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে এগুলোর অনুশীলন করা প্রয়োজন। এটি আসলে রাতারাতি সম্ভব নয়। যারা প্রথম ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন তারাও বিষয়টি রপ্ত করতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার দিনগুলো থেকেই। ধৈর্য্য ধরে একটি কাজের পুনরাবৃত্তি করাও একটি দক্ষতা, যা সেই কাজে ধৈয্যধারীকে আরো নিখুঁত করে তোলে।
এই অনুশীলনের পাশাপাশি প্রয়োজন হবে নেতিবাচক চিন্তাকে পরিহার করা। কেননা নেতিবাচক চিন্তা চূড়ান্ত অবস্থায় যে কোন চেষ্টাকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই উদ্দেশ্য হাসিলে নিজেকে অনুপ্রাণিত করা শিখতে হবে। একজন মানুষের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা সে নিজেই। একজন চাকরিপ্রার্থী যখন নিজেকে অনুপ্রাণিত করে পুরো ইন্টারভিউটির পূর্বপরিকল্পনা করতে পারেন, তখন চাকরি পাওয়ার প্রচেষ্টা অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে যায়। বাকিটা নির্ভর করে সেই পরিকল্পনাটা বাস্তবায়নের উপর।
পড়ুন: কীভাবে চাকরির ইন্টারভিউতে সফল হবেন: গুরুত্বপূর্ণ ১০টি টিপস
২ বছর আগে