১৫১টি প্রতিমা
এক মণ্ডপে ১৫১টি প্রতিমা: দুর্গার পরিবারে আমন্ত্রিত যারা
১৬ কোটিরও বেশি মানুষের বাংলাদেশে প্রায় আট শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী। দুর্গাপূজা হলো এই ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সত্ত্বেও হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসবের সময় বিভিন্ন ধর্মের লোকজনের অংশগ্রহণ উদযাপনটি এক অনন্য নজির তৈরি করেছে।
এ বছর বাগেরহাটে এক পূজামণ্ডপে ১৫১টি দেব-দেবীর প্রতিমা দিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজকরা বলছেন, বাগেরহাটের সদর চুলকাঠি বণিকপাড়া পূজামণ্ডপে হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাভারত ও রামায়ণের কাহিনী অবলম্বনে বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা: এমন উৎসব যা বাংলাদেশকে এক করে
বণিকপাড়া এই মণ্ডপের প্রতিমা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়েই নয়, অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকেও আকৃষ্ট করছে।
২০০১ সালে বণিকপাড়া মণ্ডপে ছোট আকারে দুর্গাপূজা উদযাপন শুরু হয়। পরে ২০০৫ সালে ১০১টি মূর্তি নিয়ে বিশাল আয়োজনে পূজা উদযাপন করা হয়েছিল।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে উৎসব ভাটা পড়েছিল৷ কিন্তু এবার বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায়, আয়োজকরা আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ফিরে এসেছেন।
এ বছর দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে হাতিতে (গজে) চড়ে মর্ত্যলোকে বাবার বাড়িতে এসেছেন। শনিবার বেলগাছের নিচে মহাষষ্ঠীতে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। রবিবার মহাসপ্তমী, সোমবার মহাঅষ্টমী, মঙ্গলবার মহানবমী এবং বুধবার দশমী পূজা অন্তে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে দেবী দুর্গা নৌকায় চড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন।
বাগেরহাট জেলায় এ বছর সব মিলে ৬৩২টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর করতে জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রসাশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজামন্দিরে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি নিজস্ব সেচ্ছাসেবক বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।
শুক্রবার বিকালে চুলকাঠি বণিকপাড়া পূজামন্ডপে গিয়ে দেখা গেছে, মূলমন্ডপের সঙ্গে প্যান্ডেল করে দুটি সারিতে আলাদাভাবে বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেব-দেবীরা এই পূজামন্ডপে যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছেন। বিভিন্ন দেব-দেবী, মা দুর্গার সঙ্গী হয়ে ধরাধামে এসেছেন একসঙ্গে। মহিষাসুরকে যেভাবে বধ করেছিলেন ‘দেবী দুর্গা’ তা দেখানো হয়েছে প্রতিমার মাধ্যমে। দুষ্টের দমন আর সৃষ্টিরপালনও তুলে ধরা হয়েছে দেব-দেবীর প্রতিমায়। কারিগড়রা (ভাস্কর) তাঁদের হাতের নিপুণ ছোঁয়া আর রং তুলিতে অপরূপ সাজে প্রতিমা সাজিয়েছেন। মহামায়া দেবী দুর্গার সঙ্গী হিসেবে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের বিভিন্ন দেব-দেবী আর্বিভূত হয়েছেন পূজামন্ডপ জুড়ে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছেন এই পূজা প্যান্ডেলে।
আরও পড়ুন: শনিবার মহা ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা
পূজা প্যান্ডেল ঘুরে দেখা গেছে, হাতিতে চড়ে দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমন এবং নৌকায় চড়ে গমন, দেবীর অকাল বোধন, অসুর রক্তবীজ বধ, সতীর দেহত্যাগ, দেবী কংকালে কালী, মৎস্য অবতর, হর পার্বতীর বিয়ে, রাধাকৃষ্ণের ঝুলন, ব্রক্ষ্মচারিনী, অহল্যা পাষানী, নৃসিংহ অবতার, দেবী সিদ্ধাধার্থী, বিষ্ণুপ্রিয়ার মালাবদল, অগ্নিপরীক্ষা এবং শ্রীকৃষ্ণের নৌকাবিলাসসহ প্রতিমার মাধ্যম ফুটিয়ে তুলা হয়েছে। পূজা প্যান্ডেলের ভিতর এবং বাইরে সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
২ বছর আগে