ই-সিগারেট
তামাক ও ই-সিগারেট প্রতিরোধে যা যা করণীয় তা করতে হবে: সায়মা ওয়াজেদ
ক্রমবর্ধমান তামাক সেবন ও ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ জোরদার করতে দৃঢ়তার সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এতে বলা হয়, কয়েক বছরের ধরে তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও, এই অঞ্চল এখনও বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ তামাক ব্যবহারের হারের দিক থেকে উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। এমনকি ই-সিগারেটের ব্যবহারের হারও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদের মমত্ববোধ
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ।
তিনি বলেছেন, 'এই অঞ্চলে এখনও তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ফলে তাদের ক্যান্সার, শ্বাসযন্ত্র ও হৃদরোগের মতো প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণের জন্যও জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এর আগে ধূমপান বন্ধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা, কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবন বাঁচাতে তামাক ও ই-সিগারেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।’
জানা গেছে, এ অঞ্চলে ২০০০ সালে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশে।
তবে এ বছর প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, আনুমানিক ৪১ কোটি ১০ লাখ মানুষ এখনও তামাক ব্যবহার করছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য স্থায়ী ঝুঁকি।
এই অঞ্চলে বিস্ময়করভাবে ২৮০ মিলিয়ন ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী রয়েছে; যা বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩-১৫ বছর বয়সী প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ কিশোর তামাক ব্যবহারকারী, যা বিশ্বব্যাপী মোট তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধি (বিশেষত যুবকদের মধ্যে) একটি নতুন হুমকি তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় সায়মা ওয়াজেদকে রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন
থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ই-সিগারেটের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে। সেখানে ২০১৫ সালের এর ব্যবহারকারী ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশে।
ক্রমবর্ধমান সংকটের সমাধানে এই অঞ্চলের দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২৪ সালের মধ্যে 'তামাকমুক্ত বাংলাদেশ' এবং ভারত 'টোব্যাকো এন্ডগেম' উদ্যোগ নিয়েছে।
এছাড়া, ডিপিআর কোরিয়া, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও পূর্ব তিমুরের মতো দেশগুলো ই-সিগারেটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর মালদ্বীপে এটি নিয়ন্ত্রিত তামাকজাত পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এ অঞ্চলজুড়ে তামাক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০০০ সালে তামাক ব্যবহারকারী পুরুষের সংখ্যা ছিল ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশে।
একই সময়ে নারী ব্যবহারকারীর হার ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কমেছে এ অঞ্চলে।
অসংক্রামক রোগ (এনসিডি)-২০২৫ অনুযায়ী তামাকের ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রার পূরণে আফ্রিকা ও এই অঞ্চলের এসব অর্জন সহায়তা করবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমপাওয়ার প্যাকেজ এবং অন্যান্য উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশগুলো চাহিদা কমানোর কৌশল প্রয়োগ করছে। এ অঞ্চলের ২০০ কোটির বেশি মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও নীতিমালার আরও জোরালো প্রয়োগ প্রয়োজন। আর এজন্য তামাক শিল্পসংশ্লিষ্ট উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপেরও প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেলেন সায়মা ওয়াজেদ
১০ মাস আগে
ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তাদের
জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তারা।
তারা জানান, বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বাজার সৃষ্টি করতে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন অপপ্রচার ও কৌশলী ভূমিকার কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এই তামাক পণ্যের প্রতি তরুণ প্রজন্ম আসক্ত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান সম্বলিত ই-সিগারেট বাংলাদেশে বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে দেশে ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থায় যথাযথ আইনের অনুপস্থিতি ই-সিগারেটের প্রাদুর্ভাব আরও মারাত্মকভাবে বাড়াতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন আইনের মাধ্যমে ই-সিগারেটের আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বন্ধ করা।
শনিবার (২৫ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুওর (ডর্প) এবং বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে ডর্প-এর প্রোগ্রাম কোওর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম বলেন, গতানুগতিক তামাক পণ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ব্যবহারও ধীরে ধীরে বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। ই-সিগারেটকে তামাকপণ্য ব্যবহারের গেটওয়ে হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবি জানান এবং সেই লক্ষ্যে প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তাদের সোচ্চারও হওয়ার আহ্বান করেন।
আলোচনায় বক্তারা এই বক্তব্য ও দাবিকে সমর্থন করে বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে বাংলাদেশে এখনই ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি কাজী রিয়াজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্পেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি ড. শহীদুল ইসলাম, সাবেক উপসচিব মো. মহসীন আলী সরদার বীরপ্রতিক, সাবেক উপ-সচিব প্রফেসর ড. আব্দুল মালেক, সাবেক যুগ্ম সচিব খোন্দকার মো. মতিয়ার রহমানসহ আরও অনেকে।
আরও পড়ুন: ‘ই-সিগারেট নিষিদ্ধের প্রস্তাবের পরও নতুন পন্থায় আনছে বহুজাতিক কোম্পানি’
সভাপতির বক্তব্যে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ই-সিগারেট বন্ধে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
ই-সিগারেটের ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আইনের সংশোধন এবং কঠোর প্রয়োগ না করা হলে এই দুর্যোগ কাটবে না। এখনই ই-সিগারেটে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি ই-সিগারেট আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বাণিজ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর শিগগিরই চিঠি দেবে।
এম মিজানুর রহমান বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো ই-সিগারেটকে কম ক্ষতিকর হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলেও, তা সঠিক নয়। বরং এটি খুবই ক্ষতিকর একটি পণ্য, যা তরুণ প্রজন্মের তামাক আসক্তি বাড়াবে।
ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতিও হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রফেসর ড. আব্দুল মালেক বলেন, বাংলাদেশে নীরবে ই-সিগারেটের বাজার ব্যাপক আকারে সম্প্রসারিত হচ্ছে, কিন্তু এটি বন্ধে নীতিনির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান নয়।
তিনি সরকারের প্রতি শিগগিরই ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনস্বার্থেই ই-সিগারেটের প্রসার রোধে নীতিনির্ধারকদের চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন: তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে: ই-ক্যাব
ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, তামাক কোম্পানি দেশে ই-সিগারেট আমদানি ও প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে এবং তরুণদের এই নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রেরণা দিচ্ছে। ই-সিগারেট নিষিদ্ধে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত আইন পাস করতে হবে।
মো. মহসীন আলী সরদার বলেন ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়ার কোনো উপায় হতে পারে না। যারা ধূমপান ছাড়তে চায় তাদেরকে প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। ই-সিগারেট আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ভয়াবহতার ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন এবং এটি রোধে সকল পর্যায়ে সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের সক্রিয় হবেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জনাব মো. আজহার আলী তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি’র সদস্য আলী কবির হায়দার, শ্রী বসুদেব গাঙ্গুলী, ডা. মো. আমিনুল ইসলাম, এসকে হাবিবুল্লাহ এবং ডা. মো. তৌহিদ হোসাইন।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশান অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব ধরনের পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
আরও পড়ুন: তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে: ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা
১ বছর আগে
তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে: ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে। এতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হুমকিতে পড়ছে।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সিরডাপে “তামাক ও অসংক্রামক রোগ: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘এফসিটিসি’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের গুরুত্ব’’- শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে নারীদের মধ্যেও ধূমপান ব্যবহারের মাত্রা বাড়ছে। তারাও ই-সিগারেটের মতো ভয়ংকর নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ছে। তাই তরুণদের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অবিলম্বে ই-সিগারেটের মতো ক্ষতিকর পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা’র এফসিটিসির আলোকে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য দেন পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. নিজাম উদ্দীন আহমেদ।
আরও পড়ুন: সংশোধিত তামাক আইন পাস হলে মৃত্যু কমবে, এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে
তারা জানান, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ ইত্যাদি বাড়ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির কারণ মূলত ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার।
তারা আরও বলেন, দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ উন্মুক্ত স্থান ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
সেমিনারে সভাপতি ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। এর কারণ বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নির্মিত করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানে বিদ্যমান তামাকনিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তামাক নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এস এম শহিদুল্লাহ, ডা. নাদিরা সুলতানা, পুষ্টিবিদ তাসনিমা হক, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীসহ তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান আইনের ছয়টি ধারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। সেগুলো হলো- আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা অর্থাৎ সব উন্মুক্ত স্থান ও গণপরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
আরও পড়ুন: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের দাবিতে সিগনেচার ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকের দাম কমবে: প্রজ্ঞা
১ বছর আগে
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে তামাক কোম্পানি!
ই-সিগারেট ও ভেপিং ব্যবহার উৎসাহিত করতে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে ভয়েস অব ভেপারস এবং এশিয়া হার্ম রিডাকশন অ্যালায়েন্স একটি সম্মেলন এবং গোলটেবিল বৈঠক করেছে।
তামাকবিরোধী গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব আয়োজনের নেপথ্যে ছিল ফিলিপ মরিসের (পিএমআই) অর্থপুষ্ট ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর অনুদানপ্রাপ্ত সংস্থা এবং প্রতিনিধি।
তবে এসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ কিছু মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে, যা হতাশাজনক।
আরও পড়ুন: ক্ষতি কমাতে তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধির দাবি
প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং যেখানে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া ভয়েস অব ভেপারস দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্যের পক্ষে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, পিএমআই এর অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ‘ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক-ফ্রি ওয়ার্ল্ড’- এর নানা তৎপরতা জনস্বাস্থ্য এবং তামাকবিরোধী কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
এফএসএফডব্লিউ মূলত ই-সিগারেটসহ বিভিন্ন ধরনের ভেপিং পণ্যের ব্যবহার ও বাজারজাতকরণকে উৎসাহিত করে থাকে।
এ কারণেই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পরপই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, তামাক কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের সুস্পষ্ট স্বার্থ সংঘাত রয়েছে।
এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ফাউন্ডেশনের সব ধরনের সহযোগিতা কিংবা যৌথ উদ্যোগ প্রত্যাহার করবে।
আরও পড়ুন: তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে করবৃদ্ধি ও আইন শক্তিশালীকরণের তাগিদ
সরকার এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠানসমূহকেও এই নীতি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়াও ডব্লিউএইচও এফসিটিসি সেক্রেটারিয়েট এক পৃথক বিবৃতিতে বলে, ‘তামাক কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যে কোনো সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড হবে এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
উদ্বেগের বিষয় হলো, বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেও সংগঠনটির তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতসহ বেশকিছু দেশ ‘ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক-ফ্রি ওয়ার্ল্ড’- এর বিতর্কিত কার্যক্রম প্রতিহত করতে সরকারিভাবে সংগঠনটির সঙ্গে কাজ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও বাংলাদেশে এ ধরনের কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি।
এফসিটিসি এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও উচিত হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী তামাক কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হওয়া এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ২০২১ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ভেপিং, ই-সিগারেটের মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ইটিপি) গুলোকে ‘মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ ৩২টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে।
দ্রুতততম সময়ের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশেও এসব পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন: তামাক নিয়ন্ত্রণকে এগিয়ে নিতে কারখানায় তদারকি আবশ্যক: গবেষণা
১ বছর আগে
ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি বীরেন শিকদারের
ই-সিগারেট মানবদেহের জন্য সমানতালে ক্ষতিকর বলে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বীরেন শিকদার।
সোমবার ঢাকায় ন্যাম ভবনে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের (ড্যাম) তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ দাবি জানান।
ড্যামের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা (মিডিয়া ম্যানেজার) রেজাউর রহমান রিজভী এবং প্রকল্প কর্মকর্তা শারমিন আকতার রিনি সাক্ষাৎ করেন।
বীরেন শিকদার বলেন, ই-সিগারেট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে।
আরও পড়ুন: টেক্সট নেক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল
তিনি আরও বলেন, ‘এটি মানবদেহের জন্য প্রচলিত সিগারেটের মতোই সমান ক্ষতিকর। সুতরাং, এটি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা উচিত।’
তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান।
বিদ্যমান আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী সংসদে পাস হলে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিত উদ্বেগ মূল্যায়ন করা উচিত: বিশেষজ্ঞ দল
বীরেন শিকদার এমপি বলেন, সিগারেট কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থে তরুণদের ধূমপানে উৎসাহিত করে। কিন্তু এটি অনেক রোগের একটি প্রধান কারণ।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ধূমপানে কোনো লাভ নেই, তাই অধূমপায়ীরা পরোক্ষভাবে ধূমপায়ীদের দ্বারা সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
প্রতিনিধি দলটি সংসদে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের আরও সংশোধনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা আইনের খসড়া পাসের জন্য তার সমর্থন চেয়েছে। বীরেন শিকদার এমপি প্রতিনিধিদলকে তাদের কার্যক্রমের জন্য অভিনন্দন জানান এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন: অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
২ বছর আগে